তিন সিটিতে পুননির্বাচন দাবী বিএনপির

- প্রকাশের সময় : ০৪:৩৮:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ জুলাই ২০১৮
- / ৬০৮ বার পঠিত
ঢাকা: সোমবার অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে তামাশা ও ভোট ডাকাতির নির্বাচন বলছে বিএনপি। দলটি বলছে- এই নির্বাচনকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি এবং অবিলম্বে এই ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচন প্রদানের আহবান জানাচ্ছি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) সকালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, তিন সিটি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, অনাচার, ভোট জালিয়াতি ও ভোট সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বিএনপির উদ্যোগে আগামী বৃহস্পতিবার (২ আগষ্ট) সারাদেশে জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সাংবাদিক সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, সোমবার (৩০ জুলাই) রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট এই ৩টি সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনের নাটক শেষ হলো। এই নির্বাচনে আমাদের কথাই সত্য প্রমাণিত হলো- শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও অবাধ হতে পারে না। প্রমাণিত হলো এই অযোগ্য নির্বাচন কমিশিনের পরিচালনায় কোনো নির্বাচনেই জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব নয়। গাজীপুর ও খুলনার মতো এই তিনটি সিটি করপোরেশনে ভোট চুরি বা কারচুপি নয়, ভোট ডাকাতির মহোৎসব অনুষ্ঠিত হলো।
তিনি বলেন, বিরোধী দলগুলোর প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নয়, প্রতিপক্ষ এই অবৈধ সরকারের প্রশাসন এবং অযোগ্য নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশন পুলিশের মতোই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ী করার জন্য নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। শুধু নির্বাচনের দিনে নয়, সিডিউল ঘোষণার দিন থেকেই পুলিশের বিশেষ স্কোয়াড মাঠে নেমেছে। মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, হয়রানি, হুমকি ও ভয় দেখিয়ে বিরোধী দলের কর্মীদের নির্বাচনী প্রচারণা থেকে দূরে রাখা, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব আইন ভঙ্গ, শত শত অভিযোগে কোনো কর্ণপাত না করে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন গোটা নির্বাচন ব্যবস্থাকে আবারো ধ্বংস করলো।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই নির্বাচন কমিশন গঠনের পর থেকেই আমরা বলে এসেছি- এই কমিশন আওয়ামী লীগের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট এবং অযোগ্য। তারা আচরণবিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশের নির্যাতন বন্ধ করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ মানতে পুলিশকে বাধ্য করতে পারেনি। বরিশালে কয়েকদিন আগে থেকেই বাইরে থেকে হাজার হাজার আওয়ামী কর্মী জড়ো করা হয়েছিল- কেন্দ্রগুলো থেকে বিএনপির এজেন্টদেরকে বের করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করছে। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করছে। লক্ষ্য একটি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ভিন্নরুপে প্রতিষ্ঠা করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকা। আওয়ামী লীগ এখন একটি গণবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছে। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনে তারা জয়ী হতে পারবে না বলেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ভোট ডাকাতি করে তারা জাতীয় সংসদের নির্বাচন করতে চায়। ২০১৪ সালের মতোই একতরফা নির্বাচন করার নীল নকশা করছে। জনগণ তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে দিবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমেই গণতন্ত্রের মাতা আপসহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলীয় সকল বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ স্বাধীন করতে হবে। বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। সরকারকে আহবান জানাবো কালবিলম্ব না করে অবিলম্বে উপরোক্ত দাবিগুলো মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিন সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন অনিয়মের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, রাজশাহীর আশপাশের উপজেলাগুলো থেকে হাজার হাজার লোক আনা হয়েছে। ২৮ জুলাই মধ্যরাত থেকে সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীদের গণ গ্রেফতার, বাড়িতে বাড়িতে হানা ও হুমকি বন্ধ হয়নি। পুরুষদের না পেলে মেয়েদের থানায় নিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং ধানের শীষের ২৪ জন এজেন্ট নিখোঁজ রয়েছেন বলে ধানের শীষের প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল অভিযোগ করেছেন।
বরিশালে বিভিন্ন কেন্দ্রে ধানের শীষের ব্যাজ লাগিয়ে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্টরা কাজ করেছে। ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ারকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা প্রায় এক ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পুলিশের সহায়তায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা ধানের শীষের এজেন্টদেরকে প্রায় সব কেন্দ্র থেকেই বের করে দেয় এবং অনেক কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টদের মারধরও করা হয়। কোথাও কোথাও ধানের শীষের এজেন্টদের সামনেই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নৌকা মার্কার ব্যালট পেপারে দেদারছে জালভোট দিয়ে বাক্সে ঢুকিয়েছে। ধানের শীষের সমর্থকদের ব্যালট পেপার নিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। নির্বাচন চলাকালে গণমাধ্যমের কর্মীদের উপরও আক্রমণ করা হয়েছে। বাসদের মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তীকে শারীরিকভাবে আঘাত করে গুরুতর আহত করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ইভিএমে ভোট দিতে ঢুকেছিলেন একজন পুরুষ। বরিশালে আওয়ামী লীগ ছাড়া সব প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেন। বরিশালের নৌকা মার্কার প্রাথী যেহেতু ক্ষমতাশালী পরিবারের সদস্য, সেখানে সরকারের বাহিনীগুলো তার পক্ষে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেছে। ব্যালট পেপারে হাত পাখার কোনো প্রতীকই ছিল না। ভোটের দিনের দু’তিন আগে থেকে প্রতিদিনই বরিশালে প্রায় দুশ’ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় হানা দিয়েছে।
সিলেটেও প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কেন্দ্রে ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টদের কমবেশী বের করে দেয়া হয়েছে। ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টরা অভিযোগ উত্থাপন করলেও প্রিজাইডিং অফিসাররা তা কানে তোলেননি। ভোট কেন্দ্র দখল করে গোলাগুলি করেছে আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী। এতে ধানের শীষের দু’জন সমর্থক গুরুতর আহত হয়েছে। অন্য দুই সিটি কর্পোরেশনের মতো এখানেও ধানের শীষের এজেন্টদেরকে মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্র দখল করে নৌকা মার্কায় একচেটিয়া সিল মারার উৎসবও চালিয়েছে আওয়ামী ক্যাডাররা।
ফখরুল বলেন, তিন সিটি নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের অধীনে হয়নি, বরং সরকারের অধীনে কমিশন কাজ করেছে। পূর্বের নির্বাচনগুলোতে ভোট কেন্দ্রে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া হতো, কিন্তু এবারে সাংবাদিকদের সে সুযোগ দেয়া হয়নি। প্রায় ২০০’র অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ১০০০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে। (নয়া দিগন্ত)