নিউইয়র্ক ১১:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

গোপালপুর পাক হানাদার মুক্ত দিবস ১০ ডিসেম্বর

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:১৪:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / ২০৯ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: আজ ১০ ডিসেম্বর। টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এ দিন টাঙ্গাইলের এ অঞ্চল পাক হানাদার মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রায় ৮ মাস পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক গোপালপুরবাসী হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর ১০ ডিসেম্বর মুক্তির স্বাদ লাভ করে। পাকিস্তানের দীর্ঘ ২৪ বৎসরের দুঃশাসন, বঞ্চনা, বৈষম্য, অত্যাচার, নির্যাতনের ফলে সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বিশ্বের বুকে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশ নামের দেশটির। ২৫ মার্চ ৭১দর কালো রাতে পাকহানাদার বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে তার ধারাবাহিকতা সারা দেশে চালাতে থাকে।

মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে গোপালপুরের বীর জনতা দেশের অবস্থা অনুধাবন করতে পেরে সংগঠিত হয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করে। টাঙ্গাইল জেলার উত্তরে অবস্থিত গোপালপুর থানা। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর নিকরাইল রানী দিনমনি হাইস্কুলে ৭০ জন কমান্ডারের মিটিংয়ের পর কাদেরিয়া বাহিনী প্রধান বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী গোপালপুর থানা আক্রমণ করার জন্য কয়েকজন কোম্পানি কমান্ডারকে নির্দেশ দেন।
বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী

নির্দেশ পাওয়া কোম্পানী কমান্ডাররা হলেন- নূর হোসেন তালুকদার আঙ্গুর কোম্পানী, আব্দুর রাজ্জাক ভোলা, আসাদুজ্জামান আরজু কোম্পানী, বকুল কোম্পানী, আব্দুল হাকিম কোম্পানী, নূরুল ইসলাম কোম্পানী, আনিসুর রহমান আনিস কোম্পানী এবং খন্দকার হাবিবুর রহমান কোম্পানী। এদের মধ্যে চারটি কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়ে পরামর্শ সভা করে গোপালপুর আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
পরিকল্পনা অনুসারে নূর হোসেন তালুকদার আঙ্গুর কোম্পানী গোপালপুর গরুহাটি দিয়ে আক্রমণ করবে। আসাদুজ্জামান আরজু কোম্পানী গোপালপুর দক্ষিণাংশ অর্থাৎ কীর্তনখোলা দিয়ে আক্রমণ করবে। আর আব্দুল হাকিম কোম্পানী পশ্চিম দিক থেকে মর্টার বাহিনী হিসেবে আক্রমণ করবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ৯ ডিসেম্বর গোপালপুর থানা আক্রমণ হয়। ১০ ডিসেম্বর দুপুর ৩ টায় ভারতীয় ৩টি মিগ-২১ বিমান গোপালপুর ও ঘাটাইল থানার উপর একযোগে ট্রাম্পিং করে। দুই থানার ক্যাম্পে অবস্থিত পাক সেনা ও রাজাকাররা বাঁচার তাগিদে রাতের আঁধারে গোপালপুর থেকে পালিয়ে যায়। এদিকে বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় গোপালপুর থানার সূতি, নন্দনপুর, ভূয়ার পাড়া, চরপাড়া, গোপালপুর গরুহাটিসহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয়া মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ দূরত্ব থেকে পাক সেনাদের ঘেরাও করে রেখেছিলেন।
পাক সেনাদের পালিয়ে যেতে দেখে মিঞা কমান্ডার ও চাঁদ মিঞার প্লার্টুনের মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ধরার জন্য ধাওয়া করেন। প্রায় ১ ঘণ্টা গোলাগুলি হয়। ১০ ডিসেম্বর সকাল ১০টার মধ্যে শত্রæ সেনা গোপালপুর থানা থেকে পালিয়ে যায়। বেলা ১১ টা ৩০ মিনিটে আরজু কোম্পানির চাঁদ মিঞার প্লার্টুনের মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করতে করতে গোপালপুর থানায় প্রবেশ করেন।
সেই সঙ্গে গোপালপুর থানা হানাদার মুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। সর্ব প্রথম চাঁদ মিঞা, সাহেব আলী, শামছুল আলম, আব্দুল লতিফ, আজাহার, কাদের তালুকদার, তোরাপ আলী সিকদার, ইসমাইল হোসেন মৃধা, আব্দুস সোবহান তুলা প্রমুখ গিয়ে থানায় উঠেন।
পরে আসাদুজ্জামান আরজু কমান্ডার, বিমল, হায়দার, জয়নাল, শুকুর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে থানায় প্রবেশ করেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্তরের মানুষ থানায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের অভিনন্দন জানান এবং তাদের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি খাবারের ব্যবস্থা করেন। ১০ ডিসেম্বর শনিবার গোপালপুর থানা পাক হানাদার মুক্ত হয়। বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উড়ে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

গোপালপুর পাক হানাদার মুক্ত দিবস ১০ ডিসেম্বর

প্রকাশের সময় : ০১:১৪:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

হককথা ডেস্ক: আজ ১০ ডিসেম্বর। টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এ দিন টাঙ্গাইলের এ অঞ্চল পাক হানাদার মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রায় ৮ মাস পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক গোপালপুরবাসী হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর ১০ ডিসেম্বর মুক্তির স্বাদ লাভ করে। পাকিস্তানের দীর্ঘ ২৪ বৎসরের দুঃশাসন, বঞ্চনা, বৈষম্য, অত্যাচার, নির্যাতনের ফলে সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বিশ্বের বুকে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশ নামের দেশটির। ২৫ মার্চ ৭১দর কালো রাতে পাকহানাদার বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে তার ধারাবাহিকতা সারা দেশে চালাতে থাকে।

মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে গোপালপুরের বীর জনতা দেশের অবস্থা অনুধাবন করতে পেরে সংগঠিত হয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করে। টাঙ্গাইল জেলার উত্তরে অবস্থিত গোপালপুর থানা। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর নিকরাইল রানী দিনমনি হাইস্কুলে ৭০ জন কমান্ডারের মিটিংয়ের পর কাদেরিয়া বাহিনী প্রধান বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী গোপালপুর থানা আক্রমণ করার জন্য কয়েকজন কোম্পানি কমান্ডারকে নির্দেশ দেন।
বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী

নির্দেশ পাওয়া কোম্পানী কমান্ডাররা হলেন- নূর হোসেন তালুকদার আঙ্গুর কোম্পানী, আব্দুর রাজ্জাক ভোলা, আসাদুজ্জামান আরজু কোম্পানী, বকুল কোম্পানী, আব্দুল হাকিম কোম্পানী, নূরুল ইসলাম কোম্পানী, আনিসুর রহমান আনিস কোম্পানী এবং খন্দকার হাবিবুর রহমান কোম্পানী। এদের মধ্যে চারটি কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়ে পরামর্শ সভা করে গোপালপুর আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
পরিকল্পনা অনুসারে নূর হোসেন তালুকদার আঙ্গুর কোম্পানী গোপালপুর গরুহাটি দিয়ে আক্রমণ করবে। আসাদুজ্জামান আরজু কোম্পানী গোপালপুর দক্ষিণাংশ অর্থাৎ কীর্তনখোলা দিয়ে আক্রমণ করবে। আর আব্দুল হাকিম কোম্পানী পশ্চিম দিক থেকে মর্টার বাহিনী হিসেবে আক্রমণ করবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ৯ ডিসেম্বর গোপালপুর থানা আক্রমণ হয়। ১০ ডিসেম্বর দুপুর ৩ টায় ভারতীয় ৩টি মিগ-২১ বিমান গোপালপুর ও ঘাটাইল থানার উপর একযোগে ট্রাম্পিং করে। দুই থানার ক্যাম্পে অবস্থিত পাক সেনা ও রাজাকাররা বাঁচার তাগিদে রাতের আঁধারে গোপালপুর থেকে পালিয়ে যায়। এদিকে বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় গোপালপুর থানার সূতি, নন্দনপুর, ভূয়ার পাড়া, চরপাড়া, গোপালপুর গরুহাটিসহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয়া মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ দূরত্ব থেকে পাক সেনাদের ঘেরাও করে রেখেছিলেন।
পাক সেনাদের পালিয়ে যেতে দেখে মিঞা কমান্ডার ও চাঁদ মিঞার প্লার্টুনের মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ধরার জন্য ধাওয়া করেন। প্রায় ১ ঘণ্টা গোলাগুলি হয়। ১০ ডিসেম্বর সকাল ১০টার মধ্যে শত্রæ সেনা গোপালপুর থানা থেকে পালিয়ে যায়। বেলা ১১ টা ৩০ মিনিটে আরজু কোম্পানির চাঁদ মিঞার প্লার্টুনের মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করতে করতে গোপালপুর থানায় প্রবেশ করেন।
সেই সঙ্গে গোপালপুর থানা হানাদার মুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। সর্ব প্রথম চাঁদ মিঞা, সাহেব আলী, শামছুল আলম, আব্দুল লতিফ, আজাহার, কাদের তালুকদার, তোরাপ আলী সিকদার, ইসমাইল হোসেন মৃধা, আব্দুস সোবহান তুলা প্রমুখ গিয়ে থানায় উঠেন।
পরে আসাদুজ্জামান আরজু কমান্ডার, বিমল, হায়দার, জয়নাল, শুকুর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে থানায় প্রবেশ করেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্তরের মানুষ থানায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের অভিনন্দন জানান এবং তাদের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি খাবারের ব্যবস্থা করেন। ১০ ডিসেম্বর শনিবার গোপালপুর থানা পাক হানাদার মুক্ত হয়। বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উড়ে।