কয়েকটা দিন যাক, আমি সব বলব : রাঙ্গা
- প্রকাশের সময় : ০২:৪৬:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / ৪০ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : রওশন এরশাদ সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা থাকবেন, নাকি জি এম কাদের নতুন করে বিরোধীদলীয় নেতা হবেন—এই ইস্যুতে জাতীয় পার্টিতে (জাপা) সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। আগের অবস্থান থেকে সরে রওশনের পক্ষ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করায় সাবেক মহাসচিব ও সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাকে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদপদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দলের গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের গতকাল বুধবার তাকে এই অব্যাহতি দেন। দলটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘ইতিমধ্যে এ আদেশ কার্যকর হয়েছে।’ অবশ্য দলের সাধারণ সদস্য ও সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ পদে এখনো বহাল আছেন রাঙ্গা।
‘দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে রওশন এরশাদ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না’—এমন কারণ দেখিয়ে তার পরিবর্তে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার জন্য সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে গত ১ সেপ্টেম্বর চিঠি দেয় দলটির পার্লামেন্টারি পার্টি। স্পিকারকে চিঠি দেওয়ার আগে ঐদিন দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত সংসদ ভবনে জি এম কাদেরের সভাপতিত্বে পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক হয়। বৈঠকে জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার সিদ্ধান্ত হয়।
চিঠিতে স্পিকার বরাবরে লেখা হয়েছে, ‘পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকে জাপার ২৬ জন এমপির মধ্যে ২৩ জন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, দীর্ঘদিন অসুস্থতার কারণে বেগম রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না- এমতাবস্থায় পার্টি চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠিতে স্পিকারকে অনুরোধ জানানো হয়। চিঠিতে স্বাক্ষর করেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। এরপর জাপার প্রেসিডিয়ামের বৈঠকেও জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে মনোনীত করা হয়।
স্পিকারকে দেওয়া চিঠিতে স্বাক্ষর করলেও এখন ভিন্ন কথা বলছেন রাঙ্গা। তিন দিন আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে রাঙ্গা বলেছেন, ‘স্পিকারকে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে দলের অনেক এমপির আপত্তি ছিল। কাজী ফিরোজ রশীদ (দলের কো-চেয়ারম্যান) বৈঠকে বলেছেন, আপনারা বিরোধীদলীয় নেতা হবেন, আমাকে বিরোধীদলীয় উপনেতা বানাবেন কি না আগে সেটা বলেন, তাহলে আমি স্বাক্ষর করব। তাছাড়া বৈঠকের আগে আমাদের এমপিদেরকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। কাজেই জি এম কাদের সাহেব যেটা করেছেন সেটা সঠিকভাবে হয়নি, গঠনতান্ত্রিক হয়নি।’ মূলত বেসরকারি টিভিকে দেওয়া এই সাক্ষাত্কারকে কেন্দ্র করেই রাঙ্গাকে দলীয় সব পদপদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন জি এম কাদের।
রাঙ্গাকে পদপদবি থেকে অব্যাহতির বিষয়ে জি এম কাদের গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘পদপদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ পদও তার এখন পর্যন্ত আছে। এ দুটি বিষয়ে পরে এবং সময়মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাঙ্গা তার প্রতিক্রিয়ায় গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘ক্ষমতা থাকলে উনি (জি এম কাদের) আমাকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করে দেখাক। হয় উনি রাজনীতি করবেন, না হয় আমি রাজনীতি করব। এটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলাম। যখন সবাই ওনার বিপক্ষে ছিল তখন ওনাকে তো আমিই চেয়ারম্যান বানিয়েছিলাম। উনি তো রংপুর যেতে পারবেন না, যেতে হলে হেলিকপ্টারে যেতে হবে। এর আগেও কাদের সাহেব গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে এবং কোনো কাউন্সিল ছাড়াই আমাকে মহাসচিব পদ থেকে বাদ দিয়েছেন। কয়েকটা দিন যাক, আমি সব বলব।’
রাঙ্গা ইত্তেফাককে আরো বলেন, ‘পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক হয়েছে ৩১ আগস্ট। সেটাকে দেখানো হয়েছে পরদিন ১ সেপ্টেম্বর। বৈঠকের আগে আমাদের (এমপিদের) কাউকে এজেন্ডা সম্পর্কে জানানো হয়নি। তারপর আমাকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে স্পিকারকে চিঠি দেওয়া হল। অথচ পরে রওশন ফোন করলে কাদের সাহেব বলেছেন, তিনি চিঠি দেননি, রাঙ্গা দিয়েছেন। ম্যাডাম (রওশন) পরে আমাকে ফোন করে এটা বলেছেন।’ রাঙ্গার এ বক্তব্যের বিষয়ে জি এম কাদের ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমার কী মাথা খারাপ! রওশন এরশাদের সঙ্গে কথার বিষয়ে যেটা বলা হচ্ছে সেটি সম্পূর্ণ অসত্য ও বানোয়াট।’
সম্প্রতি নতুন করে জাপায় এই বিবাদের সূত্রপাত ঘটে এরশাদপত্নী, জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশনের একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে। ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রওশন গত ৩১ আগস্ট নিজের স্বাক্ষরিত ঐ চিঠিতে জাপার কাউন্সিলের ঘোষণা দেন। দলের কাউন্সিলের সময়সীমা অতিক্রান্ত না হলেও আগামী ২৬ নভেম্বর দশম কাউন্সিল ডেকেছেন তিনি। এই চিঠির পরদিনই জাপার পার্লামেন্টারি পার্টি বৈঠক করে তার পরিবর্তে জি এম কাদেরকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা করার জন্য স্পিকারকে চিঠি দেয়।
হককথা/এমউএ



















