নিউইয়র্ক ০৩:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

কাদের সিদ্দিকীর আওয়ামী লীগে ফেরা হলো না?

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:০১:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৭০ বার পঠিত

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের আগেরদিন সবচেয়ে বড় চমক ছিলো বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ। গণভবনে সপরিবারে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী গিয়েছিলেন। সেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে তার দীর্ঘক্ষণ আলাপ হয়, কথা হয়। অনেকেই এরপরে মনে করেছিলেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী তার রাজনৈতিক জীবনের শেষ সময়ে এসে হয়তো আবার ঘরে ফিরবেন। আওয়ামী লীগের ঘরে জন্ম নেওয়া এই প্রবীণ নেতা শেষ বয়সে এসে আবার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেই ফিরে আসবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করছে যে, কাদের সিদ্দিকীর ঘরে ফেরা হলো না। বরং আওয়ামী লীগ সভাপতি তার সঙ্গে ব্যক্তিগত যে সুসম্পর্ক সেই সুসম্পর্কটি অব্যাহত রাখার পক্ষে, তাকে এখনই আওয়ামী লীগে নেয়ার পক্ষে নন। উল্লেখ্য যে, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি একমাত্র বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা যিনি মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য জীবিতদের মধ্যে সর্বোচ্চ খেতাব পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে তিনি অস্ত্র সমর্পণ করেছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর একান্ত প্রিয়ভাজন ব্যক্তি হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন।

১৭৯৫ সালের ১৫ আগস্টের পর যখন আওয়ামী লীগ হতবিহব্বল, দিকভ্রান্ত এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় তখন যারা প্রতিবাদের ঝাণ্ডা উড়িয়েছিলেন তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী অন্যতম এবং প্রধান। তিনি সেই সভায় অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের জন্য জনযুদ্ধেরও ডাক দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, এই জনযুদ্ধ সফল করার জন্য তিনি ভারতেও আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। দীর্ঘদিন ভারতে থাকার পর ১৯৯০ সালে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন এবং আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচনও করেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের মতপার্থক্য দেখা যায় এবং এই মতপার্থক্যের কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি দল ত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগ ত্যাগ করার পর তিনি আওয়ামী লীগের অন্যতম কট্টর একজন সমালোচক হিসেবে পরিচিত হন। বিশেষ করে সরকারবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে তাকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি এবং অন্যান্য সহযোগীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে দেখা গেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সময় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী সক্রিয় ছিলেন এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের ক্ষেত্রে যারা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তিনি আওয়ামী লীগের সমালোচনায় মুখর থাকে এবং সরকার পতনের লক্ষ্যে আন্দোলনের জন্য ডাক দেন। কিন্তু এরপরই আস্তে আস্তে কাদের সিদ্দিকী ম্রিয়মাণ হতে থাকেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সভাপতির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

গত এক বছরে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ বাড়িয়েছিলেন এবং তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন। এরকম প্রেক্ষাপটে কাউন্সিলের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতির সাথে তার সাক্ষাৎ আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা গুঞ্জন ছড়িয়েছিলো। অনেকের মনে করেছিলো যে, কাদের সিদ্দিকী হয়তো দলে ফিরবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শেখ হাসিনা দলকে এখন ঝামেলামুক্ত এবং নতুন বিতর্ক থেকে মুক্ত রাখতে চাইছেন। কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে, ঠিক আছে। কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে আপোষহীন। এজন্য তিনি কাদের সিদ্দিকীর প্রতি স্নেহশীল এবং কাদের সিদ্দিকীকে যথেষ্ট সম্মান করেন। কিন্তু তার মানে এই না যে তাকে আওয়ামী লীগে নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী সবাইকে আওয়ামী লীগ করতে হবে এমন নীতিতে না থেকে বরং কাদের সিদ্দিকী বাহিরে থেকে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করুক, এমনটি আওয়ামী লীগ সভাপতি চান বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা মনে করছেন। আর এরকম কারণে এ দফায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর আওয়ামী লীগে ফেরা হলো না।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

কাদের সিদ্দিকীর আওয়ামী লীগে ফেরা হলো না?

প্রকাশের সময় : ০২:০১:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের আগেরদিন সবচেয়ে বড় চমক ছিলো বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ। গণভবনে সপরিবারে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী গিয়েছিলেন। সেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে তার দীর্ঘক্ষণ আলাপ হয়, কথা হয়। অনেকেই এরপরে মনে করেছিলেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী তার রাজনৈতিক জীবনের শেষ সময়ে এসে হয়তো আবার ঘরে ফিরবেন। আওয়ামী লীগের ঘরে জন্ম নেওয়া এই প্রবীণ নেতা শেষ বয়সে এসে আবার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেই ফিরে আসবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করছে যে, কাদের সিদ্দিকীর ঘরে ফেরা হলো না। বরং আওয়ামী লীগ সভাপতি তার সঙ্গে ব্যক্তিগত যে সুসম্পর্ক সেই সুসম্পর্কটি অব্যাহত রাখার পক্ষে, তাকে এখনই আওয়ামী লীগে নেয়ার পক্ষে নন। উল্লেখ্য যে, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি একমাত্র বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা যিনি মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য জীবিতদের মধ্যে সর্বোচ্চ খেতাব পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে তিনি অস্ত্র সমর্পণ করেছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর একান্ত প্রিয়ভাজন ব্যক্তি হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন।

১৭৯৫ সালের ১৫ আগস্টের পর যখন আওয়ামী লীগ হতবিহব্বল, দিকভ্রান্ত এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় তখন যারা প্রতিবাদের ঝাণ্ডা উড়িয়েছিলেন তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী অন্যতম এবং প্রধান। তিনি সেই সভায় অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের জন্য জনযুদ্ধেরও ডাক দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, এই জনযুদ্ধ সফল করার জন্য তিনি ভারতেও আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। দীর্ঘদিন ভারতে থাকার পর ১৯৯০ সালে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন এবং আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচনও করেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের মতপার্থক্য দেখা যায় এবং এই মতপার্থক্যের কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি দল ত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগ ত্যাগ করার পর তিনি আওয়ামী লীগের অন্যতম কট্টর একজন সমালোচক হিসেবে পরিচিত হন। বিশেষ করে সরকারবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে তাকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি এবং অন্যান্য সহযোগীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে দেখা গেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সময় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী সক্রিয় ছিলেন এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের ক্ষেত্রে যারা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তিনি আওয়ামী লীগের সমালোচনায় মুখর থাকে এবং সরকার পতনের লক্ষ্যে আন্দোলনের জন্য ডাক দেন। কিন্তু এরপরই আস্তে আস্তে কাদের সিদ্দিকী ম্রিয়মাণ হতে থাকেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সভাপতির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

গত এক বছরে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ বাড়িয়েছিলেন এবং তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন। এরকম প্রেক্ষাপটে কাউন্সিলের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতির সাথে তার সাক্ষাৎ আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা গুঞ্জন ছড়িয়েছিলো। অনেকের মনে করেছিলো যে, কাদের সিদ্দিকী হয়তো দলে ফিরবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শেখ হাসিনা দলকে এখন ঝামেলামুক্ত এবং নতুন বিতর্ক থেকে মুক্ত রাখতে চাইছেন। কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে, ঠিক আছে। কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে আপোষহীন। এজন্য তিনি কাদের সিদ্দিকীর প্রতি স্নেহশীল এবং কাদের সিদ্দিকীকে যথেষ্ট সম্মান করেন। কিন্তু তার মানে এই না যে তাকে আওয়ামী লীগে নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী সবাইকে আওয়ামী লীগ করতে হবে এমন নীতিতে না থেকে বরং কাদের সিদ্দিকী বাহিরে থেকে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করুক, এমনটি আওয়ামী লীগ সভাপতি চান বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা মনে করছেন। আর এরকম কারণে এ দফায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর আওয়ামী লীগে ফেরা হলো না।