নিউইয়র্ক ০৮:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আরও বাড়ল করের চাপ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:৩৩:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩
  • / ১৯ বার পঠিত

বাংলাদেশ ডেস্ক : নতুন অর্থবছরেও সতর্ক আর সংকুলানমূলক নীতি গ্রহণের কথা জানালেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর পরেও সাড়ে ৭ শতাংশ উচ্চ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন তিনি।গতকাল বৃহস্পতিবার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি। বড় ব্যয়ের এই বাজেট বাস্তবায়নে করজাল বাড়ানোর কথা বলেছেন। করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে কিছুটা স্বস্তিও দিয়েছেন। কিন্তু কর আদায় বাড়াতে এবার আয় নেই এমন ব্যক্তিকেও করের আওতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ব্যক্তি পর্যায়ে রিটার্ন দিলেই তাকে ২ হাজার টাকা কর গুণতে হবে। অন্যদিকে ধনীদের ওপর সারচার্জ শিথিল করা হয়েছে। আগে ৩ কোটি টাকার ওপরে কেউ পরিসম্পদ দেখালে সারচার্জ দিতে হতো।

এবার এই সীমা বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা করা হয়েছে। কর কাঠামোর এমন প্রস্তাব করেছেন, যার ফলে নিত্য ব্যবহার্য পণ্য যেমন : মোবাইল ফোন, লেখার কলম, প্লাস্টিক পণ্য এমনকি অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র ব্যবহারেও খরচ বাড়বে। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে এবার ক্রমান্বয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি থেকে বেরিয়ে মেগা প্রকল্প এবং প্রবৃদ্ধি সঞ্চারক প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী। বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসায় দেশের বাজারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে এমন প্রত্যাশাই করা হয়েছে বাজেটে। তবে বাজেটে করের চাপ শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ওপরই পড়বে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নিত্যপণ্যে করে ছাড়ের বিষয়গুলো আসেনি। ফলে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগ বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।

নতুন দিকগুলোর মধ্যে এবার বাজেটে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর প্রত্যাশা এসেছে। অর্থমন্ত্রী নতুন অর্থবছর থেকেই এটি চালু করার প্রত্যাশা করেছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কথা এসেছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ভাতা বাড়ানো, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এবং আরও বেশি মানুষকে এর আওতায় আনার কথা বলেছেন। জ্বালানি খাতে ফর্মুলাভিত্তিক মূল্য সমন্বয়ের স্থায়ী পদ্ধতি নির্ধারণে একটি পথনকশা সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন। বাজেট বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের কিছু উল্লেখ না করলেও এবার সেইসব শর্তের প্রতিফলন স্পষ্ট। বিশেষ করে কর আদায় বাড়াতে বিভিন্ন ছাড় কমে গেছে। অনেক আমদানি পণ্যের শুল্ক বেড়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, অপরিহার্য কোনো কারণ ছাড়া এসআরও জারি করে সুবিধা দেওয়া হবে না। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, মেরামত, সংরক্ষণ বা পরিচালনার জন্য যেসব পণ্য বা উপাদান সংগ্রহ বা ক্রয় করা হবে, সেগুলোর কর অব্যাহতি বা রেয়াতি হারের জন্য আবেদন করা যাবে না। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে।

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১৬ শতাংশ রাজস্ব বাড়ানোর যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেটি বাস্তবায়নে করের আওতা বাড়াতে হবে। যদি না বাড়ে, তাহলে সেই ভার ব্যবসায়ীদের ওপরই পড়বে। তবে এবারের বাজেটে ২৩৪টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক এবং ১৯১টি পণ্যের রেগুলেটরি ডিউটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। এজন্য কিছু সুবিধা আসবে ব্যবসায়ীদের জন্য।

বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে -‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে।’ টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের এটা পঞ্চম বাজেট। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালেরও এটি পঞ্চম বাজেট। বাজেট বক্তৃতায় অর্থনীতির সার্বিক চিত্রও তুলে ধরেন তিনি। রাজস্ব আদায় বাড়াতে একগুচ্ছ উদ্যোগের কথা রয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চাপে থাকা অর্থনীতির বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ তুলে ধরেছেন তিনি। তবে নির্বাচনি বছরে কর ছাড়ের প্রত্যাশা থাকলেও করপোরেট করে পরিবর্তন আনা হয়নি। অবশ্য আগের দুই বছর করপোরেট কর কমানো হয়েছে। নেই শেয়ারবাজার নিয়ে বক্তব্য। সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারের লেনদেন তলানিতে থাকলেও পরিস্থিতি উত্তরণে কোনো নির্দেশনা নেই। বৈশ্বিক অর্থনীতির চাপ কমে আসবে, এমন প্রত্যাশায় উচ্চ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন হয়েছে মন্ত্রিসভায়। এরপর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এতে সম্মতি দেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতবারের মতো এবারও তিনি বাজেটের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো অডিও ভিজ্যুয়াল পদ্ধতিতে তুলে ধরেন। পূর্ণাঙ্গ বাজেট বক্তৃতা পঠিত বলে গণ্য করার জন্য অনুরোধ করেন। বাজেট বক্তৃতার শুরুতে তিনি গত দেড় দশকে সরকারের অর্জনগুলো তুলে ধরেন।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বিশাল এ বাজেটের ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। প্রস্তাবিত এ বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির সাড়ে ৭ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

মোট বাজেট বরাদ্দের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে এবং পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতি পূরণে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা এবং জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য বাড়ানোর ফলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ সংকুচিত হতে পারে।

বাজেট পাশ হবে ২৬ জুন : ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আগামী ২৬ জুন পাশ হবে। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অধিবেশন ২৬ জুন পর্যন্ত চলার পর ২ জুলাই পর্যন্ত মুলতুবি করা হবে। ২৬ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পাশ হবে। বাজেটের ওপর মোট ৪০ ঘণ্টা আলোচনা হবে। সংসদের বৈঠক প্রতিদিন বিকাল ৫টায় শুরু হবে। প্রতি বছর বাজেট অর্থবছরের শেষ কার্যদিবস ৩০ জুন বা তার আগের দিন (২৯ জুন) পাশ হলেও এবার কোরবানির ঈদের কারণে কিছুটা আগেভাগে পাশ করা হবে। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
সুমি/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আরও বাড়ল করের চাপ

প্রকাশের সময় : ১০:৩৩:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : নতুন অর্থবছরেও সতর্ক আর সংকুলানমূলক নীতি গ্রহণের কথা জানালেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর পরেও সাড়ে ৭ শতাংশ উচ্চ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন তিনি।গতকাল বৃহস্পতিবার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি। বড় ব্যয়ের এই বাজেট বাস্তবায়নে করজাল বাড়ানোর কথা বলেছেন। করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে কিছুটা স্বস্তিও দিয়েছেন। কিন্তু কর আদায় বাড়াতে এবার আয় নেই এমন ব্যক্তিকেও করের আওতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ব্যক্তি পর্যায়ে রিটার্ন দিলেই তাকে ২ হাজার টাকা কর গুণতে হবে। অন্যদিকে ধনীদের ওপর সারচার্জ শিথিল করা হয়েছে। আগে ৩ কোটি টাকার ওপরে কেউ পরিসম্পদ দেখালে সারচার্জ দিতে হতো।

এবার এই সীমা বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা করা হয়েছে। কর কাঠামোর এমন প্রস্তাব করেছেন, যার ফলে নিত্য ব্যবহার্য পণ্য যেমন : মোবাইল ফোন, লেখার কলম, প্লাস্টিক পণ্য এমনকি অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র ব্যবহারেও খরচ বাড়বে। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে এবার ক্রমান্বয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি থেকে বেরিয়ে মেগা প্রকল্প এবং প্রবৃদ্ধি সঞ্চারক প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী। বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসায় দেশের বাজারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে এমন প্রত্যাশাই করা হয়েছে বাজেটে। তবে বাজেটে করের চাপ শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ওপরই পড়বে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নিত্যপণ্যে করে ছাড়ের বিষয়গুলো আসেনি। ফলে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগ বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।

নতুন দিকগুলোর মধ্যে এবার বাজেটে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর প্রত্যাশা এসেছে। অর্থমন্ত্রী নতুন অর্থবছর থেকেই এটি চালু করার প্রত্যাশা করেছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কথা এসেছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ভাতা বাড়ানো, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এবং আরও বেশি মানুষকে এর আওতায় আনার কথা বলেছেন। জ্বালানি খাতে ফর্মুলাভিত্তিক মূল্য সমন্বয়ের স্থায়ী পদ্ধতি নির্ধারণে একটি পথনকশা সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন। বাজেট বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের কিছু উল্লেখ না করলেও এবার সেইসব শর্তের প্রতিফলন স্পষ্ট। বিশেষ করে কর আদায় বাড়াতে বিভিন্ন ছাড় কমে গেছে। অনেক আমদানি পণ্যের শুল্ক বেড়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, অপরিহার্য কোনো কারণ ছাড়া এসআরও জারি করে সুবিধা দেওয়া হবে না। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, মেরামত, সংরক্ষণ বা পরিচালনার জন্য যেসব পণ্য বা উপাদান সংগ্রহ বা ক্রয় করা হবে, সেগুলোর কর অব্যাহতি বা রেয়াতি হারের জন্য আবেদন করা যাবে না। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে।

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১৬ শতাংশ রাজস্ব বাড়ানোর যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেটি বাস্তবায়নে করের আওতা বাড়াতে হবে। যদি না বাড়ে, তাহলে সেই ভার ব্যবসায়ীদের ওপরই পড়বে। তবে এবারের বাজেটে ২৩৪টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক এবং ১৯১টি পণ্যের রেগুলেটরি ডিউটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। এজন্য কিছু সুবিধা আসবে ব্যবসায়ীদের জন্য।

বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে -‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে।’ টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের এটা পঞ্চম বাজেট। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালেরও এটি পঞ্চম বাজেট। বাজেট বক্তৃতায় অর্থনীতির সার্বিক চিত্রও তুলে ধরেন তিনি। রাজস্ব আদায় বাড়াতে একগুচ্ছ উদ্যোগের কথা রয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চাপে থাকা অর্থনীতির বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ তুলে ধরেছেন তিনি। তবে নির্বাচনি বছরে কর ছাড়ের প্রত্যাশা থাকলেও করপোরেট করে পরিবর্তন আনা হয়নি। অবশ্য আগের দুই বছর করপোরেট কর কমানো হয়েছে। নেই শেয়ারবাজার নিয়ে বক্তব্য। সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারের লেনদেন তলানিতে থাকলেও পরিস্থিতি উত্তরণে কোনো নির্দেশনা নেই। বৈশ্বিক অর্থনীতির চাপ কমে আসবে, এমন প্রত্যাশায় উচ্চ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন হয়েছে মন্ত্রিসভায়। এরপর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এতে সম্মতি দেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতবারের মতো এবারও তিনি বাজেটের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো অডিও ভিজ্যুয়াল পদ্ধতিতে তুলে ধরেন। পূর্ণাঙ্গ বাজেট বক্তৃতা পঠিত বলে গণ্য করার জন্য অনুরোধ করেন। বাজেট বক্তৃতার শুরুতে তিনি গত দেড় দশকে সরকারের অর্জনগুলো তুলে ধরেন।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বিশাল এ বাজেটের ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। প্রস্তাবিত এ বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির সাড়ে ৭ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

মোট বাজেট বরাদ্দের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে এবং পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতি পূরণে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা এবং জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য বাড়ানোর ফলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ সংকুচিত হতে পারে।

বাজেট পাশ হবে ২৬ জুন : ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আগামী ২৬ জুন পাশ হবে। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অধিবেশন ২৬ জুন পর্যন্ত চলার পর ২ জুলাই পর্যন্ত মুলতুবি করা হবে। ২৬ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পাশ হবে। বাজেটের ওপর মোট ৪০ ঘণ্টা আলোচনা হবে। সংসদের বৈঠক প্রতিদিন বিকাল ৫টায় শুরু হবে। প্রতি বছর বাজেট অর্থবছরের শেষ কার্যদিবস ৩০ জুন বা তার আগের দিন (২৯ জুন) পাশ হলেও এবার কোরবানির ঈদের কারণে কিছুটা আগেভাগে পাশ করা হবে। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
সুমি/হককথা