নিউইয়র্ক ০৮:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আমিনবাজারে ছয় ছাত্র হত্যা : ফাঁসির আদেশ ১৩ আসামির

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৫০:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ১২ বার পঠিত

ঢাকা ডেস্ক: রাজধানীর সাভারের আমিনবাজারে ডাকাত তকমা লাগিয়ে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় ১৩ আসামির মৃত্যুদÐ এবং ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদÐ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ইসমত জাহান এ রায় ঘোষণা করেন। এছাড়া রায়ে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৫ জনকে খালাস এবং তিন আসামি মারা যাওয়ায় তাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতের অনুমোদনসাপেক্ষে মৃত্যুদÐপ্রাপ্তদের ফাঁসিতে লটকিয়ে রায় কার্যকরের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-আব্দুল মালেক, সাঈদ, আব্দুর রশিদ, ইসমাইল হোসেন রেপু, নিহর ওরফে জমশের আলী, মীর হোসেন, মজিবুর রহমান ওরফে বরিশাইল্যা মুজিবুর, আনোয়ার হোসেন, রজব আলী, আলম, মো. রানা, আব্দুল হামিদ ও মো. আসলাম মিয়া। মৃত্যুদÐের পাশাপাশি এদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া অপর এক ধারায় প্রত্যেক আসামিকে সাত বছর করে কারাদÐ ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদÐ দেওয়া হয়। মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত ১৩ আসামির মধ্যে শুধু মজিবুর রহমান ওরফে বরিশাইল্যা মুজিবুর পলাতক।
যাবজ্জীবন দÐপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- শাহিন আহমেদ, মো. ফরিদ খান, মো. রাজিব হোসেন, মো. ওয়াসিম, সাত্তার, মো. সেলিম, মনির হোসেন, আলমগীর, মোবারক হোসেন, অখিল খন্দকার, বশির, রুবেল, নূর ইসলাম, শাহাদাত হোসেন, টুটুল, মাসুদ, মোকলেস, টোটন ও সাইফুল। যাবজ্জীবন কারাদÐের পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া অপর এক ধারায় এদের প্রত্যেকের ৭ বছর কারাদÐ ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদÐ দেওয়া হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদÐপ্রাপ্ত ১৯ আসামির মধ্যে সাত্তার, টোটন, শাহিন আহমেদ ও মোবারক হোসেন পলাতক।
রায় ঘোষণা উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বেলা ১১টা ১০ মিনিটের দিকে আসামিদের আদালতে তোলা শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিচারক এজলাসে প্রবেশ করেন এবং রায় ঘোষণা শুরু করেন। বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটে বিচারক সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন। এদিন কারাগারে থাকা ৪৫ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। তবে রায় দ্রæত কার্যকর হওয়াই তাদের একমাত্র দাবি। নিহত টিপু সুলতানের মা কাজী নাজমা সুলতানা বলেন, সব আসামির ফাঁসি আশা করেছিলাম। তাহলে আরও খুশি হতাম। তবে এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এতেও শুকরিয়া আদায় করছি। আসামিদের যত দ্রæত সম্ভব মৃত্যুদÐ কার্যকরের দাবি করেন তিনি।
নিহত পলাশের বাবা মজিবুর রহমান বলেন, রায়ে সন্তুষ্ট। ন্যায়বিচার পেয়েছি। এখন দ্রæত এ রায় কার্যকর করা হোক। নিহত ইব্রাহিম খলিলের বাবা আবু তাহের বলেন, এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আসামিরা যেন উচ্চ আদালতে পার না পায়। দ্রæত এ রায় কার্যকর করা হোক।
নিহতদের সঙ্গে থাকা বন্ধু আল-আমিন গুরুতর আহত হলেও পরে প্রাণে বেঁচে যান। রায়ের পর তার বাবা হবি ব্যাপারী আদালত প্রাঙ্গণে বলেন, আল আমিনের তো আর কিছুই নেই। ওরে এমনভাবে মারছে যে স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারেনি। ওরে পিঠে, মাথায় এমনভাবে কুপিয়েছে যে ১০ বছরেও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। ওই সময় তো ভেবেছিলাম মারাই গেছে।
চার বছর আগে বিয়ে করেছে আল আমিন। আরাফাত রহমান নামের একটি ছেলে আছে তার। অটো চালিয়ে কোনোমতে জীবনধারণ করছে। তিনি বলেন, অনেক আশা ছিল ছেলেকে আইনজীবী বানাব। কিন্তু তা আর হলো না। ওকে এমনভাবে মারছে যে, সেই ঘটনা মনে পড়লে সে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এখনো ঘুমের ঘোরে আঁতকে ওঠে। জানি না, কবে যে ছেলেটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আনন্দ চন্দ্র বিশ্বাস ও শাকিলা জিয়াছমিনা মিতু বলেন, রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ মামলায় ৯১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হয়।
আর ১৪ আসামি দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে আদালত সুন্দর, সুচিন্তায় এ রায় ঘোষণা করেছেন। খালাস দিয়েছেন ২৫ জনকে। সাজা দিয়েছেন ৩২ জনকে। মারা যাওয়ায় তিনজনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন কারাদÐপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ৫ জন পলাতক আছে। বাকিরা রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী শিউলী আক্তার খান ও শেখ সিরাজ উদ্দিন বলেন, রায়ে আসামিরা ন্যায়বিচার পায়নি। এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। তারা বলেন, মামলাটি গণপিটুনির।
এ মামলায় কোনো চাক্ষুস সাক্ষী নেই। মামলার তদন্তও ঠিক হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। উচ্চ আদালতে এ সাজা টিকবে না বলে আমরা আশাবাদী। এদিকে রায় ঘোষণা শেষে কয়েকজন আসামির স্বজনদের আদালত প্রাঙ্গণে আহাজারি করতে দেখা যায়।
২০১১ সালের রাতে ১৭ জুলাই শবেবরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলাচরে ডাকাত সন্দেহে মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের তিন শিক্ষার্থীসহ ছয় কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহতরা হলেন- তৌহিদুর রহমান পলাশ, ইব্রাহিম খলিল, কামরুজ্জামান কান্ত, টিপু সুলতান, সিতাব জাবির মুনিব ও শামস রহিম শামীম। নিহতদের সঙ্গে থাকা বন্ধু আল-আমিন গুরুতর আহত হলেও পরে প্রাণে বেঁচে যান।
ঘটনার পর কথিত ডাকাতির অভিযোগে বেঁচে যাওয়া আল-আমিনসহ নিহতদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা করেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী আবদুল মালেক। ওই সময় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা গ্রামবাসীকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করে।
পুলিশ, সিআইডির হাত ঘুরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তভার র‌্যাবের হাতে দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারী র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা নিরীহ ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে জখম করে। পরে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে মসজিদের মাইকে সবাইকে ডাকাত আসার ঘোষণা দেয় এবং থানায় মিথ্যা মামলা করে। বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দ্বারা আঘাত করে তাদের হত্যা করা হয়।
২০১৩ সালের ৮ জুলাই ৬০ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র ভিকটিম আল-আমিনকে একই ঘটনায় করা ডাকাতি মামলা থেকে সেদিন অব্যাহতি দেওয়া হয়। মামলায় ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। ২২ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করেন আদালত।

সেদিন যা ঘটেছিল: ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবেবরাতের রাতে সাভার উপজেলার আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলা চরে ডাকাত আখ্যায়িত করে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পিটুনিতে শামস রহিম, তৌহিদুর রহমান, ইব্রাহিম খলিল, কামরুজ্জামান, টিপু সুলতান ও সিতাব জাবির নিহত হন, প্রাণে বেঁচে যান তাঁদের বন্ধু আল-আমিন। ২০১৬ সালে তিনি আদালতে সাক্ষ্য দেন। আল-আমিন বলেছিলেন, তিনিসহ সাত বন্ধু দারুসসালাম এলাকার একটি মসজিদে নামাজ পড়তে যান।(দৈনিক যুগান্তর)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আমিনবাজারে ছয় ছাত্র হত্যা : ফাঁসির আদেশ ১৩ আসামির

প্রকাশের সময় : ০৪:৫০:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২১

ঢাকা ডেস্ক: রাজধানীর সাভারের আমিনবাজারে ডাকাত তকমা লাগিয়ে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় ১৩ আসামির মৃত্যুদÐ এবং ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদÐ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ইসমত জাহান এ রায় ঘোষণা করেন। এছাড়া রায়ে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৫ জনকে খালাস এবং তিন আসামি মারা যাওয়ায় তাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতের অনুমোদনসাপেক্ষে মৃত্যুদÐপ্রাপ্তদের ফাঁসিতে লটকিয়ে রায় কার্যকরের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-আব্দুল মালেক, সাঈদ, আব্দুর রশিদ, ইসমাইল হোসেন রেপু, নিহর ওরফে জমশের আলী, মীর হোসেন, মজিবুর রহমান ওরফে বরিশাইল্যা মুজিবুর, আনোয়ার হোসেন, রজব আলী, আলম, মো. রানা, আব্দুল হামিদ ও মো. আসলাম মিয়া। মৃত্যুদÐের পাশাপাশি এদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া অপর এক ধারায় প্রত্যেক আসামিকে সাত বছর করে কারাদÐ ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদÐ দেওয়া হয়। মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত ১৩ আসামির মধ্যে শুধু মজিবুর রহমান ওরফে বরিশাইল্যা মুজিবুর পলাতক।
যাবজ্জীবন দÐপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- শাহিন আহমেদ, মো. ফরিদ খান, মো. রাজিব হোসেন, মো. ওয়াসিম, সাত্তার, মো. সেলিম, মনির হোসেন, আলমগীর, মোবারক হোসেন, অখিল খন্দকার, বশির, রুবেল, নূর ইসলাম, শাহাদাত হোসেন, টুটুল, মাসুদ, মোকলেস, টোটন ও সাইফুল। যাবজ্জীবন কারাদÐের পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া অপর এক ধারায় এদের প্রত্যেকের ৭ বছর কারাদÐ ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদÐ দেওয়া হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদÐপ্রাপ্ত ১৯ আসামির মধ্যে সাত্তার, টোটন, শাহিন আহমেদ ও মোবারক হোসেন পলাতক।
রায় ঘোষণা উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বেলা ১১টা ১০ মিনিটের দিকে আসামিদের আদালতে তোলা শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিচারক এজলাসে প্রবেশ করেন এবং রায় ঘোষণা শুরু করেন। বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটে বিচারক সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন। এদিন কারাগারে থাকা ৪৫ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। তবে রায় দ্রæত কার্যকর হওয়াই তাদের একমাত্র দাবি। নিহত টিপু সুলতানের মা কাজী নাজমা সুলতানা বলেন, সব আসামির ফাঁসি আশা করেছিলাম। তাহলে আরও খুশি হতাম। তবে এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এতেও শুকরিয়া আদায় করছি। আসামিদের যত দ্রæত সম্ভব মৃত্যুদÐ কার্যকরের দাবি করেন তিনি।
নিহত পলাশের বাবা মজিবুর রহমান বলেন, রায়ে সন্তুষ্ট। ন্যায়বিচার পেয়েছি। এখন দ্রæত এ রায় কার্যকর করা হোক। নিহত ইব্রাহিম খলিলের বাবা আবু তাহের বলেন, এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আসামিরা যেন উচ্চ আদালতে পার না পায়। দ্রæত এ রায় কার্যকর করা হোক।
নিহতদের সঙ্গে থাকা বন্ধু আল-আমিন গুরুতর আহত হলেও পরে প্রাণে বেঁচে যান। রায়ের পর তার বাবা হবি ব্যাপারী আদালত প্রাঙ্গণে বলেন, আল আমিনের তো আর কিছুই নেই। ওরে এমনভাবে মারছে যে স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারেনি। ওরে পিঠে, মাথায় এমনভাবে কুপিয়েছে যে ১০ বছরেও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। ওই সময় তো ভেবেছিলাম মারাই গেছে।
চার বছর আগে বিয়ে করেছে আল আমিন। আরাফাত রহমান নামের একটি ছেলে আছে তার। অটো চালিয়ে কোনোমতে জীবনধারণ করছে। তিনি বলেন, অনেক আশা ছিল ছেলেকে আইনজীবী বানাব। কিন্তু তা আর হলো না। ওকে এমনভাবে মারছে যে, সেই ঘটনা মনে পড়লে সে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এখনো ঘুমের ঘোরে আঁতকে ওঠে। জানি না, কবে যে ছেলেটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আনন্দ চন্দ্র বিশ্বাস ও শাকিলা জিয়াছমিনা মিতু বলেন, রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ মামলায় ৯১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হয়।
আর ১৪ আসামি দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে আদালত সুন্দর, সুচিন্তায় এ রায় ঘোষণা করেছেন। খালাস দিয়েছেন ২৫ জনকে। সাজা দিয়েছেন ৩২ জনকে। মারা যাওয়ায় তিনজনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন কারাদÐপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ৫ জন পলাতক আছে। বাকিরা রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী শিউলী আক্তার খান ও শেখ সিরাজ উদ্দিন বলেন, রায়ে আসামিরা ন্যায়বিচার পায়নি। এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। তারা বলেন, মামলাটি গণপিটুনির।
এ মামলায় কোনো চাক্ষুস সাক্ষী নেই। মামলার তদন্তও ঠিক হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। উচ্চ আদালতে এ সাজা টিকবে না বলে আমরা আশাবাদী। এদিকে রায় ঘোষণা শেষে কয়েকজন আসামির স্বজনদের আদালত প্রাঙ্গণে আহাজারি করতে দেখা যায়।
২০১১ সালের রাতে ১৭ জুলাই শবেবরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলাচরে ডাকাত সন্দেহে মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের তিন শিক্ষার্থীসহ ছয় কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহতরা হলেন- তৌহিদুর রহমান পলাশ, ইব্রাহিম খলিল, কামরুজ্জামান কান্ত, টিপু সুলতান, সিতাব জাবির মুনিব ও শামস রহিম শামীম। নিহতদের সঙ্গে থাকা বন্ধু আল-আমিন গুরুতর আহত হলেও পরে প্রাণে বেঁচে যান।
ঘটনার পর কথিত ডাকাতির অভিযোগে বেঁচে যাওয়া আল-আমিনসহ নিহতদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা করেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী আবদুল মালেক। ওই সময় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা গ্রামবাসীকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করে।
পুলিশ, সিআইডির হাত ঘুরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তভার র‌্যাবের হাতে দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারী র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা নিরীহ ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে জখম করে। পরে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে মসজিদের মাইকে সবাইকে ডাকাত আসার ঘোষণা দেয় এবং থানায় মিথ্যা মামলা করে। বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দ্বারা আঘাত করে তাদের হত্যা করা হয়।
২০১৩ সালের ৮ জুলাই ৬০ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র ভিকটিম আল-আমিনকে একই ঘটনায় করা ডাকাতি মামলা থেকে সেদিন অব্যাহতি দেওয়া হয়। মামলায় ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। ২২ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করেন আদালত।

সেদিন যা ঘটেছিল: ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবেবরাতের রাতে সাভার উপজেলার আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলা চরে ডাকাত আখ্যায়িত করে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পিটুনিতে শামস রহিম, তৌহিদুর রহমান, ইব্রাহিম খলিল, কামরুজ্জামান, টিপু সুলতান ও সিতাব জাবির নিহত হন, প্রাণে বেঁচে যান তাঁদের বন্ধু আল-আমিন। ২০১৬ সালে তিনি আদালতে সাক্ষ্য দেন। আল-আমিন বলেছিলেন, তিনিসহ সাত বন্ধু দারুসসালাম এলাকার একটি মসজিদে নামাজ পড়তে যান।(দৈনিক যুগান্তর)