নিউইয়র্ক ০৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আমিই ছিলাম খালেদা জিয়ার টার্গেট

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৬:১৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১
  • / ৩৩ বার পঠিত

 ঢাকা ডেস্ক :  আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সব সময় আমিই ছিলাম খালেদা জিয়ার টার্গেট। বলেছিলেন-আমি নাকি প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও কোনোদিন হতে পারব না। তারপর বোমা পোঁতা হলো কোটালীপাড়ায়।খবর যুগান্তর

এরপর তার বক্তব্য আওয়ামী লীগ শত বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এরপর গ্রেনেড হামলা হলো। আমার মনে হয় এই কথাগুলো আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।

গণভবনে শুক্রবার বিকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। আমাদের মিটিং পর্যন্ত করতে দেয়নি।

একজন আমাকে শুধু হাত দেখিয়েছিল বলে তার দাড়ি টেনে টেনে তুলেছিল। আমাদের বহু নেতাকর্মীর হাতের কব্জি, পা কেটে দিয়েছিল। চোখ তুলে ফেলা ছাড়াও দখল করেছিল আমাদের বাড়িঘর। তাদের অত্যাচারে আমাদের ২০ হাজার নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করে। তারা আওয়ামী লীগের নাম নিশানাও মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল।

বিভিন্ন সরকারের সময়ে দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর তার যে অত্যাচার, আমরা আওয়ামী লীগ অফিসে পর্যন্ত বসতে পারতাম না, যেতে পারতাম না, ঢুকতে পারতাম না।

আমাদের সিআরআই বন্ধ করে দিয়ে ১৬টা কম্পিউটার, তিনশ ফাইল, দশ হাজার বই, নগদ টাকা-পয়সা সবকিছু নিয়ে তালা মেরে দেয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আবার সেই অফিস আমরা খুলতে পেরেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে অকথ্য অত্যাচার করা হয়েছে। আমাদের অগণিত নেতাকর্মীকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। সেখানে কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। শুধু আমাদের ওপর অত্যাচার হয়েছে তাই নয়, সেনাপ্রধান মোস্তাফিজ, অসুস্থ ছিল, তাকেও সিএমএইচে ভর্তি হতে দেয়নি।

অন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে স্ট্রেচারে করে মামলায় হাজির করা হয়েছে। বিমানবাহিনী প্রধান জামাল উদ্দিন সাহেবের মতো সৎ একটা মানুষ, সাধারণ একটা ঘড়ি চুরির মামলা দিয়ে তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

সেখানে তাকে কোনো ডিভিশনও দেওয়া হয়নি। তাকে মাত্র দুটি কম্বল দিয়েছিল। ফ্লোরে থাকতে হয়েছে তাকে। এরা যেভাবে অমানবিক কাজ করেছে, এ রকম বহু কাহিনি আছে।

নিজেসহ দলের আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তাদের ওপর নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার মনে হয় এখানে এমন কেউই নেই যার ওপর অত্যাচার হয়নি।

কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়নি বা তাদের বাধা দেওয়া হয়নি। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি।

২০০৮ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। এই নির্বাচন নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন তোলেনি। সেই নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি নিয়ে ক্ষমতায় আসি। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ যে কাজ করেছে তার ফলে জনগণ আমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে।

ভোট ঠেকানোর নামে মানুষ পোড়ানো থেকে শুরু করে যা করেছে, সেটা দেশের মানুষ ভুলে যায় কীভাবে? একেকটা নির্বাচনে আগে তারা অত্যাচার নির্যাতন করেছে। বলেছে-নির্বাচন করবে না। তারা দেখাতে চেয়েছে, তারা অংশ নেয়নি তাই নির্বাচন হয়নি। এটাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, হাইকোর্টের একটা রায় আছে, সেখানে সংবিধান লঙ্ঘন করে মার্শাল ল’ জারি করে যারা ক্ষমতা দখল করেছে, সেটাকে অবৈধ বলা হয়েছে।

জিয়াউর রহমান শুধু মার্শাল ল’ নয়, আর্মি রুলস ল’, সেটাও ভঙ্গ করেছিল। কারণ সেখানে স্পষ্ট লেখা ছিল- সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় তারা নির্বাচন করতে পারবে না বা কোনো রাজনীতি করতে পারবে না।

কিন্তু জিয়া একাধারে সেনাপ্রধান, সেই সঙ্গে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়। পরে আবার হ্যাঁ, না ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে। এরপর আবার রাজনৈতিক দল গঠন করে। সেই দলই হচ্ছে বিএনপি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে গড়া দল হচ্ছে এই বিএনপি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ লক্ষচ্যুত হয়েছিল। পঁচাত্তরের পর দেশে ১৯টি সামরিক ক্যু হয়েছে। এর ফলে সামরিক বাহিনীর অনেক সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। কোর্ট মার্শাল হয়েছে, ফায়ারিং স্কোয়ার্ড হয়েছে এবং ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

কয়েকদিন আগেও বহু স্বজন একত্রিত হয়ে তাদের স্বজন হত্যার বিচার চেয়েছে। তারা লাশও খুঁজে পায়নি। লাশ গুম করে দেওয়া হয়েছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই এই ঘটনাগুলো ঘটায়। কাজেই তাদের সেই দাবির একটা তদন্ত হোক। কেন তারা স্বজনদের লাশগুলো পেল না।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি এবং রেহানা দেশে আসতে পারিনি। আমাদের রিফিউজির মতো থাকতে হয়েছে। ১৯৮১ সালে যখন আমাকে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত করা হয়, তখন অনেক বাধা ছিল, কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দেশে ফিরে আসব।

এরপর আমি চেষ্টা করেছিলাম সংগঠনগুলো গড়ে তোলার। এ সময় পঁচাত্তর-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে জাতির পিতার খুনিদের বিচার না করে তাদের পুরস্কৃত করা ও বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া, নির্বাচনি প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া এবং সংসদে বসার সুযোগ করে দেওয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

অপপ্রচারের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান : অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশে যখন উন্নয়ন হচ্ছে, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, অযথা, অহেতুক দেশের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চলছে।

এমনকি আমরা উন্নয়নশীল দেশ কেন হলাম এটাও সঠিক না বলে কিছু মানুষ অপপ্রচার করে। এটা হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক। এরা কারা? এদের উদ্দেশ্য কী? এরা কী চায়? আমাদের ওয়ার্কিং কমিটির প্রত্যেক সদস্যকে এই বিষয়গুলোর সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, জানতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। যা যা প্রয়োজন করতে হবে।

জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে মন্তব্য করে দলটির সভাপতি বলেন, সাধারণ মানুষ কিন্তু আমাদের সঙ্গে আছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাদের কাজগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মসজিদ থেকে কুরআন শরিফ নিয়ে হনুমানের পায়ের ওপর তা রেখে হনুমানের গদাটা নিয়ে হেঁটে চলে গেল। একজন মুসলমান হয়ে কুরআন শরিফের অবমাননা কীভাবে করে?

তিনি বলেন, যে কুরআন শরিফটা নিয়ে মন্দিরে রেখেছে, হনুমানের পায়ের ওপর রেখেছে সেকি কম দোষী। সেই তো কুরআন শরিফের অবমাননা করেছে? সেটাই তো বড় কথা। আর এ ঘটনা নিয়ে একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল।

সময়োচিত পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি এবং এ ব্যাপারে আমাদের নেতাকর্মীরা যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। এর পেছনে কারা? সেটাও কিন্তু তদন্তে বের হয়েছে, যেহেতু মামলা চলছে সেজন্য হয়তো সব বলব না, আমরা সেই তথ্য জানি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যত ভালো কাজ করি, সেখানে একটা বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা সব সময় তাদের আছে। এ বিষয়ে বিএনপি-জামায়াতই সব চেয়ে বেশি সক্রিয়। সঙ্গে আবার এখন নতুন কিছু (দল) গজাচ্ছে।

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেখলাম তারা মিটিংয়ে বসছে, কীভাবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো যায় তা নিয়ে। আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী?

আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়ন করেছে? দেশের মানুষ এখন দুই বেলা পেটভরে ভাত খেতে পারে? এখন আর ক্ষুধার্ত মানুষগুলোকে দেখিয়ে বিদেশ থেকে পয়সা কামাই করতে পারছে না? এটাই তাদের দুঃখ?

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আমিই ছিলাম খালেদা জিয়ার টার্গেট

প্রকাশের সময় : ০৬:১৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১

 ঢাকা ডেস্ক :  আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সব সময় আমিই ছিলাম খালেদা জিয়ার টার্গেট। বলেছিলেন-আমি নাকি প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও কোনোদিন হতে পারব না। তারপর বোমা পোঁতা হলো কোটালীপাড়ায়।খবর যুগান্তর

এরপর তার বক্তব্য আওয়ামী লীগ শত বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এরপর গ্রেনেড হামলা হলো। আমার মনে হয় এই কথাগুলো আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।

গণভবনে শুক্রবার বিকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। আমাদের মিটিং পর্যন্ত করতে দেয়নি।

একজন আমাকে শুধু হাত দেখিয়েছিল বলে তার দাড়ি টেনে টেনে তুলেছিল। আমাদের বহু নেতাকর্মীর হাতের কব্জি, পা কেটে দিয়েছিল। চোখ তুলে ফেলা ছাড়াও দখল করেছিল আমাদের বাড়িঘর। তাদের অত্যাচারে আমাদের ২০ হাজার নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করে। তারা আওয়ামী লীগের নাম নিশানাও মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল।

বিভিন্ন সরকারের সময়ে দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর তার যে অত্যাচার, আমরা আওয়ামী লীগ অফিসে পর্যন্ত বসতে পারতাম না, যেতে পারতাম না, ঢুকতে পারতাম না।

আমাদের সিআরআই বন্ধ করে দিয়ে ১৬টা কম্পিউটার, তিনশ ফাইল, দশ হাজার বই, নগদ টাকা-পয়সা সবকিছু নিয়ে তালা মেরে দেয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আবার সেই অফিস আমরা খুলতে পেরেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে অকথ্য অত্যাচার করা হয়েছে। আমাদের অগণিত নেতাকর্মীকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। সেখানে কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। শুধু আমাদের ওপর অত্যাচার হয়েছে তাই নয়, সেনাপ্রধান মোস্তাফিজ, অসুস্থ ছিল, তাকেও সিএমএইচে ভর্তি হতে দেয়নি।

অন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে স্ট্রেচারে করে মামলায় হাজির করা হয়েছে। বিমানবাহিনী প্রধান জামাল উদ্দিন সাহেবের মতো সৎ একটা মানুষ, সাধারণ একটা ঘড়ি চুরির মামলা দিয়ে তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

সেখানে তাকে কোনো ডিভিশনও দেওয়া হয়নি। তাকে মাত্র দুটি কম্বল দিয়েছিল। ফ্লোরে থাকতে হয়েছে তাকে। এরা যেভাবে অমানবিক কাজ করেছে, এ রকম বহু কাহিনি আছে।

নিজেসহ দলের আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তাদের ওপর নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার মনে হয় এখানে এমন কেউই নেই যার ওপর অত্যাচার হয়নি।

কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়নি বা তাদের বাধা দেওয়া হয়নি। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি।

২০০৮ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। এই নির্বাচন নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন তোলেনি। সেই নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি নিয়ে ক্ষমতায় আসি। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ যে কাজ করেছে তার ফলে জনগণ আমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে।

ভোট ঠেকানোর নামে মানুষ পোড়ানো থেকে শুরু করে যা করেছে, সেটা দেশের মানুষ ভুলে যায় কীভাবে? একেকটা নির্বাচনে আগে তারা অত্যাচার নির্যাতন করেছে। বলেছে-নির্বাচন করবে না। তারা দেখাতে চেয়েছে, তারা অংশ নেয়নি তাই নির্বাচন হয়নি। এটাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, হাইকোর্টের একটা রায় আছে, সেখানে সংবিধান লঙ্ঘন করে মার্শাল ল’ জারি করে যারা ক্ষমতা দখল করেছে, সেটাকে অবৈধ বলা হয়েছে।

জিয়াউর রহমান শুধু মার্শাল ল’ নয়, আর্মি রুলস ল’, সেটাও ভঙ্গ করেছিল। কারণ সেখানে স্পষ্ট লেখা ছিল- সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় তারা নির্বাচন করতে পারবে না বা কোনো রাজনীতি করতে পারবে না।

কিন্তু জিয়া একাধারে সেনাপ্রধান, সেই সঙ্গে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়। পরে আবার হ্যাঁ, না ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে। এরপর আবার রাজনৈতিক দল গঠন করে। সেই দলই হচ্ছে বিএনপি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে গড়া দল হচ্ছে এই বিএনপি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ লক্ষচ্যুত হয়েছিল। পঁচাত্তরের পর দেশে ১৯টি সামরিক ক্যু হয়েছে। এর ফলে সামরিক বাহিনীর অনেক সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। কোর্ট মার্শাল হয়েছে, ফায়ারিং স্কোয়ার্ড হয়েছে এবং ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

কয়েকদিন আগেও বহু স্বজন একত্রিত হয়ে তাদের স্বজন হত্যার বিচার চেয়েছে। তারা লাশও খুঁজে পায়নি। লাশ গুম করে দেওয়া হয়েছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই এই ঘটনাগুলো ঘটায়। কাজেই তাদের সেই দাবির একটা তদন্ত হোক। কেন তারা স্বজনদের লাশগুলো পেল না।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি এবং রেহানা দেশে আসতে পারিনি। আমাদের রিফিউজির মতো থাকতে হয়েছে। ১৯৮১ সালে যখন আমাকে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত করা হয়, তখন অনেক বাধা ছিল, কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দেশে ফিরে আসব।

এরপর আমি চেষ্টা করেছিলাম সংগঠনগুলো গড়ে তোলার। এ সময় পঁচাত্তর-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে জাতির পিতার খুনিদের বিচার না করে তাদের পুরস্কৃত করা ও বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া, নির্বাচনি প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া এবং সংসদে বসার সুযোগ করে দেওয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

অপপ্রচারের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান : অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশে যখন উন্নয়ন হচ্ছে, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, অযথা, অহেতুক দেশের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চলছে।

এমনকি আমরা উন্নয়নশীল দেশ কেন হলাম এটাও সঠিক না বলে কিছু মানুষ অপপ্রচার করে। এটা হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক। এরা কারা? এদের উদ্দেশ্য কী? এরা কী চায়? আমাদের ওয়ার্কিং কমিটির প্রত্যেক সদস্যকে এই বিষয়গুলোর সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, জানতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। যা যা প্রয়োজন করতে হবে।

জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে মন্তব্য করে দলটির সভাপতি বলেন, সাধারণ মানুষ কিন্তু আমাদের সঙ্গে আছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাদের কাজগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মসজিদ থেকে কুরআন শরিফ নিয়ে হনুমানের পায়ের ওপর তা রেখে হনুমানের গদাটা নিয়ে হেঁটে চলে গেল। একজন মুসলমান হয়ে কুরআন শরিফের অবমাননা কীভাবে করে?

তিনি বলেন, যে কুরআন শরিফটা নিয়ে মন্দিরে রেখেছে, হনুমানের পায়ের ওপর রেখেছে সেকি কম দোষী। সেই তো কুরআন শরিফের অবমাননা করেছে? সেটাই তো বড় কথা। আর এ ঘটনা নিয়ে একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল।

সময়োচিত পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি এবং এ ব্যাপারে আমাদের নেতাকর্মীরা যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। এর পেছনে কারা? সেটাও কিন্তু তদন্তে বের হয়েছে, যেহেতু মামলা চলছে সেজন্য হয়তো সব বলব না, আমরা সেই তথ্য জানি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যত ভালো কাজ করি, সেখানে একটা বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা সব সময় তাদের আছে। এ বিষয়ে বিএনপি-জামায়াতই সব চেয়ে বেশি সক্রিয়। সঙ্গে আবার এখন নতুন কিছু (দল) গজাচ্ছে।

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেখলাম তারা মিটিংয়ে বসছে, কীভাবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো যায় তা নিয়ে। আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী?

আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়ন করেছে? দেশের মানুষ এখন দুই বেলা পেটভরে ভাত খেতে পারে? এখন আর ক্ষুধার্ত মানুষগুলোকে দেখিয়ে বিদেশ থেকে পয়সা কামাই করতে পারছে না? এটাই তাদের দুঃখ?