অভিযোগ থেকে রেহাই পাচ্ছেন বাবুল আক্তার!
- প্রকাশের সময় : ১২:৫৫:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুন ২০১৭
- / ১৩৪১ বার পঠিত
ঢাকা: অনেক প্রশ্নের উত্তর রহস্যঘেরা রেখেই দাখিল হতে যাচ্ছে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্কারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার অভিযোগপত্র। পুলিশ মামলার তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বললেও শেষ পর্যন্ত ঘটনার মূল হোতা ‘নির্দেশদাতা’ কে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট উত্তর মেলেনি। মামলার তদন্তে বাবুলের পরকীয়া ও মিতু হত্যায় বাবুল জড়িত মিতুর পরিবার থেকে আসা এসব অভিযোগ তদন্তে স্থান পেয়েছে বলে পুলিশ জানালেও বাবুল আক্তার থেকেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরেই। বর্তমানে মিতুর বাবার সক্রিয় অভিযোগ এটাই, বাবুলই তার মেয়ের খুনের নির্দেশদাতা। আর বাবুল আক্তার মুছাকে দিয়ে হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও গ্রেফতারের আওতায় আনেনি। তবে নগর পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, মুছাকে না পাওয়া গেলে মামলার চার্জশিট থেকে একজনের নাম বাদ যাবে। তবে সেই ব্যক্তি কি বাবুল আক্তার কিনা সেটি খোলাসা করেননি পুলিশ কমিশনার। তবে কি অভিযোগ থেকে রেহাই পাচ্ছেন বাবুল আক্তার, এ প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার এ প্রতিবেদককে জানান, মামলার তদন্তে একটা সময় টার্গেট করা হয়েছে। সেই টার্গেটের মধ্যেই তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে মুছাকে না পাওয়া গেলেও মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হবে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুছাকে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতারের চেষ্টা চালানো হবে। শেষ পর্যন্ত যদি মুছাকে না পাওয়া যায়, তাকে পলাতক দেখিয়ে মামলার চার্জশিট দেয়া হবে। তবে মুছাকে পাওয়া গেলে আরেকজন ব্যক্তি মামলার আসামি হতো। তাকে গ্রেফতারও হতো। কিন্তু মুছাকে না পাওয়া গেলে মামলা থেকে সেই একজনের নাম বাদ পড়বে। তবে সেই ব্যক্তি মিতু হত্যার নির্দেশদাতা বাবুল আক্তার কিনা সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
তবে পুলিশ কমিশনার না জানালেও মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন রোববার বিকালেও জানিয়েছেন, বাবুল পরকীয়ায় আসক্ত ছিল। স্বামীর এ অনৈতিক সম্পর্ককে মেনে না নেয়ায় বাবুলের জীবনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো মিতু। সেই বাধা থেকে নিজেকে মুক্ত করতেই তার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সোর্স মুছাকে দিয়ে মিতুকে বাবুল খুন করিয়েছে। এটা আজ জলের মতোই আমার ও দেশবাসীর কাছে পরিস্কার।
মোশাররফ হোসেন আরো বলেন, এতোদিন আমি মেয়ের খুনের বিচার চেয়েছি। এখন চাই, বাবুলকে পুলিশ গ্রেফতার করুক। তিনি আরো বলেন, পৃথিবীতে এরকম স্বামী কি কখনো দেখা গেছে, বউ খুন হওয়ার পর ফেসবুকে ফটোসেশন করে বেড়ায়। ফেসবুকের স্ট্যাটাসে গল্প, উপন্যাস লিখে বেড়ায়। এতো দাপুটে পুলিশ অফিসার ছিলেন বাবুল আক্তার, তাহলে কে তার স্ত্রীর খুনী, সেটি সে বের করতে পারলো না?
মোশাররফ হোসেন আরো বলেন, পুলিশ চেয়েছে বাবুলকে বাঁচাতে। দীর্ঘদিনের সহকর্মী হওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান মামলার তদন্তে বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার করেনি। এখানে দায়িত্বের চেয়ে বন্ধুত্ব, পুলিশের ভাবর্মূর্তিই বড় হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে মোশাররফ হোসেনের অভিযোগ বানোয়াট বলে দাবি করে নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান রলেন, আমি মিতু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এটাই আমার পরিচয় এ মামলায়। বাবুল আক্তার আমার দীর্ঘদিনের সহকর্মী বলে সে দোষী হলে আমি তাকে ছাড় দেব, এটা ঠিক না। বাবুল আক্তার যদি মিতুর খুনে সম্পৃক্ত থাকে, অবশ্যই তাকে গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা সে রকম কোনকিছু প্রমাণ পাইনি। আমি তো আর নিরপরাধ লোককে জেলে ঢুকাতে পারিনা।
এ বিষয়ে বাবুল আক্তার ফোনে রোববার জানান, সব আমার শ্বশুড়ের মন গড়া কথা। তিনি কখনোই কোনো কথায় স্থির থাকেননি। একেক সময় একেক রকম কথা বলছেন। আগে তিনি আমার পক্ষেই কথা বলেছেন। কারণ আমি মিতু খুনের পর তার বাসায় ছিলাম বলে। যখন আমি তার বাসা থেকে চলে এলাম, তখনই আমার বিরুদ্ধে বলা শুরু হয়ে গেলো।
তিনি আরো জানান, প্রথমে বললো মিতু খুনে আমার মা বোন জড়িত। এখন বলছে আমি। এ পর্যন্ত দু দুটো পরকীয়ার গল্প শুনিয়েছে মিডিয়াকে। এরপর আার কোন গল্প তৈরী করবেন তারাই জানেন।
স্ত্রীর হত্যা মামলার তদন্তের বিষয়ে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, আইন আইনের গতিতে চলবে। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত চালাচ্ছে। তদন্তে যদি আমি দোষী হই, অবশ্যই পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করবে। আমি তো আর পলাতক নই। তিনি আরো বলেন, তদন্ত নিয়ে যখন কথা বলার সময় হবে, তখন আমি ঠিকই বলব। এটা কেউ চাপ প্রয়োগ করলেই যে আমি বলব, সেটা না।
মিতুর প্রতি অবহেলা ও স্ত্রীকে সময় না দেয়া নিয়ে মিতুর বাবা মায়ের অভিযোগ খন্ডন করে বাবুল আক্তার আরো বলেন, আমি আমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। সময় দিতে পারিনি সত্যি। কিন্তু মিতু ফ্ল্যাটের অনান্য ভাবীদের সাথে ঘুরে বেড়াতো। আড্ডা দিতো। আমার স্ত্রীকে আমার সামর্থ্যরে মধ্যে ভালো রাখার চেষ্টা করেছি।
এদিকে মুছার স্ত্রী পান্না আক্তারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এতোদিনেও তিনি তার স্বামীর কোন খোঁজ পাননি। দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি রাঙ্গুনিয়া শ্বশুড়বাড়িতে আছেন। পান্না আকতার বলেন, যদি আমার স্বামী খুন করে থাকে, তাকে গ্রেফতার করা হোক। কিন্তু আমি আমার স্বামীকে জানি। সে কখনো এ কাজ করতে পারে না।
এদিকে গত বছরের ৫ জুন মিতু হত্যাকান্ডের পর আজ পর্যন্ত মামলার যে অগ্রগতি তা হলো, ওয়াসিম, আনোয়ার, ভোলা এবং শাহজাহান বর্তমানে মিতু হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছে। নবী ও রাশেদ পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। বর্তমানে পলাতক আছে মুছা ও কালু।
অপরদিকে কালু কে, কোথায় থাকতো, কি করতো সে বিষয়ে কখনোই পুলিশ কমিশনার ও তদন্তকারী কর্মকর্তা খোলাসা করে কিছু বলেননি। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, খুব শিগগিরই কালু সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে। তবে মিতু হত্যা মামলার এক বছরেও খুনের নির্দেশদাতার নাম বের করতে না পারা তার ব্যর্থতা কিনা, এটি জানতে চাইলে ইকবাল বাহার জানান, আমি মিতু খুনের মূল হোতাকে ধরতে ব্যর্থ হয়েছি এটা ঠিক। কিন্তু পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি এটা আমি কখনোই বলব না। প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নগরীর ও আর নিজাম রোডে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও গুলিতে নিহত হন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার নিজে বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, গত বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। এই হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া দুই আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ায়ের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২৮ জুন রাতে চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকা থেকে এহতেশামুল হক ভোলাকে ও মনিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে পয়েন্ট ৩২ বোর ও ৭.৬৫ বোরের দুটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনেও আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়।(সূত্র: পূর্বপশ্চিম.কম)