অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় বৃটেন
- প্রকাশের সময় : ০৬:০১:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মার্চ ২০১৮
- / ৮০৮ বার পঠিত
ঢাকা ডেস্ক: বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় বৃটেন। সম্প্রতি বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের সফরে তিনি এমন বার্তাই দিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকাস্থ হাইকমিশনার এলিসন বেøক। গত বুধবার (২৮ ফেব্রæয়ারী) দুপুরে রাজধানীর বারিধারাস্থ বৃটিশ ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকায় দুইবছর কাজ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে হাইকমিশনার বেøক বলেন, বেশ দ্রæতগতিতে কাজের মধ্যেই সময় কেটেছে। এখানে আমি আসার পর গুরুত্বপূর্ণ কিছু অনুষ্ঠান হয়েছে, যা দুই দেশের সম্পর্কে গতি এনেছে। সেই সঙ্গে জঙ্গিবাদের উত্থান চেষ্টা, ইইউ থেকে বৃটেনের বেরিয়ে যাওয়াসহ কিছু খারাপ ঘটনাও রয়েছে।
দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অবশ্যই অভিন্ন মূল্যবোধ, জনগণ ও স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আগামী এপ্রিলে লন্ডনে কমনওয়েলথ সম্মেলন। এ আয়োজন আমাদের ঐতিহ্যবাহী বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃসংযোগের সুযোগ করে দিচ্ছে। কমনওয়েলথ আগামীতে কোনদিকে যাচ্ছে তাও নির্ধারণের সুযোগ করে দিচ্ছে। হাইকমিশনার বলেন, যেহেতু বৃটেন ইইউ থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। তাই কমনওয়েলথ একটি ভালো ক্ষেত্র হতে পারে, যার মাধ্যমে বৃটেন তার ঐতিহাসিক বন্ধুত্বগুলোর সঙ্গে আবারো যুক্ত হতে পারে। এবারের সম্মেলনে কানেকটিভিটি, শিক্ষা, বাণিজ্য, সমুদ্র, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্যদূরীকরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবারের সম্মেলনে সবাই নিজ নিজ দেশকে সমৃদ্ধ করতেই কাজ করবে।
বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের সাম্প্রতিক ঢাকা সফর বিষয়ে হাইকমিশনার বলেন, এর মূল কারণ দু’টি। প্রথমত, বিশ্বে আমাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করা। আমরা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছি। উন্নয়নশীল, মধ্যম আয়ের দেশ যারা আগামী বছরের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। আমরা এ দেশের অগ্রযাত্রার অংশীদার হতে চাই। আমরা মনে করি, আমাদের পরস্পরকে অনেক কিছু দেয়ার আছে। তাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনার জন্য এ দেশে এসেছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে ও আড়ালে সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। কারণ এটি গোপন নয় যে, আমরা জোরালোভাবে বিশ্বাস করি, গণতন্ত্র, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন একটি দেশের ভবিষ্যতের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ পথ। গণতন্ত্রে এটি একটি বড় বিষয়। কারণ এটি এমন একটি সমাজ তৈরি করে যেখানে সবাই নিজেকে অংশীদার মনে করে। যেখানে সবার কথা বলার অধিকার নিশ্চিত থাকে। আর এর মাধ্যমে সমাজ শক্তিশালী ও জবাবদিহির আওতায় আসে। মন্ত্রীর সফরের দ্বিতীয় কারণ হিসেবে এলিসন বেøক বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে অনেক বছর ধরেই আমরা কাজ করছি। ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর হঠাৎ পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণে রোহিঙ্গাদের যে স্রোত বাংলাদেশের দিকে এসেছে, তা আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বাস করেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর দায়িত্ব নিতে হবে। এ সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সমাধানে মিয়ানমারে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে বাস্তুচ্যুত লোকজন ঘরে ফিরে যেতে পারে। পূর্ণ নিরাপত্তা, মর্যাদা, অধিকার এবং জীবিকার নিশ্চয়তা দিয়েই তাদের রাখাইনে ফেরাতে হবে। বৃটিশ মন্ত্রী বাংলাদেশ সফর শেষে মিয়ানমারে গিয়ে দেশটির কার্যকর নেতা অং সান সুচি ও সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ বার্তাই দিয়ে গেছেন বলেও উল্লেখ করেন হাইকমিশনার।
বরিস জনসন গণমাধ্যমের ভূমিকার কথাও বলে গেছেন জানিয়ে হাইকমিশনার বলেন, প্রকাশ্যে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা আমাদের জন্য কঠিন। কিন্তু সাংবাদিকরা যে কাজ করেন তা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ও বৃটেনের মধ্য বিদ্যমান কৌশলগত সংলাপের বিষয়ে হাইকমিশনার বলেন, গত বছর দুই দেশের মধ্যে এমন সংলাপ হয়েছে। এর মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কের জটিল বিষয়গুলো সমাধানে আলোচনা হয়েছে। আর কৌশলগত সংলাপের একটি ফল হচ্ছে বৃটেনে সরাসরি কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া। বাংলাদেশ ওই সময়ের মধ্যে বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে বৃটিশ দূত বলেন, অনেকে এটাকে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ভাবলেও এটি রাজনৈতিক কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না।(মানবজমিন)