অনেক কৃতিমানকে হারানোর বছর ২০২২
- প্রকাশের সময় : ০৭:১০:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২
- / ৩০০ বার পঠিত
বিদায়ী বছর ২০২২ দেশের বিভিন্ন অঙ্গনের কীর্তিমান অনেক ব্যক্তিত্বকে আমাদের তাদের হারাতে হয়েছে। তবে তাদের কাজ ও কীর্তির জন্য মানুষ তাদের আজীবন স্মরণ করবে।
আবুল মাল আবদুল মুহিত
বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, লেখক এবং ভাষাসৈনিক আবুল মাল আবদুল ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল ৮৮ বছর বয়সে ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে বেশি সময় যাবৎ অর্থমন্ত্রী ছিলেন। আবদুল মুহিত ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ উকিল মিয়া ও সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ, আইডিবি এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
আবদুল গাফফার চৌধুরী
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলাম লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ৮৮ বছর বয়সে ১৯ মে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
তিনি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো-এর রচয়িতা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক জয়বাংলার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন। তিনি কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৩ সালে একুশে পদক ও ২০০৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি ১৯৫০ সালে ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকার মধ্যে দিয়ে পরিপূর্ণভাবে কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৫১ সালে ‘দৈনিক সংবাদ’ প্রকাশ হলে গাফফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। ১৯৫৩ সালে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের ‘মাসিক সওগাত’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন গাফফার চৌধুরী। এসময় তিনি ‘মাসিক নকীব’ও সম্পাদনা করেন। একই বছর তিনি আবদুল কাদির সম্পাদিত ‘দিলরুবা’ পত্রিকারও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন। ১৯৫৬ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৬২ সালে তিনি দৈনিক ‘জেহাদ’-এ বার্তা সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালে তিনি সাপ্তাহিক ‘সোনার বাংলা’র সম্পাদক হন। পরের বছর ১৯৬৪ সালে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় নামেন এবং অণুপম মুদ্রণ’ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। দু’বছর পরই আবার ফিরে আসেন সাংবাদিকতায়।
১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বাকেরগঞ্জ জেলার মেহেন্দিগঞ্জ মহকুমার উলানিয়া জমিদার বাড়িতে একটি বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, যারা উলানিয়ার চৌধুরী বংশ হিসেবে পরিচিত।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী
বর্ষীয়ান রাজনীতিক, সংসদ উপনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১২ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা ছিলেন। তিনি পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হিসেবেও পূর্বে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালে গ্রামীণ উন্নয়ন ও শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো ফেলোশিপ পান এবং একই সময়ে তিনি বাংলাদেশ গার্ল-গাইড এসোসিয়েশনের জাতীয় কমিশনার হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মানসূচক সনদ সিলভার এলিফ্যান্ট পদক লাভ করেন। তিনি ২০০০ সালে আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক বর্ষসেরা নারী নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। তিনি ১৯৩৫ সালের ৮ মে মাগুরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
কাজী আনোয়ার হোসেন
পাঠকনন্দিত মাসুদ রানার খ্যাত কাজী আনোয়ার হোসেন বছরের শুরুতে ১৯ জানুয়ারি বিকেলে বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ১০ জানুয়ারি থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন বরেণ্য এই লেখক। তার পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন। তার বাবা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, মাতা সাজেদা খাতুন।
কাজী আনোয়ার হোসেন অনুবাদক, প্রকাশক এবং জনপ্রিয় মাসুদ রানা সিরিজের লেখক। তিনি ছদ্মনাম হিসেবে বিদ্যুৎ মিত্র ও শামসুদ্দীন নওয়াব নাম ব্যবহার করতেন।
পীর হাবিবুর রহমান
সাংবাদিক ও কলামিস্ট পীর হাবিবুর রহমান ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ৫৮ বছর বয়সে মারা গেছেন। ২০২১ সালের অক্টোবরে মুম্বাই জাসলুক হাসপাতালে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের মাধ্যমে ক্যানসারমুক্ত হন পীর হাবিবুর রহমান। দেশে ফিরে গত ২২ জানুয়ারি তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। এরপর বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহর পরামর্শে তিনি ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনামুক্ত হলেও কিডনি জটিলতার কারণে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হন।
দীর্ঘ কর্মজীবনে পীর হাবিবুর রহমান দৈনিক বাংলাবাজার, যুগান্তর, দৈনিক মানবকণ্ঠ, আমাদের সময় পত্রিকায় কাজ করেছেন। অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিমবিডি. নিউজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পীর হাবিবুর রহমান। তিনি সর্বশেষ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বরেণ্য এ সাংবাদিকের জন্ম ১৯৬৩ সালের ১২ নভেম্বর সুনামগঞ্জ শহরে।
শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম
এ বছরের ২১ নভেম্বর শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি আছেন শিশুদের পাঠ্যবইয়ে, গল্পে, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে।
আলী ইমাম এ পর্যন্ত প্রায় ২০০টির মতো পুস্তক রচনা করেছেন ও ৪০টির মতো গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার লেখায় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, রোমাঞ্চকর উপন্যাস ও ইতিহাস সংশ্লিষ্ট রচনা লক্ষ্যণীয়। আলী ইমাম বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাব্যবস্থাপক ছিলেন এবং ২০০৬ সালে চাকরি থেকে অবসরগ্রহণ করেন।
তার উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো- সোনালী তোরণ (১৯৮৬); আলোয় ভুবন ভরা (১৯৮৭); দুঃসাহসী অভিযাত্রী (১৯৮৮); প্রিয়-প্রসঙ্গ (১৯৯০); বুনোহাঁসের পালক (১৯৯০); সেসুলয়েডের পাঁচালী (১৯৯০); রক্ত দিয়ে কেনা (গল্প, ১৯৯১); ভিনদেশী কিশোর গল্প (১৯৯১)।
আলী ইমামের ১৯৫০ সালে ৩১ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের ছয় মাস বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন এবং পুরান ঢাকার ঠাঁটারীবাজারে বাসিন্দা হন। তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে পুরান ঢাকার ওয়ারী, লিঙ্কন রোড, নয়াবাজার, নওয়াবপুর, কাপ্তানবাজার, ফুলবাড়িয়ায় এলাকায়।
ফ্যাশন ডিজাইনার এমদাদ হক
বাংলাদেশের ফ্যাশন পরিমণ্ডলের পরিচিত ও প্রিয়মুখ এমদাদ হক শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) মারা যান। ওই দিন রাজধানীর শ্যামলীর স্পেশালাইজড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর।
বাংলার মেলার ডিজাইনার হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন এমদাদ হক। পরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন নিজের প্রতিষ্ঠান স্টুডিও এমদাদ। তার ডিজাইন করা পোশাক দেশে ও বিদেশে প্রদর্শিত হয়েছে।১৯৬৮ সালে পুরান ঢাকার উর্দু রোডে জন্মগ্রহণ করেন ডিজাইনার এমদাদ হক।
ইত্তেফাক