জোহরান মামদানীকে মেয়র পদে বিরত রাখতে হাউস রিপাবলিকানদের উদ্যোগ
																
								
							
                                - প্রকাশের সময় : ১০:০৪:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫
 - / ৮ বার পঠিত
 
কাউসার মুমিন: হাউস রিপাবলিকান ও রক্ষণশীল কর্মীরা নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে নির্বাচনে এগিয়ে থাকা ডেমোক্রেটিক সমাজতন্ত্রী প্রার্থী জোহরান মামদানীকে শপথ গ্রহণ থেকে বিরত রাখতে একটি বিতর্কিত সাংবিধানিক কৌশল বিবেচনা করছেন। মামদানী আগামী সপ্তাহের নির্বাচনে জয়ী হলে গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর ‘বিদ্রোহ ধারা (ইনসারেকশন ক্লজ)’ প্রয়োগ করার বিষয়টি কংগ্রেসে পাশ করতে চায় রিপাবলিকানরা। যা সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম বিভাজনমূলক রাজনৈতিক লড়াইয়ের জন্ম দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই প্রচেষ্টা প্রথমে প্রস্তাব করে নিউইয়র্ক ইয়ং রিপাবলিকান ক্লাব, যা চতুর্দশ সংশোধনীর তৃতীয় অনুচ্ছেদকে ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বিদ্রোহ বা বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছে’ বা ‘শত্রুকে সাহায্য বা সহানুভূতি দিয়েছে’- এমন কেউ সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবে না। নিউইয়র্ক ইয়ং রিপাবলিকান ক্লাব- এর সভাপতি স্টেফানো ফর্টে দ্য নিউইয়র্ক পোস্ট-কে বলেন, বিদ্রোহী জোহরান মামদানীকে হয় ব্যালট থেকে অপসারণ করা হবে। অন্যদিকে মামদানী আগামী মঙ্গলবার যদিওবা জয় পান, তাহলে তাকে পদ থেকে অপসারণে একটি বাস্তব ও বৈধ প্রচেষ্টা রয়েছে।
দলটি যুক্তি মামদানির অতীত বিবৃতি উল্লেখ করে তাদের প্রচেষ্টার ন্যায্যতা দাবি করেছে। বলেছে, মামদানী কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অভিবাসন প্রয়োগকারী সংস্থা আইস-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান- দেশটির আইন প্রয়োগের বিরোধিতাকারীদের প্রতি ‘সহায়তা বা সহানুভূতি’ হিসেবে গণ্য হতে পারে। যা ‘বিদ্রোহ ধারার’ আওতায় পড়তে পারে। রিপাবলিকান কংগ্রেস মেম্বাররা জানিয়েছেন, সরকার বন্ধের সমাপ্তির পর কয়েকজন হাউস রিপাবলিকান মামদানির বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ ধারা’ প্রয়োগের আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা করছেন। এই আইন মামদানীকে সংবিধানের অধীনে সরকারি পদের জন্য অযোগ্য হিসেবে বিবেচ্য করে তুলতে পারে।
এই কৌশলটি কলোরাডো রাজ্যে গত বছর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে ব্যালট থেকে অপসারণের আইনি প্রচেষ্টার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। যা শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দেয়। কোর্ট রায় দিয়েছিল যে শুধুমাত্র কংগ্রেসই এই অনুচ্ছেদ কার্যকর করার ক্ষমতা রাখে। যা এখন রিপাবলিকানরা তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষমতা পরীক্ষা করার সুযোগ হিসেবে দেখছে। তবে এমন পদক্ষেপ পাস করানো রাজনৈতিকভাবে ও প্রক্রিয়াগতভাবে কঠিন হবে। বর্তমান হাউসে রিপাবলিকানদের ২১৯-২১৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বেশ ক্ষীণ। পাশাপাশি প্রস্তাবটি সেনেটে ডেমোক্রেটদের ফিলিবাস্টারের মুখোমুখি হতে পারে। অনুমোদন পেলেও এটি নিশ্চিতভাবে আদালতে বাধার মুখে পড়বে। কারণ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কোনো মেয়রকে অপসারণ করলে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক সংকটে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্লেষকদের মতে, মামদানির বিরুদ্ধে এই প্রচারণা বৃহত্তর রিপাবলিকান কৌশলের অংশ। যার লক্ষ্য ডেমোক্রেটিক পার্টির বামপন্থী অংশের বিরোধীতা করা। সাবেক ট্রাম্পের উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন তার ওয়ার রুম প্যান্ডেমিক পডকাস্টে বলেন, মামদানি ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে নতুনভাবে ব্র্যান্ড করবেন। যা ইঙ্গিত দেয় যে মাগা-ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীগুলো ইতিমধ্যে এই বিতর্ককে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে প্রস্তুত। যদি রিপাবলিকানরা তাদের প্রস্তাব এগিয়ে নিতে সফল হয়, তাহলে ডেমোক্র্যাটদের একটি সংবেদনশীল রাজনৈতিক ভোটের মুখোমুখি হতে হবে- হয় স্ব-ঘোষিত সমাজতন্ত্রী মামদানীকে রক্ষা করা, নয়তো রিপাবলিকানদের সঙ্গে এক হয়ে তাকে নিষিদ্ধ করা, যা প্রগতিশীল ভোটারদের বিমুখ করতে পারে।
একই সময়ে, হাউস রিপাবলিকানরা মামদানীর নাগরিকত্ব প্রাপ্তির প্রক্রিয়া নিয়ে নতুনভাবে তদন্ত দাবি করছেন। প্রতিনিধি অ্যান্ডি ওগলস (রিপাবলিকান-টেনেসি) এই সপ্তাহে বিচার বিভাগকে পুনরায় মামদানীর নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। অভিযোগ করে বলেছেন, তার বক্তব্যে আমেরিকা-বিরোধী মনোভাব ও ২০১৮ সালের নাগরিকত্ব সাক্ষাৎকারে ভুল উপস্থাপন রয়েছে। ওগলস অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে পাঠানো চিঠিতে জানতে চেয়েছেন নাগরিকত্ব বাতিল প্রক্রিয়া শুরু করার কোনো তদন্ত চলছে কি না। তিনি দাবি করেছেন, মামদানীর রাজনৈতিক সম্পর্ক ও বক্তব্য নতুন নাগরিকদের প্রতি আনুগত্যের শপথের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণের একটি বৃহত্তর ধারা।
প্রতিনিধি র্যান্ডি ফাইন (রিপাবলিকান-ফ্লোরিডা) একধাপ এগিয়ে অভিযোগ করেন, মামদানী ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকা-এর সদস্যপদ গোপন করেছেন এবং হলি ল্যান্ড ফাইভ-এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। যারা ২০০১ সালে হামাসকে অর্থ সহায়তার অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া এক মুসলিম দাতব্য সংস্থার নেতা ছিলেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে সতর্ক করে বলেন, নিউইয়র্ক সিটি আগামী সপ্তাহে কমিউনিজমের হাতে পড়বে এবং এর দায় তাদের নিজেদের।
এদিকে উগান্ডায় জন্মগ্রহণকারী ও শৈশবে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসিত ৩৪ বছর বয়সী মামদানী এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি দ্য পোস্ট-কে বলেন, এই দেশের প্রেসিডেন্ট বা রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যরা যতবারই আমাকে কমিউনিস্ট বলুক না কেন, তাতে সেটি সত্য হয়ে যায় না। তার প্রচার দল এ বিষয়ে নতুন করে মন্তব্য করেনি। বিচার বিভাগের এক মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন, প্রতিনিধি অ্যান্ডি ওগলসের চিঠি তারা পেয়েছেন। তবে চলমান তদন্ত নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। বলেছেন, দেশজুড়ে শাটডাউন থাকায় উত্তর প্রদানে বিলম্ব হচ্ছে।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো স্থানীয় মেয়রের যদি কোনো সহিংস বিদ্রোহের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকে তবে তার বিরুদ্ধে “বিদ্রোহ ধারা” প্রয়োগ করা আইনগতভাবে অতি জটিল হবে। এই ধারা মূলত গৃহযুদ্ধের পর সাবেক কনফেডারেট কর্মকর্তাদের ক্ষমতায় ফিরে আসা ঠেকাতে প্রণয়ন করা হয়েছিল, এবং আধুনিক যুগে এর প্রয়োগ এখনো অত্যন্ত বিতর্কিত। তবুও, এই প্রচেষ্টার চারপাশের রাজনৈতিক নাটকীয়তা গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এটি সংবিধান ব্যাখ্যার সঙ্গে গণতান্ত্রিক বৈধতার সংঘাত তৈরি করছে, স্থানীয় পদের ওপর কংগ্রেসের ক্ষমতার সীমা পরীক্ষা করছে। ২০২৫ সালের উত্তপ্ত নির্বাচনী পরিবেশে নতুনভাবে দলীয় বিভাজন জোরদার করছে।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরামর্শে বর্তমান মেয়র এরিক এডামস গতমাসে তার নির্বাচনী প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ফলে চলমান অগ্রিম ভোটের জরীপে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সেন্ট্রিস্ট ডেমোক্রেট এন্ড্রু ক্যুমোর সাথে সোসালিস্ট ডেমোক্রেট জোহরান মামদানির ভোটের ব্যবধান ক্রমাগত হ্রাস পেলেও মামদানী এখনো এগিয়ে রয়েছেন। এরই মধ্যে শনিবার (০১ নভেম্বর) প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মেয়র প্রার্থী মামদানিকে ফোন করে তার নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের প্রশংসা করেন। (দৈনিক মানবজমিন)
																			












