স্ত্রীর ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করে বিপাকে আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট
																
								
							
                                - প্রকাশের সময় : ০৮:৫৭:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫
 - / ৮ বার পঠিত
 
হককথা ডেস্ক: আরো একবার খবরের শিরোনামে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স। স্ত্রী ঊষা ভান্স এবং খ্রিস্টান ধর্ম সম্পর্কে তার সাম্প্রতিক মন্তব্য এই মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার্লি কার্কের সম্মানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন ভান্স। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন নীতির পাশাপাশি এবং খ্রিস্টান মূল্যবোধ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন ভান্স। তার ব্যক্তিগত ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কেও কথা বলেছিলেন তিনি। তারপরই সেখানে উপস্থিত এক নারী জেডি ভান্সকে তার আন্তঃধর্মীয় পরিবার এবং সেখানে কীভাবে তার সন্তানরা বেড়ে উঠছে সে বিষয়ে প্রশ্ন করেন। জবাবে জেডি ভান্স বলেন, তার সন্তানরা খ্রিস্টান ধর্ম অনুসরণ করেই বেড়ে উঠছে।
তার সঙ্গে ঊষা ভান্সের প্রথম পরিচয় হয়েছিল তখন দু’জনেই ‘অ্যাগ্নোইস্ট’ (অজ্ঞেয়বাদে বিশ্বাসী) বা ‘এথেইস্ট’ (নাস্তিক) ছিলেন। কিন্তু এখন জেডি ভান্স গির্জায় যান, স্ত্রীও সঙ্গে থাকেন এবং তিনি আশা করেন, খ্রিস্টধর্ম তাকে যেভাবে প্রভাবিত করেছে তা ঊষা ভান্সকেও কোনোদিন সেই একইভাবে প্রভাবিত করবে।
প্রসঙ্গত, ঊষা ভান্স চিলুকুরি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। হিন্দু পরিবারে বেড়ে উঠেছেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সমালোচনার মুখে ভান্স সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা করেছেন। পাশাপাশি বলেছেন, তার স্ত্রী ঊষা ভান্স ‘খ্রিস্টান নন এবং তার ধর্ম পরিবর্তন করার কোনো ইচ্ছা নেই।’
প্রসঙ্গত, এর আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথোপকথনের সময় ভান্সকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘খ্রিস্টান মূল্যবোধ এই দেশের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি এমনটা বললে ভুল হবে বলে আমি মনে করি না’।
‘যদি কেউ এটা বলে যে তার নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, তাহলে সম্ভবত তার আপনাকে কিছু একটা বিক্রি করার এজেন্ডা রয়েছে। আমি অন্তত সততার সঙ্গে এটা স্বীকার করি নিই যে আমি বিশ্বাস করি খ্রিস্টান মূল্যবোধ এদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি’।
এর কিছুক্ষণ পরই ওই নারী আমেরিকান প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। এদিকে, ভান্সের মন্তব্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এই নিয়ে ভারতেও প্রতিক্রিয়া মিলেছে। এই প্রসঙ্গে তার পুরোনো মন্তব্য নিয়েও আলোচনা হচ্ছে, যেখানে তিনি বলেছিলেন বাইরে না থাকলে তিনি প্রতি রোববার গির্জায় যান এবং সে সময় তার স্ত্রীর (যিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী) জন্য খারাপ লাগে।
ওই অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বের যে নারী জেডি ভান্সকে উদ্দেশ্য করে একের পর প্রশ্ন করে চলেছিলেন, তার নিশানায় মূলত ছিল ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি। শুরুতেই ওই মঞ্চেই যুক্তরাষ্ট্র এবং খিস্টান ধর্ম সম্পর্কে ভান্সের মন্তব্যকে ঘিরে প্রশ্ন করেন।
ওই নারী উল্লেখ করেন, ঊষা হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং ভান্স খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী। পরিবারের আন্তঃধর্মীয় ও আন্তঃবর্ণ (ইন্টাররেসিয়াল) প্রেক্ষাপটে কীভাবে ভান্স তাদের তিন সন্তানকে বড় করছেন।
ওই নারীর কথায়, ‘আমি আগে জানতাম না, উইকিপিডিয়াতে পড়লাম আপনার স্ত্রী হিন্দু। আপনার স্ত্রী এখনো নিজেকে হিন্দু বলে দাবি করেন। আন্তঃধর্মীয়, আন্তঃবর্ণ এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক পরিবারে আপনারা তিন সন্তানকে বড় করছেন’।
বাবা না মা, কার ধর্মকে বাচ্চারা অগ্রাধিকার দেবে, সেই বিষয়ে সন্তানদের কী বলেছেন তিনি, সে বিষয়েও প্রশ্ন করেন ওই নারী।
পাশাপাশি তিনি জানতে চান, ‘আপনি সন্তানদের এই বিষয়টা কীভাবে বোঝান যে আপনার পরিবার, মানে তাদের বাবার পরিবার যারা কয়েক দশক আগে এখানে (মার্কিন মুলুকে) এসেছে তারা অন্যরকম, বা আপনারা (ভান্সের পরিবার) তাদের চেয়ে ভালো যারা এক প্রজন্ম আগে এখানে এসেছে (ঊষা ভান্সের অভিভাবক বা তাদের মতো অন্যান্য অভিবাসীদের বোঝাতে)?’
স্পষ্টতই ওই নারীর নিশানায় ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন সংক্রান্ত নীতি। এর উত্তরে ভাইস প্রেসিডেন্ট ভান্স জানান, তার দুই বড় সন্তান খ্রিস্টান স্কুলে পড়ে এবং তার বছর আটের ছেলে গত বছর তার প্রথম কমিউনিয়নে অংশ নিয়েছিল।
নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রসঙ্গে মি. ভান্স আরো বলেন, ‘এখন বেশিরভাগ রোববারেই ঊষা আমার সঙ্গে গির্জায় যায়। আমি তাকে প্রকাশ্যে বলেছি এবং এখন আমি আমার দশ হাজার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সামনেও এটাই বলব যে আমি আশা করি চার্চ আমাকে যেভাবে প্রভাবিত করেছে, ও (ঊষা) সেভাবেই একদিন প্রভাবিত হবে’।
‘হ্যাঁ, সত্যি বলতে, আমি সেটাই চাই। কারণ আমি খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাস করি এবং আমি আশা করি আমার স্ত্রীও একই দৃষ্টিভঙ্গি রাখবে। কিন্তু যদি তা না-ও করে তাহলেও কোনো সমস্যা নেই, কারণ ঈশ্বর বলেছেন যে প্রত্যেকেরই নিজস্ব ইচ্ছা রয়েছে’।
ওই মঞ্চ থেকেই ভান্স জানিয়েছেন, তার স্ত্রী ঊষা ভান্স হিন্দু পরিবারে বড় হয়েছেন বটে, তবে তার (ঊষা চিলুকুরির) পরিবার সে অর্থে ধার্মিক ছিল না। “স্ত্রীর সঙ্গে আমার যখন পরিচয় হয় তখন আমি নিজেকে নাস্তিক বলে মনে করতাম এবং সেও নিজের সম্পর্কেও একই কথা ভাবত”।
ভান্সের এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরই সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে স্ত্রীর ধর্ম পরিবর্তনের বিষয়ে এমন বক্তব্য রাখলেন ভান্স। তার এই মন্তব্যের সমালোচনা করে সাবেক কূটনীতিক এবং বিদেশ সচিব কানওয়াল সিব্বলও এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন।
আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্টের ভিডিও শেয়ার করে তিনি লেখেন, ‘তিনি (ভান্স) তাকে (উষা) নাস্তিক বলছেন। তিনি (ঊষা ভান্স) হিন্দু বলে মেনে নিতে ভয় পান। ধর্মীয় স্বাধীনতার সব কথা কোথায় গেল?’
সিব্বল লিখেছেন, ‘তিনি যে দেশে বসে আছেন, সেখানে ইউএস কমিশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) এর মতো একটা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। চ্যারিটি বিগিন্স অ্যাট হোম (নিজেকে দিয়েই সূচনা হোক বোঝাতে)’।
সমালোচনার মুখে ভান্স কী বলেছেন?
সমালোচনার মুখে নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যা করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভান্স। পাশাপাশি তার বক্তব্যকে ঘিরে যে সমস্ত প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে, তার পাল্টা সমালোচনা করে অভিযোগ তুলেছেন, এই সমালোচনার মূলে রয়েছে খ্রিস্টান ধর্ম বিরোধী চিন্তা।
তার বক্তব্যের সমালোচনা করে পোস্ট করা একটা মন্তব্যকে (যা এখন ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে) শেয়ার করে তিনি বলেছেন, ‘কী কুৎসিত মন্তব্য এবং এমন আরো অনেক (মন্তব্য) রয়েছে’। ‘প্রথমত, প্রশ্নটা ছিল আমার আন্তঃধর্মীয় বিয়ে নিয়ে। আমি একজন পাবলিক ফিগার, লোকেরা স্বাভাবিকভাবেই কৌতূহলী এবং আমি এই প্রশ্ন এড়াতাম না’।
তিনি আরও বলেছিলেন যে তার খ্রিস্টান মূল্যবোধ তাকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে যে ‘গসপেল (খ্রিস্ট ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী যার দ্বারা ‘ভালো গল্প’ বা ‘ভালো খবর’কে বোঝায়) সত্য এবং মানবতার পক্ষে’ সেই বিশ্বাস থেকেই কথাগুলো বলেছিলেন তিনি।
মি. ভান্স লিখেছেন, ‘আমার স্ত্রী আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ, যেমনটা আমি আগেও বলেছি। অনেক বছর আগে, ও (ঊষা ভান্স) আমাকে আমার ধর্মের সঙ্গে পুনরায় সংযোগ স্থাপনের জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল’।
‘ও খ্রিস্টান নয় এবং তার ধর্ম পরিবর্তন করার কোনো ইচ্ছা নেই। কিন্তু আন্তঃধর্মীয় বিবাহ বন্ধনে বা আন্তঃধর্মীয় সম্পর্কে থাকা অনেকরই মতো আমিও চাই যে ও আমার মতো করে বিষয়গুলোকে দেখুক’। তবে তা না হলেও যে সমস্যা নেই তা তিনি উল্লেখ করেছেন।
জেডি ভান্স বলেছেন, ‘কিন্তু যাই হোক না কেন আমি তার সঙ্গে জীবন, (ধর্মীয়) বিশ্বাস এবং অন্যান্য সবকিছুই নিয়েই আলোচনা করি, কারণ ও আমার স্ত্রী’। ভান্স তার বিরুদ্ধে হওয়া সমালোচনাকে ‘খ্রিস্টান ধর্ম বিরোধী’ চিন্তার প্রতিফলন বলে আখ্যা দিয়েছেন। সূত্র: বিবিসি।
																			












