নিউইয়র্ক ০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আমরা নি:শর্ত ক্ষমা চেয়েছি , পুরো জাতিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এগুতে চাই : নিউইয়র্কে জামায়াত আমীর

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৫৫:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
  • / ২০ বার পঠিত

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ৪৭ থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত আমরা দেশবাসী ও জাতির কাছে নি:শর্ত ক্ষমা চাই। এই ক্ষমা আমরা আগেও চেয়েছি, এখনো চাই। এতে নতুন করে কিছু নেই। তিনি বলেন, যারা আমাদের ভুল ধরে দিয়েছেন তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, আমাদের নেতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী এবং আমি নিজেও জামায়াতের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দিয়েছি। আমরা মানুষ, আমাদের সংগঠন মানুষের সংগঠন। আমাদেরও ভুল হতে পারে। তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা কি শুধু একাত্তরেই ভুল করেছি, আর কোন ভুল করিনি। অন্য কোন দল কী কোন ভুল করেনি। যত ভুল ধরা হবে ততই দূরত্ব বাড়বে। তিনি বলেন, ‘উই আর ফরোয়ার্ড লুকিং। পুরো জাতিকে নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এগুতে চাই’।
জামায়াতে আমীর ডা. শফিকুর রহমান দেশের চলান পরিস্থিতি নিয়ে নিউইয়র্কের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে উপরোক্ত কথা বলেন। তার যুক্তরাষ্ট্র আগমন উপলক্ষ্যে কোয়ালিশন অফ বাংলাদেশী আমেরিকান এসোসিয়েশন-কোবা বুধবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ওয়ার্ল্ড ফেয়ার মেরিনা রেষ্টুরেন্টে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এসময় সমন্বয়কারী ছিলেন জামায়াতের যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র ড. নাকিবুর রহমান। খবর ইউএনএ’র।
জনাকীর্ণ এই মতবিনিময় সভায় প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে বাংলাদেশ বাংলাদেশ-ই হবে, অন্যকোন দেশ হবে না। সংখ্যালঘূ বলতে কিছু থাকবে না। কোন বৈষম্য থাকবে না। ধর্ম দেখে নয়, নাগরিক দেখে যার যার অধিকার সে তাই পাবে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে, সম্মানের সাথে থাকতে চাই। পারষ্পারিক সম্মান চাই। সেই পরিবেশই সৃষ্টি করা হবে। আমরা জোর করে কিছু করার পক্ষে নই, জোর করে কাউকে দেশত্যাগেও বাধ্য করার পক্ষে নই। যার যার অধিকার তাকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। সমাজে কোন বেইনসাফি থাকবে না।
অপর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভারতের সাথে শেখ হাসিনার অনেক চুক্তি হয়েছে। শুধু ভারত নয়, অনেক দেশের সাথেই বাংলাদেশের চুক্তি হয়েছে। সব চুক্তিই দেশের স্বার্থ বিরোধী নয়। তবে দেশ বিরোধী চুক্তি ‘বাই লেটারাল বা ডাইলগ’-এর মাধ্যমে চুক্তি বাতিল করা হবে। তবে যেকোন চুক্তি করার অগে শতবার ভাবা উচিৎ।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি সাড়ে ১২ বছরের শিশু। তিনি মুক্তিযুদ্ধ আর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রেক্ষাপটের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধ করি নাই তবে, মুক্তিযুদ্ধ আমার হৃদয়ে ধারণ করি। আমার ব্যক্তি আর দলের অবস্থান ভিন্ন হতে পারে। আর যে দলের মাধ্যমে আমার রাজনীতির হাতেখড়ি সেই দল ইসলামিক দল ছিলো না। মূলত: পাকিস্তান শাসন করে আর্মী আর মুসলীম লীগ। ৬৯-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগষ্ঠিতা অর্জন করে। আর জামায়াতে ইসলাম-ই প্রথম দল সেই সময় সংখ্যাগরিষ্ট দলের কাছে ক্ষমতা দেয়ার দাবী জানায়। পরবর্তীতে শেখ মুজিব সরকার কোলাবরেট আইন করে এবং চারটি অভিযোগে অভিযুক্ত ছাড়া সবাইকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। জামায়াতের কোন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ঐ চারটি অভিযোগ ছিলো না। তিনি বলেন, একাত্তুরে জামায়াতের ভ‚মিকা ছিলো- ঐক্যবদ্ধ দেশের পক্ষে। ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ৮০ভাগ মানুষ পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের কোন শর্ত ছিলো না, এই তথ্য আমাদের না, মিডিয়ার। তবে আমরা জাতির কল্যাণে যোক্তিক দাবী তুলে ধরেছি।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রাজনীতিতে জামায়াত-বিএনপি দুটি দল। আমরা জাতির সাথে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতি করেছি। এখন যার যার অবস্থান থেকে রাজনীতি করছি। তবে কোন দলকে লক্ষ্য করে জামায়াত কোন কথা বলেনি। রাজনীতি সমালোচনা মেনে নেয়ার সহ্য ক্ষমতা থাকতে হবে। এইট গণতন্ত্রের বিউটি। আমাদের মধ্যে কোন ঝগড়া নেই। জাতির স্বার্থে সাইকে নিয়ে এক সাথে কাজ করার মানসিকতা রয়েছে। আমরা কোন দলকে বাদ দিয়ে নয়, সবাইকে নিয়ে দেশ গড়তে চাই।
এনসিপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসসিপি আমাদের ছোট ভাই, তাদের অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। তাদের সুযোগ দিতে হবে। তারা ভুল করলে আগামীতে শিখবে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আরপিও’ অনুযায়ী বিদেশের মাটিতে জামায়াতের কোন শাখা থাকতে পারবে না। আমরা তা মেনে চলি। তাই শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, পৃথিবীর কোন দেশেই জামায়াতের কোন শাখা নেই। তবে দুনিয়ায় যারা একই উদ্দেশ্যে কাজ করবে তাদের সাথে কাজ করবে।
জাসদ-এর রাজনীতি তথা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, সেই আদর্শ তো বাস্তায়নই হয়নি।
পিআর পদ্ধতি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যেহেতু পিআর পদ্ধতি সম্পর্কে জাতিকে জানাতে হবে, জানতে হবে তাই আমরা সময় নিবো। তবে আমরা দাবী কররেই যে তা মানতে হবে তা গণতন্ত্র নয়। আমরা তা বিশ্বাসও করি না। তবে যোক্তিক দাবী মানাটাই স্বাভাবিক মনে করি। আমরা জুলাই বিপ্লবের চেতনা নিয়ে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে ৬টি দল পিআর চায় না।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতি আমাদের দেশে নতুন। তাই পিআর নিয়ে আমরা টানাটানি করছি না, জনগণের কাছে যাচ্ছি। ইতিপূর্বে দেশে একাধিকবার গণভোট হয়েছে। নির্বাচন গ্রহনযোগ্য করতেই আমরা নভেম্বরে গণভোট চেয়েছি। আর ফেব্রæয়ারীতেই নির্বাচন চাই।
সেনাবাহিনীর অফিসার গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যেকোন অপরাধীর বিচার চাই এবং তারা ন্যায় বিচার পাবে তাই চাই। এই বিচার কোন বাহিনীর বিরুদ্ধে নয়।
কোয়ালিশন গভমেন্ট সম্পর্কে এখনো কোন আলোচনা হয়নি। আমরা চাইনা দেশে কোন ফ্যাসিজম জন্ম নিক।
দেশে জামায়াতের ভোট কত এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের কাছে ২টি জরিপ আছে, তবে প্রকাশ করতে চাই না। আর জরিপ ১০০ ভাগ সঠিক হয় না। তিনি বলেন, ছয় মাস আগেই ৩০০ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী বাছাই করেছি। তবে এটাই চুড়ান্ত নয়। যেকোন দলকে দল হিসেবে আমরা সম্মান জানাতে চাই। কোন দলের সাথে সমঝোতা হওয়া খারাপ কিছু নয়। বিএনপির সাথে আমাদের কোন আলোচনা হয়নি।
দলের প্রধান কি সরকার প্রধান হবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একই ব্যক্তি সরকার ও দলের প্রধান হবে না- এটাই আমাদের স্ট্যান্ড।
ইসলামিক জোট সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের সাথে যারা ছিলো তারা আমাদের সাথেই আছে। দেশে ২৮১টি ইসলামিক দল রয়েছে। আমরা কোন ফরমার জোট করবো না। তবে সমঝোতা হতে পারে। তবে যাই করবো দেশের কল্যানে করবো।
মতবিনিময় সভার শুরুতে ডা. শফিকুর রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখার পর সরাসরি প্রশ্নোত্তর পর্বে চলে যান। প্রশ্নোত্তর পর্বে শেষে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি বলেন, আমরা প্রবাসীদের ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন করেছি। তাই সবাই ভোট দিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি তিনি গার্মেন্ট শিল্প ও রেমিটেন্স বৃদ্ধির পাশাপাশি অভিজ্ঞদের দেশে ফিরে জাতির কল্যাণে আবদান রাখার আহŸান জানান।
তিনি বলেন, জামায়াত ফেরেস্তার দল নয়, মানুষের দল। আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। তিনি বলেন, আপনারা এমন সমালোচনা করেন যা জাতির কল্যাণে কাজ করে। তিনি দেশটা দেখতে আর ভোট দেয়ার জন্য প্রবাসীদের দেশে যাওয়ার আহŸান জানান।

আমীরে জামায়াতের নিউইয়র্ক আগমন: এর আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র সফর উপলক্ষ্যে বুধবার (২২ অক্টোবর) নিউইয়র্কে এসে পৌছেন। পবিত্র মক্কায় ওমরাহ পালন শেষে আমীরে জামায়াতে তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী সৌদি এয়ারলাইসের একটি ফ্লাইটটি বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ২০ মিনিটে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র জামায়াতের মুখপাত্র ড. নাকিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাহবুবুর রহমান, এডভোকেট আবুল হাশেম, আলমগীর হোসাইন, ইয়াছিন সবুজ, নঈম উদ্দিন, রুহুল আম্বিয়া সুমন, আব্দুল আজিজ প্রমুখ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আমীরে জামায়াত-এর এটাই যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম সফর। যুক্তরাষ্ট্র সফর কর্মসূচীর মধ্যে শুরুটা হয় নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশী সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে। এছাড়া তিনি নিউইয়র্ক, বাফেলো, ওয়াশিংটন, মিশিগানের বিভিন্ন সমাবেশ যোগদান করবেন। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে তিনি যুক্তরাজ্য যাবেন। যুক্তরাজ্য সফর শেষে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি ঢাকা প্রত্যাবর্তন করবেন।

কোবা আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা ২৬ অক্টোবর: অপরদিকে দিকে তার সম্মানে আগামী ২৬ অক্টোবর রোববার কোয়ালিশন অব বাংলাদেশী আমেরিকান এসেসিয়েশন এক নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। এদিন নিউইয়র্কের এস্টোরিয়া ওয়ার্ল্ড ম্যানরে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আমরা নি:শর্ত ক্ষমা চেয়েছি , পুরো জাতিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এগুতে চাই : নিউইয়র্কে জামায়াত আমীর

প্রকাশের সময় : ১১:৫৫:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ৪৭ থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত আমরা দেশবাসী ও জাতির কাছে নি:শর্ত ক্ষমা চাই। এই ক্ষমা আমরা আগেও চেয়েছি, এখনো চাই। এতে নতুন করে কিছু নেই। তিনি বলেন, যারা আমাদের ভুল ধরে দিয়েছেন তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, আমাদের নেতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী এবং আমি নিজেও জামায়াতের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দিয়েছি। আমরা মানুষ, আমাদের সংগঠন মানুষের সংগঠন। আমাদেরও ভুল হতে পারে। তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা কি শুধু একাত্তরেই ভুল করেছি, আর কোন ভুল করিনি। অন্য কোন দল কী কোন ভুল করেনি। যত ভুল ধরা হবে ততই দূরত্ব বাড়বে। তিনি বলেন, ‘উই আর ফরোয়ার্ড লুকিং। পুরো জাতিকে নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এগুতে চাই’।
জামায়াতে আমীর ডা. শফিকুর রহমান দেশের চলান পরিস্থিতি নিয়ে নিউইয়র্কের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে উপরোক্ত কথা বলেন। তার যুক্তরাষ্ট্র আগমন উপলক্ষ্যে কোয়ালিশন অফ বাংলাদেশী আমেরিকান এসোসিয়েশন-কোবা বুধবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ওয়ার্ল্ড ফেয়ার মেরিনা রেষ্টুরেন্টে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এসময় সমন্বয়কারী ছিলেন জামায়াতের যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র ড. নাকিবুর রহমান। খবর ইউএনএ’র।
জনাকীর্ণ এই মতবিনিময় সভায় প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে বাংলাদেশ বাংলাদেশ-ই হবে, অন্যকোন দেশ হবে না। সংখ্যালঘূ বলতে কিছু থাকবে না। কোন বৈষম্য থাকবে না। ধর্ম দেখে নয়, নাগরিক দেখে যার যার অধিকার সে তাই পাবে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে, সম্মানের সাথে থাকতে চাই। পারষ্পারিক সম্মান চাই। সেই পরিবেশই সৃষ্টি করা হবে। আমরা জোর করে কিছু করার পক্ষে নই, জোর করে কাউকে দেশত্যাগেও বাধ্য করার পক্ষে নই। যার যার অধিকার তাকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। সমাজে কোন বেইনসাফি থাকবে না।
অপর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভারতের সাথে শেখ হাসিনার অনেক চুক্তি হয়েছে। শুধু ভারত নয়, অনেক দেশের সাথেই বাংলাদেশের চুক্তি হয়েছে। সব চুক্তিই দেশের স্বার্থ বিরোধী নয়। তবে দেশ বিরোধী চুক্তি ‘বাই লেটারাল বা ডাইলগ’-এর মাধ্যমে চুক্তি বাতিল করা হবে। তবে যেকোন চুক্তি করার অগে শতবার ভাবা উচিৎ।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি সাড়ে ১২ বছরের শিশু। তিনি মুক্তিযুদ্ধ আর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রেক্ষাপটের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধ করি নাই তবে, মুক্তিযুদ্ধ আমার হৃদয়ে ধারণ করি। আমার ব্যক্তি আর দলের অবস্থান ভিন্ন হতে পারে। আর যে দলের মাধ্যমে আমার রাজনীতির হাতেখড়ি সেই দল ইসলামিক দল ছিলো না। মূলত: পাকিস্তান শাসন করে আর্মী আর মুসলীম লীগ। ৬৯-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগষ্ঠিতা অর্জন করে। আর জামায়াতে ইসলাম-ই প্রথম দল সেই সময় সংখ্যাগরিষ্ট দলের কাছে ক্ষমতা দেয়ার দাবী জানায়। পরবর্তীতে শেখ মুজিব সরকার কোলাবরেট আইন করে এবং চারটি অভিযোগে অভিযুক্ত ছাড়া সবাইকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। জামায়াতের কোন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ঐ চারটি অভিযোগ ছিলো না। তিনি বলেন, একাত্তুরে জামায়াতের ভ‚মিকা ছিলো- ঐক্যবদ্ধ দেশের পক্ষে। ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ৮০ভাগ মানুষ পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের কোন শর্ত ছিলো না, এই তথ্য আমাদের না, মিডিয়ার। তবে আমরা জাতির কল্যাণে যোক্তিক দাবী তুলে ধরেছি।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রাজনীতিতে জামায়াত-বিএনপি দুটি দল। আমরা জাতির সাথে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতি করেছি। এখন যার যার অবস্থান থেকে রাজনীতি করছি। তবে কোন দলকে লক্ষ্য করে জামায়াত কোন কথা বলেনি। রাজনীতি সমালোচনা মেনে নেয়ার সহ্য ক্ষমতা থাকতে হবে। এইট গণতন্ত্রের বিউটি। আমাদের মধ্যে কোন ঝগড়া নেই। জাতির স্বার্থে সাইকে নিয়ে এক সাথে কাজ করার মানসিকতা রয়েছে। আমরা কোন দলকে বাদ দিয়ে নয়, সবাইকে নিয়ে দেশ গড়তে চাই।
এনসিপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসসিপি আমাদের ছোট ভাই, তাদের অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। তাদের সুযোগ দিতে হবে। তারা ভুল করলে আগামীতে শিখবে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আরপিও’ অনুযায়ী বিদেশের মাটিতে জামায়াতের কোন শাখা থাকতে পারবে না। আমরা তা মেনে চলি। তাই শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, পৃথিবীর কোন দেশেই জামায়াতের কোন শাখা নেই। তবে দুনিয়ায় যারা একই উদ্দেশ্যে কাজ করবে তাদের সাথে কাজ করবে।
জাসদ-এর রাজনীতি তথা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, সেই আদর্শ তো বাস্তায়নই হয়নি।
পিআর পদ্ধতি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যেহেতু পিআর পদ্ধতি সম্পর্কে জাতিকে জানাতে হবে, জানতে হবে তাই আমরা সময় নিবো। তবে আমরা দাবী কররেই যে তা মানতে হবে তা গণতন্ত্র নয়। আমরা তা বিশ্বাসও করি না। তবে যোক্তিক দাবী মানাটাই স্বাভাবিক মনে করি। আমরা জুলাই বিপ্লবের চেতনা নিয়ে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে ৬টি দল পিআর চায় না।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতি আমাদের দেশে নতুন। তাই পিআর নিয়ে আমরা টানাটানি করছি না, জনগণের কাছে যাচ্ছি। ইতিপূর্বে দেশে একাধিকবার গণভোট হয়েছে। নির্বাচন গ্রহনযোগ্য করতেই আমরা নভেম্বরে গণভোট চেয়েছি। আর ফেব্রæয়ারীতেই নির্বাচন চাই।
সেনাবাহিনীর অফিসার গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যেকোন অপরাধীর বিচার চাই এবং তারা ন্যায় বিচার পাবে তাই চাই। এই বিচার কোন বাহিনীর বিরুদ্ধে নয়।
কোয়ালিশন গভমেন্ট সম্পর্কে এখনো কোন আলোচনা হয়নি। আমরা চাইনা দেশে কোন ফ্যাসিজম জন্ম নিক।
দেশে জামায়াতের ভোট কত এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের কাছে ২টি জরিপ আছে, তবে প্রকাশ করতে চাই না। আর জরিপ ১০০ ভাগ সঠিক হয় না। তিনি বলেন, ছয় মাস আগেই ৩০০ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী বাছাই করেছি। তবে এটাই চুড়ান্ত নয়। যেকোন দলকে দল হিসেবে আমরা সম্মান জানাতে চাই। কোন দলের সাথে সমঝোতা হওয়া খারাপ কিছু নয়। বিএনপির সাথে আমাদের কোন আলোচনা হয়নি।
দলের প্রধান কি সরকার প্রধান হবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একই ব্যক্তি সরকার ও দলের প্রধান হবে না- এটাই আমাদের স্ট্যান্ড।
ইসলামিক জোট সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের সাথে যারা ছিলো তারা আমাদের সাথেই আছে। দেশে ২৮১টি ইসলামিক দল রয়েছে। আমরা কোন ফরমার জোট করবো না। তবে সমঝোতা হতে পারে। তবে যাই করবো দেশের কল্যানে করবো।
মতবিনিময় সভার শুরুতে ডা. শফিকুর রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখার পর সরাসরি প্রশ্নোত্তর পর্বে চলে যান। প্রশ্নোত্তর পর্বে শেষে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি বলেন, আমরা প্রবাসীদের ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন করেছি। তাই সবাই ভোট দিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি তিনি গার্মেন্ট শিল্প ও রেমিটেন্স বৃদ্ধির পাশাপাশি অভিজ্ঞদের দেশে ফিরে জাতির কল্যাণে আবদান রাখার আহŸান জানান।
তিনি বলেন, জামায়াত ফেরেস্তার দল নয়, মানুষের দল। আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। তিনি বলেন, আপনারা এমন সমালোচনা করেন যা জাতির কল্যাণে কাজ করে। তিনি দেশটা দেখতে আর ভোট দেয়ার জন্য প্রবাসীদের দেশে যাওয়ার আহŸান জানান।

আমীরে জামায়াতের নিউইয়র্ক আগমন: এর আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র সফর উপলক্ষ্যে বুধবার (২২ অক্টোবর) নিউইয়র্কে এসে পৌছেন। পবিত্র মক্কায় ওমরাহ পালন শেষে আমীরে জামায়াতে তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী সৌদি এয়ারলাইসের একটি ফ্লাইটটি বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ২০ মিনিটে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র জামায়াতের মুখপাত্র ড. নাকিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাহবুবুর রহমান, এডভোকেট আবুল হাশেম, আলমগীর হোসাইন, ইয়াছিন সবুজ, নঈম উদ্দিন, রুহুল আম্বিয়া সুমন, আব্দুল আজিজ প্রমুখ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আমীরে জামায়াত-এর এটাই যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম সফর। যুক্তরাষ্ট্র সফর কর্মসূচীর মধ্যে শুরুটা হয় নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশী সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে। এছাড়া তিনি নিউইয়র্ক, বাফেলো, ওয়াশিংটন, মিশিগানের বিভিন্ন সমাবেশ যোগদান করবেন। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে তিনি যুক্তরাজ্য যাবেন। যুক্তরাজ্য সফর শেষে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি ঢাকা প্রত্যাবর্তন করবেন।

কোবা আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা ২৬ অক্টোবর: অপরদিকে দিকে তার সম্মানে আগামী ২৬ অক্টোবর রোববার কোয়ালিশন অব বাংলাদেশী আমেরিকান এসেসিয়েশন এক নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। এদিন নিউইয়র্কের এস্টোরিয়া ওয়ার্ল্ড ম্যানরে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।