টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হামিদুল হক মোহনের ইন্তেকাল

- প্রকাশের সময় : ১২:৪১:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
- / ৭ বার পঠিত
হককথা রিপোর্ট: স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী’র সহচর, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জেলা নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক মোহন ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া-ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। স্থানীয় সময় সোমবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭ টায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
জানা যায়, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সাবেক স্বনির্ভর সম্পাদক ও জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হামিদুল হক মোহন জাতীয় সংসদের টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে লক্ষ্যে সোমবার (২০ অক্টোবর) দেলদুয়ারে লিফলেট বিতরণ ও প্রচারণা শেষে টাঙ্গাইল শহরের নিজ বাসায় ফেরার পথে হঠাৎ অসুস্থ হন। পরে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
বিএনপি’র এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ হামিদুল হক মোহন টাঙ্গাইলের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। তার মৃত্যুর খবরে নানা মহলে শোকের ছায়া নেমেছে।
সোমবার বিকেলে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নে আয়োজিত এই সভায় বক্তব্য দিয়ে ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বিএনপি নেতা হামিদুল হক। ছবি: সংগৃহীত
প্রথম আলোর খবরে বলা হয়: হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হামিদুল হক মোহনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহমুদুল হক। দেলদুয়ার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ জানান, ১২ অক্টোবর দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে টাঙ্গাইল-৬ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দেন হামিদুল হক। এ জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেন। এর অংশ হিসেবে সোমবার বিকেলে উপজেলার দেউলী ইউনিয়নে যান। সেখানে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত দলের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন। সভা শেষ করে পাশের মসজিদে সন্ধ্যায় নামাজ পড়েন। পরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কয়েকটি গাড়ি নিয়ে টাঙ্গাইল শহরের উদ্দেশে রওনা হন। কিছু দূর যাওয়ার পর অসুস্থ বোধ করেন। তাঁকে অচেতন অবস্থায় টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সিসিইউতে তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
হামিদুল হকের বড় ছেলে মিল্টন হক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাঁর বাবার দাফন করা হবে।
হামিদুল হকের গণসংযোগে উপস্থিত ছিলেন নাগরপুর উপজেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাবেক সভাপতি প্রভা রানী শীল। তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর আগে দেউলী গ্রামে শেষ বক্তৃতায় আবেগঘন বক্তব্য দেন মোহন ভাই। তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন ‘আমার মাথার চুল সব পেকে গেছে। তাই মনে করবেন না যে আমি আপনাদের কাজ করতে পারব না। আমি মৃত্যুর আগপর্যন্ত জনগণের জন্য কাজ করতে চাই।’
ব্যক্তিজীবনে হামিদুল হক মোহন ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের (ভাষা-মতিন) ভগ্নিপতি। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, তিন মেয়ে রেখে গেছেন। হামিদুল হকের ঘনিষ্ঠ নেতারা জানান, স্কুলছাত্র থাকা অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রæপ) মাধ্যমে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন হামিদুল হক মোহন। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি টাঙ্গাইল জেলা সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। স্বাধীনতার পর ভাসানী ন্যাপের রাজনীতে যুক্ত হন। পরে ভাসানী ন্যাপ বিএনপির সঙ্গে একীভূত হয়। তিনি টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালে সভাপতি হন। টানা ১৭ বছর জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। টাঙ্গাইল নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন হামিদুল হক।