নিউইয়র্ক ০২:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বিএনপি নিয়ে আমার ভাবনা ও প্রস্তাবনা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৩৭:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৫১ বার পঠিত

শামসুল ইসলাম মজনু: বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (বীরোত্তম) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা। চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি তার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে। নানা সংগ্রাম, আন্দোলন আর ত্যাগের মধ্যদিয়ে বিএনপি আজ দেশের শীর্ষ জনপ্রিয় দলে পরিণত হয়েছে, কিন্তু বিএনপি আজ নানা স্বরযন্ত্রের শিকার। বিশেষ করে জুলাই অভ্যূত্থানের পর থেকেই বিএনপি ও বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের নিয়ে একশ্রেনীর ইউটিউবাররা বিভিন্ন ধরনের নেগেটিভ সংবাদ প্রচার করে আসছেন। এসব প্রচারের যে সকল তথ্য সঠিক নয়, কেন এব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করা হয় না? উল্লেখ্য কারো কারো ভিউ ১০ থেকে ২০ লাখ, আমি মনে করি এদেরকে হেলাফেলা না করে, কেন চ্যালেঞ্জ করা হয় না অথবা যদি ভুল তথ্য দিয়ে থাকেন কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এতে করে সাধারণ জনগণ যেমন সত্য ঘটনা জানতে পারবে এবং তা ইতিহাসের সাক্ষ্য হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল দুই ধাপে ক্ষমতায় ছিল বিধায় বিএনপি-কে নিয়ে, বিএনপি সম্পর্কে সমালোচনা করা খুবই সহজ, এবং এটাই স্বাভাবিক আর সেখানে আগামী দিনে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যেহেতু এই মুহূর্তে বিএনপির সম্ভাবনাই বেশি সেখানে বিএনপিকে নিয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে বা হবে এটাই স্বাভাবিক এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য সৌন্দর্য।
বিএনপি’র সিনিয়ার নেতারা রাজনৈতিক মঞ্চে উঠে হুংকার দিয়ে বক্তব্য দেন, উপস্থিত জনতাকে বোকা বানায় হাততালি পেয়ে, কিন্তু উনারা কি নিজেরা সাহস করে উদ্যোগ নিয়ে প্রমাণ সাপেক্ষে নিজে বা সমর্থক দিয়ে সেটা প্রমাণ করেছেন বা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন নিজেদেরকে দুর্নীতির উর্ধ্বে রাখার জন্য? দেখতে দেখতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৪ বছর হলো।
শামসুল ইসলাম মজনু

বাংলাদেশর স্বাধীনতা যুদ্ধে বাবাকে হারাই সুন্দর একটা দেশ দেখবো বলে, সে দেশের ভবিষ্যৎ কি বলতে পারি না। বাংলাদেশের রাজনীতি কি ভারতীয় নাকি পাকিস্তানের রাজনীতি হবে, তাহলে কেন পৃথক হলাম, কেন স্বাধীনতার কথা বলি? বলতে কুন্ঠা নেই যে, বাংলাদেশের রাজনীতিকে কলুষিত করেছে আওয়ামী লীগ, দলটি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। শেখ মুজিবের মত নেতা যার অবর্তমানে স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অনুপস্থিতে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভ করেছে, পরবর্তীতে তিনি নিজে ক্ষমতার লোভে দেশকে পরিবারিক সম্পদ বানিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন যে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং সেই আওয়ামী লীগ জনগণের কণ্ঠ রোধ করে দেশের মানুষের ন্যূনতম দাবীকে উপেক্ষা করে একদলীয় শাসন কায়েম করে দেশকে অনিশ্চিতার দিকে মুখে ঠেলে দিয়েছে। তাই শেখ মুজিবের নেতৃত্বের যোগ্যতা ইতিহাস মূল্যায়ন করবে। ১৯৭৫ সালে এক অরাজগত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসেন এবং খুব কম সময়ের মাঝে জনগণের কাছাকাছি পৌছাতে পেরেছেন। শুরুতেই বলেছি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিকে কলুষিত করেছে, শেখ মুজিব তার জীবদ্দশায় বলে গেছেন- “মানুষ পায় সোনার খনি, আর আমি পেয়েছি চোরের খনি”। বিষয়টা তিনি নিজে জেনেও এগুলোর বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন বা নিতে পারেননি।
তার উপর আবার নিজে সরাসরি দুর্নীতিতে জড়িত হয়ে পড়েন এবং সাথে সাথে দলীয় রাজনীতিবীদরা দুর্নীতি করে কিভাবে টাকা বানানো যায় সেভাবে তাদেরকে মেশিন বানিয়ে দিয়েছেন, অন্যদিকে জিয়াউর রহমার এ ব্যাপারে ক্ষমতার শুরুতেই কঠোর পদক্ষেপ নেন।
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সাধারণত এগুলো দেখা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে সকল রাজনীতিবিদ কি দুর্নীতিবাজ? না, তা শতভাগ সঠিক নয়। শেখ মুজিবুর রহমানের স্বজনপ্রীতি আর দুর্নীতি পরায়নতার কারনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার আগমনী বার্তা সাধারণ জনগণ খুব সহজভাবে গ্রহন করেছে। খুব অল্প সময় তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করতে পেরেছেন, তাঁর মৃত্যুতে দেশ ও জাতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আমি বিএনপি’র রাজনীতি করি বলে সে কারণে নয়, আজ প্রায় ৪৪ বছর হলো কেউ কি প্রমাণ দিতে পেরেছেন, কেউ কি আজ অবধি প্রমাণ দেখাতে পেরেছেন যে শহীদ জিয়া স্বজনপ্রীতি করেছেন বা দুর্নীতি করে সম্পদ করেছেন। আমাকে বারবার ব্যথিত করে কেন শহীদ জিয়া বেশি দিন বেঁচে থাকলেন না? কেন তাকে এভাবে হত্যা করা হলো?
আজ দীর্ঘ ১৭ বছর বিএনপি ক্ষমতার বাইরে, আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় যায় যাচ্ছে বলে অবস্থান, অথচ এই বিএনপিকে নিয়ে শুরু হয়েছে অপ্রচার, মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে বিএনপিকে পরাজিত খেলোয়াড় হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে, এটাই স্বাভাবিক। সাধারণ খেলার মাঠেই একজন আরেকজনকে কুপোঘাত করতে সদা প্রস্তুত, সেখানে রাজনৈতিক মাঠ আরো পিচ্ছিল, এখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কঠিন খেলা, এটাকে হেলাফেলা করে দেখা চলবে না। আরেকবার ভুল হলে জীবনে দ্বিতীয়বার জয়ী হওয়া খুবই দুঃসাধ্য। বিএনপি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল ক্ষমতায় ছিল সেসময়ের ভুলভ্রান্তিগুলোকে নিয়ে একটি গবেষণাধর্মী সেল করে কাজ করা উচিত, যদি কাজ করে থাকেও কেন বেশি বেশি প্রচার করা হচ্ছে না প্রকাশনা হচ্ছে না? আগামী দিন কিভাবে এ ধরনের ভুলভ্রান্তি মোকাবেলা করা হবে তা জানার আগ্রহ সবার রয়েছে।
বিএনপি এখন দলীয় চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরামর্শে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ৩১ দফা নিয়ে প্রচারে ব্যস্ত যা আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনায় নিঃসন্দেহে একটা মাইলস্টোন হয়ে থাকবে। তবে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনে বাংলাদেশে নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে, পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুতেই, এতে করে দেশের আপামর জনতার নতুন বাংলাদেশের অপেক্ষায় আর এই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে বিএনপি যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে এ কারণেই বিএনপিকে বেকাদায় ফেলার চেষ্টা চলছে, এখানে বিএনপি যদি সুক্ষ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে না পারে তবে তাতে বিএনপি তথা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক বলতে হবে।
এখন সংস্কার সংস্কার নিয়ে সারাদেশ টালমাটাল অবস্থা আর এই সংস্কারগুলোর সারমর্ম যেটা হলো সেটা সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতিকে রোধ করা, দেশের বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচনী ব্যবস্থা সুদৃঢ় করা, একই ব্যক্তি পরপর দু’বার প্রধানমন্ত্রী না হওয়া প্রভৃতি সংস্কার- এখন সময়ের দাবী। আমি মনে করি দুর্নীতি না হলে একজনকে দুই/তিনবার সরকার পরিচালনা করার জন্য কোন প্রকার আইন করার প্রয়োজন হবে না। বিএনপি যখন ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে অতএব তাকেই এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, কঠোর বার্তা দিতে হবে সব জায়গায়। আজকে সবচাইতে বেশি প্রচার করানো হচ্ছে বিএনপি ‘চাঁদাবাজি, দখল বাজি’র দল এবং এগুলো মোকাবেলা করা যাচ্ছে না, কারন ওই চাঁদাবাজ দখলবাজরা কোন না কোন নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রয়েছেন। তাই আমার প্রস্তাব বিএনপি-কে এখন ‘জিরো ট্রলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করে তৃণমূল হতে চেয়ারম্যান পর্যন্ত সবাইকে সম্পদ বিবরণী দলের কাছে জমা দিতে হবে, এবং এটাকে একটা স্থায়ী রূপ দিতে হবে। সর্বজন প্রকাশিত অতি নিম্ন অবস্থান থেকে কিছু কিছু নেতৃবৃন্দ অর্থবিত্তে বলিয়ান হয়েছেন, কিন্তু তাদের ব্যাপারে বিএনপি কি কখনো তদন্ত করেছে বা তদন্ত করার চেষ্টা করেছে? তানাহলে হয়তো আজকে এই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হতো না। অবৈধ উপায়ে সম্পদশালী হওয়া মানুষজনের কাছে কষ্ট করে সম্পদশালী হওয়া মানুষেরা হারিয়ে যাচ্ছে, আর এতে অবৈধ সম্পদশালীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, রাষ্ট্রীয় সংস্কারের পাশাপাশি বিএনপি তার দলীয় উচ্চ মাধ্যম মানের নেতাদের সম্পদের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব-নিকাশ করলে অবশ্যই দলীয় দুর্নীতির অনেক রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে এতে দল উপকৃত হবে, দেশও উপকৃত হবে, এগিয়ে যাবে দেশ। আজকে নতুন নতুন সংস্কার, নতুন নতুন প্রস্তাবনা আসছে কিভাবে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার পথরুদ্ধ করে দেওয়া যায়, কিভাবে বিএনপিকে বাধাগ্রস্ত করে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যায়। আজকে যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, বিএনপিকে কিছুতেই নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে পারতো না।
বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে- বিএনপি হচ্ছে সজ্জন, পরিচ্ছন্ন মেধাবী রাজনৈতিক সংগঠন। বিএনপিকে জনগণ সবসময় ভদ্র মানুষের দল হিসেবে বিবেচনা করেন। আজ থেকে ২ দশক আগে দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দলীয় মেধাবীদের নিয়ে এক আলাপচারিতায় বলেছিলেন- শেখ হাসিনা যত অভদ্র ভাষায় কথা বলবে, আমরা তত শালীনতা বজায় রেখে তার জবাব দেবো। বেগম খালেদা জিয়ার সেদিনের কথাগুলোর সাথে আজকের কিছু কিছু দলীয় নেতার আচরণ ও কথাবার্তার ধরন খুবই বেমানান, যা খুবই দুঃখজনক।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ হচ্ছে পেশী নির্ভর চাঁদাবাজ দুর্নীতিবাদের সংগঠন তারা যুক্তি তর্কের পরোয়া করে না চেতনা বিক্রি করে চেতনার ফেরিওয়ালা হয়ে দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে দল মত নির্বিশেষে ২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। আর এটা যদি বিএনপি আমলে না নেয়, ভুলে যায় এবং মেধার চর্চা কে উপেক্ষা করে চাঁদা নির্ভর, পেশী নির্ভর সংগঠনের আচরণ দেখা যায় তাহলে খুব সহজেই বিএনপি বেকাদায় পড়ে যাবে। ফলে ক্ষমতায় যাওয়া তো দূরের কথা দলের অস্তিত্ব বিলীন হতেও বেশি দিন লাগবে না। মনে রাখতে হবে শেখ মুজিবুর রহমানের এক দলীয় শাসন-কে প্রত্যাখ্যান করে শহীদ জিয়ার বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করেন। তাই গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা করে একক নয়, যৌথ আলোচনার মাধ্যমে দলকে পরিচালনা করে এগিয়ে যেতে পারলেই বিএনপির অগ্রযাত্রাকে কেউ-ই ঠেকাতে পারবে না।
জ্যামাইকা, নিউইয়র্ক।

 

 

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বিএনপি নিয়ে আমার ভাবনা ও প্রস্তাবনা

প্রকাশের সময় : ১১:৩৭:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শামসুল ইসলাম মজনু: বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (বীরোত্তম) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা। চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি তার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে। নানা সংগ্রাম, আন্দোলন আর ত্যাগের মধ্যদিয়ে বিএনপি আজ দেশের শীর্ষ জনপ্রিয় দলে পরিণত হয়েছে, কিন্তু বিএনপি আজ নানা স্বরযন্ত্রের শিকার। বিশেষ করে জুলাই অভ্যূত্থানের পর থেকেই বিএনপি ও বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের নিয়ে একশ্রেনীর ইউটিউবাররা বিভিন্ন ধরনের নেগেটিভ সংবাদ প্রচার করে আসছেন। এসব প্রচারের যে সকল তথ্য সঠিক নয়, কেন এব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করা হয় না? উল্লেখ্য কারো কারো ভিউ ১০ থেকে ২০ লাখ, আমি মনে করি এদেরকে হেলাফেলা না করে, কেন চ্যালেঞ্জ করা হয় না অথবা যদি ভুল তথ্য দিয়ে থাকেন কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এতে করে সাধারণ জনগণ যেমন সত্য ঘটনা জানতে পারবে এবং তা ইতিহাসের সাক্ষ্য হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল দুই ধাপে ক্ষমতায় ছিল বিধায় বিএনপি-কে নিয়ে, বিএনপি সম্পর্কে সমালোচনা করা খুবই সহজ, এবং এটাই স্বাভাবিক আর সেখানে আগামী দিনে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যেহেতু এই মুহূর্তে বিএনপির সম্ভাবনাই বেশি সেখানে বিএনপিকে নিয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে বা হবে এটাই স্বাভাবিক এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য সৌন্দর্য।
বিএনপি’র সিনিয়ার নেতারা রাজনৈতিক মঞ্চে উঠে হুংকার দিয়ে বক্তব্য দেন, উপস্থিত জনতাকে বোকা বানায় হাততালি পেয়ে, কিন্তু উনারা কি নিজেরা সাহস করে উদ্যোগ নিয়ে প্রমাণ সাপেক্ষে নিজে বা সমর্থক দিয়ে সেটা প্রমাণ করেছেন বা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন নিজেদেরকে দুর্নীতির উর্ধ্বে রাখার জন্য? দেখতে দেখতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৪ বছর হলো।
শামসুল ইসলাম মজনু

বাংলাদেশর স্বাধীনতা যুদ্ধে বাবাকে হারাই সুন্দর একটা দেশ দেখবো বলে, সে দেশের ভবিষ্যৎ কি বলতে পারি না। বাংলাদেশের রাজনীতি কি ভারতীয় নাকি পাকিস্তানের রাজনীতি হবে, তাহলে কেন পৃথক হলাম, কেন স্বাধীনতার কথা বলি? বলতে কুন্ঠা নেই যে, বাংলাদেশের রাজনীতিকে কলুষিত করেছে আওয়ামী লীগ, দলটি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। শেখ মুজিবের মত নেতা যার অবর্তমানে স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অনুপস্থিতে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভ করেছে, পরবর্তীতে তিনি নিজে ক্ষমতার লোভে দেশকে পরিবারিক সম্পদ বানিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন যে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং সেই আওয়ামী লীগ জনগণের কণ্ঠ রোধ করে দেশের মানুষের ন্যূনতম দাবীকে উপেক্ষা করে একদলীয় শাসন কায়েম করে দেশকে অনিশ্চিতার দিকে মুখে ঠেলে দিয়েছে। তাই শেখ মুজিবের নেতৃত্বের যোগ্যতা ইতিহাস মূল্যায়ন করবে। ১৯৭৫ সালে এক অরাজগত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসেন এবং খুব কম সময়ের মাঝে জনগণের কাছাকাছি পৌছাতে পেরেছেন। শুরুতেই বলেছি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিকে কলুষিত করেছে, শেখ মুজিব তার জীবদ্দশায় বলে গেছেন- “মানুষ পায় সোনার খনি, আর আমি পেয়েছি চোরের খনি”। বিষয়টা তিনি নিজে জেনেও এগুলোর বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন বা নিতে পারেননি।
তার উপর আবার নিজে সরাসরি দুর্নীতিতে জড়িত হয়ে পড়েন এবং সাথে সাথে দলীয় রাজনীতিবীদরা দুর্নীতি করে কিভাবে টাকা বানানো যায় সেভাবে তাদেরকে মেশিন বানিয়ে দিয়েছেন, অন্যদিকে জিয়াউর রহমার এ ব্যাপারে ক্ষমতার শুরুতেই কঠোর পদক্ষেপ নেন।
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সাধারণত এগুলো দেখা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে সকল রাজনীতিবিদ কি দুর্নীতিবাজ? না, তা শতভাগ সঠিক নয়। শেখ মুজিবুর রহমানের স্বজনপ্রীতি আর দুর্নীতি পরায়নতার কারনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার আগমনী বার্তা সাধারণ জনগণ খুব সহজভাবে গ্রহন করেছে। খুব অল্প সময় তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করতে পেরেছেন, তাঁর মৃত্যুতে দেশ ও জাতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আমি বিএনপি’র রাজনীতি করি বলে সে কারণে নয়, আজ প্রায় ৪৪ বছর হলো কেউ কি প্রমাণ দিতে পেরেছেন, কেউ কি আজ অবধি প্রমাণ দেখাতে পেরেছেন যে শহীদ জিয়া স্বজনপ্রীতি করেছেন বা দুর্নীতি করে সম্পদ করেছেন। আমাকে বারবার ব্যথিত করে কেন শহীদ জিয়া বেশি দিন বেঁচে থাকলেন না? কেন তাকে এভাবে হত্যা করা হলো?
আজ দীর্ঘ ১৭ বছর বিএনপি ক্ষমতার বাইরে, আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় যায় যাচ্ছে বলে অবস্থান, অথচ এই বিএনপিকে নিয়ে শুরু হয়েছে অপ্রচার, মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে বিএনপিকে পরাজিত খেলোয়াড় হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে, এটাই স্বাভাবিক। সাধারণ খেলার মাঠেই একজন আরেকজনকে কুপোঘাত করতে সদা প্রস্তুত, সেখানে রাজনৈতিক মাঠ আরো পিচ্ছিল, এখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কঠিন খেলা, এটাকে হেলাফেলা করে দেখা চলবে না। আরেকবার ভুল হলে জীবনে দ্বিতীয়বার জয়ী হওয়া খুবই দুঃসাধ্য। বিএনপি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল ক্ষমতায় ছিল সেসময়ের ভুলভ্রান্তিগুলোকে নিয়ে একটি গবেষণাধর্মী সেল করে কাজ করা উচিত, যদি কাজ করে থাকেও কেন বেশি বেশি প্রচার করা হচ্ছে না প্রকাশনা হচ্ছে না? আগামী দিন কিভাবে এ ধরনের ভুলভ্রান্তি মোকাবেলা করা হবে তা জানার আগ্রহ সবার রয়েছে।
বিএনপি এখন দলীয় চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরামর্শে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ৩১ দফা নিয়ে প্রচারে ব্যস্ত যা আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনায় নিঃসন্দেহে একটা মাইলস্টোন হয়ে থাকবে। তবে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনে বাংলাদেশে নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে, পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুতেই, এতে করে দেশের আপামর জনতার নতুন বাংলাদেশের অপেক্ষায় আর এই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে বিএনপি যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে এ কারণেই বিএনপিকে বেকাদায় ফেলার চেষ্টা চলছে, এখানে বিএনপি যদি সুক্ষ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে না পারে তবে তাতে বিএনপি তথা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক বলতে হবে।
এখন সংস্কার সংস্কার নিয়ে সারাদেশ টালমাটাল অবস্থা আর এই সংস্কারগুলোর সারমর্ম যেটা হলো সেটা সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতিকে রোধ করা, দেশের বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচনী ব্যবস্থা সুদৃঢ় করা, একই ব্যক্তি পরপর দু’বার প্রধানমন্ত্রী না হওয়া প্রভৃতি সংস্কার- এখন সময়ের দাবী। আমি মনে করি দুর্নীতি না হলে একজনকে দুই/তিনবার সরকার পরিচালনা করার জন্য কোন প্রকার আইন করার প্রয়োজন হবে না। বিএনপি যখন ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে অতএব তাকেই এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, কঠোর বার্তা দিতে হবে সব জায়গায়। আজকে সবচাইতে বেশি প্রচার করানো হচ্ছে বিএনপি ‘চাঁদাবাজি, দখল বাজি’র দল এবং এগুলো মোকাবেলা করা যাচ্ছে না, কারন ওই চাঁদাবাজ দখলবাজরা কোন না কোন নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রয়েছেন। তাই আমার প্রস্তাব বিএনপি-কে এখন ‘জিরো ট্রলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করে তৃণমূল হতে চেয়ারম্যান পর্যন্ত সবাইকে সম্পদ বিবরণী দলের কাছে জমা দিতে হবে, এবং এটাকে একটা স্থায়ী রূপ দিতে হবে। সর্বজন প্রকাশিত অতি নিম্ন অবস্থান থেকে কিছু কিছু নেতৃবৃন্দ অর্থবিত্তে বলিয়ান হয়েছেন, কিন্তু তাদের ব্যাপারে বিএনপি কি কখনো তদন্ত করেছে বা তদন্ত করার চেষ্টা করেছে? তানাহলে হয়তো আজকে এই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হতো না। অবৈধ উপায়ে সম্পদশালী হওয়া মানুষজনের কাছে কষ্ট করে সম্পদশালী হওয়া মানুষেরা হারিয়ে যাচ্ছে, আর এতে অবৈধ সম্পদশালীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, রাষ্ট্রীয় সংস্কারের পাশাপাশি বিএনপি তার দলীয় উচ্চ মাধ্যম মানের নেতাদের সম্পদের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব-নিকাশ করলে অবশ্যই দলীয় দুর্নীতির অনেক রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে এতে দল উপকৃত হবে, দেশও উপকৃত হবে, এগিয়ে যাবে দেশ। আজকে নতুন নতুন সংস্কার, নতুন নতুন প্রস্তাবনা আসছে কিভাবে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার পথরুদ্ধ করে দেওয়া যায়, কিভাবে বিএনপিকে বাধাগ্রস্ত করে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যায়। আজকে যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, বিএনপিকে কিছুতেই নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে পারতো না।
বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে- বিএনপি হচ্ছে সজ্জন, পরিচ্ছন্ন মেধাবী রাজনৈতিক সংগঠন। বিএনপিকে জনগণ সবসময় ভদ্র মানুষের দল হিসেবে বিবেচনা করেন। আজ থেকে ২ দশক আগে দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দলীয় মেধাবীদের নিয়ে এক আলাপচারিতায় বলেছিলেন- শেখ হাসিনা যত অভদ্র ভাষায় কথা বলবে, আমরা তত শালীনতা বজায় রেখে তার জবাব দেবো। বেগম খালেদা জিয়ার সেদিনের কথাগুলোর সাথে আজকের কিছু কিছু দলীয় নেতার আচরণ ও কথাবার্তার ধরন খুবই বেমানান, যা খুবই দুঃখজনক।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ হচ্ছে পেশী নির্ভর চাঁদাবাজ দুর্নীতিবাদের সংগঠন তারা যুক্তি তর্কের পরোয়া করে না চেতনা বিক্রি করে চেতনার ফেরিওয়ালা হয়ে দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে দল মত নির্বিশেষে ২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। আর এটা যদি বিএনপি আমলে না নেয়, ভুলে যায় এবং মেধার চর্চা কে উপেক্ষা করে চাঁদা নির্ভর, পেশী নির্ভর সংগঠনের আচরণ দেখা যায় তাহলে খুব সহজেই বিএনপি বেকাদায় পড়ে যাবে। ফলে ক্ষমতায় যাওয়া তো দূরের কথা দলের অস্তিত্ব বিলীন হতেও বেশি দিন লাগবে না। মনে রাখতে হবে শেখ মুজিবুর রহমানের এক দলীয় শাসন-কে প্রত্যাখ্যান করে শহীদ জিয়ার বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করেন। তাই গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা করে একক নয়, যৌথ আলোচনার মাধ্যমে দলকে পরিচালনা করে এগিয়ে যেতে পারলেই বিএনপির অগ্রযাত্রাকে কেউ-ই ঠেকাতে পারবে না।
জ্যামাইকা, নিউইয়র্ক।