নিউইয়র্ক ০১:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

তিনি একজন উত্তম পাঠক

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:১৬:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১৭ বার পঠিত

জয়নাল আবেদীন: তিনি একজন উত্তম পাঠক। কারণ পড়েন, বোঝেন এবং মানেন। বয়স আশির কোটা পেরিয়ে যাচ্ছে। তবুও চশমা ছাড়াই দুচোখ ভরে পড়েন। খুব একটা পড়ালেখা হয়নি। টেনটুনে ফাইভ পাশ। তাও চল্লিশের দশকে।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চলছে। জনতা শ্লোগাণ দিচ্ছে ‘হাতমে বিড়ি মুমে পান (মুখে) লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান।’ স্কুল ছাত্র হিসাবে সেই শ্লোগাণে সুর মিলিয়েছেন। এরপর আসে সাধের পাকিস্তান। জিন্না ক্যাপের কদর বাড়ে। মুসলিম মুসলিম ভাই ভাই কথার ফুলঝুড়ি ছুটায়। কিন্তু পাকিস্তানী শাসনের টানা ২৪ বছর অনেক বৈষম্য দেখেছেন তিনি।
সেই শাসনামলে শোষণের বিরুদ্ধে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের উত্থান দেখেছেন। সত্তুরে নৌকায় ভোট দিয়েছেন। একাত্তরে গনহত্যা দেখেছেন। সাধের পাকিস্তান ভেঙ্গে যেতে দেখেছেন। বাঙালী জাতি রাষ্ট্রের উত্থান দেখেছেন। চূয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ দেখেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের খবর প্রত্যক্ষ করেছেন। জিয়াউর রহমানের উত্থান দেখেছেন। বিএনপির জন্ম নেয়া দেখেছেন। জিয়াকে উত্তম নেতা মনে করেছেন। জীবনভর তার দলকেই সমর্থন করে এসেছেন।
তিনি শেখ হাসিনা সরকারের ১৬ বছরের শাসনে সন্তষ্ট ছিলেন না। একবারো ভোট দিতে পারেননি। চব্বিশের আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনে তিনি খুশি। মনে করেন এবার দেশে ভোট হবে। সেই ভোটে নিজ দলের প্রতীকে সিল দিতে পারবেন।
কবে নির্বাচন হবে বা আদৌ হবে কিনা তা নিশ্চিন্তের জন্য প্রত্যেহ খুটিয়ে খুটিয়ে পত্রিকা পড়েন। নানা খবরের ভিড়ে কখনো আশান্বিত, আবার কখনো হতাশ হন। জীবনে পত্রিকা পড়া শুরু পাকিস্তান জন্মের পর। দৈনিক আজাদ দিয়ে। দীর্ঘ দিন পড়েছেন দৈনিক ইত্তেফাক। এখন পড়েন আট পাতার কম দামের কাগজ।
এতোক্ষণ যে উত্তম পাঠকের কথা বললাম তার নাম খোরশেদ আলম। বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মধুপুর পৌর শহরের মাস্টারপাড়া। তিনি এদেশের গ্রামগঞ্জে পত্রিকা পাঠকদের প্রথম জেনারেশন। ফাইভ জি বা জিজিটাল প্রযুক্তি বোঝেননা। অন লাইন, অফলাইন বোঝেন না। টিভির খবরের স্টাইল পছন্দ নয়। তাই প্রিন্ট ভার্সন পত্রিকার গুণমুগ্ধ পাঠক। খবর পড়ে তবেই সকালের চা আর পান মুখে তোলেন। হাতের বিড়ি ছেড়েছেন। কিন্তু মুখের পান ছাড়েননি।
একইভাবে ছাড়তে পারেননি প্রিন্ট ভার্সন পত্রিকা। কারণ ছাপার খবর সব সময় সহজ হয়, ঝকঝকে হয়। সত্য হয়ে চোখে ধরা দেয়। আর চোখে পড়া সেই সত্য প্রত্যক্ষ করেন হৃদয় থেকে। এভাবে পড়ে, বুঝে, আত্মোপোলদ্ধি থেকে নিজকে উত্তম পাঠক হিসাবে গড়েছেন। আসুন আমরা সবাই এমন একজন উত্তম পাঠকের দীর্ঘায়ু কামনা করি।
লেখক: দৈনিক ইত্তেফাক এর ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

তিনি একজন উত্তম পাঠক

প্রকাশের সময় : ০১:১৬:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জয়নাল আবেদীন: তিনি একজন উত্তম পাঠক। কারণ পড়েন, বোঝেন এবং মানেন। বয়স আশির কোটা পেরিয়ে যাচ্ছে। তবুও চশমা ছাড়াই দুচোখ ভরে পড়েন। খুব একটা পড়ালেখা হয়নি। টেনটুনে ফাইভ পাশ। তাও চল্লিশের দশকে।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চলছে। জনতা শ্লোগাণ দিচ্ছে ‘হাতমে বিড়ি মুমে পান (মুখে) লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান।’ স্কুল ছাত্র হিসাবে সেই শ্লোগাণে সুর মিলিয়েছেন। এরপর আসে সাধের পাকিস্তান। জিন্না ক্যাপের কদর বাড়ে। মুসলিম মুসলিম ভাই ভাই কথার ফুলঝুড়ি ছুটায়। কিন্তু পাকিস্তানী শাসনের টানা ২৪ বছর অনেক বৈষম্য দেখেছেন তিনি।
সেই শাসনামলে শোষণের বিরুদ্ধে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের উত্থান দেখেছেন। সত্তুরে নৌকায় ভোট দিয়েছেন। একাত্তরে গনহত্যা দেখেছেন। সাধের পাকিস্তান ভেঙ্গে যেতে দেখেছেন। বাঙালী জাতি রাষ্ট্রের উত্থান দেখেছেন। চূয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ দেখেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের খবর প্রত্যক্ষ করেছেন। জিয়াউর রহমানের উত্থান দেখেছেন। বিএনপির জন্ম নেয়া দেখেছেন। জিয়াকে উত্তম নেতা মনে করেছেন। জীবনভর তার দলকেই সমর্থন করে এসেছেন।
তিনি শেখ হাসিনা সরকারের ১৬ বছরের শাসনে সন্তষ্ট ছিলেন না। একবারো ভোট দিতে পারেননি। চব্বিশের আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনে তিনি খুশি। মনে করেন এবার দেশে ভোট হবে। সেই ভোটে নিজ দলের প্রতীকে সিল দিতে পারবেন।
কবে নির্বাচন হবে বা আদৌ হবে কিনা তা নিশ্চিন্তের জন্য প্রত্যেহ খুটিয়ে খুটিয়ে পত্রিকা পড়েন। নানা খবরের ভিড়ে কখনো আশান্বিত, আবার কখনো হতাশ হন। জীবনে পত্রিকা পড়া শুরু পাকিস্তান জন্মের পর। দৈনিক আজাদ দিয়ে। দীর্ঘ দিন পড়েছেন দৈনিক ইত্তেফাক। এখন পড়েন আট পাতার কম দামের কাগজ।
এতোক্ষণ যে উত্তম পাঠকের কথা বললাম তার নাম খোরশেদ আলম। বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মধুপুর পৌর শহরের মাস্টারপাড়া। তিনি এদেশের গ্রামগঞ্জে পত্রিকা পাঠকদের প্রথম জেনারেশন। ফাইভ জি বা জিজিটাল প্রযুক্তি বোঝেননা। অন লাইন, অফলাইন বোঝেন না। টিভির খবরের স্টাইল পছন্দ নয়। তাই প্রিন্ট ভার্সন পত্রিকার গুণমুগ্ধ পাঠক। খবর পড়ে তবেই সকালের চা আর পান মুখে তোলেন। হাতের বিড়ি ছেড়েছেন। কিন্তু মুখের পান ছাড়েননি।
একইভাবে ছাড়তে পারেননি প্রিন্ট ভার্সন পত্রিকা। কারণ ছাপার খবর সব সময় সহজ হয়, ঝকঝকে হয়। সত্য হয়ে চোখে ধরা দেয়। আর চোখে পড়া সেই সত্য প্রত্যক্ষ করেন হৃদয় থেকে। এভাবে পড়ে, বুঝে, আত্মোপোলদ্ধি থেকে নিজকে উত্তম পাঠক হিসাবে গড়েছেন। আসুন আমরা সবাই এমন একজন উত্তম পাঠকের দীর্ঘায়ু কামনা করি।
লেখক: দৈনিক ইত্তেফাক এর ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি