নিউইয়র্ক ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

‘পর্যটন শিল্প : অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ও দার্শনিক প্রেক্ষাপট’

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:২৪:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
  • / ১২ বার পঠিত

নুসরাত জাহান

সার সংক্ষেপ:
পর্যটন অর্থশাস্ত্র হল পর্যটন শিল্পের উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ, বিনিয়োগ এবং এর সামষ্টিক ও খাতভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে কাজ করা একটি বিশেষায়িত শাখা। এটি পর্যটন পণ্য ও সেবার চাহিদা-যোগান, বাজার কাঠামো, মূল্য নির্ধারণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আঞ্চলিক উন্নয়নে পর্যটনের অবদান বিশ্লেষণ করে। এছাড়াও, টেকসই পর্যটন, পরিবেশগত বাহ্যিকতা এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবের অর্থনৈতিক মূল্যায়নেও এটি মনোনিবেশ করে। পর্যটন অর্থশাস্ত্রের দার্শনিক ভিত্তি নীতিনির্ধারণ ও গবেষণার মান বৃদ্ধি করে।
কর্মপরিধি:
পর্যটন অর্থশাস্ত্রের কর্মপরিধি বহুমাত্রিক। প্রথমত, এটি পর্যটন চাহিদা বিশ্লেষণ করে, যেখানে ভ্রমণকারীর পছন্দ, আয় ও দাম পরিবর্তনের প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়। দ্বিতীয়ত, পর্যটন শিল্পের যোগান কাঠামো যেমন হোটেল, ট্রাভেল এজেন্সি, পরিবহন ও আকর্ষণসমূহের উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতা পরীক্ষা করা হয়। তৃতীয়ত, সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়, যেমন রপ্তানি আয়, কর্মসংস্থান এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন। গবেষকরা ইনপুট-আউটপুট মডেল ও সাধারণ ভারসাম্য বিশ্লেষণ ব্যবহার করে এই প্রভাব পরিমাপ করেন। চতুর্থত, সমসাময়িক পর্যটন অর্থশাস্ত্র টেকসই পর্যটন, পরিবেশগত অর্থনীতি এবং নীতিমালার অর্থনৈতিক মূল্যায়নের দিকে মনোনিবেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, পরিবেশগত বাহ্যিকতা পরিমাপ ও সমাধানের কৌশল তৈরি করা এই শাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
দার্শনিক ভিত্তি:
পর্যটন কেবল অর্থনৈতিক কার্যকলাপ নয়; এটি সমাজ, সংস্কৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে জড়িত। এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দার্শনিক তত্ত¡ পর্যটন নীতি ও অনুশীলনে নৈতিক ও তাত্তি¡ক কাঠামো প্রদান করে।
১. উপযোগবাদ (Utilitarianism):
উপযোগবাদ অনুযায়ী নীতি সর্বাধিক সংখ্যকের জন্য সর্বাধিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। পর্যটন অর্থশাস্ত্রে এটি স্থানীয় আয়ের বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিক কল্যাণ মূল্যায়নে ব্যবহৃত হয়। তবে, উপযোগবাদ পরিবেশগত ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের মতো অ-আর্থিক দিক উপেক্ষা করতে পারে।
২. মার্ক্সবাদী দৃষ্টিভঙ্গি:
পুঁজিবাদী কাঠামোতে শ্রমিকদের শোষণ ও শ্রেণীসংগ্রামের ধারণা পর্যটন শিল্পে প্রয়োগ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, হোটেল বা ট্যুর অপারেটরদের শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি পান, যেখানে মালিক শ্রেণি লাভ ভোগ করে। স্থানীয় সম্পদের কর্পোরেট দখলও শ্রেণিগত বিভাজনের উদাহরণ। মার্ক্সবাদ পর্যটন শ্রমিকদের অধিকার ও সংঘাত বিশ্লেষণে সহায়ক, যদিও এটি জটিল বাস্তবতার সরলীকরণ করতে পারে।
৩. পরিবেশদর্শন ও টেকসই পর্যটন:
পরিবেশদর্শন প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্কের নৈতিক প্রশ্নের উপর জোর দেয়। টেকসই পর্যটন প্রকল্পে যেমন ইকোট্যুরিজমে স্থানীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয় এবং বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করা হয়। গভীর পরিবেশদর্শন প্রকৃতির স্বকীয় মূল্যকে স্বীকৃতি দেয় এবং মানুষের প্রাধান্যবাদকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। চ্যালেঞ্জ হিসেবে অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে পরিবেশ নীতির অবজ্ঞা ও সবুজ প্রতারণা (Greenwashing) উল্লেখযোগ্য।
৪. সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতাবাদ:
সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতাবাদ অনুযায়ী প্রতিটি সংস্কৃতির মূল্যবোধ ও রীতিনীতি তার নিজস্ব প্রেক্ষাপটে বোঝা উচিত। পর্যটন ক্ষেত্রে এটি স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে। তবে, মানবাধিকার বা নৈতিকতার সঙ্গে সংঘর্ষ এলে নীতি প্রণয়নে ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়।
উপসংহার:
পর্যটন অর্থশাস্ত্র অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ এবং দার্শনিক তত্তে¡র সমন্বয়ে একটি বহুমাত্রিক শাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। উপযোগবাদ সর্বাধিক সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করে, মার্ক্সবাদ শোষণ ও শ্রেণীসংগ্রাম উন্মোচন করে, পরিবেশদর্শন টেকসই পর্যটনকে সমর্থন করে, এবং সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতাবাদ স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ায়। এই দার্শনিক ভিত্তিগুলো নীতিনির্ধারণ ও গবেষণাকে গভীরতর করে এবং ভবিষ্যতে টেকসই ও ন্যায্য পর্যটন মডেল গড়ার জন্য নির্দেশিকা প্রদান করে।

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

‘পর্যটন শিল্প : অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ও দার্শনিক প্রেক্ষাপট’

প্রকাশের সময় : ০১:২৪:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫

নুসরাত জাহান

সার সংক্ষেপ:
পর্যটন অর্থশাস্ত্র হল পর্যটন শিল্পের উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ, বিনিয়োগ এবং এর সামষ্টিক ও খাতভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে কাজ করা একটি বিশেষায়িত শাখা। এটি পর্যটন পণ্য ও সেবার চাহিদা-যোগান, বাজার কাঠামো, মূল্য নির্ধারণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আঞ্চলিক উন্নয়নে পর্যটনের অবদান বিশ্লেষণ করে। এছাড়াও, টেকসই পর্যটন, পরিবেশগত বাহ্যিকতা এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবের অর্থনৈতিক মূল্যায়নেও এটি মনোনিবেশ করে। পর্যটন অর্থশাস্ত্রের দার্শনিক ভিত্তি নীতিনির্ধারণ ও গবেষণার মান বৃদ্ধি করে।
কর্মপরিধি:
পর্যটন অর্থশাস্ত্রের কর্মপরিধি বহুমাত্রিক। প্রথমত, এটি পর্যটন চাহিদা বিশ্লেষণ করে, যেখানে ভ্রমণকারীর পছন্দ, আয় ও দাম পরিবর্তনের প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়। দ্বিতীয়ত, পর্যটন শিল্পের যোগান কাঠামো যেমন হোটেল, ট্রাভেল এজেন্সি, পরিবহন ও আকর্ষণসমূহের উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতা পরীক্ষা করা হয়। তৃতীয়ত, সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়, যেমন রপ্তানি আয়, কর্মসংস্থান এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন। গবেষকরা ইনপুট-আউটপুট মডেল ও সাধারণ ভারসাম্য বিশ্লেষণ ব্যবহার করে এই প্রভাব পরিমাপ করেন। চতুর্থত, সমসাময়িক পর্যটন অর্থশাস্ত্র টেকসই পর্যটন, পরিবেশগত অর্থনীতি এবং নীতিমালার অর্থনৈতিক মূল্যায়নের দিকে মনোনিবেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, পরিবেশগত বাহ্যিকতা পরিমাপ ও সমাধানের কৌশল তৈরি করা এই শাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
দার্শনিক ভিত্তি:
পর্যটন কেবল অর্থনৈতিক কার্যকলাপ নয়; এটি সমাজ, সংস্কৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে জড়িত। এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দার্শনিক তত্ত¡ পর্যটন নীতি ও অনুশীলনে নৈতিক ও তাত্তি¡ক কাঠামো প্রদান করে।
১. উপযোগবাদ (Utilitarianism):
উপযোগবাদ অনুযায়ী নীতি সর্বাধিক সংখ্যকের জন্য সর্বাধিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। পর্যটন অর্থশাস্ত্রে এটি স্থানীয় আয়ের বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিক কল্যাণ মূল্যায়নে ব্যবহৃত হয়। তবে, উপযোগবাদ পরিবেশগত ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের মতো অ-আর্থিক দিক উপেক্ষা করতে পারে।
২. মার্ক্সবাদী দৃষ্টিভঙ্গি:
পুঁজিবাদী কাঠামোতে শ্রমিকদের শোষণ ও শ্রেণীসংগ্রামের ধারণা পর্যটন শিল্পে প্রয়োগ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, হোটেল বা ট্যুর অপারেটরদের শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি পান, যেখানে মালিক শ্রেণি লাভ ভোগ করে। স্থানীয় সম্পদের কর্পোরেট দখলও শ্রেণিগত বিভাজনের উদাহরণ। মার্ক্সবাদ পর্যটন শ্রমিকদের অধিকার ও সংঘাত বিশ্লেষণে সহায়ক, যদিও এটি জটিল বাস্তবতার সরলীকরণ করতে পারে।
৩. পরিবেশদর্শন ও টেকসই পর্যটন:
পরিবেশদর্শন প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্কের নৈতিক প্রশ্নের উপর জোর দেয়। টেকসই পর্যটন প্রকল্পে যেমন ইকোট্যুরিজমে স্থানীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয় এবং বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করা হয়। গভীর পরিবেশদর্শন প্রকৃতির স্বকীয় মূল্যকে স্বীকৃতি দেয় এবং মানুষের প্রাধান্যবাদকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। চ্যালেঞ্জ হিসেবে অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে পরিবেশ নীতির অবজ্ঞা ও সবুজ প্রতারণা (Greenwashing) উল্লেখযোগ্য।
৪. সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতাবাদ:
সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতাবাদ অনুযায়ী প্রতিটি সংস্কৃতির মূল্যবোধ ও রীতিনীতি তার নিজস্ব প্রেক্ষাপটে বোঝা উচিত। পর্যটন ক্ষেত্রে এটি স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে। তবে, মানবাধিকার বা নৈতিকতার সঙ্গে সংঘর্ষ এলে নীতি প্রণয়নে ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়।
উপসংহার:
পর্যটন অর্থশাস্ত্র অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ এবং দার্শনিক তত্তে¡র সমন্বয়ে একটি বহুমাত্রিক শাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। উপযোগবাদ সর্বাধিক সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করে, মার্ক্সবাদ শোষণ ও শ্রেণীসংগ্রাম উন্মোচন করে, পরিবেশদর্শন টেকসই পর্যটনকে সমর্থন করে, এবং সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতাবাদ স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ায়। এই দার্শনিক ভিত্তিগুলো নীতিনির্ধারণ ও গবেষণাকে গভীরতর করে এবং ভবিষ্যতে টেকসই ও ন্যায্য পর্যটন মডেল গড়ার জন্য নির্দেশিকা প্রদান করে।