শোকাহত পিতা আব্দুর রব বলেন : ‘দিদারুলের লাশ দেখার পর আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেছে’

- প্রকাশের সময় : ০৪:০৮:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫
- / ১১ বার পঠিত
মাহবুব রশীদ: ‘ছেলের লাশ দেখার পর মনে হয়েছে, আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেছে’। আর্তনাদ মাখা কন্ঠে কথাগুলো বললেন, নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের পার্ক অ্যাভিনিউয়ে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলাম রতনের পিতা আব্দুর রব। আগত সবার সাথে প্রথমে আব্দুর রব খুব স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছিলেন। হঠাৎ ছেলের প্রসঙ্গ উঠতেই নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না। অথচ এর আগে তিনি নিউইয়র্কের বিভিন্ন মিডিয়ার নামকরা ও ‘বাঘা বাঘা সাংবাদিক’ ও টিভি চ্যানেলের সামনে কথা বললেও তার কন্ঠে কোন আবেগ দেখা যায়নি। কিন্তু নিজ জেলা সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় তার ছেলের কথা উঠতেই তিনি আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেন না। ভেতর থেকে ঠুকরে উঠেছে কান্নার রোল। অথচ গত এক সপ্তাহ ধরে বাসায় শোকময় পরিস্থিতিতে পরিবারের শীর্ষ অভিভাক হয়ে তিনি অনেক কষ্টে ভেতরের কান্না বুকে চাপা রেখে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে গেছেন। গোপনে একাকীত্বে প্রচন্ড কান্না এলেও সবাইকে স্বাভাবিক রাখতে বৃদ্ধ বয়সে এসেও আব্দুর রব নিজের সাথে নিজেই যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। কারো সাথে কথা বললে ছেলে দিদারুলের প্রসঙ্গ উঠে আসে, তাই তিনি গত কয়েকদিন খুব একটা কথা বলেন নি। কারণ কথা বললে তার খুব কষ্ট হয়। অথচ অনেকদিন পর তার বাসায় আগতদের আপনজন মনে হওয়াতে এখন তার কথা বলতে খুব ইচ্ছে হলো। গত ১ আগষ্ট শুক্রবার নিজের বাসায় নিউইয়র্কের বিভিন্ন মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময় শোকাহত আব্দুর রব এসব কথা বলেন।
শ্বেতশুভ্র দাড়ি আর সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত আব্দুর রব সেই দিন বিকেলের ভয়াবহ ঘটনার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি ওযু করছি আসর নামাজের জন্য। এমন সময় দরজা খুলে দেখি পুলিশের গাড়ি আর গাড়ি। কি হয়েছে? জিজ্ঞেস করলে আমার বড় মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল আমি কিছু বলতে পারব না। আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে, পুলিশ অফিসারা শুধু আমাকে সান্তনা দিচ্ছে। অথচ কিছু বলছে না। প্রায় এক থেকে দেড় ঘন্টা পর আমাকে আমার ছেলে দিদারুলের সামনে নেয়া হয়। মৃত ছেলেকে দেখে আমার সবকিছু অন্ধকার হয়ে উঠে’।
আব্দুর রব আত্মবিশ্বাসের সাথে আরো বলেন, ‘আমার ছেলের মৃত্যুর পর আমেরিকান সরকার সহ সারা দুনিয়ার মানুষ আমাদের যে সম্মান ও সমবেদনা জানিয়েছে তার জন্য আমরা গর্বিত। ছেলের উছিলায় আল্লাহ আমাদের যে সম্মান দিয়েছে, তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন দিদারুলের বেহেস্ত নসিব করেন’।
গত ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার পার্কচেস্টার এলাকায় হাজার হাজার পুলিশ, বাংলাদেশী কমিউনিটি ও স্থানীয় জনতার বীরোচিত সম্মাননার সাথে বিদায় জানানো নিহত পুলিশ অফিসার দিদারুলের পিতা আব্দুর রব বলেন, ‘আমার শেষ ইচ্ছে, নাতিদের যেন মানুষ করে যেতে পারি। তাদের হাফেজ বানানো আমার খুবই ইচ্ছে’।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনের পার্ক এভিনিউয়ের একটি বাণিজ্যিক ভবনে গত ২৮ জুলাই সোমবার একজন বন্দুকধারীর গুলিতে পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলাম রতন সহ চারজন নিহত হন।