জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন : মেয়র ও গভর্নরের শ্রদ্ধা নিবেদন
দিদারুল ইসলামের চির বিদায়ে হাজারো মানুষের সাথে কাঁদলো নিউইয়র্কের আকাশ

- প্রকাশের সময় : ১২:০৪:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ অগাস্ট ২০২৫
- / ৮ বার পঠিত
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): সর্বস্তরের হাজার হাজার নিউইয়র্কবাসী সহ এনওয়াইপিডির বিপুল সংখ্যক সদস্যের গভীর শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় চির বিদায় নিলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলাম রতন (৩৬)। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সিটির ব্রঙ্কসের পার্কচেষ্টারে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাঁর মরদেহ নিউজার্সী রাজ্যের লোরেল গ্রোভ কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজা নামাজের আগে নিউইয়র্কের গভর্নরসহ সিটি মেয়র, পুলিশ প্রধান ও সিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সাহসী এই বাংলাদেশী পুলিশ কর্মকর্তাকে। এদিকে দিদারুল ইসলাম রতনের চির বিদায়ে ২০/২৫ হাজারের বেশী মানুষের সাথে কাঁদলো নিউইয়র্কের আকাশ। তার জানাজা নামাজের পর পুলিশ বিভাগের গার্ড অব অনারের মাধ্যমে অফিসার রতনের মরদেহ দাফনের জন্য নেয়ার সময় নিউইয়র্কের আকাশে অঝোরে বৃষ্টি শুরু হয়। এসময় হাজার হাজার পুলিশ অফিসার ও জনসাধারণ যে যার অবস্থানেই দাঁড়িয়ে থেকে বৃষ্টিতে ভিজে তাঁকে শেষ দিায় জানান। খবর ইউএনএ’র।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলাম রতন শেষ বিদায় অনুষ্ঠানে ১৫/২০ হাজারের মতো পুলিশ সদস্য অংশ নেন। এছাড়াও ১০ হাজারের মতো সর্বস্তরের মানুষ এসময় উপস্থিত ছিলেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১০টা দিকে মরহুমের বিদায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। বাংলাদেশীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত পার্কচেষ্টার জামে মসজিদ কমিটির সার্বিক সহযোগিতায় সিটি পুলিশ বিভাগ এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে গভর্নর ক্যাথি হোকুল, মেয়র এরিক অ্যাডামস, পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ, সাবেক গভর্নর অ্যান্ডু কুওমো, মেয়র পদপ্রার্থী ও ষ্টেট অ্যাসেম্বীম্যান জোহরান মামদানী, সিটির পাবলিক এডভোকেট জুমানী ডি উইলিয়াম, সিটি কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ সহ একাধিক ষ্টেট সিনেটর, অ্যাসেম্বলীম্যান ও সিটি কাউন্সিল সদস্য উপস্থিত থেকে শ্রদ্ধা জানান। এছাড়াও নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক সহ কনস্যুলেটের কর্মকর্তারাও শ্রদ্ধা জানান।
বাদ জোহর পার্কচেষ্টার জামে মসজিদে মরহুম পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলাম রতনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নামাজের আগে পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ তার বক্তব্যে দিদারুল ইসলাম রতনকে মরণোত্তর প্রথম শ্রেণীর ডিটেকটিভ হিসেবে পদোন্নতি দেয়ায় কথা ঘোষণা করেন। হাজার হাজার মুসল্লী মসজিদ ভবনে ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে জানাজা নামাজে অংশ নেন। নিউইয়র্কের ইতিহাসে এতো বড় জানাজা বিরল ঘটনা বলেও প্রত্যক্ষর্দীরা জানান। ফলে দৃশ্যত ব্রঙ্কসের ঐ এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সকাল দশটায় দিদারুল ইসলামের লাশ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয় পার্কচেষ্টার জামে মসজিদে। দুপুরের একটু পর মসজিদে উপস্থিত হন সিটির মেয়র ও গভর্নর সহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ দিদারুল ইসলামকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একে একে তাদের বক্তব্যে শ্রদ্ধা জানান। এছাড়াও বাংলাদেশী আমেরিকান পুলিশ এসোসিয়েশন (বাপা) ও কুলাউড়া বাংলাদেশী এসোসিয়েশন ইউএসএ’র পক্ষ থেকেও গভীর শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানানো হয়।
জানাজা শেষে এনয়াইপিডি অফিসার রতনের কফিন লাশবাহী গাড়ীতে নিয়ে যাওয়র সময় পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে বিদায়ী গার্ড অব অনার্ড জানানো হয়। আকাশ পথেও হেলিকপ্টারে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। তাঁকে সম্মান, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জ্ঞাপনের জন্য পার্কচেষ্টার জামে মসজিদের চারপাশে এবং সড়কে সমবেত হন পুরো নিউইয়র্কবাসী। এসময় প্রকৃতিও কান্নায় ভেঙে পড়েছিল এই বীর নিউইয়র্কারের বিদায়ে। সর্বশেষে এনওয়াইপিডি’র গার্ড অফ অনারের মাধ্যমে বৃষ্টির মধ্যেই দিদারুলের মরদেহ বহনকারী গাড়ীটি ব্রঙ্কস থেকে নিউজার্সী রাজ্যের টটোয়া কবরস্থানের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আর এভাবেই নিউইয়র্ক হারালো এক সাহসী অফিসারকে আর স্বজনরা হারালো তাদের আপনজনকে। বিকেলে দিদারুল ইসলাম রতনের মরদেহ দাফন করা হয়। মরদেহ দাফনের সময় সেখানেও বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ও প্রবাসী বাংলাদেশীরা উপস্থিত থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানান।