মা হিসেবে আমি গর্বিত-নার্গিস আহমেদ

- প্রকাশের সময় : ০৬:৪০:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
- / ২৭৬৫ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে চলা ‘উইমেন লং মার্চ’- নামের বহুল আলোচিত নারী আন্দোলনের প্রেরণাদানকারী বাংলাদেশী-আমেরিকান তরুণী মুনিরা আহমেদ। ইতোমধ্যেই তিনি ওই আন্দোলনের ‘মুখপাত্র ও প্রতীক’ হয়ে উঠেছেন। হিজাব পরিহিত তার আলোচিত ছবি স্থান পেয়েছে বিশ্বখ্যাত দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর পাতায়। ‘WE THE PEOPLE’ & ÔARE GREATER THEAN FEAR’ শিরোনামে মুনিরা আহমেদের ছবিটি দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস-এ পূর্ণ পৃষ্ঠা বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে উই দ্য পিপল আর ডট অর্গ নামক একটি মানবাধিকার সংগঠন। গত ২০ জানুয়ারী শুক্রবার পত্রিকাটির মূল অংশের এ১৭ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে:WE THE PEOPLE ARE INDIVISIBLE. WE ARE RESILIENT. WE PROTECT EACH OTHER. WE DEFEND DIGNITY. WE ARE GREATER THEN FEAR’.
ছবিটিতে মুনিরা আহমেদকে দেখা যায় একটি হিজাব মাথায় দেওয়া অবস্থায়। হিজাবটি মূলত আমেরিকান পতাকার নকশায় তৈরি। আর ছবিটি এডিট করেছেন শেফার্ড ফেইরি। ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামার ‘হোপ’ থিমে তৈরি একটি ছবি নিয়ে কাজ করে পরিচিতি পান ফেইরি। উল্লেখ্য, এমপি¬ফায়ার ফাউন্ডেশনের অধীনে ‘উই দ্য পিপল’ নামক একটি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই ছবিটি তৈরি করেন শেফার্ড ফেইরি। ফেইরি এখানেও ওবামার ছবির মত ‘ব্লক স্টাইল’ ব্যবহার করেছেন।
মুনিরা আহমেদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শহরেরই (নিউইয়র্ক) কুইন্স বরোর জ্যামাইকায় বড় হয়েছে ছোট বেলা থেকে। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ থেকে তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসে। তার বাবা মোস্তাক আহমেদ পেশায় একজন ফার্মসিস্ট। মা নার্গিস আহমেদ বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র সাবেক সভাপতি এবং কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট। সাম্প্রতিককালে ওয়াশিংটনে ট্রাম্পবিরোধী ওই র্যালীতেও অনেক আন্দোলনকারীর হাতেই ছিল মুনিরা আহমেদের ছবি। এছাড়াও নিউইয়র্ক সহ বিভিন্ন স্থানে ট্রাম্পবিরোধী প্রতিবাদকারীদের হাতেও শোভা পাচ্ছে ছবিটি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মুনিরার ওই ছবিটি প্রায় এক দশক আগের। ছবিটি কুইন্সের একজন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার রিদওয়ান আধামির তোলা। আর তা ফেইরির ছোঁয়া লাগার পর প্রথম অনলাইনে ভাইরাল হয়ে ওঠে মুসলিম একটি ব্লগে পোস্ট করার পর।
ছবিটি সম্পর্কে মুনিরা আহমেদ বলেন, এটি শুধু বলতে চাওয়া, ‘আমিও তোমাদের মতই আমেরিকান’। ওয়াশিংটনে ট্রাম্পবিরোধী আন্দোলনের পর নিউইয়র্কে এসে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি আমেরিকান এবং আমি মুসলিম। আর এ দুটি পরিচয়েই আমি গর্বিত। ছবিটির বিষয়ে মুনিরা আরো বলেন, এই ছবিটি যেই বার্তা দিচ্ছে, তার জন্য আমি গর্বিত। এটা শুধু কারো বিরোধিতা করার জন্য নয়। মূলত কিছু ধারণ করছে এটি। ছবিটি বলতে চাচ্ছে, আমিও তোমার মতই আমেরিকান।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে দুঃখ প্রকাশ করে মুনিরা বলেন, অধিকাংশের ভোট না পেয়েও সে নির্বাচিত হয়েছে। আর থেকেও দুঃখের বিষয়, অনেক আমেরিকান মনে করছে এই দেশ থেকে ভিন্ন ধর্ম-গোত্রের মানুষদের বের করে দেওয়া উচিত। আমি জানি এটা আমেরিকার অধিকাংশ মানুষের নৈতিক অবস্থান নয়।
ওয়াশিংটনে ট্রাম্পবিরোধী মার্চে যোগ দেওয়ার পর কংগ্রেসের একজন নারী মুনিরাকে এই ছবিটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। মুনিরা জানায়, আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না সে আমাকে চিনতে পারছে। কারণ ছবির মেয়েটি হিজাব পড়ে আছে। আর আমি সেখানে হিজাব ছাড়া গিয়েছিলাম। তিনি বলেন, মেয়েদের একটি দল জানতে চেয়েছিল, আমি কবে থেকে হিজাব পড়া বন্ধ করেছি। উত্তরে আমি বলেছি, কখনই আমি হিজাব পড়িনি।
মুনিরা বলেন, এই ছবিটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় জীবন রয়েছে। তিনি বলেন, একটি মুসলিম ব্লগে কেউ ছবিটি দেওয়ার পর বেশ দ্রুত তা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এটা ছিল অনলাইন যে কোন কিছু ভাইরাল হওয়ার আগের কথা। আর তারপর বর্তমানে ছবিটি আবারও ভাইরাল হয়ে উঠছে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে- যা পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় বড় একটি প্লাটফর্মে ভাইরাল হচ্ছে।
বাংলাদেশী-আমেরিকান মুনিরা আহমেদ-কে নিয়ে সৃষ্ট ঘটনার প্রেক্ষিতে মা নার্গিস আহমেদ ইউএনএ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে বলেন- মুনিরার মা হিসেবে আমি গর্বিত। একজন ইমিগ্র্যান্ট হিসেবে আমি আমেরিকার সকল ইমিগ্র্যান্টদের পক্ষে, চলমান আন্দোলন আমি মনে-প্রাণে সমর্থন করছি। মুনিরার ছবি ইমিগ্র্যান্টদের পক্ষে আজ আন্দোলনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশী কমিউনিটি এই আন্দোলনের সাথী হয়ে ইমিগ্র্যান্টদের অধিকার আদায়ে শামিল হচ্ছেন। বাংলাদেশী-আমেরিকান আজ মূলধারায় অবস্থান করছে। এটাও গর্বের বিষয়।