নিউইয়র্ক ০১:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834
পুনরায় প্রার্থী শাহানা হানিফ : আগাম ভোটে রেকর্ড সংখ্যক ভোটার ভোট দিয়েছেন

আজ নিউইয়র্ক সিটির প্রাইমারী নির্বাচন : মেয়র পদের লড়াইয়ে কুওমো-মামদানী

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:২২:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
  • / ১৪ বার পঠিত

হককথা রিপোর্ট: আজ মঙ্গলবার (২৪ জুন) নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রাইমারী নির্বাচন। নির্বাচনে মেয়র পদের পাশাপাশি অন্যান্য আসনেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৯টা পর্যন্ত সিটির বিভিন্ন কেন্দ্রে বিরতিহীন ভোট গ্রহণ চলবে। ‘র‌্যাঙ্কড চয়েজ’-এ অনুষ্ঠিতব্য মেয়র পদের প্রাইমারী নির্বাচনে ১১জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রয়েছেন সাবেক ষ্টেট গভর্নর অ্যান্ড্রæ কুওমো ও বর্তমান স্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান জোহরান মামদানী। এছাড়াও ডেমোক্র্যাট দলীয় অন্যান্য যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- ষ্টেট সিনেটর জেলনর মাইরি ও জেসিকা রামোস, সিটি কাউন্সিল স্পিকার অ্যাড্রিয়েন অ্যাডামস এবং বর্তমান সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার ও সাবেক সিটি কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রিংগার। তবে মেয়র পদে নির্বাচনে কে জিতবেন, কে হাসবেন জয়ের হাসি, এখন তা নিয়েই শহরজুড়ে জল্পনা তুঙ্গে। নির্বাচনী আভাস বলছে- কুওমো-মামদানীর লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। সব মিলিয়ে জমে উঠেছে নির্বাচন।
এদিকে এই নির্বাচনে গত ১৪ জুন থেকে শুরু হওয়া আগাম ভোট রোববার (২২ জুন) শেষ হয়েছে। এবার আগাম ভোটে রেকর্ড সংখ্যক ভোটার ভোট দিয়েছেন। এনওয়াইসি বোর্ড অব ইলেকশন সূত্রে জানা গেছে, আগাম ভোটের ৯ দিনে ৫ বরোতে ৩,৮৪,৩৩৮ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। ২০২১ সালের প্রাইমারীতে আগাম ভোটের সংখ্যা ছিলো ১,৯১,১৯৭ ভোট। এরমধ্যে ম্যানহাটানে ১,২২,৬৪২ জন ভোট দিয়েছেন। ২০২১ সালের তুলনায় আগাম ভোট প্রদানের হার বেড়েছে ১০২%। ব্রæকলীনে আগাম ভোট দিয়েছেন ১,৪২,৭৩৫ জন। এখানে ভোটের হার বেড়েছে ১১৮%। কুইন্সে আগাম ভোট দিয়েছেন ৭৫,৭৭৮ জন। এখানে ভোটের হার বেড়েছে ১১৪%। ব্রঙ্কসে আগাম ভোট দিয়েছেন ৩০,৮১৬ জন। এখানে ভোটের হার বেড়েছে ৫০%। আর স্ট্যাটান আইলান্ডে আগাম ভোট দিয়েছেন ১২৩৬৭ জন ভোটার। এখানে ভোটের হার বেড়েছে ৩৬%।
মঙ্গলবারের নির্বাচনে সিটি কাউন্সিল ডিষ্ট্রিক্ট ৩৯ (ব্রæকলীন) থেকে লড়ছেন বাংলাদেশী-আমেরিকান শাহানা হানিফ। তাকে সমর্থন করেছেন নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত ইউএস কংগ্রেসের আলোচিত সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ ও মেয়র প্রার্থী অ্যাসেম্বলীম্যান জোহরান মামদানী সহ মানবাধিকার সংগঠন ড্রাম, অ্যালায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার (অ্যাসাল), বাংলাদেশী এডভোকেসী গ্রæপ (বাগ), বাংলাদেশী আমেরিকান ফর পলিটিক্যাল প্রোগ্রেস (বিএপিপি) সহ বিভিন্ন সংগঠন।
এদিকে নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রাইমারী নির্বাচনের ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশী কমিউনিউটিতেও। মেয়র পদের মূল দুই প্রতিদ্ব›িদ্ব সাবেক গভর্নর এন্ড্রু কুওমো ও ষ্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান জোহরান মামদানীর সমর্থনে চলছে বাংলাদেশীদেরও প্রচার প্রচারণা। প্রার্থীদের প্রত্যাশা সকলেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন। অপরদিকে নির্বাচন ঘিরে মূলধারার মিডিয়া সহ এথনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি ভোটারদের ঘরে ঘরে লিফলেট, পেস্টার প্রেরণের মাধ্যমে চলছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। বাংলা ভাষা সহ একাধিক ভাষায় প্রিন্টেড নির্বাচনী গাইডও ভোটারদের কাছে পাঠিয়েছে এনওয়াইসি বোর্ড অব ইলেকশন অফিস।
নির্বাচনে অন্য কারা প্রার্থী: সিটির উল্লেখযোগ্য অন্যান্য পদের প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- সিটির পাবলিক এডভোকেট পদে পুনরায় লড়ছেন জুমানী ডি উইলিয়ামস। এই পদের অন্য প্রার্থীরা হলেন- মার্টি দোলান ও জেনিফার রাজকুমার (ষ্টেট অ্যাসেম্বলীওম্যান)। সিটি কম্পট্রোলার পড়ে লড়ছেন মার্ক ডি লেভিন (ম্যানহাটার বরো প্রেসিডেন্ট), ইসমাইল মালাভে পেরেজ, জাস্টিন ব্রানান ও কেভিন এস পার্কার। সিটি কাউন্সিল সদস্য পদে (জ্যাকসন হাইটস, এলমহার্স্ট ও উডসাইড) পদে পুননরায় লড়ছেন শেখর কৃষ্ণান।
কুওমো নিয়ে নানা আলোচনা: নিউইয়র্ক ষ্টেটের গভর্ণর থাকাকালীন সময়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে পদত্যাগের পরেও সিটি মেয়র নির্বাচন ঘিরে ফের রাজনীতিতে কুওমোর প্রত্যাবর্তন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন- তার টার্গেট ২০২৮ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। অন্যদিকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রগতিশীল নেতা মামদানী শ্রমিক অধিকার ও ভাড়া নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করছেন। মেয়রাল টিভি বিতর্কের আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রæ কুমো। নার্সিং হোমে কোভিড-১৯ মৃত্যুর তথ্য গোপন ও যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। বিতর্কে প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী জোহরান মামদানী কুমোর কর্পোরেট সম্পর্ক ও শ্রমিকবিরোধী নীতির সমালোচনা করেন। কুমো নিজেকে সবচেয়ে যোগ্য নেতা দাবি করলেও, বাকিরা তার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। যদিও বিতর্কে নেতৃত্ব, স্বচ্ছতা ও জনগণের স্বার্থ রক্ষার অঙ্গীকার করেন প্রার্থীরা।
মঙ্গলবারের (২৪ জুন) নির্বাচন ঘিরে এন্ড্রু কুওমো ৩২ বিজে এসইআইইউ (হোটেল ও পরিষেবা শ্রমিক ইউনিয়ন) এবং ১১৯৯ এসইআইইউ (স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের বৃহত্তম ইউনিয়ন) সহ গুরুত্বপূর্ণ শ্রমিক সংগঠনগুলো ছাড়াও সাবেক মেয়র মাইকেল বøুমবার্গের সমর্থন পেয়েছেন। এছাড়া সাবেক ও বর্তমান কিছু নির্বাচিত কর্মকর্তারাও তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউইয়র্ক সিটির ভোটব্যাংকে শ্রমিক ইউনিয়েনের বিশাল প্রভাব থাকায় এটি কুমোর জন্য বড় সুবিধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আলোড়ন তুলেছেন মামদানী: অপরদিকে নিউইয়র্ক সিটির নির্বাচনে জোহরান মামদানি ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন, তুলেছেন আলোড়ন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে প্রবীণ রাজনীতিক ও ইউএস সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত ইউএস কংগ্রেসের আলোচিত সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ সহ ব্রæকলীন বরো প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও রেনোসো, রাজ্য সিনেটর জাবারি ব্রিসপোর্ট, ক্রিস্টেন গঞ্জালেজ ও জুলিয়া সালাজার সমর্থন পেয়েছেন। এছাড়া ও সিটি কাউন্সিল সদস্য শাহানা হানিফ, জেনিফার গুটিয়েরেজ এবং স্যান্ডি নার্সও তাকে সমর্থন করেছেন। শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যে ডিষ্ট্রিক্ট কাউন্সিল ৩৭, ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্স রিজিওন ৯এ এবং পেশাদার স্টাফ কংগ্রেস মামদানির পক্ষে দাঁড়িয়েছে। প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর মধ্যে নিউইয়র্ক সিটি ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টস অফ আমেরিকা, নিউইয়র্ক ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টির সমর্থনে এসেছে তার।
সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ১৭ জুন মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘তাদের নতুন রাজনীতি ও নেতৃত্বের প্রয়োজন, যা জনগণের জন্য কাজ করবে।’ মেয়র পদপ্রার্থী মামদানী হচ্ছেন নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলীর সদস্য। তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণায় বিনামূল্যে গণপরিবহন, ভাড়া স্থগিতকরণ এবং নগর পরিচালিত মুদি দোকান প্রতিষ্ঠার মতো প্রগতিশীল নীতির প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। তার এই উদ্যোগগুলো তাকে প্রগতিশীল সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে।
মামদানির সমর্থকরা বলছেন. নিউইয়র্কের খেটে খাওয়া এবং শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষা করতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। তার নির্বাচনী পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে সিটির বাসে চলাচল ফ্রি করা, রেন্ট স্ট্যাবিলাইজড ইউনিটের রেন্ট ফ্রিজ করা এবং চাইল্ড কেয়ার ফ্রি করা অন্যতম।
নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাট দলীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সমর্থনের এই প্রাথমিক চিত্র কেবলই নির্বাচনের দিকনির্দেশনা। সমর্থনের এই চিত্র নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন। বিশ্লেষকরা চূড়ান্ত ফলাফল নির্ভর করবে জনগণের সঙ্গে প্রার্থীদের সরাসরি সংযোগ, ইস্যু ভিত্তিক প্রচারণা এবং মাঠ পর্যায়ের সংগঠনের দক্ষতার ওপর। বিশেষ করে মাইগ্র্যান্ট, শ্রমজীবী এবং তরুণ ভোটারদের ভূমিকা এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
উল্লেখ্য, বিগত মেয়র নির্বাচনে বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস ডেমাক্র্যাট দলীয় প্রার্থী হয়ে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনে তিনি রিপাবলিকান অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। এছাড়াও জিম ওয়ালডিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। অপরদিকে রিপাবলিক্যান পার্টির মেয়র পদের প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক মেয়র প্রার্থী কার্টিজ ¯øীওয়া। চলতি বছরের আগামী ৪ নভেম্বর, মঙ্গলবার মেয়র পদের মূল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এন্ড্রু কুওমোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: এন্ড্রু কুওমোর ১৯৫৭ সালে ৬ ডিসেম্বর। এখন তার বয়স ৬৭ বছর। তিনি ফোর্ডহ্যাম ইউনিভার্সিটি ও অলবেনি ল থেকে জুরিস ডক্টর ডিগ্রি লাভ করেন। তার পিতা মারিও কোমোর গভর্নর নির্বাচনে ক্যাম্পেইন ম্যানেজার হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এন্ড্রু কুওমো রাজনীতির খাতায় নাম লেখান। গভর্ণর হিসেবে মারিও কোমোকে জিতিয়ে দিলেও তিনি তার বাবার প্রশাসনে যোগ না দিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন এবং নিউইয়র্ক সিটির হোমলেস কমিশনের চেয়ার হন। প্রেসিডেন্ট বিল কিনটন এন্ড্রু কুওমো-কে তার প্রশাসনে ডিপার্টমেন্ট অব হাউজিং এন্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট-এর এ্যাসিস্ট্যান্ট সেμেটারি নিয়োগ দেন। ২০০২ সালে গভর্নর নির্বাচনে দাঁড়ালেও জয় পাননি তিনি। তবে ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি নিউইয়র্ক স্টেটের ৬৪তম নির্বাচিত এটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালের নির্বাচনে নিউইয়র্কের ৫৬তম গভর্ণর হিসেবে নির্বাচিত হন এবং পদত্যাগের আগ পর্যন্ত (২০২১) গভর্ণর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জোহরান মামদানীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: জোহরান মামদানীর জন্ম ১৯৯১ সালের ১৮ অক্টোবর উগান্ডায়। তার বয়ন ৩৩ বছর। ২০১৮ সাল থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তার তার বাবা একজন মুসলিম এবং তা বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মিরা নায়ের। বউডোইং কলেজ থেকে তিনি ব্যাচলর্স ডিগ্রিধারী। ২০২০ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি ২০২১ সালের ১ জানুয়ারী থেকে নিউইয়র্ক ষ্টেট-এর অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট ৩৬ (কুইন্স) থেকে নির্বাচিত অ্যাসিম্বলী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৪ সালে তিনি সিটির মেয়র পদের প্রার্থীতা ঘোষণা করেন।

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

পুনরায় প্রার্থী শাহানা হানিফ : আগাম ভোটে রেকর্ড সংখ্যক ভোটার ভোট দিয়েছেন

আজ নিউইয়র্ক সিটির প্রাইমারী নির্বাচন : মেয়র পদের লড়াইয়ে কুওমো-মামদানী

প্রকাশের সময় : ০২:২২:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

হককথা রিপোর্ট: আজ মঙ্গলবার (২৪ জুন) নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রাইমারী নির্বাচন। নির্বাচনে মেয়র পদের পাশাপাশি অন্যান্য আসনেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৯টা পর্যন্ত সিটির বিভিন্ন কেন্দ্রে বিরতিহীন ভোট গ্রহণ চলবে। ‘র‌্যাঙ্কড চয়েজ’-এ অনুষ্ঠিতব্য মেয়র পদের প্রাইমারী নির্বাচনে ১১জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রয়েছেন সাবেক ষ্টেট গভর্নর অ্যান্ড্রæ কুওমো ও বর্তমান স্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান জোহরান মামদানী। এছাড়াও ডেমোক্র্যাট দলীয় অন্যান্য যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- ষ্টেট সিনেটর জেলনর মাইরি ও জেসিকা রামোস, সিটি কাউন্সিল স্পিকার অ্যাড্রিয়েন অ্যাডামস এবং বর্তমান সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার ও সাবেক সিটি কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রিংগার। তবে মেয়র পদে নির্বাচনে কে জিতবেন, কে হাসবেন জয়ের হাসি, এখন তা নিয়েই শহরজুড়ে জল্পনা তুঙ্গে। নির্বাচনী আভাস বলছে- কুওমো-মামদানীর লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। সব মিলিয়ে জমে উঠেছে নির্বাচন।
এদিকে এই নির্বাচনে গত ১৪ জুন থেকে শুরু হওয়া আগাম ভোট রোববার (২২ জুন) শেষ হয়েছে। এবার আগাম ভোটে রেকর্ড সংখ্যক ভোটার ভোট দিয়েছেন। এনওয়াইসি বোর্ড অব ইলেকশন সূত্রে জানা গেছে, আগাম ভোটের ৯ দিনে ৫ বরোতে ৩,৮৪,৩৩৮ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। ২০২১ সালের প্রাইমারীতে আগাম ভোটের সংখ্যা ছিলো ১,৯১,১৯৭ ভোট। এরমধ্যে ম্যানহাটানে ১,২২,৬৪২ জন ভোট দিয়েছেন। ২০২১ সালের তুলনায় আগাম ভোট প্রদানের হার বেড়েছে ১০২%। ব্রæকলীনে আগাম ভোট দিয়েছেন ১,৪২,৭৩৫ জন। এখানে ভোটের হার বেড়েছে ১১৮%। কুইন্সে আগাম ভোট দিয়েছেন ৭৫,৭৭৮ জন। এখানে ভোটের হার বেড়েছে ১১৪%। ব্রঙ্কসে আগাম ভোট দিয়েছেন ৩০,৮১৬ জন। এখানে ভোটের হার বেড়েছে ৫০%। আর স্ট্যাটান আইলান্ডে আগাম ভোট দিয়েছেন ১২৩৬৭ জন ভোটার। এখানে ভোটের হার বেড়েছে ৩৬%।
মঙ্গলবারের নির্বাচনে সিটি কাউন্সিল ডিষ্ট্রিক্ট ৩৯ (ব্রæকলীন) থেকে লড়ছেন বাংলাদেশী-আমেরিকান শাহানা হানিফ। তাকে সমর্থন করেছেন নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত ইউএস কংগ্রেসের আলোচিত সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ ও মেয়র প্রার্থী অ্যাসেম্বলীম্যান জোহরান মামদানী সহ মানবাধিকার সংগঠন ড্রাম, অ্যালায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার (অ্যাসাল), বাংলাদেশী এডভোকেসী গ্রæপ (বাগ), বাংলাদেশী আমেরিকান ফর পলিটিক্যাল প্রোগ্রেস (বিএপিপি) সহ বিভিন্ন সংগঠন।
এদিকে নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রাইমারী নির্বাচনের ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশী কমিউনিউটিতেও। মেয়র পদের মূল দুই প্রতিদ্ব›িদ্ব সাবেক গভর্নর এন্ড্রু কুওমো ও ষ্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান জোহরান মামদানীর সমর্থনে চলছে বাংলাদেশীদেরও প্রচার প্রচারণা। প্রার্থীদের প্রত্যাশা সকলেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন। অপরদিকে নির্বাচন ঘিরে মূলধারার মিডিয়া সহ এথনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি ভোটারদের ঘরে ঘরে লিফলেট, পেস্টার প্রেরণের মাধ্যমে চলছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। বাংলা ভাষা সহ একাধিক ভাষায় প্রিন্টেড নির্বাচনী গাইডও ভোটারদের কাছে পাঠিয়েছে এনওয়াইসি বোর্ড অব ইলেকশন অফিস।
নির্বাচনে অন্য কারা প্রার্থী: সিটির উল্লেখযোগ্য অন্যান্য পদের প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- সিটির পাবলিক এডভোকেট পদে পুনরায় লড়ছেন জুমানী ডি উইলিয়ামস। এই পদের অন্য প্রার্থীরা হলেন- মার্টি দোলান ও জেনিফার রাজকুমার (ষ্টেট অ্যাসেম্বলীওম্যান)। সিটি কম্পট্রোলার পড়ে লড়ছেন মার্ক ডি লেভিন (ম্যানহাটার বরো প্রেসিডেন্ট), ইসমাইল মালাভে পেরেজ, জাস্টিন ব্রানান ও কেভিন এস পার্কার। সিটি কাউন্সিল সদস্য পদে (জ্যাকসন হাইটস, এলমহার্স্ট ও উডসাইড) পদে পুননরায় লড়ছেন শেখর কৃষ্ণান।
কুওমো নিয়ে নানা আলোচনা: নিউইয়র্ক ষ্টেটের গভর্ণর থাকাকালীন সময়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে পদত্যাগের পরেও সিটি মেয়র নির্বাচন ঘিরে ফের রাজনীতিতে কুওমোর প্রত্যাবর্তন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন- তার টার্গেট ২০২৮ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। অন্যদিকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রগতিশীল নেতা মামদানী শ্রমিক অধিকার ও ভাড়া নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করছেন। মেয়রাল টিভি বিতর্কের আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রæ কুমো। নার্সিং হোমে কোভিড-১৯ মৃত্যুর তথ্য গোপন ও যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। বিতর্কে প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী জোহরান মামদানী কুমোর কর্পোরেট সম্পর্ক ও শ্রমিকবিরোধী নীতির সমালোচনা করেন। কুমো নিজেকে সবচেয়ে যোগ্য নেতা দাবি করলেও, বাকিরা তার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। যদিও বিতর্কে নেতৃত্ব, স্বচ্ছতা ও জনগণের স্বার্থ রক্ষার অঙ্গীকার করেন প্রার্থীরা।
মঙ্গলবারের (২৪ জুন) নির্বাচন ঘিরে এন্ড্রু কুওমো ৩২ বিজে এসইআইইউ (হোটেল ও পরিষেবা শ্রমিক ইউনিয়ন) এবং ১১৯৯ এসইআইইউ (স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের বৃহত্তম ইউনিয়ন) সহ গুরুত্বপূর্ণ শ্রমিক সংগঠনগুলো ছাড়াও সাবেক মেয়র মাইকেল বøুমবার্গের সমর্থন পেয়েছেন। এছাড়া সাবেক ও বর্তমান কিছু নির্বাচিত কর্মকর্তারাও তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউইয়র্ক সিটির ভোটব্যাংকে শ্রমিক ইউনিয়েনের বিশাল প্রভাব থাকায় এটি কুমোর জন্য বড় সুবিধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আলোড়ন তুলেছেন মামদানী: অপরদিকে নিউইয়র্ক সিটির নির্বাচনে জোহরান মামদানি ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন, তুলেছেন আলোড়ন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে প্রবীণ রাজনীতিক ও ইউএস সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত ইউএস কংগ্রেসের আলোচিত সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ সহ ব্রæকলীন বরো প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও রেনোসো, রাজ্য সিনেটর জাবারি ব্রিসপোর্ট, ক্রিস্টেন গঞ্জালেজ ও জুলিয়া সালাজার সমর্থন পেয়েছেন। এছাড়া ও সিটি কাউন্সিল সদস্য শাহানা হানিফ, জেনিফার গুটিয়েরেজ এবং স্যান্ডি নার্সও তাকে সমর্থন করেছেন। শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যে ডিষ্ট্রিক্ট কাউন্সিল ৩৭, ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্স রিজিওন ৯এ এবং পেশাদার স্টাফ কংগ্রেস মামদানির পক্ষে দাঁড়িয়েছে। প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর মধ্যে নিউইয়র্ক সিটি ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টস অফ আমেরিকা, নিউইয়র্ক ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টির সমর্থনে এসেছে তার।
সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ১৭ জুন মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘তাদের নতুন রাজনীতি ও নেতৃত্বের প্রয়োজন, যা জনগণের জন্য কাজ করবে।’ মেয়র পদপ্রার্থী মামদানী হচ্ছেন নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলীর সদস্য। তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণায় বিনামূল্যে গণপরিবহন, ভাড়া স্থগিতকরণ এবং নগর পরিচালিত মুদি দোকান প্রতিষ্ঠার মতো প্রগতিশীল নীতির প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। তার এই উদ্যোগগুলো তাকে প্রগতিশীল সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে।
মামদানির সমর্থকরা বলছেন. নিউইয়র্কের খেটে খাওয়া এবং শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষা করতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। তার নির্বাচনী পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে সিটির বাসে চলাচল ফ্রি করা, রেন্ট স্ট্যাবিলাইজড ইউনিটের রেন্ট ফ্রিজ করা এবং চাইল্ড কেয়ার ফ্রি করা অন্যতম।
নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাট দলীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সমর্থনের এই প্রাথমিক চিত্র কেবলই নির্বাচনের দিকনির্দেশনা। সমর্থনের এই চিত্র নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন। বিশ্লেষকরা চূড়ান্ত ফলাফল নির্ভর করবে জনগণের সঙ্গে প্রার্থীদের সরাসরি সংযোগ, ইস্যু ভিত্তিক প্রচারণা এবং মাঠ পর্যায়ের সংগঠনের দক্ষতার ওপর। বিশেষ করে মাইগ্র্যান্ট, শ্রমজীবী এবং তরুণ ভোটারদের ভূমিকা এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
উল্লেখ্য, বিগত মেয়র নির্বাচনে বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস ডেমাক্র্যাট দলীয় প্রার্থী হয়ে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনে তিনি রিপাবলিকান অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। এছাড়াও জিম ওয়ালডিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। অপরদিকে রিপাবলিক্যান পার্টির মেয়র পদের প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক মেয়র প্রার্থী কার্টিজ ¯øীওয়া। চলতি বছরের আগামী ৪ নভেম্বর, মঙ্গলবার মেয়র পদের মূল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এন্ড্রু কুওমোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: এন্ড্রু কুওমোর ১৯৫৭ সালে ৬ ডিসেম্বর। এখন তার বয়স ৬৭ বছর। তিনি ফোর্ডহ্যাম ইউনিভার্সিটি ও অলবেনি ল থেকে জুরিস ডক্টর ডিগ্রি লাভ করেন। তার পিতা মারিও কোমোর গভর্নর নির্বাচনে ক্যাম্পেইন ম্যানেজার হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এন্ড্রু কুওমো রাজনীতির খাতায় নাম লেখান। গভর্ণর হিসেবে মারিও কোমোকে জিতিয়ে দিলেও তিনি তার বাবার প্রশাসনে যোগ না দিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন এবং নিউইয়র্ক সিটির হোমলেস কমিশনের চেয়ার হন। প্রেসিডেন্ট বিল কিনটন এন্ড্রু কুওমো-কে তার প্রশাসনে ডিপার্টমেন্ট অব হাউজিং এন্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট-এর এ্যাসিস্ট্যান্ট সেμেটারি নিয়োগ দেন। ২০০২ সালে গভর্নর নির্বাচনে দাঁড়ালেও জয় পাননি তিনি। তবে ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি নিউইয়র্ক স্টেটের ৬৪তম নির্বাচিত এটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালের নির্বাচনে নিউইয়র্কের ৫৬তম গভর্ণর হিসেবে নির্বাচিত হন এবং পদত্যাগের আগ পর্যন্ত (২০২১) গভর্ণর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জোহরান মামদানীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: জোহরান মামদানীর জন্ম ১৯৯১ সালের ১৮ অক্টোবর উগান্ডায়। তার বয়ন ৩৩ বছর। ২০১৮ সাল থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তার তার বাবা একজন মুসলিম এবং তা বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মিরা নায়ের। বউডোইং কলেজ থেকে তিনি ব্যাচলর্স ডিগ্রিধারী। ২০২০ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি ২০২১ সালের ১ জানুয়ারী থেকে নিউইয়র্ক ষ্টেট-এর অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট ৩৬ (কুইন্স) থেকে নির্বাচিত অ্যাসিম্বলী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৪ সালে তিনি সিটির মেয়র পদের প্রার্থীতা ঘোষণা করেন।