হককথা ডেস্ক: নিউইয়র্কের ফেডারেল প্লাজার ইমিগ্রেশন কোর্টে এক অভিবাসীকে আটকের সময় ওয়ারেন্ট দেখতে চাওয়ায় সিটি কম্পট্রোলার ও ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রাইমারীতে মেয়র পদপ্রার্থী ব্র্যাড ল্যান্ডারকে গ্রেপ্তার করে আইস। পরবর্তীতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় ডেমোক্র্যোট নেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবারের (১৭ জুন) ঘটনটি টক অব দ্যা সিটিতে পরিণত হয়। ক্যালিফোর্নিয়ায় সিনেটর অ্যালেক্স প্যাডিলাকে ফেডারেল এজেন্ট দ্বারা হাতকড়া পরানো ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে এবার নিউইয়র্ক সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডারকে গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটলো।
জানা যায়, নিউইয়র্কের ফেডারেল প্লাজার ইমিগ্রেশন কোর্টে এক অভিবাসীকে আটকের সময় ওয়ারেন্ট দেখতে চাওয়ায় সিটি কম্পট্রোলার ও মেয়র পদপ্রার্থী ব্র্যাড ল্যান্ডারকে কয়েকজন মুখোশধারী ফেডারেল এজেন্টরা গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। মঙ্গলবার সকালে লোয়ার ম্যানহ্যাটনের টুয়েন্টি সিক্স ফেডারেল প্লাজার ইমিগ্রেশন কোর্টের করি ডোর থেকে ব্র্যাড ল্যান্ডারকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার সময় ল্যান্ডার আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি অভিবাসন আদালতের শুনানি পর্যবেক্ষণ করছিলেন।
এদিকে ল্যান্ডারের গ্রেপ্তারে ডেমোক্র্যাট নেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর অ্যালেক্স প্যাডিলাকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারী ক্রিস্টিন নোমের সংবাদ সম্মেলন থেকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এছাড়াও ব্র্যাড ল্যান্ডারের এমন গ্রেপ্তারে অভিবাসী কমিউনিটিতে আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। কেননা, ব্র্যাড ল্যান্ডার হচ্ছেন সিটি প্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি। তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি। সিটি প্রশাসনে মেয়রের পরই তার গুরুত্ব ধরা হয়।
মঙ্গলবার কোর্টে মামলার আপিলের পর ল্যান্ডার ও তার দল এক অভিবাসীকে বাইরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় মুখোশ পরা আইস এজেন্টরা ওই অভিবাসীকে আটক করতে গেলে তখন ল্যান্ডার তাদের কাছে ওয়ারেন্ট দেখতে চান। ঠিক তখনই একজন এজেন্ট নির্দেশ দেন তাকেও ধরে নিয়ে চলো। এরপর ব্র্যাড ল্যান্ডারকে দেয়ালের সঙ্গে ঠেলে হাতকড়া পরায় আইস এজেন্টরা। এ সময় তার সাথে ওই অভিবাসীকেও গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তাকে ফেডারেল প্লাজার আইস হেফাজতে রাখা হয়। সেখানে তার সঙ্গে এনওয়াইপিডি-র নিরাপত্তাকর্মী ও দুইজন আইনজীবী রয়েছেন বলেও জানা গেছে।
ল্যান্ডারের স্ত্রী মেগ বারনেট ওই সময় তার সাথে ছিলেন। বারনেট বলেন, ‘মুখোশধারী এজেন্টরা এক অভিবাসীকে আটকের চেষ্ঠাকালে ব্র্যাড তাদের কাছে ওয়ারেন্ট দেখতে চান। ঠিক ওই সময় ব্র্যাডকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়।’
ঘটনার পর সংবাদ সম্মেলনে তার স্ত্রী মেগ বারনেট বলেন, ‘ফেডারেল এজেন্টরা হঠাৎ ঘিরে ফেলল। তারা বলল, ‘তুমি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছো। আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরে যেতে বলল।’ মেগ আরও বলেন, ‘আমি যা দেখেছি, তা অপ্রত্যাশিত এবং গ্রহণযোগ্য নয়। এটাই যদি আইনের শাসন হয়, তাহলে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে?
ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, একজন এজেন্ট ল্যান্ডারকে বলছেন, ‘তুমি বাধা সৃষ্টি করছো।’ এজেন্টরা ল্যান্ডারকে আটক করার আগে তাকে কয়েকবার সরে যেতে বলে। কিন্তু ল্যান্ডার অভিবাসীর হাত ছাড়েননি। প্রায় ৪০ সেকেন্ড ধরে ধাক্কাধাক্কি চলে। এরপর জোর করে দুজনকে আলাদা করা হয়। ল্যান্ডার তখন বলছিলেন, ‘আমি তো শুধু এখানে দাঁড়িয়ে আছি। আমি বাধা দিচ্ছি না।’ হাতকড়া পরানোর সময় তিনি এজেন্টদের বলেন, ‘আপনাদের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিককে আটকানোর এখতিয়ার নেই, যদি না আপনারা আদালতের ওয়ারেন্ট দেখান।’ এসময় ল্যান্ডারের সাথে আইস এজেন্টের ধস্তাধ্বস্তিও হয়। ফেডারেল এজেন্টরা ল্যান্ডারকে হলের ভেতর দিয়ে একটি লিফটে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে ব্র্যাড ল্যান্ডারকে মুক্তি দেয়া হয়। তিনি যখন কোর্ট থেকে বের হন তখন তার সাথে গভর্ণর ক্যাথি হোকুলকে সাথে দেখা যায়।
এদিকে স্টেট অ্যাসেম্বলী মেম্বার ও মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি বলেন, এটা শুধু ল্যান্ডারকে গ্রেপ্তার নয়, এটা আমেরিকান ও অভিবাসীদের মধ্যে ভীতি তৈরী করা। ল্যান্ডারকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির এসিস্টেন্ট সেক্রেটারী ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন জানান, ‘ব্র্যাড ল্যান্ডারকে ফেডারেল কর্মকর্তাদের ওপর হামলা ও কাজে বাধা দেওয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
অপরদিকে ল্যান্ডারকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘শুধু অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় দাঁড়ানোয় একজন নির্বাচিত প্রতিনিধিকে গ্রেফতার করা ক্ষমতার অপপ্রয়োগ। এটা এক ঘৃণ্য কাজ।’
এর আগে, ল্যান্ডার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘এভাবে দ্রæত গ্রেপ্তার করে তাদের ন্যায্য বিচারের সুযোগ কেড়ে নেয়া হচ্ছে।’ ল্যান্ডারের গ্রেপ্তারের এক মাস আগে নিউজার্সী রাজ্যের নিউয়ার্ক শহরের মেয়র রাস বারাকা অভিবাসন ডিটেনশন সেন্টারের বাইরে প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।