নিউইয়র্ক ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১০০ দিন কেমন গেল!

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:৫৯:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১৬ বার পঠিত

মাহমুদ রেজা চৌধুরী: ‘দি ওরষ্ট ক্রিমিনাল ইন হিউম্যান হিস্টরি’। ‘মানুষের পৃথিবীতে সবচেয়ে ঘৃণিত অপরাধী’। কথাটা প্রফেসর চমস্কি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবার (২০১৬-২০২০) ক্ষমতা থাকাকালীন তাঁর সম্পর্কে বলেন। বর্তমানে এই অধ্যাপকের বয়স প্রায় ৯৬। এখন কথা বলেন কম বা বলতে পারেন না। প্রফেসর চমস্কি, বিশ্বের সাম্প্রতিক সময়ের একজন অন্যতম পন্ডিত, ভাষা বিজ্ঞানী, সমাজ ও রাষ্ট্র দার্শনিক হিসেবেও বিশ্বে সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব।
প্রফেসর চমস্কির উল্লেখিত দেখা ও মতের সাথে আমরা অনেকে ভিন্ন বা দ্বিমত পোষণ করতেই পারি। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এভারেজ নাগরিকদের শিক্ষা ও অভিরুচির প্রতিনিধিত্ব করেন বহু ক্ষেত্রে। তাঁর ভোটার ও অন্ধ সমর্থকরাও ট্রাম্পের চিন্তার প্রতিনিধিত্ব করেন যেমন। এই রাষ্ট্রের সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস তাই বলে।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাÐ ও সেই পদ্ধতির মধ্যে রাজনীতিতে ও হোয়াইট হাউসে আসেন নি। তবে তিনি এই দেশের অধিকাংশ নাগরিকদের সমর্থনেই পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে জনসমর্থন আছে। আমেরিকান জনগণের একটা বড় অংশ তাঁকে চান ও চেয়ছেন বলেই তো এই দেশের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে মিস্টার ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও নির্বাচিত হন।
উল্লেখ্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী ডেমোক্রের দলের সেক্রেটারী অব ষ্টেট হিলারি ক্লিনটনকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখনও জনগণ তাঁকে চেয়েছে। অতএব, ধরে নিতে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটা জনপ্রিয়তা আছে।
পাশাপাশি এটাও সত্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে যারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, যেমন সিনিয়র জর্জ ডবিøউ বুশ থেকে শুরু করে জুনিয়র বুশ, বারাক ওবামা, জো বাইডেন। এমনকি প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। এঁদের কারোর শাসনামল সেই অর্থে কতটা গণতান্ত্রিক ছিল এবং বিশ্ব শান্তি রক্ষায় তারা কাজ করেছে! তাঁদের কার কি ভূমিকা ছিল সেখানে! এ নিয়েও যথেষ্ট আলোচনার সুযোগ আছে। আলোচনা হয়, প্রেসিডেন্ট রেগানের মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রসারে বিশ্বের অনেক দরিদ্র দেশের উপর যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা অবাধ বাণিজ্যের দুঃশাসন নিয়েও। যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রেসিডেন্টই সমালোচনার ঊর্ধ্বে না।
প্রাসঙ্গিক না হলেও উল্লেখ করতে হয়, পৃথিবীতে গত জানুয়ারী ২০ তারিখের পর বিগত একশত দিনে যা, যা উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে তার মধ্যে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যু, অন্যতম একটা দুঃখজনক ঘটনা। ঘটেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার প্রথম ১০০ দিনে। যদিও এর সাথে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোন সম্পর্ক নেই। এপ্রিল ২১, ২০২৫ তারিখে পৃথিবী থেকে চলে যান এই বর্ষিয়ান মহান মানবিক ধর্মীয় নেতা, পোপ ফ্রান্সিস বার্গোলিও (১৯৩৬-২০২৫)। এর পাশাপাশি, গত ১০০ দিনে জানুয়ারী ২০ তারিখ থেকে, আজকে এপ্রিলের প্রায় শেষ অব্দি ইসরাইল দ্বারা গাজায় নিহতদের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। অর্ধেকের বেশি এর নিষ্পাপ ও নিরাপরাধ শিশু ও নারী। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ক্ষেত্রে কোন মানবিক ভূমিকা রাখতে পারেন নি।
উল্লেখ করা যায়, যুক্তরাষ্ট্র তার অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যতটা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি অনুসরণ করে, বিশ্বের আর কোথাও সেটা সে করে না। ওখানে একটা ‘সাম্রাজ্যবাদী’ দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মসূচি থাকে যুক্তরাষ্ট্রের। যা বাস্তবায়ন করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। যেমন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমায়, ৬ আগস্ট ও নাগাসিকায়, ৯ আগস্ট ১৯৪৫ এ ‘এটম বোমা’ নিক্ষেপ করে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে এই দুই নগর ধ্বংস করা হয়।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের সমালোচনায় যত রকম নেতিবাচক মন্তব্য হয় এবং সমালোচনা, তার চেয়ে বেশ কয়েক গুণ বেশি সমালোচনা হয় ও দেখা যায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপারে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুণী ব্যক্তিত্ব ও প্রফেসর নোয়াম চমস্কির উল্লেখিত মন্তব্য তার এক বড় দৃষ্টান্ত।
এছাড়াও আলোচিত প্রেসিডেন্টের ব্যাপারে সমালোচনার ভাষাগুলো এতো তীব্র কেন! অনেক কারণ আছে এর। প্রধান একটা কারণ, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভেতরে অনেক মানবিক গুণ এবং রাষ্ট্র শাসনের ব্যাপারে গণতান্ত্রিক ‘অ্যাটিচিউড’ নেই বা কম। ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দল বা তেমন কোন প্রক্রিয়ার মধ্যেও ক্ষমতায় আসেন নি। সমর্থন ছিল তাঁর এক সময় ডেমোক্রেটদের প্রতি, পরে সেটা যায় রিপাবলিকান দলের প্রতি। এই ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি কখনো রাজনীতি করলে রিপাবলিকান দলের হয়েই করবেন। কারণ, এই দলকে যা বোঝানো যায় তাই নাকি তারা বোঝে! (সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, ২০০৬)
মাহমুদ রেজা চৌধুরী

মিস্টার ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে একজন সফল এন্টারপ্রেনিয়ার, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে। পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্যি ও অর্থনৈতিক বাজারেও। এইসব ক্ষেত্রে তিনি এভারেজ + তিনি ‘রাষ্ট্র’কে অনেকটা ‘ট্রাম্প টাওয়ার’ কর্পোরেটের মতোই ‘ওয়ান ম্যান শো’ ও একার অর্ডারেই চালাতে চান। এবং এই পরিচালনায় তিনি সবসময় তাঁকে ছাড়া আর কাউকেই গনায় ধরেন না বা গণ্য করেন না। তাঁর ভিতর একটা চরম ঔধ্যত্তপনা, প্রতিপক্ষের ব্যাপারে হিংসাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ অনুসরণ অনুপ্রাণিত করে। যে কোন ব্যাপারেই তিনি কাউন্টার আক্রমণ বেশি পছন্দ করেন, ইনজয় করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এটা।
সহকর্মী এবং সহযোগীদের কাছ থেকেও তাঁর প্রতি অন্য সবার চরম রকম ‘অন্ধ আনুগত্যতা’ চান ডোনাল্ড ট্রাম্পও তিনি তা বজায় রাখেন। এটা তাঁর ব্যক্তিতান্ত্রিক মন মানসিকতার আরেক আদর্শ। তবে স্বীকার করতে হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন সফল ব্যবসায়ী, চকৌস ও কেরিসমেটিক লিডার। ভালো বক্তা, পরিশ্রমী। পাশাপাশি যেকোনো বিষয়ে ভালো কিংবা মন্দ, যাই হোক না কেন। দ্রæত সিদ্ধান্ত নিতে ও দিতে পারেন। এইসব একজন সফল নেতৃত্বের ইতিবাচক কিছু গুণ। অস্বীকার করা যাবে না। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর এই নেতৃত্বশুলভ দক্ষতা ও গুণগুলিকে নেতিবাচক ক্ষেত্রেই ব্যবহার করেন বেশি।
এর এক পা বাইরে গেলে সেটা তিনি সহজ ভাবে নেননা বা দেখেন না। যুক্তরাষ্ট্রের নিকট অতীত ইতিহাসে বলতে গেলে এইরকম দৃশ্যত ‘আগ্রাসী’ ও ‘এক্সট্রিম’ অসোভন আচরণকারী ও মানসিকতার ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হয়ে ‘হোয়াইট হাউসে’ আসেন নি। ইতিহাস অধ্যয়ন করলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ অধিবাসী মূলত বর্ণবাদী, আগ্রাসী, চরম ব্যক্তিতান্ত্রিক ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক; তাদের টোটাল আচার-আচরণের সংস্কৃতিতে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামাজিক ও রাজনৈতিক আচার-আচরণেও এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট (৩২ তম) ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট (১৯৩৩-১৯৪৫) প্রথম তিনবার প্রেসিডেন্ট থাকার প্রায় শত বছরের কাছাকাছি পরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মাঝে চার বছর বিরতির পর (২০২০-২০২৪) দ্বিতীয়বার এই দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। অনেকের মতে, তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করেন, প্রেসিডেন্ট ডি রুজভেল্টের মতো আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকবেন! বা আরও এক টার্ম থাকতে চাচ্ছেন! ব্যক্তিগতভাবেও অনেক জায়গায় তিনি এইরকম ইচ্ছার কথাও প্রকাশ করেন বলে শোনা যায়। দেখা যাক, কি হয়!
আপাতত দেশে একটা বড় যুদ্ধের ঘটনা ছাড়া এই সম্ভাবনা ক্ষীন বলে মনে হয়। যেমন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘটার কারণেই তৃতীয় টার্ম প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম চেষ্টা করতে পারেন তেমন একটা কিছু ঘটাবার! এই ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য বা ইরান কিংবা চায়নার সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ বাধায় কি-না! বলা কঠিন। এমন কিছু হলে সেটা সারা বিশ্বেই ‘সামরিক সুনামি’ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের ‘প্রথম একশত দিন’। এই ¯েøাগান ও প্রচারণার ব্যাপারটা সম্ভবত শুরু হয়, প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট, তাঁর সময় থেকে। প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন ১৯৩২-৩৩ সালে তখন বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে এক মহামন্দা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা চলছিল। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর রুজভেল্ট রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং সেইগুলোকে বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করেন। সংক্ষেপে তখন থেকেই প্রেসিডেন্টের ‘প্রথম একশত দিনের’ কার্যকলাপ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়। সেই ধারাবাহিকতা চলছে এখনো। এটা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রথম ১০০ দিনের পিছনের ইতিহাস।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই প্রথা অনুযায়ী মাঝের চার বছর (২০১৬-২০২০) বাদে, দ্বিতীয়বার ক্ষমতা গ্রহণের পর তাঁর প্রথম একশত দিন কেমন গেল! এই নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা এবং অনেকের আগ্রহ আছে সেটা জানার। কনভেনশনাল মিডিয়াতেও আলোচনা হয় ও হচ্ছে। কিন্তু নন কনভেনশনাল মিডিয়াতে এই নিয়ে কি আলোচনা হয়! সেটা অবশ্য আমরা অধিকাংশ মানুষ জানতে পারি না। আমেরিকান মিডিয়াতেও সেই আলোচনা হয় না। ইউরোপের অনেক দেশের মতো আমেরিকান মিডিয়াও বহু ক্ষেত্রেই কনসারভেটিভ বা দক্ষিণ মুখী রক্ষণশীল মিডিয়া হিসেবে সুপরিচিত। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বন্ধু রাষ্ট্র ইসরাইল, তাদের প্রধানতম দৈনিক
‘দি টাইমস অফ ইসরাইল’, ‘জেরুজালেম পোস্ট’ বা ‘ডেইলি হারটেজ’ পত্রিকাতেও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে যেসব আলোচনা প্রতিদিন হয়, সেইগুলো কিন্তু আমরা দেখি না, বা পড়তেও পারি না। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম মিডিয়া, ‘আল জাজিরা’, চায়নার মিডিয়া ‘চায়না ন্যাশনাল ব্রডকাস্ট’- এইসব মিডিয়ার কোন আলোচনাও আমরা শুনি না।
যুক্তরাষ্ট্রের কোন দৈনিক কাগজে বা এখানকার কোন মিডিয়াতেও তা দেখা যায় না। প্রশ্নটা এই কারণেই আসে, আমরা সেটা মানি বা না মানি। ধরে নেয়া হয়, বর্তমান বিশ্বে এখন পর্যন্ত অর্থনৈতিক এবং সামরিক দিক থেকেও দৃশ্যত শক্তিশালী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র। এর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিশ্ব রাজনীতিতেও আছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির হালচাল, বিশ্ববাসীকে আকর্ষণ কওে, প্রভাবিত করে। যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বাইরের রাষ্ট্রের চিন্তাভাবনা বা পত্রপত্রিকার মতামত সার্বিক বিশ্ব জনমতেও একটা ভূমিকা রাখে। অস্বীকার করা যায় না।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় টার্ম
২০২৫-২০ জানুয়ারী যার শুরু, তাঁর প্রথম ১০০ দিন কার্যকাল শেষ ৩০,এপ্রিল, ২০২৫। এই অল্প দিনেই তিনি বহুল আলোচিত, সমালোচিত এবং বিশ্ববাসীর কাছে নিন্দিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারেও তাঁর সমালোচনা ইতিমধ্যে এই অল্প সময়ের ব্যবধানে দেশের অন্যান্য আরো অনেক প্রেসিডেন্টের তুলনায় বেশি। উভয় ক্ষেত্রে তাঁর ইতিবাচক ভূমিকার চাইতে সমালোচিত এবং সাংঘর্ষিক ভূমিকার পরিচয় একাধিক।
এই ভূমিকার প্রধান একটা আকর্ষণ, তাঁর ‘এক্সিকিউটিভ’ ক্ষমতার বলয়, নিজ দেশ এবং বিশ্ববাসীকেও দেখাতে চেয়েছেন, তিনি কত বড় ও শক্তিশালী ব্যক্তি, সারা বিশ্বে। তাঁর এই চিন্তার স্বপক্ষে তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রকে আবার সেরা রাষ্ট্র দেখানোর জন্য’! প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই নিজের কোন ভুল স্বীকার করেন না।
প্রতিদিন নানারকম উদ্ভট এবং আবোল-তাবোল কথা বলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব মিডিয়াকে যেমন উত্তেজিত করেন তেমনি আনন্দ ও হাস্যরসের খোরাক দেন। উদ্দেশ্য, তিনি সবসময়-ই লাইট, ক্যামেরা ও অ্যাকশন- এই তিনের অগ্রভাগে নিজেকে রাখতে চান ও রাখেন। ট্রাম্প যখন ক্ষমতায় ছিলেন না (২০২০-২০২৪) তখনও তিনি ছিলেন লাইট, ক্যামেরা ও অ্যাকশনের অগ্রভাগে। তাঁর প্রথম একশত দিনেও এই কাজটাই তিনি বেশি করেছেন। এর কয়েকটা যেমন:
১) যুক্তরাষ্ট্রে আগত বৈদেশিক সব পণ্যের উপর শুল্কবৃদ্ধির ঘোষণা দেন হোয়াইট হাউজ লনে আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান করে।
২) ফেডারেল জব সংক্রান্ত বিষয়ে কঠোর নীতি অবলম্বন। অনেক ফেডারেল প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা, কর্মচারীদের বরখাস্ত করা ও বেকার অবস্থায় ফেলেন আনুষ্ঠানিক এক্সিকিউটিভ অর্ডার সাইন করে।
৩) বিচার বিভাগ তাঁর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন রাখেন বিচার বিভাগ এবং বিচারপতিদের নানা রকম ভয় দেখিয়ে।
৪) বিচারপ্রাপ্ত অনেক আসামিদের ক্ষমাপ্রদর্শন। ৬ জানুয়ারী, ২০২১ এ যারা তখন নির্বাচনে পরাজিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাখতে তাঁর সমর্থকদের একাংশ ক্যাপিটাল হিলে যে তান্ডব ও সহিংসতা করে। ক্ষমতায় এসে সবার আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই সাজাপ্রাপ্ত প্রায় কয়েকশো অপরাধীদের ক্ষমা করে মুক্তি দেন। ৬ জানুয়ারীর পুরো ঘটনাটিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিহাস থেকেই মুছে দিতে চাচ্ছেন।
৫) শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন।
৬) সিনিয়র নাগরিকদের সরকারি ভাতা প্রদানে কঠোরতা অবলম্বন।
৭) রাশিয়া ইউক্রেন এবং ইসরাইল ও প্যালেস্টাইন এবং গাজায় ইসরাইলী আধিপত্য এবং মার্কিন আধিপত্য বজায়। এই ব্যাপারে হোয়াইট হাউসে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভøদিমির জেলেনসকি (১৯৭৮) তাঁকে ডেকে তাঁর সাথেও ‘অন ক্যামেরা’ দুর্ব্যবহার করেন এবং হুমকি দেন।
৮) আভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা। বাজার দরের ঊর্ধ্বগতি অনিয়ন্ত্রিত।
৯) ইমিগ্রেশন নীতির কঠিন পরিবর্তন।
১০) শিক্ষার্থীদের উপর নানান নিষেধাজ্ঞা। বিশেষ করে ফরেন স্টুডেন্টদের উপর।
১১) চরম বিতর্কিত এবং চরম রক্ষণশীল কিছু ব্যক্তিদের তাঁর উপদেষ্টা এবং কিছু সরকারি সংস্থার প্রধান নিয়োগ করা।
১২) দীর্ঘদিনের আন্তর্জাতিক মানবিক সংগঠন ‘ইউ এস এইড’ চট করে বন্ধ করে দেয়া! আরো অসংখ্য একক নির্দেশ এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর গেল তিন মাস দশ দিনের শাসন কালে।
বিগত ১০০ দিনে প্রেসেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
সর্বমোট প্রায় ১৩৭ টি ‘এক্সকিউটিভ অর্ডার”’ স্বাক্ষর করেন। ইতিহাসে বলা হয়, এটা প্রেসিডেন্ট হেনরি টরুম্যানের চাইতেও বেশি। এছাড়াও আছে প্রেসিডেনশিয়াল আরো কিছু অধ্যাদেশ। এককথায় যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বত্র একক অধিপত্য ও ক্ষমতাকে সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবং আদর্শে করা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিগত ১০০ দিনের ক্ষমতায় যেসব পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন, অধিকাংশই এক্সট্রিম এবং নেগেটিভ পদক্ষেপ যা যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো ও প্রশাসনের বিপরীত। তিনি উল্লেখিত কাজগুলো করবার নির্বাচন পূর্ব প্রতিশ্রæতি দিয়েই ক্ষমতায় এসেছেন, অস্বীকার করা যাবে না।
উল্লেখিত কয়েকটি পদক্ষেপের আলোচনা যদি করা হয়, খুব সংক্ষেপে বলা যায়, যেমন আমেরিকাতে যেসব দ্রব্য আমদানি হয়ে আসে তার উপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কর বা শুল্কের ব্যাপার। বিশদ আলোচনার প্রয়োজন নেই। যুক্তরাষ্ট্র প্রধানত একটা ‘আমদানি’ নির্ভর দেশ। যুক্তরাষ্ট্রে বলতে গেলে প্রায় প্রতিটা জিনিস ‘সুই থেকে শুরু করে ছাতা’, জামাকাপড় থেকে শুরু করে, যন্ত্রের খুচরাংশ, চাল থেকে শুরু করে শ্রমবাজারের শ্রম বাইরের দেশ থেকেই বেশি আসে।
আর বড় অংশ আসে চায়না থেকে। অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাকে বলেন! নিউইর্কে তাঁর বিশাল দালান ‘ট্রাম্প টাওয়ার’ নির্মিত হয় অধিকাংশ পরদেশী শ্রমিকদের দ্বারা। এদের মধ্যে মেক্সিকান, চাইনিজ, এশিয়ান। এই সংখ্যাটাই বেশি ছিল। এদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ কাগজপত্রের বাইরের অধিবাসী। গ্রেট এমেরিকা মূলত গ্রেট ইমিগ্রেন্টদের দ্বারাই বিনির্মিত।
চায়নার সাথেও অর্থনৈতিক মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র কখনোই পেরে উঠবে না। সামরিক দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র শক্তিশালী হলেও অর্থনৈতিক দিকে চায়নার সাথে যুক্তরাষ্ট্র অনেক পেছনে আছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রে চায়নার উপর তার নতুন কর আরোপ কার্যকর হবে না। ইতিমধ্যে তার নমুনাও দেখা গেছে। এই বিষয়টাকে যুক্তরাষ্ট্র এখন ৯০ দিন পেছানোর কথা বলছে। ট্রাম্প চাচ্ছেন, যে সব দেশের উপর তিনি অধিক শুল্ক চাপিয়েছেন, তারা সবাই তাঁর কাছে এসে তাঁর কথামতো, তাঁর ‘পশ্চাতে চুমু’ দিয়ে সেই শুল্ক কমাতে বলবেন!!
যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন নীতিতে যাদেরকে অবৈধ নাগরিক বলা হচ্ছে। এই ব্যাপারে ট্রাম্পের কঠোর নীতি কতটা কার্যকর হবে তাও বলা কঠিন। কারণ, এখানে একটা বড় সংখ্যার শ্রমিক ও কর্মজীবীদের ভূমিকা আছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে। গায়ের জোড়ে কোন পরিবর্তন সহজ হবে কি! কোন দেশেই চায় না তার দেশে অবৈধ কোন নাগরিক বসবাস করুক। এই ব্যাপারে ইতিহাসের একটা বিষয় দেখার আছে। যুক্তরাষ্ট্র-তো আসলেই একটা ইমিগ্র্যান্ট রাষ্ট্র। এইদেশে কেউ আগে এসছেন কেউবা পরে। এই পার্থক্য। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্প! তাঁর ‘এবরোঅরিজিন’ বলতে আদিপুরুষ পশ্চিম ইউরোপের।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৫ এ হোয়াইট হাউসে প্রবেশের দ্বিতীয় দিন ওয়াশিংটনে এক ‘প্রেয়ার’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এটা এখানকার একটা প্রথা। বিভিন্ন ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তি সেখানে কথা বলেন। প্রেসিডেন্ট মনোযোগ দিয়ে তা শোনেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। একজন খ্রিস্টান মহিলা বক্তা প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই দেশে অবৈধ সব নাগরিকরাই ক্রিমিনাল নয়। দয়া করে প্রেসিডেন্ট যেন বিষয়টা বিবেচনা করেন।
বিশেষ করে বাচ্চাদেরকে তাদের পিতা-মাতা থেকে যেন বিচ্ছিন্ন করা না হয়। এটা অমানবিক হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তখন অবজ্ঞার সাথে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেন। এতেও বোঝা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিন্তা ও মানসিকতায় এই দেশে ইমিগ্র্যান্ট নাগরিকদের প্রতি তারা বৈধ হোক বা অবৈধ। ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি প্রচন্ড রকম এক রোখা ঘৃণা প্রসূত। গড়পড়তা কথিত ‘আমেরিকানদের’ দৃষ্টিভঙ্গি ও তাই।
শিক্ষা, প্রযুক্তি, চিকিৎসা। এর কোন দিকে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আছে বিদেশীদের ছাড়া?
সরকারি খরচ কমানোর জন্য, দীর্ঘদিনের সরকারি চাকরি এবং চাকরির সুযোগ হঠাৎ করে পরিবর্তন করতে গেলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা এবং রাষ্ট্রীয় শৃংখলা ব্যাহত হতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর এক কলমের খোঁচায় সবকিছু রাতারাতি পরিবর্তন করে দিবেন। এই স্বপ্ন তাঁর সফল হবে কি!
যুক্তরাষ্ট্র এ যাবত তার সর্বোচ্চ শক্তির জায়গা ধরে রাখে তার অর্থনৈতিক শক্তি দিয়ে। কিন্তু সম্প্রতি আমেরিকান অর্থনীতির এক অধ্যাপক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইকোনামিক এম্পায়ারশীপ ইজ নাউ অলমোস্ট ওভার’। এই জায়গা এখন দখল করে নিয়েছে চায়না বহুদিন থেকেই। সেই চায়নার সাথে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক লড়াইয়ে কখনোই জিতবার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো সামরিক দিক থেকে শ্রেষ্ঠ। সেই অর্থে যদি নিকট ভবিষ্যতে ডোনাল্ড ট্রাম্প, চায়নার সাথে কোন রকম সামরিক যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে চায়। সেই ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক কনভেনশনাল ‘তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ’ সংঘটিত হবে। এতে চায়নার ক্ষতি হবে অনেক কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্য সাগরে তলিয়ে যাবে। যাক, এটা ভবিষ্যতের কথা। প্রথম ১০০ দিনের না।
প্রথম ১০০ দিনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইউক্রেন ভার্সেস রাশিয়া। ইসরাইল বনাম গাজা নিয়েও ট্রাম্পের যে মানসিকতা, ইচ্ছা এবং কার্যকর ভূমিকা দেখিয়েছেন সেটাও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যেমন কল্যাণকর হবে না একইভাবে বিশ্ববাসীর জন্য না। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং ইসরাইল ও গাজায় বিদ্যমান যুদ্ধকে বন্ধ করে দিবেন বলে ঘোষণাও দেন। কিন্তু সেটা তিনি করতে পারেন নি। এটাই বাস্তবতা। চেষ্টা করেছিলেন এবং এখনো করছেন হুমকি, ধমকি দিয়ে।
গাজাকে তিনি বিলাসবহুল এক রিসোর্টে রূপান্তর করতে চান। এখানে দখল থাকবে সম্পূর্ণভাবে যুক্তরাষ্ট্রের। এটাও যে সম্ভব না, ইতিমধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প সেটাও অনুধাবন করতে পারছেন। একইভাবে ইউক্রেনের একটা অংশকে যুক্তরাষ্ট্রের অধীনস্থ করে ‘মার্কিন আধিপত্য’ বজায় রাখার চেষ্টা করেন। সেখানে রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের কোন যুদ্ধ বিরোতি তিনি করতে পারেন নি। প্রতিবেশী কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫২ তম রাষ্ট্র হবার আহবানেও অসম্মানিত হন বিগত ১০০দিনে। ‘গ্রিনল্যান্ড’ দখল করতেও পারেন নি। চেষ্টাও করেছেন অনেক বিগত ১০০ দিনে।
তবে একটা কথা থেকে যায়, বর্তমান প্রেসিডেন্টের চার বছরের শাসনামল বলতে, ৩৬৫ী৪=১৪৬০ দিন, মাইনাস, মাত্র ১০০ দিন! এখনো বাকি আছে ১৩৬০ দিন। এর মধ্যে আরও অনেক মন্দ কিছু ঘটার সম্ভাবনা আছে। তাই ১০০ দিনকে খুব বেশি ‘হাইলাইট’ না করি। পাঠক, দ্রæত কোন সিদ্ধান্তে আসবেন না প্লিজ।
বাংলাদেশের সাথেও আমেরিকার বিগত ১০০ দিনের সম্পর্কের কথা যদি বলি। দেখতে পারি যে, এখানে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির তেমন কোন পার্থক্য ঘটে নাই। আগে যাই ছিল, তাই আছে। এই ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বের পররাষ্ট্র নীতির কোন পরিবর্তন দৃশ্যতই নাই। ভবিষ্যতে হবে কি-না! বলা যাচ্ছে না। তবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের পণ্যের উপর নতুন শুল্ক আরোপের ব্যাপারটা! এর সমাধান হয়ে যাবে একটা। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র যখন বুঝতে পারবে তার দেশে বাংলাদেশী পণ্যেরও একটা বড় চাহিদা আছে। সেখানে অতিরিক্ত কর আরোপ হলে, এখানকার ভোক্তা ও আমদানি কারকরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ইতিমধ্যে নতুন ‘কর’ আরপ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কিছু সময় চেয়েছেন বিষয়টা যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনার জন্য। তাই এটা নিয়ে একটা ইতিবাচক আশাবাদ কাজ করে।
কিন্তু নিকট ভবিষ্যতে কখনো মধ্যপ্রাচ্যে বা ভারত মহাসাগরের উপকূলে কোন দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ হলে বা চায়নার সাথে! তখন এই অঞ্চলে তার একটা সামরিক ঘাঁটির প্রয়োজন, যুক্তরাষ্ট্র অনুভব করতেও পারে। হয়তোবা তখন বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের চাওয়া পাওয়ার একটা ভিন্ন ম্যাপ তৈরি হতে পারে। তবে আপাতত না।
এক কথায়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় টার্ম (২০২৫-২০২৮) মাঝে চার বছর বাদে, তাঁর প্রথম ১০০ দিনের কার্যকলাপের ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বে একটা নিম্নচাপের সৃষ্টি করেছে। সেখান থেকে বজ্রপাত সহ শিলা বৃষ্টি হবে, না-কি কোন অর্থনৈতিক সুনামি বা নতুন কোন যুদ্ধ বিশ্বকে নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করবে! বুঝতে, একটু অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, প্রতিদিন বিশ্ব বদলাচ্ছে অনিশ্চিত এবং অজানার পথে।
দ্রæত পরিবর্তনশীল বর্তমান সময় এবং বাস্তবতার প্রেক্ষিতে কোন ইতিবাচক বা নেতিবাচক বাস্তবতাকেও ‘দীর্ঘস্থায়ী’ কিছু ভাবতে পারিনা। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিগত ১০০ দিনের প্রধানত নেতিবাচক কাজগুলি আগামীতে কতটা তা টিকবে বাস্তবতায়; বলা কঠিন। কিছুটা বোঝা যাবে, আগামী দুই বছর পর কংগ্রেস এবং সিনেট নির্বাচনের ফলাফল দেখে।
প্রেসিডেন্ট আইসেন হওয়ার তাঁর বিদায়কালে আমেরিকাতে একটা জটিল মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রির প্রভাব দেখতে পেরেছিলেন এর গণতান্ত্রিক বিকাশের পথে অন্তরায় হিসাবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে ইলান মার্কসের মতো কিছু বিলোনিয়ারদের ভূমিকা এবং প্রভাবকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে এর ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হিসাবে। বিগত ১০০ দিনে ডোনাল্ড ট্রাম্প সেটাই অনেকবার প্রমাণ করেছেন। দেখা যাক, ট্রাম্পের আগামী ১৩৬০ দিন কেমন যায়।
পরিশেষে, বিগত কয়েক দিনের বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা দ্রæত নিম্নগামী যা নিকট অতীতের অনেক প্রেসিডেন্ট তাঁদের ১০০ দিনের জনপ্রিয়তা ও প্রেসিডেন্টের ‘জব এপ্রæভালের’ চাইতে দুই অংকের মাইনাসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের টোটাল জব অ্যাপ্রæভাল তাঁর বৈদেশিক নীতি, অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক সফলতা মোটাদাগে ‘এখনই’ ঝুঁকির মুখে। এটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার ব্যবহার ও অপব্যবহারের অপশক্তিতে পরিবর্তন হয় কি-না! ট্রাম্পের সমর্থকরাও নড়েচড়ে বসেন কি-না। বাকি ১৩৬০ দিন বলবে! প্রতীক্ষা সেই সময়ের।

Email: mahmud315@yahoo.com

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১০০ দিন কেমন গেল!

প্রকাশের সময় : ০১:৫৯:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

মাহমুদ রেজা চৌধুরী: ‘দি ওরষ্ট ক্রিমিনাল ইন হিউম্যান হিস্টরি’। ‘মানুষের পৃথিবীতে সবচেয়ে ঘৃণিত অপরাধী’। কথাটা প্রফেসর চমস্কি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবার (২০১৬-২০২০) ক্ষমতা থাকাকালীন তাঁর সম্পর্কে বলেন। বর্তমানে এই অধ্যাপকের বয়স প্রায় ৯৬। এখন কথা বলেন কম বা বলতে পারেন না। প্রফেসর চমস্কি, বিশ্বের সাম্প্রতিক সময়ের একজন অন্যতম পন্ডিত, ভাষা বিজ্ঞানী, সমাজ ও রাষ্ট্র দার্শনিক হিসেবেও বিশ্বে সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব।
প্রফেসর চমস্কির উল্লেখিত দেখা ও মতের সাথে আমরা অনেকে ভিন্ন বা দ্বিমত পোষণ করতেই পারি। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এভারেজ নাগরিকদের শিক্ষা ও অভিরুচির প্রতিনিধিত্ব করেন বহু ক্ষেত্রে। তাঁর ভোটার ও অন্ধ সমর্থকরাও ট্রাম্পের চিন্তার প্রতিনিধিত্ব করেন যেমন। এই রাষ্ট্রের সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস তাই বলে।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাÐ ও সেই পদ্ধতির মধ্যে রাজনীতিতে ও হোয়াইট হাউসে আসেন নি। তবে তিনি এই দেশের অধিকাংশ নাগরিকদের সমর্থনেই পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে জনসমর্থন আছে। আমেরিকান জনগণের একটা বড় অংশ তাঁকে চান ও চেয়ছেন বলেই তো এই দেশের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে মিস্টার ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও নির্বাচিত হন।
উল্লেখ্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী ডেমোক্রের দলের সেক্রেটারী অব ষ্টেট হিলারি ক্লিনটনকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখনও জনগণ তাঁকে চেয়েছে। অতএব, ধরে নিতে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটা জনপ্রিয়তা আছে।
পাশাপাশি এটাও সত্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে যারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, যেমন সিনিয়র জর্জ ডবিøউ বুশ থেকে শুরু করে জুনিয়র বুশ, বারাক ওবামা, জো বাইডেন। এমনকি প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। এঁদের কারোর শাসনামল সেই অর্থে কতটা গণতান্ত্রিক ছিল এবং বিশ্ব শান্তি রক্ষায় তারা কাজ করেছে! তাঁদের কার কি ভূমিকা ছিল সেখানে! এ নিয়েও যথেষ্ট আলোচনার সুযোগ আছে। আলোচনা হয়, প্রেসিডেন্ট রেগানের মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রসারে বিশ্বের অনেক দরিদ্র দেশের উপর যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা অবাধ বাণিজ্যের দুঃশাসন নিয়েও। যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রেসিডেন্টই সমালোচনার ঊর্ধ্বে না।
প্রাসঙ্গিক না হলেও উল্লেখ করতে হয়, পৃথিবীতে গত জানুয়ারী ২০ তারিখের পর বিগত একশত দিনে যা, যা উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে তার মধ্যে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যু, অন্যতম একটা দুঃখজনক ঘটনা। ঘটেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার প্রথম ১০০ দিনে। যদিও এর সাথে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোন সম্পর্ক নেই। এপ্রিল ২১, ২০২৫ তারিখে পৃথিবী থেকে চলে যান এই বর্ষিয়ান মহান মানবিক ধর্মীয় নেতা, পোপ ফ্রান্সিস বার্গোলিও (১৯৩৬-২০২৫)। এর পাশাপাশি, গত ১০০ দিনে জানুয়ারী ২০ তারিখ থেকে, আজকে এপ্রিলের প্রায় শেষ অব্দি ইসরাইল দ্বারা গাজায় নিহতদের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। অর্ধেকের বেশি এর নিষ্পাপ ও নিরাপরাধ শিশু ও নারী। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ক্ষেত্রে কোন মানবিক ভূমিকা রাখতে পারেন নি।
উল্লেখ করা যায়, যুক্তরাষ্ট্র তার অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যতটা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি অনুসরণ করে, বিশ্বের আর কোথাও সেটা সে করে না। ওখানে একটা ‘সাম্রাজ্যবাদী’ দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মসূচি থাকে যুক্তরাষ্ট্রের। যা বাস্তবায়ন করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। যেমন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমায়, ৬ আগস্ট ও নাগাসিকায়, ৯ আগস্ট ১৯৪৫ এ ‘এটম বোমা’ নিক্ষেপ করে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে এই দুই নগর ধ্বংস করা হয়।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের সমালোচনায় যত রকম নেতিবাচক মন্তব্য হয় এবং সমালোচনা, তার চেয়ে বেশ কয়েক গুণ বেশি সমালোচনা হয় ও দেখা যায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপারে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুণী ব্যক্তিত্ব ও প্রফেসর নোয়াম চমস্কির উল্লেখিত মন্তব্য তার এক বড় দৃষ্টান্ত।
এছাড়াও আলোচিত প্রেসিডেন্টের ব্যাপারে সমালোচনার ভাষাগুলো এতো তীব্র কেন! অনেক কারণ আছে এর। প্রধান একটা কারণ, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভেতরে অনেক মানবিক গুণ এবং রাষ্ট্র শাসনের ব্যাপারে গণতান্ত্রিক ‘অ্যাটিচিউড’ নেই বা কম। ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দল বা তেমন কোন প্রক্রিয়ার মধ্যেও ক্ষমতায় আসেন নি। সমর্থন ছিল তাঁর এক সময় ডেমোক্রেটদের প্রতি, পরে সেটা যায় রিপাবলিকান দলের প্রতি। এই ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি কখনো রাজনীতি করলে রিপাবলিকান দলের হয়েই করবেন। কারণ, এই দলকে যা বোঝানো যায় তাই নাকি তারা বোঝে! (সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, ২০০৬)
মাহমুদ রেজা চৌধুরী

মিস্টার ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে একজন সফল এন্টারপ্রেনিয়ার, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে। পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্যি ও অর্থনৈতিক বাজারেও। এইসব ক্ষেত্রে তিনি এভারেজ + তিনি ‘রাষ্ট্র’কে অনেকটা ‘ট্রাম্প টাওয়ার’ কর্পোরেটের মতোই ‘ওয়ান ম্যান শো’ ও একার অর্ডারেই চালাতে চান। এবং এই পরিচালনায় তিনি সবসময় তাঁকে ছাড়া আর কাউকেই গনায় ধরেন না বা গণ্য করেন না। তাঁর ভিতর একটা চরম ঔধ্যত্তপনা, প্রতিপক্ষের ব্যাপারে হিংসাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ অনুসরণ অনুপ্রাণিত করে। যে কোন ব্যাপারেই তিনি কাউন্টার আক্রমণ বেশি পছন্দ করেন, ইনজয় করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এটা।
সহকর্মী এবং সহযোগীদের কাছ থেকেও তাঁর প্রতি অন্য সবার চরম রকম ‘অন্ধ আনুগত্যতা’ চান ডোনাল্ড ট্রাম্পও তিনি তা বজায় রাখেন। এটা তাঁর ব্যক্তিতান্ত্রিক মন মানসিকতার আরেক আদর্শ। তবে স্বীকার করতে হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন সফল ব্যবসায়ী, চকৌস ও কেরিসমেটিক লিডার। ভালো বক্তা, পরিশ্রমী। পাশাপাশি যেকোনো বিষয়ে ভালো কিংবা মন্দ, যাই হোক না কেন। দ্রæত সিদ্ধান্ত নিতে ও দিতে পারেন। এইসব একজন সফল নেতৃত্বের ইতিবাচক কিছু গুণ। অস্বীকার করা যাবে না। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর এই নেতৃত্বশুলভ দক্ষতা ও গুণগুলিকে নেতিবাচক ক্ষেত্রেই ব্যবহার করেন বেশি।
এর এক পা বাইরে গেলে সেটা তিনি সহজ ভাবে নেননা বা দেখেন না। যুক্তরাষ্ট্রের নিকট অতীত ইতিহাসে বলতে গেলে এইরকম দৃশ্যত ‘আগ্রাসী’ ও ‘এক্সট্রিম’ অসোভন আচরণকারী ও মানসিকতার ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হয়ে ‘হোয়াইট হাউসে’ আসেন নি। ইতিহাস অধ্যয়ন করলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ অধিবাসী মূলত বর্ণবাদী, আগ্রাসী, চরম ব্যক্তিতান্ত্রিক ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক; তাদের টোটাল আচার-আচরণের সংস্কৃতিতে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামাজিক ও রাজনৈতিক আচার-আচরণেও এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট (৩২ তম) ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট (১৯৩৩-১৯৪৫) প্রথম তিনবার প্রেসিডেন্ট থাকার প্রায় শত বছরের কাছাকাছি পরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মাঝে চার বছর বিরতির পর (২০২০-২০২৪) দ্বিতীয়বার এই দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। অনেকের মতে, তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করেন, প্রেসিডেন্ট ডি রুজভেল্টের মতো আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকবেন! বা আরও এক টার্ম থাকতে চাচ্ছেন! ব্যক্তিগতভাবেও অনেক জায়গায় তিনি এইরকম ইচ্ছার কথাও প্রকাশ করেন বলে শোনা যায়। দেখা যাক, কি হয়!
আপাতত দেশে একটা বড় যুদ্ধের ঘটনা ছাড়া এই সম্ভাবনা ক্ষীন বলে মনে হয়। যেমন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘটার কারণেই তৃতীয় টার্ম প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম চেষ্টা করতে পারেন তেমন একটা কিছু ঘটাবার! এই ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য বা ইরান কিংবা চায়নার সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ বাধায় কি-না! বলা কঠিন। এমন কিছু হলে সেটা সারা বিশ্বেই ‘সামরিক সুনামি’ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের ‘প্রথম একশত দিন’। এই ¯েøাগান ও প্রচারণার ব্যাপারটা সম্ভবত শুরু হয়, প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট, তাঁর সময় থেকে। প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন ১৯৩২-৩৩ সালে তখন বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে এক মহামন্দা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা চলছিল। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর রুজভেল্ট রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং সেইগুলোকে বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করেন। সংক্ষেপে তখন থেকেই প্রেসিডেন্টের ‘প্রথম একশত দিনের’ কার্যকলাপ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়। সেই ধারাবাহিকতা চলছে এখনো। এটা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রথম ১০০ দিনের পিছনের ইতিহাস।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই প্রথা অনুযায়ী মাঝের চার বছর (২০১৬-২০২০) বাদে, দ্বিতীয়বার ক্ষমতা গ্রহণের পর তাঁর প্রথম একশত দিন কেমন গেল! এই নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা এবং অনেকের আগ্রহ আছে সেটা জানার। কনভেনশনাল মিডিয়াতেও আলোচনা হয় ও হচ্ছে। কিন্তু নন কনভেনশনাল মিডিয়াতে এই নিয়ে কি আলোচনা হয়! সেটা অবশ্য আমরা অধিকাংশ মানুষ জানতে পারি না। আমেরিকান মিডিয়াতেও সেই আলোচনা হয় না। ইউরোপের অনেক দেশের মতো আমেরিকান মিডিয়াও বহু ক্ষেত্রেই কনসারভেটিভ বা দক্ষিণ মুখী রক্ষণশীল মিডিয়া হিসেবে সুপরিচিত। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বন্ধু রাষ্ট্র ইসরাইল, তাদের প্রধানতম দৈনিক
‘দি টাইমস অফ ইসরাইল’, ‘জেরুজালেম পোস্ট’ বা ‘ডেইলি হারটেজ’ পত্রিকাতেও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে যেসব আলোচনা প্রতিদিন হয়, সেইগুলো কিন্তু আমরা দেখি না, বা পড়তেও পারি না। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম মিডিয়া, ‘আল জাজিরা’, চায়নার মিডিয়া ‘চায়না ন্যাশনাল ব্রডকাস্ট’- এইসব মিডিয়ার কোন আলোচনাও আমরা শুনি না।
যুক্তরাষ্ট্রের কোন দৈনিক কাগজে বা এখানকার কোন মিডিয়াতেও তা দেখা যায় না। প্রশ্নটা এই কারণেই আসে, আমরা সেটা মানি বা না মানি। ধরে নেয়া হয়, বর্তমান বিশ্বে এখন পর্যন্ত অর্থনৈতিক এবং সামরিক দিক থেকেও দৃশ্যত শক্তিশালী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র। এর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিশ্ব রাজনীতিতেও আছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির হালচাল, বিশ্ববাসীকে আকর্ষণ কওে, প্রভাবিত করে। যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বাইরের রাষ্ট্রের চিন্তাভাবনা বা পত্রপত্রিকার মতামত সার্বিক বিশ্ব জনমতেও একটা ভূমিকা রাখে। অস্বীকার করা যায় না।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় টার্ম
২০২৫-২০ জানুয়ারী যার শুরু, তাঁর প্রথম ১০০ দিন কার্যকাল শেষ ৩০,এপ্রিল, ২০২৫। এই অল্প দিনেই তিনি বহুল আলোচিত, সমালোচিত এবং বিশ্ববাসীর কাছে নিন্দিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারেও তাঁর সমালোচনা ইতিমধ্যে এই অল্প সময়ের ব্যবধানে দেশের অন্যান্য আরো অনেক প্রেসিডেন্টের তুলনায় বেশি। উভয় ক্ষেত্রে তাঁর ইতিবাচক ভূমিকার চাইতে সমালোচিত এবং সাংঘর্ষিক ভূমিকার পরিচয় একাধিক।
এই ভূমিকার প্রধান একটা আকর্ষণ, তাঁর ‘এক্সিকিউটিভ’ ক্ষমতার বলয়, নিজ দেশ এবং বিশ্ববাসীকেও দেখাতে চেয়েছেন, তিনি কত বড় ও শক্তিশালী ব্যক্তি, সারা বিশ্বে। তাঁর এই চিন্তার স্বপক্ষে তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রকে আবার সেরা রাষ্ট্র দেখানোর জন্য’! প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই নিজের কোন ভুল স্বীকার করেন না।
প্রতিদিন নানারকম উদ্ভট এবং আবোল-তাবোল কথা বলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব মিডিয়াকে যেমন উত্তেজিত করেন তেমনি আনন্দ ও হাস্যরসের খোরাক দেন। উদ্দেশ্য, তিনি সবসময়-ই লাইট, ক্যামেরা ও অ্যাকশন- এই তিনের অগ্রভাগে নিজেকে রাখতে চান ও রাখেন। ট্রাম্প যখন ক্ষমতায় ছিলেন না (২০২০-২০২৪) তখনও তিনি ছিলেন লাইট, ক্যামেরা ও অ্যাকশনের অগ্রভাগে। তাঁর প্রথম একশত দিনেও এই কাজটাই তিনি বেশি করেছেন। এর কয়েকটা যেমন:
১) যুক্তরাষ্ট্রে আগত বৈদেশিক সব পণ্যের উপর শুল্কবৃদ্ধির ঘোষণা দেন হোয়াইট হাউজ লনে আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান করে।
২) ফেডারেল জব সংক্রান্ত বিষয়ে কঠোর নীতি অবলম্বন। অনেক ফেডারেল প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা, কর্মচারীদের বরখাস্ত করা ও বেকার অবস্থায় ফেলেন আনুষ্ঠানিক এক্সিকিউটিভ অর্ডার সাইন করে।
৩) বিচার বিভাগ তাঁর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন রাখেন বিচার বিভাগ এবং বিচারপতিদের নানা রকম ভয় দেখিয়ে।
৪) বিচারপ্রাপ্ত অনেক আসামিদের ক্ষমাপ্রদর্শন। ৬ জানুয়ারী, ২০২১ এ যারা তখন নির্বাচনে পরাজিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাখতে তাঁর সমর্থকদের একাংশ ক্যাপিটাল হিলে যে তান্ডব ও সহিংসতা করে। ক্ষমতায় এসে সবার আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই সাজাপ্রাপ্ত প্রায় কয়েকশো অপরাধীদের ক্ষমা করে মুক্তি দেন। ৬ জানুয়ারীর পুরো ঘটনাটিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিহাস থেকেই মুছে দিতে চাচ্ছেন।
৫) শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন।
৬) সিনিয়র নাগরিকদের সরকারি ভাতা প্রদানে কঠোরতা অবলম্বন।
৭) রাশিয়া ইউক্রেন এবং ইসরাইল ও প্যালেস্টাইন এবং গাজায় ইসরাইলী আধিপত্য এবং মার্কিন আধিপত্য বজায়। এই ব্যাপারে হোয়াইট হাউসে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভøদিমির জেলেনসকি (১৯৭৮) তাঁকে ডেকে তাঁর সাথেও ‘অন ক্যামেরা’ দুর্ব্যবহার করেন এবং হুমকি দেন।
৮) আভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা। বাজার দরের ঊর্ধ্বগতি অনিয়ন্ত্রিত।
৯) ইমিগ্রেশন নীতির কঠিন পরিবর্তন।
১০) শিক্ষার্থীদের উপর নানান নিষেধাজ্ঞা। বিশেষ করে ফরেন স্টুডেন্টদের উপর।
১১) চরম বিতর্কিত এবং চরম রক্ষণশীল কিছু ব্যক্তিদের তাঁর উপদেষ্টা এবং কিছু সরকারি সংস্থার প্রধান নিয়োগ করা।
১২) দীর্ঘদিনের আন্তর্জাতিক মানবিক সংগঠন ‘ইউ এস এইড’ চট করে বন্ধ করে দেয়া! আরো অসংখ্য একক নির্দেশ এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর গেল তিন মাস দশ দিনের শাসন কালে।
বিগত ১০০ দিনে প্রেসেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
সর্বমোট প্রায় ১৩৭ টি ‘এক্সকিউটিভ অর্ডার”’ স্বাক্ষর করেন। ইতিহাসে বলা হয়, এটা প্রেসিডেন্ট হেনরি টরুম্যানের চাইতেও বেশি। এছাড়াও আছে প্রেসিডেনশিয়াল আরো কিছু অধ্যাদেশ। এককথায় যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বত্র একক অধিপত্য ও ক্ষমতাকে সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবং আদর্শে করা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিগত ১০০ দিনের ক্ষমতায় যেসব পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন, অধিকাংশই এক্সট্রিম এবং নেগেটিভ পদক্ষেপ যা যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো ও প্রশাসনের বিপরীত। তিনি উল্লেখিত কাজগুলো করবার নির্বাচন পূর্ব প্রতিশ্রæতি দিয়েই ক্ষমতায় এসেছেন, অস্বীকার করা যাবে না।
উল্লেখিত কয়েকটি পদক্ষেপের আলোচনা যদি করা হয়, খুব সংক্ষেপে বলা যায়, যেমন আমেরিকাতে যেসব দ্রব্য আমদানি হয়ে আসে তার উপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কর বা শুল্কের ব্যাপার। বিশদ আলোচনার প্রয়োজন নেই। যুক্তরাষ্ট্র প্রধানত একটা ‘আমদানি’ নির্ভর দেশ। যুক্তরাষ্ট্রে বলতে গেলে প্রায় প্রতিটা জিনিস ‘সুই থেকে শুরু করে ছাতা’, জামাকাপড় থেকে শুরু করে, যন্ত্রের খুচরাংশ, চাল থেকে শুরু করে শ্রমবাজারের শ্রম বাইরের দেশ থেকেই বেশি আসে।
আর বড় অংশ আসে চায়না থেকে। অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাকে বলেন! নিউইর্কে তাঁর বিশাল দালান ‘ট্রাম্প টাওয়ার’ নির্মিত হয় অধিকাংশ পরদেশী শ্রমিকদের দ্বারা। এদের মধ্যে মেক্সিকান, চাইনিজ, এশিয়ান। এই সংখ্যাটাই বেশি ছিল। এদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ কাগজপত্রের বাইরের অধিবাসী। গ্রেট এমেরিকা মূলত গ্রেট ইমিগ্রেন্টদের দ্বারাই বিনির্মিত।
চায়নার সাথেও অর্থনৈতিক মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র কখনোই পেরে উঠবে না। সামরিক দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র শক্তিশালী হলেও অর্থনৈতিক দিকে চায়নার সাথে যুক্তরাষ্ট্র অনেক পেছনে আছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রে চায়নার উপর তার নতুন কর আরোপ কার্যকর হবে না। ইতিমধ্যে তার নমুনাও দেখা গেছে। এই বিষয়টাকে যুক্তরাষ্ট্র এখন ৯০ দিন পেছানোর কথা বলছে। ট্রাম্প চাচ্ছেন, যে সব দেশের উপর তিনি অধিক শুল্ক চাপিয়েছেন, তারা সবাই তাঁর কাছে এসে তাঁর কথামতো, তাঁর ‘পশ্চাতে চুমু’ দিয়ে সেই শুল্ক কমাতে বলবেন!!
যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন নীতিতে যাদেরকে অবৈধ নাগরিক বলা হচ্ছে। এই ব্যাপারে ট্রাম্পের কঠোর নীতি কতটা কার্যকর হবে তাও বলা কঠিন। কারণ, এখানে একটা বড় সংখ্যার শ্রমিক ও কর্মজীবীদের ভূমিকা আছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে। গায়ের জোড়ে কোন পরিবর্তন সহজ হবে কি! কোন দেশেই চায় না তার দেশে অবৈধ কোন নাগরিক বসবাস করুক। এই ব্যাপারে ইতিহাসের একটা বিষয় দেখার আছে। যুক্তরাষ্ট্র-তো আসলেই একটা ইমিগ্র্যান্ট রাষ্ট্র। এইদেশে কেউ আগে এসছেন কেউবা পরে। এই পার্থক্য। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্প! তাঁর ‘এবরোঅরিজিন’ বলতে আদিপুরুষ পশ্চিম ইউরোপের।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৫ এ হোয়াইট হাউসে প্রবেশের দ্বিতীয় দিন ওয়াশিংটনে এক ‘প্রেয়ার’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এটা এখানকার একটা প্রথা। বিভিন্ন ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তি সেখানে কথা বলেন। প্রেসিডেন্ট মনোযোগ দিয়ে তা শোনেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। একজন খ্রিস্টান মহিলা বক্তা প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই দেশে অবৈধ সব নাগরিকরাই ক্রিমিনাল নয়। দয়া করে প্রেসিডেন্ট যেন বিষয়টা বিবেচনা করেন।
বিশেষ করে বাচ্চাদেরকে তাদের পিতা-মাতা থেকে যেন বিচ্ছিন্ন করা না হয়। এটা অমানবিক হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তখন অবজ্ঞার সাথে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেন। এতেও বোঝা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিন্তা ও মানসিকতায় এই দেশে ইমিগ্র্যান্ট নাগরিকদের প্রতি তারা বৈধ হোক বা অবৈধ। ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি প্রচন্ড রকম এক রোখা ঘৃণা প্রসূত। গড়পড়তা কথিত ‘আমেরিকানদের’ দৃষ্টিভঙ্গি ও তাই।
শিক্ষা, প্রযুক্তি, চিকিৎসা। এর কোন দিকে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আছে বিদেশীদের ছাড়া?
সরকারি খরচ কমানোর জন্য, দীর্ঘদিনের সরকারি চাকরি এবং চাকরির সুযোগ হঠাৎ করে পরিবর্তন করতে গেলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা এবং রাষ্ট্রীয় শৃংখলা ব্যাহত হতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর এক কলমের খোঁচায় সবকিছু রাতারাতি পরিবর্তন করে দিবেন। এই স্বপ্ন তাঁর সফল হবে কি!
যুক্তরাষ্ট্র এ যাবত তার সর্বোচ্চ শক্তির জায়গা ধরে রাখে তার অর্থনৈতিক শক্তি দিয়ে। কিন্তু সম্প্রতি আমেরিকান অর্থনীতির এক অধ্যাপক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইকোনামিক এম্পায়ারশীপ ইজ নাউ অলমোস্ট ওভার’। এই জায়গা এখন দখল করে নিয়েছে চায়না বহুদিন থেকেই। সেই চায়নার সাথে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক লড়াইয়ে কখনোই জিতবার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো সামরিক দিক থেকে শ্রেষ্ঠ। সেই অর্থে যদি নিকট ভবিষ্যতে ডোনাল্ড ট্রাম্প, চায়নার সাথে কোন রকম সামরিক যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে চায়। সেই ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক কনভেনশনাল ‘তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ’ সংঘটিত হবে। এতে চায়নার ক্ষতি হবে অনেক কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্য সাগরে তলিয়ে যাবে। যাক, এটা ভবিষ্যতের কথা। প্রথম ১০০ দিনের না।
প্রথম ১০০ দিনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইউক্রেন ভার্সেস রাশিয়া। ইসরাইল বনাম গাজা নিয়েও ট্রাম্পের যে মানসিকতা, ইচ্ছা এবং কার্যকর ভূমিকা দেখিয়েছেন সেটাও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যেমন কল্যাণকর হবে না একইভাবে বিশ্ববাসীর জন্য না। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং ইসরাইল ও গাজায় বিদ্যমান যুদ্ধকে বন্ধ করে দিবেন বলে ঘোষণাও দেন। কিন্তু সেটা তিনি করতে পারেন নি। এটাই বাস্তবতা। চেষ্টা করেছিলেন এবং এখনো করছেন হুমকি, ধমকি দিয়ে।
গাজাকে তিনি বিলাসবহুল এক রিসোর্টে রূপান্তর করতে চান। এখানে দখল থাকবে সম্পূর্ণভাবে যুক্তরাষ্ট্রের। এটাও যে সম্ভব না, ইতিমধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প সেটাও অনুধাবন করতে পারছেন। একইভাবে ইউক্রেনের একটা অংশকে যুক্তরাষ্ট্রের অধীনস্থ করে ‘মার্কিন আধিপত্য’ বজায় রাখার চেষ্টা করেন। সেখানে রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের কোন যুদ্ধ বিরোতি তিনি করতে পারেন নি। প্রতিবেশী কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫২ তম রাষ্ট্র হবার আহবানেও অসম্মানিত হন বিগত ১০০দিনে। ‘গ্রিনল্যান্ড’ দখল করতেও পারেন নি। চেষ্টাও করেছেন অনেক বিগত ১০০ দিনে।
তবে একটা কথা থেকে যায়, বর্তমান প্রেসিডেন্টের চার বছরের শাসনামল বলতে, ৩৬৫ী৪=১৪৬০ দিন, মাইনাস, মাত্র ১০০ দিন! এখনো বাকি আছে ১৩৬০ দিন। এর মধ্যে আরও অনেক মন্দ কিছু ঘটার সম্ভাবনা আছে। তাই ১০০ দিনকে খুব বেশি ‘হাইলাইট’ না করি। পাঠক, দ্রæত কোন সিদ্ধান্তে আসবেন না প্লিজ।
বাংলাদেশের সাথেও আমেরিকার বিগত ১০০ দিনের সম্পর্কের কথা যদি বলি। দেখতে পারি যে, এখানে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির তেমন কোন পার্থক্য ঘটে নাই। আগে যাই ছিল, তাই আছে। এই ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বের পররাষ্ট্র নীতির কোন পরিবর্তন দৃশ্যতই নাই। ভবিষ্যতে হবে কি-না! বলা যাচ্ছে না। তবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের পণ্যের উপর নতুন শুল্ক আরোপের ব্যাপারটা! এর সমাধান হয়ে যাবে একটা। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র যখন বুঝতে পারবে তার দেশে বাংলাদেশী পণ্যেরও একটা বড় চাহিদা আছে। সেখানে অতিরিক্ত কর আরোপ হলে, এখানকার ভোক্তা ও আমদানি কারকরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ইতিমধ্যে নতুন ‘কর’ আরপ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কিছু সময় চেয়েছেন বিষয়টা যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনার জন্য। তাই এটা নিয়ে একটা ইতিবাচক আশাবাদ কাজ করে।
কিন্তু নিকট ভবিষ্যতে কখনো মধ্যপ্রাচ্যে বা ভারত মহাসাগরের উপকূলে কোন দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ হলে বা চায়নার সাথে! তখন এই অঞ্চলে তার একটা সামরিক ঘাঁটির প্রয়োজন, যুক্তরাষ্ট্র অনুভব করতেও পারে। হয়তোবা তখন বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের চাওয়া পাওয়ার একটা ভিন্ন ম্যাপ তৈরি হতে পারে। তবে আপাতত না।
এক কথায়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় টার্ম (২০২৫-২০২৮) মাঝে চার বছর বাদে, তাঁর প্রথম ১০০ দিনের কার্যকলাপের ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বে একটা নিম্নচাপের সৃষ্টি করেছে। সেখান থেকে বজ্রপাত সহ শিলা বৃষ্টি হবে, না-কি কোন অর্থনৈতিক সুনামি বা নতুন কোন যুদ্ধ বিশ্বকে নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করবে! বুঝতে, একটু অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, প্রতিদিন বিশ্ব বদলাচ্ছে অনিশ্চিত এবং অজানার পথে।
দ্রæত পরিবর্তনশীল বর্তমান সময় এবং বাস্তবতার প্রেক্ষিতে কোন ইতিবাচক বা নেতিবাচক বাস্তবতাকেও ‘দীর্ঘস্থায়ী’ কিছু ভাবতে পারিনা। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিগত ১০০ দিনের প্রধানত নেতিবাচক কাজগুলি আগামীতে কতটা তা টিকবে বাস্তবতায়; বলা কঠিন। কিছুটা বোঝা যাবে, আগামী দুই বছর পর কংগ্রেস এবং সিনেট নির্বাচনের ফলাফল দেখে।
প্রেসিডেন্ট আইসেন হওয়ার তাঁর বিদায়কালে আমেরিকাতে একটা জটিল মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রির প্রভাব দেখতে পেরেছিলেন এর গণতান্ত্রিক বিকাশের পথে অন্তরায় হিসাবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে ইলান মার্কসের মতো কিছু বিলোনিয়ারদের ভূমিকা এবং প্রভাবকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে এর ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হিসাবে। বিগত ১০০ দিনে ডোনাল্ড ট্রাম্প সেটাই অনেকবার প্রমাণ করেছেন। দেখা যাক, ট্রাম্পের আগামী ১৩৬০ দিন কেমন যায়।
পরিশেষে, বিগত কয়েক দিনের বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা দ্রæত নিম্নগামী যা নিকট অতীতের অনেক প্রেসিডেন্ট তাঁদের ১০০ দিনের জনপ্রিয়তা ও প্রেসিডেন্টের ‘জব এপ্রæভালের’ চাইতে দুই অংকের মাইনাসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের টোটাল জব অ্যাপ্রæভাল তাঁর বৈদেশিক নীতি, অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক সফলতা মোটাদাগে ‘এখনই’ ঝুঁকির মুখে। এটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার ব্যবহার ও অপব্যবহারের অপশক্তিতে পরিবর্তন হয় কি-না! ট্রাম্পের সমর্থকরাও নড়েচড়ে বসেন কি-না। বাকি ১৩৬০ দিন বলবে! প্রতীক্ষা সেই সময়ের।

Email: mahmud315@yahoo.com