নিউইয়র্ক ০৬:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ঝুঁকি না নিয়ে নতুন কিছু করা যায় না

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:২৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
  • / ৪৭ বার পঠিত

টাইটানিক, টার্মিনেটর ও অ্যাভাটারের মতো দুনিয়াজুড়ে আলোড়ন তোলা চলচ্চিত্রের পরিচালক জেমস ক্যামেরন। পেয়েছেন অস্কার, গোল্ডেন গ্লোবসসহ অসংখ্য পুরস্কার। তার জন্ম ১৯৫৪ সালে কানাডার অন্টারিওর একটি গ্রামে। তিনি নাসা উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য। একবার যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড সম্মেলনে তরুণদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন জেমস ক্যামেরন। সেই বক্তব্যের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো।

যখন অ্যাভাটার নির্মাণে হাত দিলাম, সেখানে নেতৃত্বের কিছু নীতি কাজে লাগানোর চেষ্টা করলাম। যেমন- তুমি যদি তোমার দলের সদস্যদের শ্রদ্ধা করো, তবেই তারা তোমাকে শ্রদ্ধা করবে। এর ফলাফল ছিল অবিশ্বাস্য। প্রামাণ্যচিত্রের মতো এখানেও আমাদের দলটা ছিল খুব ছোট, আর আমরা যা করতে চাইছিলাম তার জন্য দরকারি প্রযুক্তিও হাতের কাছে ছিল না। নিজেদের তাগিদেই আমাদের প্রযুক্তি তৈরি করে নিতে হয়েছিল। দারুণ রোমাঞ্চকর, দারুণ চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ। আর সাড়ে চার বছর ধরে একসঙ্গে সেসব করতে গিয়ে আমরা একটি পরিবারে পরিণত হয়েছিলাম। দলের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া শ্রদ্ধা ও সম্মান পৃথিবীর সব পুরস্কারকে হার মানায়। আমার কাছে অনেক তরুণ নির্মাতা উপদেশ চাইতে আসেন। আমি তাদের বলি, ‘নিজের সামর্থ্যরে ওপর আস্থা রাখো। ঝুঁকি নিতে দ্বিধা কোরো না।’

নাসায় একটি কথা প্রচলিত আছে যে এখানে ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই। তবে শিল্পকলা আর অভিযানের ক্ষেত্রে ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করে শেখাটা জরুরি। কারণ এখানে বিশ্বাস করে অনেক বড় বড় ঝুঁকি নিতে হয়। ঝুঁকি না নিয়ে নতুন কিছু তৈরি করা যায় না। তাই আমার শেষ কথা হলো, ব্যর্থতাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কিন্তু ঝুঁকি নিতে ইতস্তত করলে চলবে না। ব্যর্থ হলে হতে পারো, কিন্তু কখনো কোনো কাজকে ভয় পেয়ো না।

ছোটবেলায় আমি ছিলাম সায়েন্স ফিকশনের ভক্ত আর এখন আমি যা করি তা সত্যিকারের বিজ্ঞানচর্চা। কল্পনার পৃথিবী থেকে বাস্তবের পৃথিবীকে জানার এই যাত্রায় আমি অনেক কিছু শিখেছি। বিজ্ঞান তো শিখতে হয়েছেই, সঙ্গে সঙ্গে শিখতে হয়েছে কীভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়। অনেকে হয়তো মনে করবে, এ আর এমন কি। একজন পরিচালককে তো নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেই হবে। কিন্তু ব্যাপারটি এত সহজ নয়। চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে গিয়ে আমি নেতৃত্ব দিতে শিখিনি, শিখেছি প্রামাণ্যচিত্র বানাতে গিয়ে। সেগুলোর দর্শক খুবই সীমিত। আহামরি খ্যাতি, গৌরব, পরিচিতি কিছুই নেই। আর্থিকভাবেও লাভজনক হওয়া তো দূরের কথা, খরচ তুলে আনতেই কষ্ট হয়। এমন অবস্থায় নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম, ‘এসব কী করছি? কেন করছি? কী পাওয়ার জন্য করছি?’ আসলে কাজগুলো ছিল চ্যালেঞ্জিং, সফলভাবে সেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়াটাই আমাকে অনুপ্রাণিত করত।

‘ছোটবেলা কেটেছে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি পড়ে। হাই স্কুলে পড়ার সময় প্রতিদিন বাসে স্কুলে যেতে-আসতে আমার দুই ঘণ্টা লাগত। পুরো সময়টা আমি সায়েন্স ফিকশনের বিভিন্ন বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে কাটিয়ে দিতাম, এ যেন এক অন্য জগতে হারিয়ে যাওয়া। স্কুলের সময়ের বাইরে বাকি সবটুকু সময় আমার কাটত জঙ্গলে ঘুরে। ব্যাঙ, সাপ, পোকামাকড় এমনকি পুকুরের পানি, সবকিছুর একটু করে নমুনা বাড়িতে নিয়ে এসে আমি অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রেখে দেখার চেষ্টা করতাম। একদম খুদে বিজ্ঞানী বলতে যা বোঝায়, আমি ঠিক তাই ছিলাম। আমি পৃথিবীকে বুঝতে চাইতাম, দেখতে চাইতাম সম্ভাবনার সীমা কোথায়।’ সূত্র : সাম্প্রতিক দেশকাল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

ঝুঁকি না নিয়ে নতুন কিছু করা যায় না

প্রকাশের সময় : ০৩:২৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

টাইটানিক, টার্মিনেটর ও অ্যাভাটারের মতো দুনিয়াজুড়ে আলোড়ন তোলা চলচ্চিত্রের পরিচালক জেমস ক্যামেরন। পেয়েছেন অস্কার, গোল্ডেন গ্লোবসসহ অসংখ্য পুরস্কার। তার জন্ম ১৯৫৪ সালে কানাডার অন্টারিওর একটি গ্রামে। তিনি নাসা উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য। একবার যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড সম্মেলনে তরুণদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন জেমস ক্যামেরন। সেই বক্তব্যের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো।

যখন অ্যাভাটার নির্মাণে হাত দিলাম, সেখানে নেতৃত্বের কিছু নীতি কাজে লাগানোর চেষ্টা করলাম। যেমন- তুমি যদি তোমার দলের সদস্যদের শ্রদ্ধা করো, তবেই তারা তোমাকে শ্রদ্ধা করবে। এর ফলাফল ছিল অবিশ্বাস্য। প্রামাণ্যচিত্রের মতো এখানেও আমাদের দলটা ছিল খুব ছোট, আর আমরা যা করতে চাইছিলাম তার জন্য দরকারি প্রযুক্তিও হাতের কাছে ছিল না। নিজেদের তাগিদেই আমাদের প্রযুক্তি তৈরি করে নিতে হয়েছিল। দারুণ রোমাঞ্চকর, দারুণ চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ। আর সাড়ে চার বছর ধরে একসঙ্গে সেসব করতে গিয়ে আমরা একটি পরিবারে পরিণত হয়েছিলাম। দলের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া শ্রদ্ধা ও সম্মান পৃথিবীর সব পুরস্কারকে হার মানায়। আমার কাছে অনেক তরুণ নির্মাতা উপদেশ চাইতে আসেন। আমি তাদের বলি, ‘নিজের সামর্থ্যরে ওপর আস্থা রাখো। ঝুঁকি নিতে দ্বিধা কোরো না।’

নাসায় একটি কথা প্রচলিত আছে যে এখানে ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই। তবে শিল্পকলা আর অভিযানের ক্ষেত্রে ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করে শেখাটা জরুরি। কারণ এখানে বিশ্বাস করে অনেক বড় বড় ঝুঁকি নিতে হয়। ঝুঁকি না নিয়ে নতুন কিছু তৈরি করা যায় না। তাই আমার শেষ কথা হলো, ব্যর্থতাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কিন্তু ঝুঁকি নিতে ইতস্তত করলে চলবে না। ব্যর্থ হলে হতে পারো, কিন্তু কখনো কোনো কাজকে ভয় পেয়ো না।

ছোটবেলায় আমি ছিলাম সায়েন্স ফিকশনের ভক্ত আর এখন আমি যা করি তা সত্যিকারের বিজ্ঞানচর্চা। কল্পনার পৃথিবী থেকে বাস্তবের পৃথিবীকে জানার এই যাত্রায় আমি অনেক কিছু শিখেছি। বিজ্ঞান তো শিখতে হয়েছেই, সঙ্গে সঙ্গে শিখতে হয়েছে কীভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়। অনেকে হয়তো মনে করবে, এ আর এমন কি। একজন পরিচালককে তো নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেই হবে। কিন্তু ব্যাপারটি এত সহজ নয়। চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে গিয়ে আমি নেতৃত্ব দিতে শিখিনি, শিখেছি প্রামাণ্যচিত্র বানাতে গিয়ে। সেগুলোর দর্শক খুবই সীমিত। আহামরি খ্যাতি, গৌরব, পরিচিতি কিছুই নেই। আর্থিকভাবেও লাভজনক হওয়া তো দূরের কথা, খরচ তুলে আনতেই কষ্ট হয়। এমন অবস্থায় নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম, ‘এসব কী করছি? কেন করছি? কী পাওয়ার জন্য করছি?’ আসলে কাজগুলো ছিল চ্যালেঞ্জিং, সফলভাবে সেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়াটাই আমাকে অনুপ্রাণিত করত।

‘ছোটবেলা কেটেছে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি পড়ে। হাই স্কুলে পড়ার সময় প্রতিদিন বাসে স্কুলে যেতে-আসতে আমার দুই ঘণ্টা লাগত। পুরো সময়টা আমি সায়েন্স ফিকশনের বিভিন্ন বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে কাটিয়ে দিতাম, এ যেন এক অন্য জগতে হারিয়ে যাওয়া। স্কুলের সময়ের বাইরে বাকি সবটুকু সময় আমার কাটত জঙ্গলে ঘুরে। ব্যাঙ, সাপ, পোকামাকড় এমনকি পুকুরের পানি, সবকিছুর একটু করে নমুনা বাড়িতে নিয়ে এসে আমি অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রেখে দেখার চেষ্টা করতাম। একদম খুদে বিজ্ঞানী বলতে যা বোঝায়, আমি ঠিক তাই ছিলাম। আমি পৃথিবীকে বুঝতে চাইতাম, দেখতে চাইতাম সম্ভাবনার সীমা কোথায়।’ সূত্র : সাম্প্রতিক দেশকাল।