নিউইয়র্ক ০৬:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ন্যাটো কি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া টিকে থাকতে পারবে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:২৭:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫
  • / ৪৩ বার পঠিত

ইউরোপ একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হচ্ছে। কারণ ন্যাটোর মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে। প্রায় ৮০ বছর ধরে জোটটি মহাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে। তবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক অগ্রাধিকার, ব্যয় ভাগাভাগির দাবি ও আমেরিকার অভ্যন্তরীণ বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাবের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

ইউরোপীয় দেশগুলো বর্তমানে আরো আত্মনির্ভরশীল হওয়ার কথা ভাবছে, সামরিক বিনিয়োগ বাড়িয়েছে ও বিকল্প নিরাপত্তা কৌশল খুঁজছে। কারণ ঐতিহ্যগত ট্রান্সআটলান্টিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা আর আগের মতো নির্ভরযোগ্য নাও থাকতে পারে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি বিরূপ মনোভাব ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি তার মিত্রসুলভ আচরণ দেখা গেছে। অন্যদিকে ন্যাটো মিত্রদের রক্ষা করার বিষয়ে ‘যদি তারা অর্থ না দেয়’ তবে সাহায্য না করার ইঙ্গিত ইউরোপীয় নেতাদের ভাবতে বাধ্য করছে যে যুক্তরাষ্ট্র এখনো নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা অংশীদার রয়েছে কিনা। কারণ ইউরোপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সংঘাতময় অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ন্যাটো এখনো শক্তিশালী বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। জোটের ৩১টি দেশের সমর্থন এবং এর ১০ লাখের বেশি সেনাসদস্যসহ আধুনিক অস্ত্র রয়েছে। ন্যাটোর পর্যাপ্ত অর্থ ও প্রযুক্তি রয়েছে, যা দিয়ে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়াও নিজেকে রক্ষা করতে পারবে। ন্যাটোর বাজেটে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি প্রায় ১৬ শতাংশ করে অবদান রাখে। আর যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের অবদান যথাক্রমে ১১ শতাংশ ১০ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, প্রয়োজনে ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের অবদানের ঘাটতি পূরণ করতে পারবে।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) ইউরোপের নির্বাহী পরিচালক বেন শ্রিয়ার বলেন, ‘যদি ইউরোপীয় দেশগুলো একত্র হয়ে সঠিক সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করে, তবে তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রচলিত ও পারমাণবিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে। ইউরোপের নিজেকে রক্ষা করার মতো সম্পদ রয়েছে। আসল প্রশ্ন হলো তারা তা করতে প্রস্তুত কিনা। ৭৫ বছরের বেশি সময় ধরে ট্রাম্পসহ ১৪ জন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রই ন্যাটোকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে।

শীতল যুদ্ধের সময় ইউরোপে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্প্রসারণ ঠেকাতে সহায়তা করেছিল। তারা ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীর পতনের আগ পর্যন্ত সেখানে ছিল। ১৯৯০-এর দশকে বলকান অঞ্চলে ন্যাটোর অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও বিমানশক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গত ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রই ইউক্রেনকে সহায়তার নেতৃত্ব দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক দিনগুলোয় সেই কয়েক দশকের ট্রান্স-আটলান্টিক সংহতি হয়তো শেষ হয়ে গেছে।

সাবেক যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ড্যান ফ্রিড বলেন, ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর তিনি ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ করে দেন। শুধু ইউক্রেনের সঙ্গেই নয়, বরং ট্রুমান থেকে রিগ্যান পর্যন্ত চলে আসা আমেরিকার দীর্ঘদিনের ‘মুক্ত বিশ্ব’ নীতির বড় একটি বিচ্ছেদের মতো অনুভূত হয়েছে। সাবেক ন্যাটো কর্মকর্তা জন লফ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন ইউরোপকে মিত্রের চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছে, যা ন্যাটোর প্রতি ওয়াশিংটনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ তৈরি করছে।

কিছু ইউরোপীয় নেতা এমনকি যুক্তরাষ্ট্রকে শত্রু হিসেবে দেখার কথা ভাবছেন। তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ন্যাটো আরো শক্তিশালী হতে পারে। কারণ ইউরোপীয় দেশগুলো তখন নিজেদের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়াবে। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, ‘এ পরিবর্তন এরই মধ্যে শুরু হয়েছে এবং ইউরোপ সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়ার মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী তা এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছে।’ —সিএনএন অবলম্বনে

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

ন্যাটো কি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া টিকে থাকতে পারবে

প্রকাশের সময় : ১১:২৭:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫

ইউরোপ একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হচ্ছে। কারণ ন্যাটোর মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে। প্রায় ৮০ বছর ধরে জোটটি মহাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে। তবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক অগ্রাধিকার, ব্যয় ভাগাভাগির দাবি ও আমেরিকার অভ্যন্তরীণ বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাবের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

ইউরোপীয় দেশগুলো বর্তমানে আরো আত্মনির্ভরশীল হওয়ার কথা ভাবছে, সামরিক বিনিয়োগ বাড়িয়েছে ও বিকল্প নিরাপত্তা কৌশল খুঁজছে। কারণ ঐতিহ্যগত ট্রান্সআটলান্টিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা আর আগের মতো নির্ভরযোগ্য নাও থাকতে পারে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি বিরূপ মনোভাব ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি তার মিত্রসুলভ আচরণ দেখা গেছে। অন্যদিকে ন্যাটো মিত্রদের রক্ষা করার বিষয়ে ‘যদি তারা অর্থ না দেয়’ তবে সাহায্য না করার ইঙ্গিত ইউরোপীয় নেতাদের ভাবতে বাধ্য করছে যে যুক্তরাষ্ট্র এখনো নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা অংশীদার রয়েছে কিনা। কারণ ইউরোপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সংঘাতময় অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ন্যাটো এখনো শক্তিশালী বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। জোটের ৩১টি দেশের সমর্থন এবং এর ১০ লাখের বেশি সেনাসদস্যসহ আধুনিক অস্ত্র রয়েছে। ন্যাটোর পর্যাপ্ত অর্থ ও প্রযুক্তি রয়েছে, যা দিয়ে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়াও নিজেকে রক্ষা করতে পারবে। ন্যাটোর বাজেটে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি প্রায় ১৬ শতাংশ করে অবদান রাখে। আর যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের অবদান যথাক্রমে ১১ শতাংশ ১০ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, প্রয়োজনে ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের অবদানের ঘাটতি পূরণ করতে পারবে।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) ইউরোপের নির্বাহী পরিচালক বেন শ্রিয়ার বলেন, ‘যদি ইউরোপীয় দেশগুলো একত্র হয়ে সঠিক সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করে, তবে তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রচলিত ও পারমাণবিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে। ইউরোপের নিজেকে রক্ষা করার মতো সম্পদ রয়েছে। আসল প্রশ্ন হলো তারা তা করতে প্রস্তুত কিনা। ৭৫ বছরের বেশি সময় ধরে ট্রাম্পসহ ১৪ জন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রই ন্যাটোকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে।

শীতল যুদ্ধের সময় ইউরোপে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্প্রসারণ ঠেকাতে সহায়তা করেছিল। তারা ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীর পতনের আগ পর্যন্ত সেখানে ছিল। ১৯৯০-এর দশকে বলকান অঞ্চলে ন্যাটোর অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও বিমানশক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গত ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রই ইউক্রেনকে সহায়তার নেতৃত্ব দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক দিনগুলোয় সেই কয়েক দশকের ট্রান্স-আটলান্টিক সংহতি হয়তো শেষ হয়ে গেছে।

সাবেক যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ড্যান ফ্রিড বলেন, ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর তিনি ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ করে দেন। শুধু ইউক্রেনের সঙ্গেই নয়, বরং ট্রুমান থেকে রিগ্যান পর্যন্ত চলে আসা আমেরিকার দীর্ঘদিনের ‘মুক্ত বিশ্ব’ নীতির বড় একটি বিচ্ছেদের মতো অনুভূত হয়েছে। সাবেক ন্যাটো কর্মকর্তা জন লফ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন ইউরোপকে মিত্রের চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছে, যা ন্যাটোর প্রতি ওয়াশিংটনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ তৈরি করছে।

কিছু ইউরোপীয় নেতা এমনকি যুক্তরাষ্ট্রকে শত্রু হিসেবে দেখার কথা ভাবছেন। তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ন্যাটো আরো শক্তিশালী হতে পারে। কারণ ইউরোপীয় দেশগুলো তখন নিজেদের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়াবে। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, ‘এ পরিবর্তন এরই মধ্যে শুরু হয়েছে এবং ইউরোপ সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়ার মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী তা এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছে।’ —সিএনএন অবলম্বনে