নিউইয়র্ক ১০:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834
ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ

যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির পানামা খালের বন্দর অধিগ্রহণ, সমুদ্র বাণিজ্যে মেরুকরণের ইঙ্গিত

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:২২:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫
  • / ১৪০ বার পঠিত

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির মধ্যে আমদানি পণ্যে শুল্ক আরোপ প্রতিদিন নতুন নতুন মোড় নিচ্ছে। তবে শুধু শুল্কই নয় ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ানোর মতো আরো কিছু পদক্ষেপের ঘোষণা দেন তিনি। যার প্রভাবে আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট পানামা খালে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। হংকংভিত্তিক মালিকের কাছ থেকে পানামা খালের দুটি প্রধান বন্দর কিনতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ সংস্থা ব্ল্যাকরক, যা থেকে বিস্তৃত পরিসরে বৈশ্বিক বন্দর ব্যবস্থাপনায় নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত পাচ্ছেন পর্যবেক্ষকরা।

এফটির প্রতিবেদন অনুসারে, ২ হাজার ২৮০ কোটি ডলারের চুক্তির অংশ হিসেবে বন্দর দুটি হস্তান্তর হতে যাচ্ছে। মূলত পানামা খালে চীনা প্রভাব নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগে সৃষ্ট চাপের প্রতিক্রিয়ায় এ হস্তান্তর। চুক্তি অনুযায়ী, হংকংভিত্তিক সিকে হাচিসন তাদের ব্যবসা ব্ল্যাকরক, গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার পার্টনার্স (জিআইপি) ও টার্মিনাল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের একটি কনসোর্টিয়ামের কাছে বিক্রি করবে। কোম্পানির বিবৃতিতে গত মঙ্গলবার জানানো হয়েছে, এ গ্রুপ পানামায় দুটি বন্দরের মালিক ও পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের ৯০ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করবে। সমুদ্র বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রুটে এ অধিগ্রহণকে যুক্তরাষ্ট্রের বিজয় হিসেবে দেখছেন ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের আমেরিকাস প্রোগ্রামের পরিচালক রায়ান বার্গ। তার মতে, এটি খালের নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটাবে। রয়টার্সকে রায়ান বার্গ বলেন, ‘আমেরিকা মহাদেশে চীনের সঙ্গে কৌশলগত প্রতিযোগিতায় এটি একটি বিশাল বিজয়।’

ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করে আসছিলেন, পানামা খাল পরিচালনা করছে চীন। বছরের শুরুতে হুমকি দিয়ে জানান, যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ জলপথটি আবারো দখল করতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন পানামাকে চীনা প্রভাব কমানোর জন্য চাপ দেয়ার পাশাপাশি দাবি করেছে, বন্দরে বেইজিংয়ের সম্পৃক্ততা খালের নিরপেক্ষতাসংক্রান্ত একটি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ঘোষিত চুক্তির আওতায় সিকে হাচিসনের ৮০ শতাংশ বন্দর ব্যবসাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সংস্থাটি যুক্তরাজ্য ও জার্মানিসহ বিশ্বের ২৩টি দেশের ৪৩টি বন্দর পরিচালনা করে। এতে আরো রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, মেক্সিকো ও অস্ট্রেলিয়ার বন্দরের কার্যক্রম। অর্থাৎ নতুন এ চুক্তির ফলে শুধু পানামা খালের বন্দর নয়, সিকে হাচিসনের বৈশ্বিক বন্দর কার্যক্রমের বিশাল অংশ ব্ল্যাকরক ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানায় চলে যাচ্ছে। এ চুক্তি বন্দর ব্যবসায় বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রতিবেদন অনুসারে, সিকে হাচিসনের বন্দর ব্যবসার অবশিষ্ট ২০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সিঙ্গাপুরের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল টেমাসেকের মালিকানাধীন পোর্ট অপারেটর পিএসএর হাতে। সিকে হাচিসন আশা করছে, এ চুক্তি থেকে তারা ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বেশি নগদ অর্থ পাবে, যার মধ্যে শেয়ারহোল্ডার ঋণ পরিশোধও অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ১৪ হাজার ৮০০ কোটি হংকং ডলার বা ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। এ চুক্তির ঘোষণার পর গতকাল সকালে হংকং পুঁজিবাজারে সিকে হাচিসনের শেয়ারের দাম ২২ শতাংশ বেড়ে যায়।

গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ের পর কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ বলে দাবি করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই সময় বন্দর ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে সিকে হাচিসন। চুক্তি আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর যখন কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামা দখলের কথা বলা শুরু করেন, তখন পানামার ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। সিকে হাচিসন বুঝতে পারে এটি রাজনৈতিক সমস্যা এবং তারা এর থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।’ এ অধিগ্রহণে রাজনৈতিক প্রভাব কমানোর জন্য সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ব্ল্যাকরকের প্রধান নির্বাহী ল্যারি ফিঙ্ক, যাতে এ চুক্তির জন্য সমর্থন পাওয়া যায়। আলোচনার বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সমর্থন বিষয়ে নিশ্চিত না হলে কনসোর্টিয়ামটি দরপত্র জমা দিত না। হংকংয়ের শীর্ষ ধনী লি কা-শিং ও তার পরিবার নিয়ন্ত্রণ করে সিকে হাচিসন। এ কোম্পানির আওতায় রয়েছে বন্দর, খুচরা ব্যবসা, টেলিকম ও অন্যান্য অবকাঠামো খাতের ব্যবসা। ২০২৩ সালে কোম্পানিটি ৪৬ হাজার ১৬০ কোটি হংকং ডলার আয় করে, এর ৯ শতাংশের উৎস বন্দর ব্যবসা।

ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন মেয়াদের প্রথম কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেন, যা প্রতিদ্বন্দ্বীদের পাশাপাশি মিত্রদেরও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তার সিদ্ধান্তগুলো মুক্ত বাণিজ্য থেকে লাভবান হওয়া দেশগুলোর মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। পানামা খাল অঞ্চলটির জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। এটি পরিচালনা করেন পানামা সরকারের অধীনস্থ পানামা খাল কর্তৃপক্ষ। ১৯০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৌশলীদের সাহায্যে খনন শুরুর পর ১৯১৪ সালে পানামা খাল সম্পন্ন হয়। ১৯৭৭ সালের একটি চুক্তির মাধ্যমে জলপথটি ধাপে ধাপে পানামার কাছে হস্তান্তর শুরু হয়, যা ১৯৯৯ সালে সম্পন্ন হয়। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনাকারী হাচিসন পোর্টস ১৯৯৭ সাল থেকে পানামা সরকারের ছাড়পত্রের মাধ্যমে খালের উভয় প্রান্তের বন্দর পরিচালনা করে আসছিল। এ বন্দর দুটি ট্রান্স-শিপমেন্ট কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। এখানে খাল পার হওয়া বড় জাহাজগুলোর কনটেইনার ছোট ফিডার জাহাজে স্থানান্তর করা হয়, যা ক্যারিবিয়ান এবং দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া হয়। ২০২১ সালে সিকে হাচিসন নতুন একটি চুক্তির মাধ্যমে আরো ২৫ বছরের জন্য বন্দরগুলো পরিচালনার অধিকার পায়। সূত্র : বণিক বার্তা।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ

যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির পানামা খালের বন্দর অধিগ্রহণ, সমুদ্র বাণিজ্যে মেরুকরণের ইঙ্গিত

প্রকাশের সময় : ০১:২২:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির মধ্যে আমদানি পণ্যে শুল্ক আরোপ প্রতিদিন নতুন নতুন মোড় নিচ্ছে। তবে শুধু শুল্কই নয় ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ানোর মতো আরো কিছু পদক্ষেপের ঘোষণা দেন তিনি। যার প্রভাবে আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট পানামা খালে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। হংকংভিত্তিক মালিকের কাছ থেকে পানামা খালের দুটি প্রধান বন্দর কিনতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ সংস্থা ব্ল্যাকরক, যা থেকে বিস্তৃত পরিসরে বৈশ্বিক বন্দর ব্যবস্থাপনায় নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত পাচ্ছেন পর্যবেক্ষকরা।

এফটির প্রতিবেদন অনুসারে, ২ হাজার ২৮০ কোটি ডলারের চুক্তির অংশ হিসেবে বন্দর দুটি হস্তান্তর হতে যাচ্ছে। মূলত পানামা খালে চীনা প্রভাব নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগে সৃষ্ট চাপের প্রতিক্রিয়ায় এ হস্তান্তর। চুক্তি অনুযায়ী, হংকংভিত্তিক সিকে হাচিসন তাদের ব্যবসা ব্ল্যাকরক, গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার পার্টনার্স (জিআইপি) ও টার্মিনাল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের একটি কনসোর্টিয়ামের কাছে বিক্রি করবে। কোম্পানির বিবৃতিতে গত মঙ্গলবার জানানো হয়েছে, এ গ্রুপ পানামায় দুটি বন্দরের মালিক ও পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের ৯০ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করবে। সমুদ্র বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রুটে এ অধিগ্রহণকে যুক্তরাষ্ট্রের বিজয় হিসেবে দেখছেন ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের আমেরিকাস প্রোগ্রামের পরিচালক রায়ান বার্গ। তার মতে, এটি খালের নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটাবে। রয়টার্সকে রায়ান বার্গ বলেন, ‘আমেরিকা মহাদেশে চীনের সঙ্গে কৌশলগত প্রতিযোগিতায় এটি একটি বিশাল বিজয়।’

ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করে আসছিলেন, পানামা খাল পরিচালনা করছে চীন। বছরের শুরুতে হুমকি দিয়ে জানান, যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ জলপথটি আবারো দখল করতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন পানামাকে চীনা প্রভাব কমানোর জন্য চাপ দেয়ার পাশাপাশি দাবি করেছে, বন্দরে বেইজিংয়ের সম্পৃক্ততা খালের নিরপেক্ষতাসংক্রান্ত একটি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ঘোষিত চুক্তির আওতায় সিকে হাচিসনের ৮০ শতাংশ বন্দর ব্যবসাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সংস্থাটি যুক্তরাজ্য ও জার্মানিসহ বিশ্বের ২৩টি দেশের ৪৩টি বন্দর পরিচালনা করে। এতে আরো রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, মেক্সিকো ও অস্ট্রেলিয়ার বন্দরের কার্যক্রম। অর্থাৎ নতুন এ চুক্তির ফলে শুধু পানামা খালের বন্দর নয়, সিকে হাচিসনের বৈশ্বিক বন্দর কার্যক্রমের বিশাল অংশ ব্ল্যাকরক ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানায় চলে যাচ্ছে। এ চুক্তি বন্দর ব্যবসায় বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রতিবেদন অনুসারে, সিকে হাচিসনের বন্দর ব্যবসার অবশিষ্ট ২০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সিঙ্গাপুরের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল টেমাসেকের মালিকানাধীন পোর্ট অপারেটর পিএসএর হাতে। সিকে হাচিসন আশা করছে, এ চুক্তি থেকে তারা ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বেশি নগদ অর্থ পাবে, যার মধ্যে শেয়ারহোল্ডার ঋণ পরিশোধও অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ১৪ হাজার ৮০০ কোটি হংকং ডলার বা ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। এ চুক্তির ঘোষণার পর গতকাল সকালে হংকং পুঁজিবাজারে সিকে হাচিসনের শেয়ারের দাম ২২ শতাংশ বেড়ে যায়।

গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ের পর কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ বলে দাবি করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই সময় বন্দর ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে সিকে হাচিসন। চুক্তি আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর যখন কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামা দখলের কথা বলা শুরু করেন, তখন পানামার ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। সিকে হাচিসন বুঝতে পারে এটি রাজনৈতিক সমস্যা এবং তারা এর থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।’ এ অধিগ্রহণে রাজনৈতিক প্রভাব কমানোর জন্য সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ব্ল্যাকরকের প্রধান নির্বাহী ল্যারি ফিঙ্ক, যাতে এ চুক্তির জন্য সমর্থন পাওয়া যায়। আলোচনার বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সমর্থন বিষয়ে নিশ্চিত না হলে কনসোর্টিয়ামটি দরপত্র জমা দিত না। হংকংয়ের শীর্ষ ধনী লি কা-শিং ও তার পরিবার নিয়ন্ত্রণ করে সিকে হাচিসন। এ কোম্পানির আওতায় রয়েছে বন্দর, খুচরা ব্যবসা, টেলিকম ও অন্যান্য অবকাঠামো খাতের ব্যবসা। ২০২৩ সালে কোম্পানিটি ৪৬ হাজার ১৬০ কোটি হংকং ডলার আয় করে, এর ৯ শতাংশের উৎস বন্দর ব্যবসা।

ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন মেয়াদের প্রথম কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেন, যা প্রতিদ্বন্দ্বীদের পাশাপাশি মিত্রদেরও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তার সিদ্ধান্তগুলো মুক্ত বাণিজ্য থেকে লাভবান হওয়া দেশগুলোর মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। পানামা খাল অঞ্চলটির জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। এটি পরিচালনা করেন পানামা সরকারের অধীনস্থ পানামা খাল কর্তৃপক্ষ। ১৯০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৌশলীদের সাহায্যে খনন শুরুর পর ১৯১৪ সালে পানামা খাল সম্পন্ন হয়। ১৯৭৭ সালের একটি চুক্তির মাধ্যমে জলপথটি ধাপে ধাপে পানামার কাছে হস্তান্তর শুরু হয়, যা ১৯৯৯ সালে সম্পন্ন হয়। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনাকারী হাচিসন পোর্টস ১৯৯৭ সাল থেকে পানামা সরকারের ছাড়পত্রের মাধ্যমে খালের উভয় প্রান্তের বন্দর পরিচালনা করে আসছিল। এ বন্দর দুটি ট্রান্স-শিপমেন্ট কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। এখানে খাল পার হওয়া বড় জাহাজগুলোর কনটেইনার ছোট ফিডার জাহাজে স্থানান্তর করা হয়, যা ক্যারিবিয়ান এবং দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া হয়। ২০২১ সালে সিকে হাচিসন নতুন একটি চুক্তির মাধ্যমে আরো ২৫ বছরের জন্য বন্দরগুলো পরিচালনার অধিকার পায়। সূত্র : বণিক বার্তা।