নিউইয়র্ক ০৪:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:৫২:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫
  • / ৪৭ বার পঠিত

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষণ দেন, তা বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রামের পথনির্দেশক হয়ে ওঠে। সেদিন লাখো মানুষের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই মূলত তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন, যা পরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়। বঙ্গবন্ধুর সেই ১৯ মিনিটের ভাষণই বাঙালিকে স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলেও ৭ মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার পূর্বাভাস ছিল বলে মনে করে ইতিহাসবিদরা।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি শুরু করে, যা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করে। ১ মার্চ ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করলে পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। এই উত্তাল পরিস্থিতিতে ৭ মার্চের জনসভা আয়োজন করা হয়।

সেদিন রেসকোর্স ময়দানে সমবেত হয়েছিল প্রায় দশ লাখ মানুষ। উত্তেজনায় টগবগ করা জনস্রোতের সামনে বঙ্গবন্ধু দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন— ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই।’

তিনি স্পষ্টভাবেই সেদিন মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন জাতিকে। তিনি বলেছিলেন— ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।’

তারপর তিনি বললেন— ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম!’

বঙ্গবন্ধুর এই বক্তব্যের মাধ্যমে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রস্তুতি আনুষ্ঠানিক রূপ পেয়েছিল। এই ভাষণ যুদ্ধের সরাসরি ডাক না হয়েও ছিল যুদ্ধের দিকনির্দেশনা। বঙ্গবন্ধু সেদিন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও তাঁর প্রতিটি বাক্যে স্বাধীনতার ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট। এই ভাষণের পর সমগ্র বাংলাদেশে স্বাধীনতার প্রস্তুতি ত্বরান্বিত হয়। পাকিস্তানিরা বুঝতে পারে, বাঙালিকে আর দমিয়ে রাখা যাবে না। ২৫ মার্চের কালরাতে যখন পাকিস্তানি বাহিনী নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়, তখন এর জবাব দিতে প্রস্তুত ছিল বাঙালি। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা আসে এবং শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।

৭ মার্চের ভাষণকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলে স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন ইতিহাস ও রাজনীতি বিশ্ষেকরা। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করে তোলে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মম হামলার পর ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, যা মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করে।

এই ঐতিহাসিক ভাষণ শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব ইতিহাসেও অনন্য এক দলিল। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। পৃথিবীর অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে ৭ মার্চে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ। সূত্র : বাংলাদেশের খবর

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ

প্রকাশের সময় : ১০:৫২:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষণ দেন, তা বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রামের পথনির্দেশক হয়ে ওঠে। সেদিন লাখো মানুষের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই মূলত তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন, যা পরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়। বঙ্গবন্ধুর সেই ১৯ মিনিটের ভাষণই বাঙালিকে স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলেও ৭ মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার পূর্বাভাস ছিল বলে মনে করে ইতিহাসবিদরা।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি শুরু করে, যা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করে। ১ মার্চ ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করলে পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। এই উত্তাল পরিস্থিতিতে ৭ মার্চের জনসভা আয়োজন করা হয়।

সেদিন রেসকোর্স ময়দানে সমবেত হয়েছিল প্রায় দশ লাখ মানুষ। উত্তেজনায় টগবগ করা জনস্রোতের সামনে বঙ্গবন্ধু দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন— ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই।’

তিনি স্পষ্টভাবেই সেদিন মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন জাতিকে। তিনি বলেছিলেন— ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।’

তারপর তিনি বললেন— ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম!’

বঙ্গবন্ধুর এই বক্তব্যের মাধ্যমে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রস্তুতি আনুষ্ঠানিক রূপ পেয়েছিল। এই ভাষণ যুদ্ধের সরাসরি ডাক না হয়েও ছিল যুদ্ধের দিকনির্দেশনা। বঙ্গবন্ধু সেদিন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও তাঁর প্রতিটি বাক্যে স্বাধীনতার ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট। এই ভাষণের পর সমগ্র বাংলাদেশে স্বাধীনতার প্রস্তুতি ত্বরান্বিত হয়। পাকিস্তানিরা বুঝতে পারে, বাঙালিকে আর দমিয়ে রাখা যাবে না। ২৫ মার্চের কালরাতে যখন পাকিস্তানি বাহিনী নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়, তখন এর জবাব দিতে প্রস্তুত ছিল বাঙালি। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা আসে এবং শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।

৭ মার্চের ভাষণকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলে স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন ইতিহাস ও রাজনীতি বিশ্ষেকরা। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করে তোলে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মম হামলার পর ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, যা মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করে।

এই ঐতিহাসিক ভাষণ শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব ইতিহাসেও অনন্য এক দলিল। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। পৃথিবীর অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে ৭ মার্চে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ। সূত্র : বাংলাদেশের খবর