বিএনপির মহাসচিবদের উত্তরসূরিরা কে কোথায়?

- প্রকাশের সময় : ০৯:১৯:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫
- / ৬৫ বার পঠিত
বিএনপির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দলটির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ও ক্লিন ইমেজের অধিকারী মির্জা ফখরুল দলটির সপ্তম মহাসচিব। এর আগে আরও ছয়জন নেতা দলটির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা সবাই প্রয়াত। তবে এদের উত্তরসূরিদের কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আবার কেউ বা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। রাজনীতি তাদের টানতে পারেনি। বিএনপির প্রয়াত ছয় মহাসচিবের মধ্যে প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ছিলেন অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। বি চৌধুরী নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। এরপর যথাক্রমে আবু সালেহ মোহাম্মদ (এএসএম) মুস্তাফিজুর রহমান, কে এম ওবায়দুর রহমান, আব্দুস সালাম তালুকদার, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া ও খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন দায়িত্ব পালন করেছেন। এদের উত্তরসূরিদের মধ্যে কেউ কেউ নিজ যোগ্যতায় বাবার মতোই রাজনীতির মাঠ কাঁপাচ্ছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পাশাপাশি দলের ভেতরে-বাইরেও তাদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। পদে না থেকেও কিছু উত্তরসূরি দলের পেছন থেকেও কাজ করছেন। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, বিএনপির সব মহাসচিবই বীর মুক্তিযোদ্ধা, ও উচ্চশিক্ষিত ছিলেন। তারা একদিকে দলের নেতা-কর্মীদের কাছে সার্বজনীন ও সব মহলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল। অন্যদিকে দলীয় কার্যক্রমে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী :
রাজনীতিতে বি চৌধুরীর পথচলা শুরু হয়েছিল জিয়াউর রহমানের হাত ধরে ১৯৭৮ সালে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এই মহাসচিব ১৯৭৯ সাল থেকে সাত বছর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে উপ-প্রধানমন্ত্রী, খালেদা জিয়ার শাসনামলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। বি চৌধুরীর হাত ধরেই বিএনপির রাজনীতিতে যোগদান করেন ছেলে মাহি বি চৌধুরী। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরও একসময় আস্থাভাজন ছিলেন তিনি। বিএনপির আমলে ২০০২ সালের ২১ জুন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে উপনির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০০২ সালে বাবার সঙ্গে বিএনপির দ্বন্দ্বের কারণে সরে যান মাহী। বর্তমানে তিনি বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আবারও মুন্সীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হন। কিন্তু সম্প্রতি খালেদা জিয়ার লন্ডনে চিকিৎসা ও সুস্থতা কামনা করে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে আবারও আলোচনায় আসেন। তারুণ্যের প্রতীক মাহী একসময় রাজনীতিতে ঝড় তুললেও বর্তমানে রাজনীতির ফ্রন্ট লাইন থেকে অনেকটাই দূরে রয়েছেন। তার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, বিএনপিকে ‘শিক্ষা’ দিতে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধায় রাজনীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মাহী বি চৌধুরী।
মাহী বি চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির বাইরে থাকলেও শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে আমি দূরে সরে যাইনি। তার ১৯ দফা কর্মসূচি মেনে পরবর্তী সময়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। বিএনপির সঙ্গে কোনো শত্রুতাও নেই।’ তিনি বলেন, ‘বিকল্পধারা এবং বাবার প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে সময় দিচ্ছি। বিএনপি চাইলে আবারও জোট হতে পারে।’ বাবা ও ভাই রাজনীতিতে জড়িত হলেও রাজনীতি থেকে সব সময় দূরে রয়েছেন বি চৌধুরীর দুই মেয়ে ব্যারিস্টার মুনা চৌধুরী ও ডা. শায়লা শারমিন চৌধুরী। তারা ভবিষ্যতেও রাজনীতিতে আসতে অনিচ্ছুক। বড় মেয়ে মুনা পেশায় আইনজীবী ও বাবার প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে হেলথ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের’ সেক্রেটারি। লন্ডনপ্রবাসী ডা. শায়লা দেশে এলে উত্তরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সময় দেন। ২০০১ সালে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ার সাত মাসের মাথায় এমপি-মন্ত্রীদের অনাস্থার মুখে ২০০২ সালের ২১ জুন পদত্যাগ করেন বি চৌধুরী। পরে ২০০৪ সালে বিকল্পধারা বাংলাদেশ গঠন করেন।
এ এস এম মুস্তাফিজুর রহমান :
এ এস এম মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৮৫-৮৬ সালে দুই বছর বিএনপির দ্বিতীয় মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার ছেলে রিয়াজুর রহমান ও মেয়ে দীবা রহমান যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। তারা খুব একটা বাংলাদেশে আসেন না। আবার দেশে এলেও বাবার নির্বাচনি এলাকা বাগেরহাটে যান না। সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে মুস্তাফিজুর রহমানকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন। পরে ১৯৭৮ সালে তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেন। ১৯৭৯ সালে বাগেরহাট-২ আসনের এমপি নির্বাচিত হলে তিনি আবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন। খালেদা জিয়া সরকারের আমলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে ৩০ নভেম্বর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
কে এম ওবায়দুর রহমান :
বিএনপির তৃতীয় মহাসচিব হলেন কে এম ওবায়দুর রহমান ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। চারবারের এই সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন। তবে ১৯৯১ সালে এরশাদের চাপে পড়ে ‘চাকা’ প্রতীকে জনতা দল গঠন করে পরবর্তী সময়ে খালেদা জিয়ার হাত ধরে আবারও বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে ফরিদপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৭ সালে ওবায়দুর রহমানের মৃত্যুর পর ফরিদপুর অঞ্চলে একধরনের শূন্যতা তৈরি হয়। গ্রুপিং-কোন্দলের কারণে অনেকটাই ভেঙে পড়ে সাংগঠনিক ভিত্তি। এর সঙ্গে তৎকালীন আওয়ামী লীগের দমনপীড়ন, মিথ্যা মামলা, হামলা তো ছিলই। সেই সময় স্থানীয় বিএনপির হাল ধরেন ওবায়দুর রহমানের একমাত্র মেয়ে ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। তার হাত ধরেই ফরিদপুর বিএনপির রাজনীতি এখন গতিশীল হয়েছে। শামা ওবায়েদ জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতেও পরিচিত মুখ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে তার। বাবার ফরিদপুর-২ আসন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
শামা ওবায়েদ বলেন, ‘বাবার হাত ধরেই আমার রাজনীতিতে হাতেখড়ি এবং তিনিই রাজনীতির অনুপ্রেরণা। তাই বাবার পথ ধরেই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। শুরু থেকেই দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে কাজ করেছি এবং আগামীতেও করব।’ তিনি জানান, রাজনীতির এই পর্যায়ে আসতে অনেকে চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দেওয়া ১৮টি মিথ্যা মামলা চলমান রয়েছেন বলেও জানান। যদিও ওবায়দুর রহমানের স্ত্রী অধ্যাপক শাহেদা ওবায়েদ গণতান্ত্রিক সংস্কার পার্টি বা ডেমোক্র্যাটিক রিফর্ম পার্টি (ডিআরপি) গঠন করেছিলেন ২০২৪ সালের ২ মার্চ। কিন্তু দল ঘোষণার আড়াই মাস পরই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। শামা ওবায়েদ বলেন, ‘মা আলাদা দল করতে পারেন। এ ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকেও কিছু বলা হয়নি।’
আব্দুস সালাম তালুকদার :
বিএনপির চতুর্থ মহাসচিব আব্দুস সালাম তালুকদার ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জামালপুর-৪ আসন থেকে সালাম তালুকদার দুবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালের ২০ আগস্ট তার তার মৃত্যুর পর ২০০১ সালে ভাতিজা আনোয়ারুল কবির তালুকদার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে তার পরিবারের কেউই আর রাজনীতিতে যোগ দেননি। তার একমাত্র মেয়ে ব্যারিস্টার সালিমা বেগম আরুণি একজন আর্কিটেক্ট। মা মাহমুদা সালাম তালুকদারকে নিয়ে বর্তমানে তিনি রাজধানীর গুলশানে বসবাস করছেন। ২০০৬ সালের পর থেকে তাদের জামালপুরে যাতায়াত নেই বললেই চলে। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মনে করেন, তাদের এলাকায় আসতে বাধা দেওয়া হয়। ২০০৬ সালের পর সালাম তালুকদারের স্ত্রী মাহমুদাকে নিয়ে সামনে এগোতে চেয়েছিলেন তার অনুসারীরা। কিন্তু সেই সময়ে বাধা হয়ে দাঁড়ান ভাতিজা জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামিম। আরুণিকেও প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন শামিম। তবে নতুন প্রজন্মের আরুণি রাজনীতিতে এলে বিএনপির জন্য ভালো হবে বলে স্থানীয় রাজনীতিতে আলোচনা আছে।
সালিমা বেগম আরুণি জানান, রাজনীতিবিদের সন্তান হিসেবে সব সময়ই তিনি রাজনীতিতে আছেন। হয়তো ফ্রন্ট লাইনে নেই। তবে পেছনে থেকে দেশ ও দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘জামালপুরসহ বিভিন্ন মানুষের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। বাবার মতো সৎ, যোগ্য ও ভালো মানুষের রাজনীতিতে আসা জরুরি।’ বর্তমানে জামালপুরের রাজনীতির হাল ধরেছেন সালাম তালুকদারের ভাতিজা ফরিদুল কবির তালুকদার। তিনি বলেন, ‘যেকোনো সমস্যায় পড়লে আরুণি আমাদের সহায়তা করেন। কিন্তু রাজনীতিতে আসবেন কি না, তা বলা যাচ্ছে না।’
মান্নান ভূঁইয়া :
বিএনপির পঞ্চম মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূ্ঁইয়া ১৯৯৬ সালের ২৬ জুন থেকে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা ১১ বছর মহাসচিব ছিলেন। শেষ জীবনে ‘সংস্কারপন্থি’ বলে পরিচিতি পেলেও একজন সৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে তার নাম আজও দেশের রাজনীতিতে আলোচনায় আছে। মান্নান ভূঁইয়ার বড় ছেলে ভূঁইয়া অনিন্দ মোহায়েমেন রাজন বুয়েট থেকে পড়াশোনা শেষ করে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন। তিনি একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। চাকরির সুবাদে মাঝে অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন কয়েক বছর। ২০১০ সালে বাবার মৃত্যু হলেও তিনি দেশে আসেননি। ছোট ছেলে ভূঁইয়া নন্দিত নাহিয়ান স্বজন। তিনি ঢাকার গুলশানে বাবার ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত রয়েছেন। তবে দুজনের কারোরই রাজনীতি আসার আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন ছোট ছেলে স্বজন। তিনি বলেন, ‘আমার মা ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন। তাই আমরা ছাত্রজীবন থেকেই পড়াশোনা নিয়ে বেশি ব্যস্ত ছিলাম। এখন দুজনই নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়েই বেশি ব্যস্ত। আগে যেহেতু আমরা রাজনীতি সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের রাজনীতিতে আসার ইচ্ছাও নেই।’
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মান্নান ভূঁইয়ার মৃত্যুবার্ষিকীতেও এখন আর তারা নরসিংদীতে যান না। তবে মান্নান ভূঁইয়া পরিষদের ব্যানারে তার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমানের অনুরোধে বিএনপির রাজনীতিতে যোগদান করেন মান্নান ভূঁইয়া। জিয়াউর রহমান তাকে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের আহ্বায়ক করেন। এরশাদ পতনের আন্দোলনে বিএনপি নেতা হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ওয়ান-ইলেভেনের জরুরি সরকারের সময় দলের পক্ষ থেকে সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করে ব্যাপকভাবে আলোচিত হন। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মহাসচিবসহ দলের সব পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করেন খালেদা জিয়া।
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন :
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ছিলেন বিএনপির ষষ্ঠ মহাসচিব। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেবর থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত আমৃত্যু মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ঢাকা-১ ও মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর-দৌলতপুর) থেকে বিএনপির টিকিটে ৫ বার এমপি নির্বাচিত হন সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং চিফ হুইপ খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। ২০১১ সালের ১৬ মার্চ বাবার মৃত্যুর পর রাজনীতিতে নামেন বড় ছেলে খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু ও অ্যাডভোকেট খোন্দকার আব্দুল হামিদ ডাবলু। বাবার হাতেই তাদের রাজনীতির হাতেখড়ি। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ডাবলু ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি। গত বছরের ১৬ জুলাই তিনি মারা যান। বর্তমানে বাবার শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করছেন বড় ছেলে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি বাবলু। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তবে মানিকগঞ্জে প্রয়াত মহাসচিবের নামও সেভাবে উচ্চারিত হয় না।
স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, প্রয়াত মহাসচিবের সঙ্গে সাবেক মন্ত্রী শিল্পপতি হারুনার রশীদ খান মুন্নুর দূরত্ব ও দ্বন্দ্ব ছিল। প্রয়াত এই দুই নেতার গ্রুপিং-কোন্দলের রেশ এখন চলছে তাদের উত্তরসূরিদের মধ্যে। মুন্নুর মেয়ে আফরোজা খান রিতা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক। তাই পদপদবি টিকিয়ে রাখার জন্য সভা-সমাবেশে অনেকেই প্রয়াত মহাসচিবের নাম উচ্চারণ করতে ভয় পান। তৃতীয় ছেলে খোন্দকার আকতার হামিদ পবন ঢাকার রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও নেই কোনো পদপদবি। পুরান ঢাকায় বাবার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দেখছেন। আর ছোট ছেলে খোন্দকার আকতার হোসেন জগলু আমেরিকাপ্রবাসী। বড় মেয়ে আকতারা খাতুন লুনা বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন। আর ছোট মেয়ে ডা. দোলোয়ারা বেগম পান্না। তিনি মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক এবং বিএনপির চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের সঙ্গে জড়িত। মানিকগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী আকবর হোসেন বাবলু বলেন, ‘২০১৩ সালে থেকে বিএনপির রাজনীতিতে পথচলা। বাবার অনুপ্রেরণাতেই রাজনীতিতে আসা। সাহস, ত্যাগ আর সততা দিয়ে নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’ তার অভিযোগ, মানিকগঞ্জে যার যে সম্মান পাওয়ার কথা সেটা দেওয়া হয় না। কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়া বাবার নাম সভা-সমাবেশেও কেউ উচ্চারণ করেন না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর :
বিএনপির দীর্ঘতম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত টানা ১৪ বছর মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এই সময়ে অনেকবার তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে। ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে জয়লাভ করলেও নিজের ইমেজ ও দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় শপথ নেননি তিনি। হাসিনা সরকার তার বিরুদ্ধে ১০০-এর বেশি মামলা দিয়েছে। তবে মির্জা ফখরুলের দুই মেয়ে বাবার মতোই শিক্ষকতা পেশা বেছে নিয়েছেন। বড় মেয়ে মির্জা শামারুহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ালেখা করে ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে কর্মরত আছেন। আর ছোট মেয়ে মির্জা সাফারুহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তবে এই মূহূর্তে পরিবারের আর কারও রাজনীতিতে আসার আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন মির্জা শামারুহ। অস্টেলিয়া থেকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি। আগামী দিনেও জনগণের পাশে থাকব। তবে ভবিষ্যতে রাজনীতিতে আসব কি না তা জানি না।’ সূত্র : খবরের কাগজ।