‘শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ড জাতিসংঘে নথিভুক্ত করার অনুরোধ’

- প্রকাশের সময় : ১০:৪৫:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫
- / ৪৯ বার পঠিত
২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ পশু করতে চালানো ক্র্যাকডাউনে আইন শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর নির্মমতাসহ বিগত সরকারের শাসনামলের বিচারবর্হিভূত সব হত্যাকাণ্ড নথিভূক্ত রকতে জাতিসংঘকে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী কার্যালয়ের সিনিয়র মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান সাক্ষাতে এলে প্রধান উপদেষ্টা এ অনুরোধ করেন। এ সময় তিনি জামায়াত নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় পরবর্তী বিক্ষোভে আইন শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর নির্মমতাসহ হত্যাকাণ্ডগুলো নথিভূক্ত করতে জাতিসংঘকে অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, এ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত সব নৃশংসতা যথাযথভাবে নথিভুক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে। এগুলো ডকুমেন্টেশন না হলে সত্য জানা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা কঠিন। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক লুইস বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশের সক্ষমতা গড়ে তুলতে এবং কারিগরি সহায়তা দিতে জাতিসংঘ প্রস্তুত। সত্য জানা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটাই ক্ষত নিরাময় এবং সত্য প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের জন্য জাতিসংঘকে ধন্যবাদ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, জাতিসংঘ এ প্রতিবেদন প্রকাশ করায় আমরা আনন্দিত। এটি কোনো সহজ কাজ ছিল না। তারপরও সময়মতো এটি প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টাকে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস জানান, আগামী ৫ মার্চ মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৫তম অধিবেশনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে সংগঠিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদনটি সদস্য দেশগুলোকে অবহিত করবেন। আগামী ১৩-১৬ মার্চ বাংলাদেশ সফর করবেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গুয়েন লুইস আশা প্রকাশ করেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফরে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সরবরাহ কমে যাওয়ার সংকটটি বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরে আসবে। আবাসিক সমন্বয়ক বলেন, প্রতি মাসে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১৫ মিলিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের ডলার প্রয়োজন। অর্থের সংকুলান নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত।
প্রধান উপদেষ্টাকে নরওয়ের বিশেষজ্ঞদল : নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বড় বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে বাংলাদেশ। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নরওয়ের সাবেক উন্নয়ন ও পরিবেশমন্ত্রী এরিক সোলহেইমের নেতৃত্বে উন্নয়ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের একটি প্রতিনিধিদল রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে সাক্ষাৎ করেছেন। বাংলাদেশ সামনের বছরগুলোতে জীবাশ্ম জ্বালানি সহজীকরণে আরো মনোনিবেশ করায় প্রতিনিধিদলটি নেপালে ক্ষুদ্র আকারের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও কার্বন মার্কেট, কৃষিবনায়ন এবং যৌথভাবে জলবিদ্যুৎ বিনিয়োগের সুযোগ অনুসন্ধানে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। ড. ইউনূস এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন দ্রুত বিকাশমান এসব খাতে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রস্তুত। এগুলো আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও কার্বন খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ। তিনি বলেন, নেপাল ও ভুটান থেকে পানিবিদ্যুৎ আমদানির জন্য ঢাকা ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু করেছে এবং তার সরকার ভারতের একটি সংকীর্ণ করিডোরের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আনতে দক্ষিণ এশিয়া গ্রিড স্থাপনের সুযোগগুলো অনুসন্ধান করতে আগ্রহী। এটি (নেপালের পানিবিদ্যুৎ) একটি সম্পদ যা অন্বেষণের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু ডেলিভারি একটা সমস্যা বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।
জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এরিক সোলহেইম বলেন, বড় আকারের সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য বাংলাদেশে পর্যাপ্ত অব্যবহৃত জায়গার অভাব রয়েছে, যা চীন ও এশিয়ার অন্যান্য দেশের আছে। তবে তিনি বলেন, ছোট আকারের সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ একটি উপযুক্ত জায়গা হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার সরকার সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে এবং ইতোমধ্যে তিনি চীনের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে সৌর প্যানেল উৎপাদন কারখানা স্থানান্তরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। চীনের বেশ কয়েকটি সৌর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ধনী পশ্চিমা দেশগুলোতে তাদের পণ্য রফতানির জন্য ব্যবহার করার লক্ষ্যে এখানে কারখানা স্থাপনের সুযোগ খুঁজতে বাংলাদেশ সফর করেছে।
কার্বন বাণিজ্য ও জলবায়ু বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান প্রোক্লিমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাভিন কুমার কান্দাসামি বলেন, শ্রীলঙ্কার ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মতো কার্বন বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ সহজেই কোটি কোটি ডলার আয় করতে পারে। ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ কার্বন বাজার অনুসন্ধানে গভীরভাবে আগ্রহী, কারণ এটি লাখ লাখ উপার্জনে সহায়তা করবে এবং একইসঙ্গে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন রক্ষার প্রচেষ্টায় সহায়তা করবে। ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ও সোলহেইমের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা সংকট এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়েও আলোচনা করেন। সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব।