নিউইয়র্ক ১১:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834
ইইউ নেতাদের ঐকমত্য

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক পাল্টা ব্যবস্থা নেয়া হবে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৫৮:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৪ বার পঠিত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপের ওপর এখনো সরাসরি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেননি। তবে রোববার তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপের ওপর কোনো শুল্ক আরোপ করা হলে অঞ্চলটি পাল্টা ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন (ইসি) ও ইইউভুক্ত দেশের নেতারা। ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য এসেছে। খবর গার্ডিয়ান।

রোববার নিউ অরলিন্সে এনএফএল সুপার বোলে যাওয়ার পথে ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এ সময় তিনি বলেন, ‘যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও পাল্টা শুল্ক বসানো হবে। এটি মঙ্গলবার বা বুধবার থেকে কার্যকর করা হতে পারে।’ এমন প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় কমিশন (ইসি) জানায়, তারা ইইউর স্বার্থ রক্ষায় ব্যবস্থা নেবে। তবে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে ইউরোপীয় পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তাই কোনো নির্দিষ্ট নথি বা স্পষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়া কেবল ঘোষণা শুনে প্রতিক্রিয়া জানাবে না।

ইসির মতে, তাদের রফতানির ওপর শুল্ক আরোপের কোনো যৌক্তিকতা নেই। অর্থনৈতিক জোটটি বলছে, ‘আমরা ইউরোপীয় ব্যবসা, শ্রমিক ও ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যবস্থা নেব এবং এ অন্যায্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাব।’ কমিশন জানিয়েছে, সাধারণভাবে শুল্ক আরোপ করা অবৈধ, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিকর হবে।

তাদের মতে, শুল্ক আসলে একটি করের মতো। যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপের মাধ্যমে নিজের জনগণের ওপরই কর বসাচ্ছে, ব্যবসার ব্যয় বাড়াচ্ছে এবং মূল্যস্ফীতি আরো বাড়িয়ে তুলছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর করলে তা তার প্রথম দফা শাসনামলের মতোই হবে। এর আগের দফায় বিশ্বের অনেক দেশ থেকে ইস্পাত আমদানিতে ২৫ শতাংশ ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। সে সময় এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের ২৮০ কোটি ইউরো মূল্যের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিল। আরো ৩৬০ কোটি ইউরো মূল্যের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছিল। তবে ২০২০ সালে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তা বাতিল করা হয়।

ট্রাম্প এরই মধ্যে কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। দেশ দুটি ব্রাজিলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ইস্পাত রফতানি করে। দক্ষিণ কোরিয়াও শীর্ষ ইস্পাত সরবরাহকারী দেশগুলোর একটি। এছাড়া দেশটিতে ইউরোপ থেকে রফতানি হওয়া ইস্পাতের প্রায় ২৫ শতাংশ আসে জার্মানি থেকে। গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ইইউর ইস্পাত রফতানির বার্ষিক গড় মূল্য ৩০০ কোটি ইউরো। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ বলেন, ‘এখনো শুল্ক আরোপের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে আমরা বলতে পারি, কেউ শুল্ক আরোপ করলে তাকেও পাল্টা শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে।’

রোববার রাতে জার্মানির নির্বাচনী বিতর্কে শুলজ জানান, ‘নতুন শুল্ক আরোপ হলে জার্মান অর্থনীতি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে ইইউ প্রতিক্রিয়া দেখাতে প্রস্তুত ও ১ ঘণ্টার মধ্যেই ব্যবস্থা নিতে পারবে।’ ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসালেও তারা ইউরোপীয় গাড়ির ওপর মাত্র আড়াই শতাংশ শুল্ক নেয়। তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয়রা যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি আমদানি করতে চায় না। কিন্তু তারা প্রতি বছর লাখ লাখ গাড়ি, বিশেষ করে জার্মান ব্র্যান্ডগুলো যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করে।

এদিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ রোববার এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শুল্ক ইস্যুতে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেতে প্রস্তুত। মাখোঁ বলেন, ‘আমি আগেও তা করেছি এবং আবারো করব।’ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘শুল্কের প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তবে যুক্তরাজ্য সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।’ যুক্তরাজ্য প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২ লাখ টন ইস্পাত রফতানি করে, যার মূল্য ৪০ কোটি পাউন্ডের বেশি। ব্রিটিশ ইস্পাত শিল্প সংগঠন ইউকে স্টিল জানিয়েছে, নতুন শুল্ক খাতটির জন্য বিধ্বংসী হতে পারে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

ইইউ নেতাদের ঐকমত্য

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক পাল্টা ব্যবস্থা নেয়া হবে

প্রকাশের সময় : ০৪:৫৮:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপের ওপর এখনো সরাসরি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেননি। তবে রোববার তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপের ওপর কোনো শুল্ক আরোপ করা হলে অঞ্চলটি পাল্টা ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন (ইসি) ও ইইউভুক্ত দেশের নেতারা। ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য এসেছে। খবর গার্ডিয়ান।

রোববার নিউ অরলিন্সে এনএফএল সুপার বোলে যাওয়ার পথে ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এ সময় তিনি বলেন, ‘যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও পাল্টা শুল্ক বসানো হবে। এটি মঙ্গলবার বা বুধবার থেকে কার্যকর করা হতে পারে।’ এমন প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় কমিশন (ইসি) জানায়, তারা ইইউর স্বার্থ রক্ষায় ব্যবস্থা নেবে। তবে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে ইউরোপীয় পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তাই কোনো নির্দিষ্ট নথি বা স্পষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়া কেবল ঘোষণা শুনে প্রতিক্রিয়া জানাবে না।

ইসির মতে, তাদের রফতানির ওপর শুল্ক আরোপের কোনো যৌক্তিকতা নেই। অর্থনৈতিক জোটটি বলছে, ‘আমরা ইউরোপীয় ব্যবসা, শ্রমিক ও ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যবস্থা নেব এবং এ অন্যায্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাব।’ কমিশন জানিয়েছে, সাধারণভাবে শুল্ক আরোপ করা অবৈধ, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিকর হবে।

তাদের মতে, শুল্ক আসলে একটি করের মতো। যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপের মাধ্যমে নিজের জনগণের ওপরই কর বসাচ্ছে, ব্যবসার ব্যয় বাড়াচ্ছে এবং মূল্যস্ফীতি আরো বাড়িয়ে তুলছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর করলে তা তার প্রথম দফা শাসনামলের মতোই হবে। এর আগের দফায় বিশ্বের অনেক দেশ থেকে ইস্পাত আমদানিতে ২৫ শতাংশ ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। সে সময় এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের ২৮০ কোটি ইউরো মূল্যের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিল। আরো ৩৬০ কোটি ইউরো মূল্যের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছিল। তবে ২০২০ সালে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তা বাতিল করা হয়।

ট্রাম্প এরই মধ্যে কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। দেশ দুটি ব্রাজিলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ইস্পাত রফতানি করে। দক্ষিণ কোরিয়াও শীর্ষ ইস্পাত সরবরাহকারী দেশগুলোর একটি। এছাড়া দেশটিতে ইউরোপ থেকে রফতানি হওয়া ইস্পাতের প্রায় ২৫ শতাংশ আসে জার্মানি থেকে। গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ইইউর ইস্পাত রফতানির বার্ষিক গড় মূল্য ৩০০ কোটি ইউরো। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ বলেন, ‘এখনো শুল্ক আরোপের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে আমরা বলতে পারি, কেউ শুল্ক আরোপ করলে তাকেও পাল্টা শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে।’

রোববার রাতে জার্মানির নির্বাচনী বিতর্কে শুলজ জানান, ‘নতুন শুল্ক আরোপ হলে জার্মান অর্থনীতি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে ইইউ প্রতিক্রিয়া দেখাতে প্রস্তুত ও ১ ঘণ্টার মধ্যেই ব্যবস্থা নিতে পারবে।’ ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসালেও তারা ইউরোপীয় গাড়ির ওপর মাত্র আড়াই শতাংশ শুল্ক নেয়। তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয়রা যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি আমদানি করতে চায় না। কিন্তু তারা প্রতি বছর লাখ লাখ গাড়ি, বিশেষ করে জার্মান ব্র্যান্ডগুলো যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করে।

এদিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ রোববার এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শুল্ক ইস্যুতে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেতে প্রস্তুত। মাখোঁ বলেন, ‘আমি আগেও তা করেছি এবং আবারো করব।’ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘শুল্কের প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তবে যুক্তরাজ্য সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।’ যুক্তরাজ্য প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২ লাখ টন ইস্পাত রফতানি করে, যার মূল্য ৪০ কোটি পাউন্ডের বেশি। ব্রিটিশ ইস্পাত শিল্প সংগঠন ইউকে স্টিল জানিয়েছে, নতুন শুল্ক খাতটির জন্য বিধ্বংসী হতে পারে।