মানবদেহে মাইক্রোপ্লাস্টিক, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
![](https://hakkatha.com/wp-content/uploads/2024/05/hakkathafav.png)
- প্রকাশের সময় : ০৪:৩২:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৩৫ বার পঠিত
আমাদের পরিবেশের সবখানে ছড়িয়ে রয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। মানুষের শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালে অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানীরা মানবদেহে প্রথম মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি খুঁজে পান। এর পর রক্ত, ফুসফুস, কিডনি, যকৃত, হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্কেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি মিলেছে। এমনকি প্লাসেন্টা এবং মাতৃদুগ্ধেও পাওয়া গেছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি। অতিক্ষুদ্র এই প্লাস্টিক কণা মানুষের শরীরে কীভাবে প্রবেশ করে, তা এখন আর রহস্য নয়। খাবার, পানি ও বাতাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে মাইক্রোপ্লাস্টিক। এ ছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্য এবং গাড়ির টায়ার, পেইন্ট ও সিনথেটিক কাপড় থেকে অতিক্ষুদ্র এই প্লাস্টিক কণা মানবদেহে প্রবেশ করে থাকে। মাইক্রোপ্লাস্টিকের স্বাস্থ্যগত প্রভাব এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে কিছু গবেষণা স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও ক্যানসারের সঙ্গে এই ক্ষুদ্র কণার সংযোগের আভাস দিয়েছে।
২০২৪ সালে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২৫৭ জন রোগীর ধমনী থেকে যে প্লাক সরানো হয়েছিল, সেখানে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই রোগীদের পরবর্তী তিন বছরে তাদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা ছিল চার গুণ বেশি। তবে এটি পরিষ্কার নয় যে, মাইক্রোপ্লাস্টিক এর জন্য দায়ী ছিল কি না। মাইক্রোপ্লাস্টিক মূলত প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে ভেঙে তৈরি হয়। এটি পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া থেকে গভীর মহাসাগরেও এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। মানুষ প্রতিদিন খাবার, পানি ও বাতাসের মাধ্যমে এই প্লাস্টিক কণা গ্রহণ করছে।
ল্যাবভিত্তিক বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক কোষ, টিস্যু ও ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং ক্যান্সারের বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হলো– কণাগুলো ১ মাইক্রোমিটারের কম আকারের। এই অতিক্ষুদ্র কণা গ্যাস এবং ফুসফুসের কোষের স্তর দিয়ে রক্তে প্রবাহিত হতে পারে। ১০ মাইক্রোমিটারের বেশি আকারের কণা সাধারণত মানুষের কোষে প্রবেশ করতে পারে না।মাইক্রোপ্লাস্টিক থেকে সুরক্ষা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ২০১৯ সালে কিংস কলেজ লন্ডনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বর্গ মিটারে ১ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা বাতাসে জমা হয়েছিল এবং এটি ছিল শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটার বা তার চেয়ে বড় কণাগুলোর হিসাব।
মাইক্রোপ্লাস্টিকের সঞ্চালন কমানো সম্ভব, তবে এটি নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে করা যেতে পারে। যেমন: প্লাস্টিক মোড়কের খাবার বা পানীয় এড়িয়ে চলা, কম সিনথেটিক কাপড় ব্যবহার এবং ঘরের ধুলা পরিষ্কার করা। এ ছাড়া প্লাস্টিকের কনটেইনারে খাবার গরম করলে প্রচুর মাইক্রোপ্লাস্টিক নির্গত হয়, তাই মাইক্রোওয়েভে প্রস্তুত খাবার বা প্লাস্টিকের বক্স ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। পলিইথিলিন এখনকার যুগের নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী যা কোনো পণ্য প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত হয়, এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দানাগুলো রক্তপ্রবাহের দেয়াল ভেদ করে ভেতরে ঢুকে যেতে পারে। মাইক্রোপ্লাস্টিকের স্বাস্থ্যগত ক্ষতির বিষয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়েছে। মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষতি এড়াতে কী ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন, তা বুঝতে ইউরোপীয় একটি গবেষণা সংস্থা ৭০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় কাজ করছে। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান