নিউইয়র্ক ০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

গভীর শ্রদ্ধায় ঢাকায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ ॥ নিউইয়র্কেও কর্মসূচী গ্রহণ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৫৯:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬
  • / ৯৬২ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। গভীর শ্রদ্ধায় সমগ্র জাতি ঢাকায় ১৯৭১-এর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করেছে। এদিকে দিবসটি স্মরণে নিউইয়র্কেও কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছ। সম্সিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকা জ্যাকসন হাইটস্থ ডাইভারসিটি প্লাজায় বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রথম প্রহরে এই কর্মসূচীর আয়োজন করে। কর্মসূচীর মধ্যে ছিলো অনুষ্ঠানস্থলে বিষয়ভিত্তিক চিত্র প্রদর্শণী, মোমবাতি প্রজ্জলন,আলোচনা, মৌন মিছিল প্রভৃতি।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এই দিনে চুড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পরিকল্পিতভাবে দেশের কৃতী সন্তানদের হত্যা করে। তারপর থেকে দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকাররা জাতিকে মেধাশূণ্য করতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ নির্মম হত্যাকান্ডের মাত্র দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
ঢাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে বলা হয়েছে: বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী হত্যাকারিদের বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে এই স্বস্তি নিয়ে জাতি নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছে। দিবসটি উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর বুধবার ভোর থেকেই মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের বাইরে মাজার রোড ও আশেপাশের এলাকা এবং বায়েরবাজার বদ্ধভূমি এলাকায় জনতার ঢল নামে। এদিন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদদের স্মরণ করতে আসা সাধারণ মানুষ স্বপ্ন দেখছেন একটি আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। তারা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যে পথে হাটছে সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক রাষ্ট্রীয় বাধা ছিল। এখন সে বাধা দূর হয়েছে। অনেকে বলেন, দেশের প্রতি ত্যাগের মাধ্যমেই বড় হওয়া যায়, এটাই তারা শিখিয়ে গেছেন।
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে এসে শহীদ পরিবারের সন্তানরা বলেন, এবার আর আক্ষেপ নয়, পেছনে তাকানো নয়, এখন সময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার।
দিবসটি উপলক্ষে সকালে কালো পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করণ, শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জলন, শোক র‌্যালি, শ্রদ্ধা নিবেদন, চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০ টায় বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ সাহানে কুরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এ সময়ে মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মুনাজাত করা হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছিল। ভোরের সূর্য ওঠার আগেই হাজারো মানুষ ভিড় করেন মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সামনে। সবার হাতে ছিল ফুলের তোড়া ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে লেখা কালো ব্যানার। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দালাল রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস সদস্যরা যেখানে জাতির মেধাবী সন্তানদের হত্যা করে ফেলে রেখেছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে জনতার যেন এক মোহনায় মিশে একাকার হয়ে যায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিতে মুহুর্মূহ শ্লোগানে বদ্ধভূমি এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময়ে সবার দাবী ছিল বুদ্ধিজীবী হত্যাকারি দ্বন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত শেষ করতে হবে, জাতি আর এ কলঙ্ক বহন করতে চায় না। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেওয়ায় পাকিস্তানের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করা সহ সে দেশের সকল পণ্য বর্জন করতে হবে।
president-abdul_hamidএদিকে বুধবার সকাল ৭টা ১০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শহীদ বেদীর সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। শহীদদের সম্মানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
pm-sheikh_hasinaপরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া শহীদ বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
sheikh_hasina-with-al-leadersআওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা পুস্পস্তবক অর্পণের সময় দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও এনামুল হক শামীম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজসহ দলীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ধানমন্ডিস্থ ৩২ নম্বর ভবনের সামনে রক্ষিত ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করার পর স্মৃতিস্তম্ভ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য খুলে দেওয়া হয়। পরে একে একে শহীদ বেদীতে শশ্রদ্ধা জানায় কেন্দ্রীয় ১৪ দল, শহীদ পরিবারের সন্তন ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা।
এরপর শ্রদ্ধা জানান দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি, দলের সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, দলের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
এছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, তাঁতিলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, আমার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জাতীয় জাদুঘর, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানান।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বধ্যভূমির আদলে মানব ভাস্কর্য রচনা করে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে এক সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্বে করেন এবং ভাষন দেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধানমন্ত্রী তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরাজ উদ্দিন হোসেনের পুত্র দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক শাহীন রেজা নূর এবং প্রথম আলোর উপ সম্পাদক জাহিদ রেজা নূর, শহীদ বুদ্ধিজীবী খন্দকার আবু তালেবের পুত্র আবুল হোসেন, শহীদ বুদ্ধিজীবি নিজাম উদ্দিন আহমেদের পুত্র শাফকাত নিজাম, শহীদ সাংবাদিক শিব সাধন চক্রবর্তীর পুত্র তরুন তপন চক্রবর্তী, কোষাধ্যক্ষ কার্তিক চ্যাটার্জি, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। ডিইউজের সভাপতি শাবান মাহমুদের সভাপতিত্বে সভায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

গভীর শ্রদ্ধায় ঢাকায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ ॥ নিউইয়র্কেও কর্মসূচী গ্রহণ

প্রকাশের সময় : ১১:৫৯:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬

নিউইয়র্ক: ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। গভীর শ্রদ্ধায় সমগ্র জাতি ঢাকায় ১৯৭১-এর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করেছে। এদিকে দিবসটি স্মরণে নিউইয়র্কেও কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছ। সম্সিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকা জ্যাকসন হাইটস্থ ডাইভারসিটি প্লাজায় বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রথম প্রহরে এই কর্মসূচীর আয়োজন করে। কর্মসূচীর মধ্যে ছিলো অনুষ্ঠানস্থলে বিষয়ভিত্তিক চিত্র প্রদর্শণী, মোমবাতি প্রজ্জলন,আলোচনা, মৌন মিছিল প্রভৃতি।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এই দিনে চুড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পরিকল্পিতভাবে দেশের কৃতী সন্তানদের হত্যা করে। তারপর থেকে দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকাররা জাতিকে মেধাশূণ্য করতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ নির্মম হত্যাকান্ডের মাত্র দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
ঢাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে বলা হয়েছে: বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী হত্যাকারিদের বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে এই স্বস্তি নিয়ে জাতি নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছে। দিবসটি উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর বুধবার ভোর থেকেই মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের বাইরে মাজার রোড ও আশেপাশের এলাকা এবং বায়েরবাজার বদ্ধভূমি এলাকায় জনতার ঢল নামে। এদিন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদদের স্মরণ করতে আসা সাধারণ মানুষ স্বপ্ন দেখছেন একটি আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। তারা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যে পথে হাটছে সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক রাষ্ট্রীয় বাধা ছিল। এখন সে বাধা দূর হয়েছে। অনেকে বলেন, দেশের প্রতি ত্যাগের মাধ্যমেই বড় হওয়া যায়, এটাই তারা শিখিয়ে গেছেন।
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে এসে শহীদ পরিবারের সন্তানরা বলেন, এবার আর আক্ষেপ নয়, পেছনে তাকানো নয়, এখন সময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার।
দিবসটি উপলক্ষে সকালে কালো পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করণ, শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জলন, শোক র‌্যালি, শ্রদ্ধা নিবেদন, চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০ টায় বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ সাহানে কুরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এ সময়ে মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মুনাজাত করা হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছিল। ভোরের সূর্য ওঠার আগেই হাজারো মানুষ ভিড় করেন মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সামনে। সবার হাতে ছিল ফুলের তোড়া ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে লেখা কালো ব্যানার। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দালাল রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস সদস্যরা যেখানে জাতির মেধাবী সন্তানদের হত্যা করে ফেলে রেখেছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে জনতার যেন এক মোহনায় মিশে একাকার হয়ে যায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিতে মুহুর্মূহ শ্লোগানে বদ্ধভূমি এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময়ে সবার দাবী ছিল বুদ্ধিজীবী হত্যাকারি দ্বন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত শেষ করতে হবে, জাতি আর এ কলঙ্ক বহন করতে চায় না। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেওয়ায় পাকিস্তানের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করা সহ সে দেশের সকল পণ্য বর্জন করতে হবে।
president-abdul_hamidএদিকে বুধবার সকাল ৭টা ১০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শহীদ বেদীর সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। শহীদদের সম্মানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
pm-sheikh_hasinaপরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া শহীদ বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
sheikh_hasina-with-al-leadersআওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা পুস্পস্তবক অর্পণের সময় দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও এনামুল হক শামীম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজসহ দলীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ধানমন্ডিস্থ ৩২ নম্বর ভবনের সামনে রক্ষিত ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করার পর স্মৃতিস্তম্ভ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য খুলে দেওয়া হয়। পরে একে একে শহীদ বেদীতে শশ্রদ্ধা জানায় কেন্দ্রীয় ১৪ দল, শহীদ পরিবারের সন্তন ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা।
এরপর শ্রদ্ধা জানান দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি, দলের সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, দলের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
এছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, তাঁতিলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, আমার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জাতীয় জাদুঘর, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানান।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বধ্যভূমির আদলে মানব ভাস্কর্য রচনা করে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে এক সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্বে করেন এবং ভাষন দেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধানমন্ত্রী তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরাজ উদ্দিন হোসেনের পুত্র দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক শাহীন রেজা নূর এবং প্রথম আলোর উপ সম্পাদক জাহিদ রেজা নূর, শহীদ বুদ্ধিজীবী খন্দকার আবু তালেবের পুত্র আবুল হোসেন, শহীদ বুদ্ধিজীবি নিজাম উদ্দিন আহমেদের পুত্র শাফকাত নিজাম, শহীদ সাংবাদিক শিব সাধন চক্রবর্তীর পুত্র তরুন তপন চক্রবর্তী, কোষাধ্যক্ষ কার্তিক চ্যাটার্জি, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। ডিইউজের সভাপতি শাবান মাহমুদের সভাপতিত্বে সভায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।