মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের চার বছর
বিতর্কিত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জান্তা সরকার?
- প্রকাশের সময় : ১২:৪৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৩২ বার পঠিত
মিয়ানমারের ২০২৪ সালের আদমশুমারি ছিল দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে সহিংস ও বিতর্কিত। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে আদমশুমারির জন্য নিয়োজিত কর্মকর্তা ও তাদের জান্তা সদস্যরা বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর হামলার শিকার হন বারবার। অক্টোবরে মান্দালয়ে বোমা হামলায় সাতজন সৈন্য নিহত হয় এবং কয়েক দিন পর কায়িন রাজ্যে রকেট হামলায় আরো তিনজন সৈন্য নিহত হয়। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা রিচার্ড হর্সি মিয়ানমারের আদমশুমারিকে সম্পূর্ণ ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেছেন। তবে জান্তা সরকার এটিকে সফলতা হিসেবে দাবি করেছে। যেখানে বেশির ভাগ দেশ আদমশুমারিকে সহজ একটি জনসংখ্যা গণনার প্রক্রিয়া হিসেবে দেখে থাকে, সেখানে মিয়ানমারে এটি দেশের গণতন্ত্রের সংগ্রামের কারণে একটি রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
জান্তা সরকার জানুয়ারিতে বলেছে, আদমশুমারি তাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে। তবে এটি তাদের এ বছরের শেষের দিকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আগের চূড়ান্ত পদক্ষেপ, যা হবে ২০২১ সালের জান্তা অভ্যুত্থানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার পর প্রথম নির্বাচন। এ অভ্যুত্থানই দেশটিতে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত করেছিল।
জান্তা সরকারের দাবি, আসন্ন নির্বাচন দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে। তবে বিরোধী গোষ্ঠীগুলো বলছে, নির্বাচনটি শুধু জান্তা শাসনকে বৈধতা দেয়ার একটি উপায় মাত্র। দেশটির উৎখাত হওয়া জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) নামে বিরোধী গোষ্ঠীর মুখপাত্র জাও কিয়াও বলেছেন, ‘এ নির্বাচন প্রহসনমূলক হবে এবং শান্তি বয়ে আনবে না। বরং এটি আরো সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।’ ২০২০ সালের নভেম্বরে অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচনে ৮২ শতাংশ আসন জিতে জয় অর্জন করে। তবে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী তার সরকারকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় এবং অং সান সু চিসহ অন্য এনএলডি নেতাদের গ্রেফতার করে। সেনাবাহিনী বিস্তৃত ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছিল। কিন্তু এর কোনো প্রমাণ পেশ করেনি। এ অভ্যুত্থানের ফলে সারা দেশে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ শুরু হয়, যা পরে সশস্ত্র বিদ্রোহে পরিণত হয়। আর তা এখনো চলমান।
অভ্যুত্থানের পর থেকে জ্যেষ্ঠ জেনারেল মিন অং হ্লাইং নেতৃত্বাধীন সেনা-নিয়ন্ত্রিত সরকার দেশ শাসন করছে, যা বারবার নবায়ন করা জরুরি অবস্থার আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। শুক্রবার সেনাবাহিনী জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়িয়ে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সম্প্রসারণ করেছে। তাদের দাবি, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য আরো সময় প্রয়োজন। প্রগ্রেসিভ ভয়েস নামে গণতান্ত্রিক গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা খিন ওহমার বলেছেন, ‘সেনাবাহিনী কোনো বিশ্বাসযোগ্য তথ্য সরবরাহ করেনি। তাছাড়া আদমশুমারি গণতান্ত্রিক প্রতিরোধ গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রিত বড় অংশের জনগণকে অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।’ অভিবাসন ও জনসংখ্যা মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে, তারা ৩৩০টি টাউনশিপের মধ্যে মাত্র ১৪৫টিতে সম্পূর্ণভাবে আদমশুমারি সম্পন্ন করতে পেরেছে। অর্থাৎ সেনাবাহিনী দেশের অর্ধেকেরও কম অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে। তবু মন্ত্রণালয় এ আদমশুমারিকে একটি ‘জোরালো সাফল্য’ হিসেবে প্রশংসা করেছে এবং উৎসাহী অংশগ্রহণের জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
এর বিপরীতে খিন ওহমার বলেছেন, ‘অনেক মানুষকে বাধ্য করা হয়েছে ব্যক্তিগত তথ্য দেয়ার জন্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বন্দুকের মুখে এ কাজ করা হয়েছে।’ তিনি সতর্ক করে জানান, সেনাবাহিনী তাদের প্রহসনমূলক নির্বাচনে নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংস পদ্ধতি ব্যবহার করবে। সূত্র : বণিক বার্তা।