রাজনীতিতে অনৈক্যের সুর
জাতীয় স্বার্থে ভুল বোঝাবুঝির অবসান কাম্য
- প্রকাশের সময় : ১০:৫৮:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
- / ১২ বার পঠিত
বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে অনৈক্যের সুর ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। রোববার (২৬ জানুয়ারী) যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, ভোটের হিসাব-নিকাশ যত এগিয়ে আসছে, বিরোধ ততই প্রকাশ্যে রূপ নিচ্ছে। দীর্ঘদিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভোটের অধিকারসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে যারা রাজপথে শামিল ছিলেন, মাত্র ৫ মাসের মাথায় এসে তারা এখন একে অপরকে নিশানা বানাচ্ছেন। এমনকি জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত সফল গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সমন্বয়কদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে পালটাপালটি বক্তব্যসহ এক ধরনের বিরোধ স্পষ্ট হচ্ছে। নির্বাচনের সময় নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার ইস্যুর সমাধান না হতেই এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতার প্রশ্ন।
বলা বাহুল্য, যে অনৈক্যের সুর শুনতে পাওয়া যাচ্ছে, তা দেশের ভবিষ্যতের জন্য মোটেই কল্যাণকর নয়। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে তাই কোনো দূরত্ব বা ভুল বোঝাবুঝি কাম্য নয়। কাম্য নয়, বিরোধকে উসকে দেওয়ার মতো পরস্পরের মধ্যকার পালটাপালটি বক্তব্যও। সেটি হলে দেশের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার যারা বিরোধী, তারা উৎসাহিত ও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। ভুলে গেলে চলবে না, জুলাই বিপ্লবে পরাজিত শক্তি এখনো নানাভাবে তৎপর। তাদের হাতে রয়েছে লুটের কোটি কোটি টাকা, অনেক অন্ধ স্তাবক ও সুবিধাবাদী গোষ্ঠী, শক্তিশালী প্রচারণা নেটওয়ার্ক। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় গুজব রটিয়ে যে অনৈক্যের চেষ্টা চালাচ্ছে, সেই ফাঁদে দেশপ্রেমী কোনো পক্ষকেই জড়িয়ে ফেলা কাম্য নয়। বরং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগকে স্মরণে রেখে দেশ ও জাতির কল্যাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এটা ঠিক, ভিন্নমত থাকবে; কিন্তু তা যেন অপশক্তির জন্য সুযোগ হয়ে ওঠার পর্যায়ে চলে না যায়, সেদিকে সব পক্ষকেই খেয়াল রাখতে হবে।
মনে রাখতে হবে, বিগত সরকারের দীর্ঘ ১৬ বছরের অনিয়ম দূর করে একটি স্থিতিশীল দেশ গঠন রাতারাতি সম্ভব নয়, এজন্য যৌক্তিক সময়ের প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজনে বারবার যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছে, তার ওপর আস্থা রাখতে হবে। ছয় মাস হোক, এক বছর কিংবা দেড় বছর পরই হোক, নির্বাচন এ দেশে হবেই। সেই পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে সব পক্ষেরই কিন্তু ভূমিকা রয়েছে। আবার এটাও ঠিক, চ্যালেঞ্জ হলেও এ সরকারকেও সামনের দিনগুলোতে নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে হবে, দ্রæত রোডম্যাপ প্রকাশ করতে হবে। অন্যথায় নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে নানা প্রশ্ন উঠবে। দুঃশাসনের অমানিশা ভেদ করে দেশের ভাগ্যাকাশে প্রভাকরের যে জ্যোতির উদয় হয়েছে, স্বার্থের দ্ব›েদ্ব কিংবা কোনো অশুভ শক্তির প্রভাবে তা যেন আবারও ঢেকে না যায়, সেদিকে দেশপ্রেমিক সবপক্ষই সজাগ দৃষ্টি রাখবে, এটাই প্রত্যাশা। (দৈনিক যুগান্তর)