নিউইয়র্ক ১০:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মিয়ানমারের আরকান প্রদেশে অব্যাহত গণহত্যা : নিউইয়র্কে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল দূতাবাস প্রাঙ্গন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:০৩:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৬
  • / ১২৩৭ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: মিয়ানমারের আরকান প্রদেশে অব্যাহত গণহত্যার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ওয়ার্ল্ড রোহিঙ্গা অর্গানাইনাইজেশনের নেতৃত্বাধীন ১৫টি সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনের একটি জোট।‘আমেরিকান ইউনাইটেড এগেইন্সট জেনোসাইড রোহিঙ্গাস ইন মিয়ানমার’-এর ব্যানারে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনস্থ ৭৭ ষ্ট্রিটে অবস্থিত মিয়ানমারের জাতিসঙ্ঘ মিশন ও কন্সুলেটের সামনে বুধবার দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত চলে এ বিক্ষোভ কর্মসূচী। এসময় প্রবল বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে শত শত নারী পুরুষ শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত করে তোলে ম্যানহাটনের পুরো ৭৭ স্ট্রিট। পরিস্থিতি মোকাবেলায় মোতায়েন করা হয় নিউইয়র্ক পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের।
ওয়ার্ল্ড রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট মহিউদ্দিন মোহাম্মদ ইউসুফের সভাপতিত্বে অনূষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রাজনীতিক আবদুল লতিফ সম্রাট, বাংলাদেশ সোসাইটির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, সোসাইটির বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও নবনির্বাচিত সিনিয়র সহ সভাপতি আবদুর রহিম হাওলাদার, মূলধারার রাজনীতিবিদ গিয়াস আহমেদ, বাংলাদেশ আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিল-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট এন মজুমদার, সাউথ এশিয়ান সলিডারিটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ইমরান আনসারী, ইউনাইটেড ওলামা কাউন্সিল অব ইউএসএ-এর সভাপতি মুফতি লুৎফুর রহমান কাসেমি, সেক্রেটারি মাওলানা রশিদ আহমেদ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, মানবাধিকার সংস্থা ড্রামের অর্গানাইজিং ডিরেক্টর কাজী ফৌজিয়া প্রমূখ।
বিক্ষোভ সমাবেশে জোটের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা মহিউদ্দিন ইউসুফ। এসময় তিনি বলেন, মিয়ানমারে আজকে যে গণহত্যা চলছে তা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছে। শুধু তাই সোস্যাল মিডিয়ায় যেসব মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ভিডিও ও ছবি প্রকাশিত হয়েছে এসবগুলো রয়টার্স, বিবিসিসহ বিশ্বের সকল মিডিয়ায় স্বীকৃত হয়েছে। এমতাবস্থায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে গঠিত জোটের পক্ষ থেকে আমরা গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
সমাবেশে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে মানবিক বিপর্যয়ের দিক তুলে ধরে জোটের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এতে দাবি করা হয়- রোহিঙ্গা গনহত্যা বন্ধে সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার সমুন্নত করতে তাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে ঘোষনা করতে হবে। অবিলম্বে রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। বুদ্ধিস্ট জঙ্গিদের অন্যান্য ধর্মের বিরুদ্ধে চালানো বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য বন্ধ করতে হবে। মিয়ানমারে চলমান নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত করতে হবে।
সমাবেশে আবদুল লতিফ সম্রাট বলেন, মিয়ানমারে যে গণহত্যা চলছে তার আন্তর্জাতিক তদন্ত করতে হবে। গণহত্যার দায়ে অংসান সূচির নোবেল পুরস্কার কেড়ে নিতে হবে।
ইমরান আনসারী বলেন, মিয়ানমারে যা চলছে তা গণহত্যার চেয়েও ভয়াবহ। তাই রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষায় জাতিসংঘের উচিত অবিলম্বে মিয়ানমারে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণ করা। গণহত্যার জন্য মিয়ানমার সরকারকে আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের মূখোমূখি হতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
কাজী ফৌজিয়া বলেন, মিয়ানমারে যা হচ্ছে তা ইসলামোফোবিয়ার কারণে হচ্ছে । এর মূল কথা হচ্ছে বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের উৎখাত। মিয়ানমারে শুধু মুসলামানদের হত্যা করছে না তারা মানবতাকে হত্যা করছে।
এন মজুমদার বলেন, রোহিঙ্গাদের রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মানবতার পক্ষে আজকে সরকারকে দাঁড়াতেই হবে। বাংলাদেশ সরকারকে রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিতে হবে।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি প্রকাশকারী সংগঠনগুলো হচ্ছে ওয়ার্ল্ড রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন, বাংলাদেশ আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিল, রোহিঙ্গা আমেরিকান সোসাইটি, সাউথ এশিয়ান সলিডারিটি ফাউন্ডেশন, রোহিঙ্গা কালচারাল সেন্টার, সাউথ এশিয়ান ফান্ড ফর এডুকেশন স্কলারশিপ এন্ড ট্রেইনিং, বার্মিজ রোহিঙ্গা কমিউনিটি ইন জর্জিয়া, শাপলা ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশন, বলাকা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন।
উল্লেখ্য, একই দাবীতে বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক আগামী ৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ করবে। এই সমাবেশ সফল করতে সোসাইটির বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহীম হালাদার সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

মিয়ানমারের আরকান প্রদেশে অব্যাহত গণহত্যা : নিউইয়র্কে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল দূতাবাস প্রাঙ্গন

প্রকাশের সময় : ০৪:০৩:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

নিউইয়র্ক: মিয়ানমারের আরকান প্রদেশে অব্যাহত গণহত্যার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ওয়ার্ল্ড রোহিঙ্গা অর্গানাইনাইজেশনের নেতৃত্বাধীন ১৫টি সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনের একটি জোট।‘আমেরিকান ইউনাইটেড এগেইন্সট জেনোসাইড রোহিঙ্গাস ইন মিয়ানমার’-এর ব্যানারে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনস্থ ৭৭ ষ্ট্রিটে অবস্থিত মিয়ানমারের জাতিসঙ্ঘ মিশন ও কন্সুলেটের সামনে বুধবার দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত চলে এ বিক্ষোভ কর্মসূচী। এসময় প্রবল বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে শত শত নারী পুরুষ শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত করে তোলে ম্যানহাটনের পুরো ৭৭ স্ট্রিট। পরিস্থিতি মোকাবেলায় মোতায়েন করা হয় নিউইয়র্ক পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের।
ওয়ার্ল্ড রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট মহিউদ্দিন মোহাম্মদ ইউসুফের সভাপতিত্বে অনূষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রাজনীতিক আবদুল লতিফ সম্রাট, বাংলাদেশ সোসাইটির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, সোসাইটির বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও নবনির্বাচিত সিনিয়র সহ সভাপতি আবদুর রহিম হাওলাদার, মূলধারার রাজনীতিবিদ গিয়াস আহমেদ, বাংলাদেশ আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিল-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট এন মজুমদার, সাউথ এশিয়ান সলিডারিটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ইমরান আনসারী, ইউনাইটেড ওলামা কাউন্সিল অব ইউএসএ-এর সভাপতি মুফতি লুৎফুর রহমান কাসেমি, সেক্রেটারি মাওলানা রশিদ আহমেদ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, মানবাধিকার সংস্থা ড্রামের অর্গানাইজিং ডিরেক্টর কাজী ফৌজিয়া প্রমূখ।
বিক্ষোভ সমাবেশে জোটের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা মহিউদ্দিন ইউসুফ। এসময় তিনি বলেন, মিয়ানমারে আজকে যে গণহত্যা চলছে তা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছে। শুধু তাই সোস্যাল মিডিয়ায় যেসব মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ভিডিও ও ছবি প্রকাশিত হয়েছে এসবগুলো রয়টার্স, বিবিসিসহ বিশ্বের সকল মিডিয়ায় স্বীকৃত হয়েছে। এমতাবস্থায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে গঠিত জোটের পক্ষ থেকে আমরা গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
সমাবেশে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে মানবিক বিপর্যয়ের দিক তুলে ধরে জোটের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এতে দাবি করা হয়- রোহিঙ্গা গনহত্যা বন্ধে সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার সমুন্নত করতে তাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে ঘোষনা করতে হবে। অবিলম্বে রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। বুদ্ধিস্ট জঙ্গিদের অন্যান্য ধর্মের বিরুদ্ধে চালানো বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য বন্ধ করতে হবে। মিয়ানমারে চলমান নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত করতে হবে।
সমাবেশে আবদুল লতিফ সম্রাট বলেন, মিয়ানমারে যে গণহত্যা চলছে তার আন্তর্জাতিক তদন্ত করতে হবে। গণহত্যার দায়ে অংসান সূচির নোবেল পুরস্কার কেড়ে নিতে হবে।
ইমরান আনসারী বলেন, মিয়ানমারে যা চলছে তা গণহত্যার চেয়েও ভয়াবহ। তাই রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষায় জাতিসংঘের উচিত অবিলম্বে মিয়ানমারে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণ করা। গণহত্যার জন্য মিয়ানমার সরকারকে আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের মূখোমূখি হতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
কাজী ফৌজিয়া বলেন, মিয়ানমারে যা হচ্ছে তা ইসলামোফোবিয়ার কারণে হচ্ছে । এর মূল কথা হচ্ছে বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের উৎখাত। মিয়ানমারে শুধু মুসলামানদের হত্যা করছে না তারা মানবতাকে হত্যা করছে।
এন মজুমদার বলেন, রোহিঙ্গাদের রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মানবতার পক্ষে আজকে সরকারকে দাঁড়াতেই হবে। বাংলাদেশ সরকারকে রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিতে হবে।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি প্রকাশকারী সংগঠনগুলো হচ্ছে ওয়ার্ল্ড রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন, বাংলাদেশ আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিল, রোহিঙ্গা আমেরিকান সোসাইটি, সাউথ এশিয়ান সলিডারিটি ফাউন্ডেশন, রোহিঙ্গা কালচারাল সেন্টার, সাউথ এশিয়ান ফান্ড ফর এডুকেশন স্কলারশিপ এন্ড ট্রেইনিং, বার্মিজ রোহিঙ্গা কমিউনিটি ইন জর্জিয়া, শাপলা ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশন, বলাকা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন।
উল্লেখ্য, একই দাবীতে বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক আগামী ৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ করবে। এই সমাবেশ সফল করতে সোসাইটির বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহীম হালাদার সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।