নিউইয়র্ক ১১:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

তারেক রহমানের বক্তব্য গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:০৮:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৯ বার পঠিত

এনাম আবেদীন: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাম্প্রতিক কালে দেওয়া বক্তব্যগুলো জনমনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেওয়া তার বক্তব্য নিয়ে সুধী সমাজের মধ্যে আলোচনা ও চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলছেন, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় তারেক রহমানের এখনকার বক্তব্য বেশ গ্রহণযোগ্য ও পরিপক্ব। তাদের মতে, তারেক রহমানের নেপথ্যে যে ‘থিংকট্যাংক’ বা পরামর্শকরা রয়েছেন তারাও এবারে বেশ ইতিবাচকভাবে বিএনপির পথনকশা প্রণয়নে তাকে সাহায্য করছেন।
সর্বশেষ গত ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে দলটির এক সেমিনারে তারেক রহমানের দেওয়া বক্তব্য ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। ওই দিনই জার্মান ডয়চে ভেলে একাডেমি এবং বন ও রাইন-জিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক যোগাযোগবিষয়ক শিক্ষক ড. সাইমুম পারভেজ এক নিবন্ধে বিএনপির ৩১ দফার প্রশংসা করে তারেক রহমানের এই দৃষ্টিভঙ্গি বিএনপির ঘরে ফেরার লক্ষণ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকেই বিএনপি রাষ্ট্র কাঠামোতে সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে আসছে। দলটির ৩১ দফায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির যে নীতিগত দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা দলটির জিয়াউর রহমানের বিএনপিতে ফেরারই স্পষ্ট ইঙ্গিত।’
শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের কথা কেউ বললে তাকে সমর্থন করা উচিত। তবে এ ক্ষেত্রে সদিচ্ছার প্রমাণ করতে হবে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, তারেক রহমান বেশ শালীন ও বাস্তবসম্মত কথা বলছেন। তার বক্তব্য আগের তুলনায় বেশ পরিপক্ব মনে হচ্ছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের মতে, তারেক রহমানের সাম্প্রতিক কালের দেওয়া বক্তব্যগুলো বেশ ইতিবাচক। এই ধরনের বক্তব্য জনগণের জন্য স্বস্তিদায়কও বটে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, অনেক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তারেক রহমান এখন যথার্থ রাজনীতিবিদদের মতোই কথা বলছেন। কারণ তিনি দেখতে পাচ্ছেন যে নির্বাচন হলে বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে। ফলে জনগণের আকাঙ্খার দিকে লক্ষ রেখেই তিনি বক্তব্য দিচ্ছেন।
এক-এগারোর পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকারের চাপে জামিনে মুক্ত হয়ে লন্ডনে চলে যান তারেক রহমান। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারী হাইকোর্টের এক রায়ের কারণে গণমাধ্যমে তারেকের বক্তব্য প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সরকার পতনের পর গত ২২ আগস্ট ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর তারেক রহমানের বক্তব্য গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার হচ্ছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শুরু থেকেই গণমানুষের আকাঙ্খার দিকে লক্ষ রেখে এবং বেশ সতর্কতার সঙ্গে কথা বলছেন ৫৬ বছর বয়সী তারেক রহমান। অনেকের মতে, গত ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দলকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি বাস্তব অবস্থার মুখোমুখি হয়েছেন তারেক রহমান। এ কারণে তার ধৈর্য ও রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশও অনেকটা বদলেছে। সাইমুম পারভেজ তার নিবন্ধে লিখছেন, জিয়াউর রহমানের সিভিক ন্যাশনালিজমের যে ধারা, তাতে বহুত্ববাদ ও অসাম্প্রদায়িকতা একটি বড় ভূমিকা পালন করে। তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্য ও কর্মকান্ড বিএনপির ঘরে ফেরারই লক্ষণ।
ক্ষমতায় থাকার সময় এবং এর পরের সময়টায় জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে নেতিবাচক ব্যাপক প্রচারণা ছিল। এ কারণে নাগরিক সমাজের একটি বড় অংশের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের মতে, গত ১৫ বছরে ক্ষমতায় থেকে সুধী সমাজের অনেক নিরপেক্ষ ব্যক্তিকেও আওয়ামী বিরোধী তৈরি করেছিল ক্ষমতাসীনরা। ফলে বিএনপি এখন নাগরিক সমাজের এই অংশের সমর্থন পাচ্ছে।
সাইমুম পারভেজ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নাগরিক সমাজের তারেক রহমান ও বিএনপির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ক্রমেই দৃশ্যমান। বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা, সাম্য, ন্যায়বিচার ও অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠা করার স্বার্থে মধ্যপন্থি দলগুলোর উত্থান ও টিকে থাকা জরুরি। গ্রামপর্যায় পর্যন্ত শক্ত জনসমর্থন ও নেটওয়ার্ক বিএনপির রয়েছে। সে জন্য সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে সুস্থ রাজনীতি ও কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে নাগরিক সমাজ ও বিএনপির একে অপরের সঙ্গে একযোগে কাজ করা উচিত।’
সাম্প্রতিক কালে তারেক রহমানের দেওয়া বক্তব্যের মধ্যে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন, কেউ পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না এমন ব্যবস্থা চালু, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সব মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার রয়েছে। এ ছাড়া পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। তার বক্তব্যের বড় একটি অংশজুড়ে সব নাগরিক, বিশেষত মানবাধিকারকর্মী, সংবাদকর্মী, ও সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, সমাজের জ্ঞানী-গুণী অর্থাৎ সুশীল সমাজকে কাজে সম্পৃক্ত করার কথা।
এ বিষয়ে সাইমুম পারভেজ বলেন, ‘বাংলাদেশের সুশীল সমাজের একটি অংশ তারেক রহমান ও বিএনপির বিরুদ্ধে জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতা ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। কিন্তু বিচার বিভাগের অসীম দলীয়করণ ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর পরও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রমাণিত হয়নি। বরং তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আওয়ামী লীগের নেতায় পরিণত হওয়া এবং সংসদ সদস্যের মনোনয়ন পাওয়া, তাকে খালাস দেওয়া বিচারককে হয়রানি- মামলাগুলোর অসারতা তুলে ধরে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদেরও হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি, টাকা পাচার, ব্যাংক লুট, মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতির সামনে বিএনপির বিরুদ্ধে দুর্বল দুর্নীতির অভিযোগ ঠুনকো মনে হয়।’
সরকার পতনের পর কার্যত বাংলাদেশের রাজনীতির পাশাপাশি প্রশাসনসহ সর্বত্র পরিস্থিতি একেবারে উল্টে গেছে। বেশির ভাগ জায়গা থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পালিয়ে গেছেন। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থকরা ‘লাভজনক’ বলে পরিচিত ওই জায়গাগুলো দখল করতে চাইছেন। কিন্তু গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত অভিযোগ দেখে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন তারেক রহমান।
বিএনপি দপ্তরের তথ্যমতে, গত ৫ আগস্টের পর ২০ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ৪৪ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫২৭ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ, ৪৫১ জনকে বহিষ্কার, ২৫ জনের পদ স্থগিত, ৩৬ জনকে সতর্ক এবং ৫ জনকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও থানা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মী সাংগঠনিক শাস্তির মুখে পড়েছেন।
জানা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি সুধী সমাজের মধ্যেও তারেক রহমানের এসব পদক্ষেপ প্রশংসিত হয়েছে।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক
একটি দেশের অবস্থা ভালো হবে কি না, সেটি সেই দেশের রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য দেখলে বোঝা যায়। তারেক রহমানের ইতিবাচক এসব বক্তব্যের কারণ হলো, অবস্থার একটি চাপ আছে। তা ছাড়া বিএনপির রাজনীতিও পরিবর্তন হয়েছে। দলটি ৩১ দফা প্রচার করছে। এটি পুস্তক আকারে প্রকাশিত হলে ভালো হতো। তাহলে আলোচনা বেশি হতো। পত্রিকায় পড়ার তুলনায় বই আকারে মানুষ পড়তে পছন্দ করে। তারেক রহমানের বয়স বাড়ছে। অভিজ্ঞতা বাড়ছে। এখন তিনি নেতা হিসেবে কথা বলছেন। এ কারণে তার বক্তব্য ভিন্ন দেখা যাচ্ছে। অবস্থার চাপে মত বদল হয়। দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, একসময় মান্নান ভূঁইয়ার এ ধরনের বক্তব্যের কারণে তাকে বহিষ্কার করা হলেও এখন অবস্থার প্রয়োজনে তারেক রহমানের মত বদল হয়েছে। কিন্তু কাজ করার জন্য যেভাবে দল গঠন করতে হয়, অর্গানাইজ করতে হয়, সেটি করতে পারলে সফলতা পাওয়া যেতে পারে। চাঁদাবাজির জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ভালো। এক নম্বর নেতা হিসেবে তিনি যেসব কথা বলছেন, সেটি অবশ্যই শোভন। কিন্তু কোনো কিছু করা বা বাস্তবায়ন করতে হলে ভিন্নভাবে কাজ করতে হবে। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কমিটি গঠন করে কমিটি কীভাবে কাজ করবে, সেটি কেন্দ্র থেকে স্তরে স্তরে জনগণের মধ্যে প্রচার করতে হবে। পাশাপাশি সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের আত্মশুদ্ধি এবং আত্মসমালোচনার চর্চা করতে হবে। এ ধরনের প্রচেষ্টা এখনো চোখে পড়ছে না। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা কর্মসূচি দর্শন হিসেবে জনগণের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিল। বিএনপির কর্মসূচি স্ক্রিনে প্রচার করলেই হবে না। বিশ্বাসযোগ্য এবং দর্শন হিসেবে প্রচার করতে পারলে জনগণ গ্রহণ করবে।
বিএনপি ও তারেকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য আরও শক্তিশালী থাকা উচিত। রাজনীতি কী এবং কেন করব; বাংলাদেশের জন্য কী করা দরকার, আত্মসমালোচনা ও আত্মজিজ্ঞাসা দরকার। পরিবর্তনের কথা বলা দরকার। ‘হ্যাঁ, আমরা পারি’ সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এই ধরনের ¯েøাগান নিয়ে বিএনপির অগ্রসর হওয়া উচিত।
পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতি না করার কথা কেবল মুখে বললে হবে না। এটি পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করতে হবে। সেটাই দায়িত্বশীলতা হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের কথা কেউ বললে তাকে সমর্থন করা উচিত। তবে এ ক্ষেত্রে সদিচ্ছা প্রমাণ করতে হবে।
জাতীয় ঐক্যের জন্য বিএনপি সব দলকে চিঠি দিতে পারে। বিএনপির অবশ্যই সেই উদ্যোগ নেওয়া উচিত। তারেক রহমানের হাতে এখন অনেক বিষয় একসঙ্গে রয়েছে। তবে সমস্যাটা তারেক রহমানকে অবশ্যই বুঝতে হবে, সম্ভাবনাটাও বুঝতে হবে।
ড. শাহদীন মালিক
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, ক্ষমতায় গিয়ে প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন করা না করা হয়তো পরের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু কয়েক মাস ধরে তারেক রহমানের বক্তব্যে জনমনে একধরনের ইতিবাচক বার্তা প্রতিফলিত হচ্ছে। তিনি অনেক বাস্তবসম্মত এবং শালীন ভাষায় কথা বলছেন। পাশাপাশি তার বক্তব্যও আগের তুলনায় অনেক পরিপক্ব বলেই মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, তার নেপথ্যের থিংকট্যাংক, মানে তাকে যারা পরামর্শ দিচ্ছেন তারাও যথেষ্ট ইতিবাচক। দখল বা চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে তিনি যে কয়েক শ বিএনপি নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেছেন, সেটি দলের ভেতরে-বাইরে একধরনের কঠোর বার্তা দিয়েছে। এটি বিএনপিকে সংযত রাখার জন্য ভালো পদক্ষেপ। তা ছাড়া তিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক, উদার ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথা বলছেন। এতে মনে হচ্ছে, কট্টরপন্থা তার পছন্দ নয়। তাকে এবারে বেশ টলারেন্ট বা সহিষ্ণু মনে হচ্ছে। অনেক সময় ভালো কাজ করার জোর ইচ্ছা থাকলেও বাস্তব কারণে তা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। তবে তারেক রহমানের মনোভাব যে ইতিবাচক, এটি স্পষ্ট।
বদিউল আলম মজুমদার
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। আমরা আশা করি, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় এসব ইতিবাচক কথাগুলো প্রতিফলিত হবে।’ তিনি বলেন, পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, এটাও নিঃসন্দেহে ভালো কথা। উদার গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গঠনের কথা জনগণের জন্য স্বস্তিদায়ক। কিন্তু এগুলো শুধু মুখে বললে হবে না, কাজে বাস্তবায়ন করাই গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, যদি নির্বাচন হয় তাহলে তারা নির্বাচনে জয়লাভ করবে, ক্ষমতায় আসবে নিশ্চিত এটা বোঝাই যাচ্ছে। বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামোয় এখন আওয়ামী লীগ নেই। যেহেতু আওয়ামী লীগকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। সব মিলিয়ে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়াটা নিশ্চিত। তিনি বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিএনপি সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারেক রহমান যাতে ক্ষমতায় যেতে পারেন, সে জন্য যেখানে যেখানে পুনর্গঠন করা দরকার সেখানে বিএনপি সমর্থন দেবে। প্রধানমন্ত্রী পদে দুবারের বেশি থাকতে পারবেন না, তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ও উদার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের কথা বলা, অবশ্যই ইতিবাচক বক্তব্য। কী করা যাবে, কী করা যাবে না- এটা তার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে। তারেক রহমান রাজনীতিবিদদের মতোই কথা বলছেন।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘তারেক রহমান বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। বছরের পর বছর তিনি সারা বিশ্বের খোঁজখবর রেখেছেন। তিনি লন্ডনে থাকলেও সব সময় রাজনীতির মধ্যেই ছিলেন। দলের নেতারাও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমি মনে করি, যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন হবে, তত তাড়াতাড়ি বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়াটা নিশ্চিত হবে। সেখানে তারেক রহমানের ভূমিকাই মুখ্য হবে।’ (দৈনিক খবরের কাগজ)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

তারেক রহমানের বক্তব্য গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে

প্রকাশের সময় : ০১:০৮:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

এনাম আবেদীন: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাম্প্রতিক কালে দেওয়া বক্তব্যগুলো জনমনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেওয়া তার বক্তব্য নিয়ে সুধী সমাজের মধ্যে আলোচনা ও চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলছেন, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় তারেক রহমানের এখনকার বক্তব্য বেশ গ্রহণযোগ্য ও পরিপক্ব। তাদের মতে, তারেক রহমানের নেপথ্যে যে ‘থিংকট্যাংক’ বা পরামর্শকরা রয়েছেন তারাও এবারে বেশ ইতিবাচকভাবে বিএনপির পথনকশা প্রণয়নে তাকে সাহায্য করছেন।
সর্বশেষ গত ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে দলটির এক সেমিনারে তারেক রহমানের দেওয়া বক্তব্য ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। ওই দিনই জার্মান ডয়চে ভেলে একাডেমি এবং বন ও রাইন-জিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক যোগাযোগবিষয়ক শিক্ষক ড. সাইমুম পারভেজ এক নিবন্ধে বিএনপির ৩১ দফার প্রশংসা করে তারেক রহমানের এই দৃষ্টিভঙ্গি বিএনপির ঘরে ফেরার লক্ষণ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকেই বিএনপি রাষ্ট্র কাঠামোতে সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে আসছে। দলটির ৩১ দফায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির যে নীতিগত দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা দলটির জিয়াউর রহমানের বিএনপিতে ফেরারই স্পষ্ট ইঙ্গিত।’
শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের কথা কেউ বললে তাকে সমর্থন করা উচিত। তবে এ ক্ষেত্রে সদিচ্ছার প্রমাণ করতে হবে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, তারেক রহমান বেশ শালীন ও বাস্তবসম্মত কথা বলছেন। তার বক্তব্য আগের তুলনায় বেশ পরিপক্ব মনে হচ্ছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের মতে, তারেক রহমানের সাম্প্রতিক কালের দেওয়া বক্তব্যগুলো বেশ ইতিবাচক। এই ধরনের বক্তব্য জনগণের জন্য স্বস্তিদায়কও বটে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, অনেক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তারেক রহমান এখন যথার্থ রাজনীতিবিদদের মতোই কথা বলছেন। কারণ তিনি দেখতে পাচ্ছেন যে নির্বাচন হলে বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে। ফলে জনগণের আকাঙ্খার দিকে লক্ষ রেখেই তিনি বক্তব্য দিচ্ছেন।
এক-এগারোর পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকারের চাপে জামিনে মুক্ত হয়ে লন্ডনে চলে যান তারেক রহমান। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারী হাইকোর্টের এক রায়ের কারণে গণমাধ্যমে তারেকের বক্তব্য প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সরকার পতনের পর গত ২২ আগস্ট ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর তারেক রহমানের বক্তব্য গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার হচ্ছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শুরু থেকেই গণমানুষের আকাঙ্খার দিকে লক্ষ রেখে এবং বেশ সতর্কতার সঙ্গে কথা বলছেন ৫৬ বছর বয়সী তারেক রহমান। অনেকের মতে, গত ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দলকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি বাস্তব অবস্থার মুখোমুখি হয়েছেন তারেক রহমান। এ কারণে তার ধৈর্য ও রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশও অনেকটা বদলেছে। সাইমুম পারভেজ তার নিবন্ধে লিখছেন, জিয়াউর রহমানের সিভিক ন্যাশনালিজমের যে ধারা, তাতে বহুত্ববাদ ও অসাম্প্রদায়িকতা একটি বড় ভূমিকা পালন করে। তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্য ও কর্মকান্ড বিএনপির ঘরে ফেরারই লক্ষণ।
ক্ষমতায় থাকার সময় এবং এর পরের সময়টায় জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে নেতিবাচক ব্যাপক প্রচারণা ছিল। এ কারণে নাগরিক সমাজের একটি বড় অংশের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের মতে, গত ১৫ বছরে ক্ষমতায় থেকে সুধী সমাজের অনেক নিরপেক্ষ ব্যক্তিকেও আওয়ামী বিরোধী তৈরি করেছিল ক্ষমতাসীনরা। ফলে বিএনপি এখন নাগরিক সমাজের এই অংশের সমর্থন পাচ্ছে।
সাইমুম পারভেজ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নাগরিক সমাজের তারেক রহমান ও বিএনপির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ক্রমেই দৃশ্যমান। বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা, সাম্য, ন্যায়বিচার ও অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠা করার স্বার্থে মধ্যপন্থি দলগুলোর উত্থান ও টিকে থাকা জরুরি। গ্রামপর্যায় পর্যন্ত শক্ত জনসমর্থন ও নেটওয়ার্ক বিএনপির রয়েছে। সে জন্য সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে সুস্থ রাজনীতি ও কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে নাগরিক সমাজ ও বিএনপির একে অপরের সঙ্গে একযোগে কাজ করা উচিত।’
সাম্প্রতিক কালে তারেক রহমানের দেওয়া বক্তব্যের মধ্যে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন, কেউ পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না এমন ব্যবস্থা চালু, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সব মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার রয়েছে। এ ছাড়া পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। তার বক্তব্যের বড় একটি অংশজুড়ে সব নাগরিক, বিশেষত মানবাধিকারকর্মী, সংবাদকর্মী, ও সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, সমাজের জ্ঞানী-গুণী অর্থাৎ সুশীল সমাজকে কাজে সম্পৃক্ত করার কথা।
এ বিষয়ে সাইমুম পারভেজ বলেন, ‘বাংলাদেশের সুশীল সমাজের একটি অংশ তারেক রহমান ও বিএনপির বিরুদ্ধে জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতা ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। কিন্তু বিচার বিভাগের অসীম দলীয়করণ ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর পরও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রমাণিত হয়নি। বরং তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আওয়ামী লীগের নেতায় পরিণত হওয়া এবং সংসদ সদস্যের মনোনয়ন পাওয়া, তাকে খালাস দেওয়া বিচারককে হয়রানি- মামলাগুলোর অসারতা তুলে ধরে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদেরও হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি, টাকা পাচার, ব্যাংক লুট, মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতির সামনে বিএনপির বিরুদ্ধে দুর্বল দুর্নীতির অভিযোগ ঠুনকো মনে হয়।’
সরকার পতনের পর কার্যত বাংলাদেশের রাজনীতির পাশাপাশি প্রশাসনসহ সর্বত্র পরিস্থিতি একেবারে উল্টে গেছে। বেশির ভাগ জায়গা থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পালিয়ে গেছেন। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থকরা ‘লাভজনক’ বলে পরিচিত ওই জায়গাগুলো দখল করতে চাইছেন। কিন্তু গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত অভিযোগ দেখে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন তারেক রহমান।
বিএনপি দপ্তরের তথ্যমতে, গত ৫ আগস্টের পর ২০ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ৪৪ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫২৭ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ, ৪৫১ জনকে বহিষ্কার, ২৫ জনের পদ স্থগিত, ৩৬ জনকে সতর্ক এবং ৫ জনকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও থানা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মী সাংগঠনিক শাস্তির মুখে পড়েছেন।
জানা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি সুধী সমাজের মধ্যেও তারেক রহমানের এসব পদক্ষেপ প্রশংসিত হয়েছে।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক
একটি দেশের অবস্থা ভালো হবে কি না, সেটি সেই দেশের রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য দেখলে বোঝা যায়। তারেক রহমানের ইতিবাচক এসব বক্তব্যের কারণ হলো, অবস্থার একটি চাপ আছে। তা ছাড়া বিএনপির রাজনীতিও পরিবর্তন হয়েছে। দলটি ৩১ দফা প্রচার করছে। এটি পুস্তক আকারে প্রকাশিত হলে ভালো হতো। তাহলে আলোচনা বেশি হতো। পত্রিকায় পড়ার তুলনায় বই আকারে মানুষ পড়তে পছন্দ করে। তারেক রহমানের বয়স বাড়ছে। অভিজ্ঞতা বাড়ছে। এখন তিনি নেতা হিসেবে কথা বলছেন। এ কারণে তার বক্তব্য ভিন্ন দেখা যাচ্ছে। অবস্থার চাপে মত বদল হয়। দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, একসময় মান্নান ভূঁইয়ার এ ধরনের বক্তব্যের কারণে তাকে বহিষ্কার করা হলেও এখন অবস্থার প্রয়োজনে তারেক রহমানের মত বদল হয়েছে। কিন্তু কাজ করার জন্য যেভাবে দল গঠন করতে হয়, অর্গানাইজ করতে হয়, সেটি করতে পারলে সফলতা পাওয়া যেতে পারে। চাঁদাবাজির জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ভালো। এক নম্বর নেতা হিসেবে তিনি যেসব কথা বলছেন, সেটি অবশ্যই শোভন। কিন্তু কোনো কিছু করা বা বাস্তবায়ন করতে হলে ভিন্নভাবে কাজ করতে হবে। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কমিটি গঠন করে কমিটি কীভাবে কাজ করবে, সেটি কেন্দ্র থেকে স্তরে স্তরে জনগণের মধ্যে প্রচার করতে হবে। পাশাপাশি সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের আত্মশুদ্ধি এবং আত্মসমালোচনার চর্চা করতে হবে। এ ধরনের প্রচেষ্টা এখনো চোখে পড়ছে না। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা কর্মসূচি দর্শন হিসেবে জনগণের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিল। বিএনপির কর্মসূচি স্ক্রিনে প্রচার করলেই হবে না। বিশ্বাসযোগ্য এবং দর্শন হিসেবে প্রচার করতে পারলে জনগণ গ্রহণ করবে।
বিএনপি ও তারেকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য আরও শক্তিশালী থাকা উচিত। রাজনীতি কী এবং কেন করব; বাংলাদেশের জন্য কী করা দরকার, আত্মসমালোচনা ও আত্মজিজ্ঞাসা দরকার। পরিবর্তনের কথা বলা দরকার। ‘হ্যাঁ, আমরা পারি’ সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এই ধরনের ¯েøাগান নিয়ে বিএনপির অগ্রসর হওয়া উচিত।
পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতি না করার কথা কেবল মুখে বললে হবে না। এটি পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করতে হবে। সেটাই দায়িত্বশীলতা হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের কথা কেউ বললে তাকে সমর্থন করা উচিত। তবে এ ক্ষেত্রে সদিচ্ছা প্রমাণ করতে হবে।
জাতীয় ঐক্যের জন্য বিএনপি সব দলকে চিঠি দিতে পারে। বিএনপির অবশ্যই সেই উদ্যোগ নেওয়া উচিত। তারেক রহমানের হাতে এখন অনেক বিষয় একসঙ্গে রয়েছে। তবে সমস্যাটা তারেক রহমানকে অবশ্যই বুঝতে হবে, সম্ভাবনাটাও বুঝতে হবে।
ড. শাহদীন মালিক
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, ক্ষমতায় গিয়ে প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন করা না করা হয়তো পরের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু কয়েক মাস ধরে তারেক রহমানের বক্তব্যে জনমনে একধরনের ইতিবাচক বার্তা প্রতিফলিত হচ্ছে। তিনি অনেক বাস্তবসম্মত এবং শালীন ভাষায় কথা বলছেন। পাশাপাশি তার বক্তব্যও আগের তুলনায় অনেক পরিপক্ব বলেই মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, তার নেপথ্যের থিংকট্যাংক, মানে তাকে যারা পরামর্শ দিচ্ছেন তারাও যথেষ্ট ইতিবাচক। দখল বা চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে তিনি যে কয়েক শ বিএনপি নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেছেন, সেটি দলের ভেতরে-বাইরে একধরনের কঠোর বার্তা দিয়েছে। এটি বিএনপিকে সংযত রাখার জন্য ভালো পদক্ষেপ। তা ছাড়া তিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক, উদার ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথা বলছেন। এতে মনে হচ্ছে, কট্টরপন্থা তার পছন্দ নয়। তাকে এবারে বেশ টলারেন্ট বা সহিষ্ণু মনে হচ্ছে। অনেক সময় ভালো কাজ করার জোর ইচ্ছা থাকলেও বাস্তব কারণে তা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। তবে তারেক রহমানের মনোভাব যে ইতিবাচক, এটি স্পষ্ট।
বদিউল আলম মজুমদার
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। আমরা আশা করি, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় এসব ইতিবাচক কথাগুলো প্রতিফলিত হবে।’ তিনি বলেন, পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, এটাও নিঃসন্দেহে ভালো কথা। উদার গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গঠনের কথা জনগণের জন্য স্বস্তিদায়ক। কিন্তু এগুলো শুধু মুখে বললে হবে না, কাজে বাস্তবায়ন করাই গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, যদি নির্বাচন হয় তাহলে তারা নির্বাচনে জয়লাভ করবে, ক্ষমতায় আসবে নিশ্চিত এটা বোঝাই যাচ্ছে। বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামোয় এখন আওয়ামী লীগ নেই। যেহেতু আওয়ামী লীগকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। সব মিলিয়ে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়াটা নিশ্চিত। তিনি বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিএনপি সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারেক রহমান যাতে ক্ষমতায় যেতে পারেন, সে জন্য যেখানে যেখানে পুনর্গঠন করা দরকার সেখানে বিএনপি সমর্থন দেবে। প্রধানমন্ত্রী পদে দুবারের বেশি থাকতে পারবেন না, তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ও উদার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের কথা বলা, অবশ্যই ইতিবাচক বক্তব্য। কী করা যাবে, কী করা যাবে না- এটা তার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে। তারেক রহমান রাজনীতিবিদদের মতোই কথা বলছেন।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘তারেক রহমান বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। বছরের পর বছর তিনি সারা বিশ্বের খোঁজখবর রেখেছেন। তিনি লন্ডনে থাকলেও সব সময় রাজনীতির মধ্যেই ছিলেন। দলের নেতারাও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমি মনে করি, যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন হবে, তত তাড়াতাড়ি বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়াটা নিশ্চিত হবে। সেখানে তারেক রহমানের ভূমিকাই মুখ্য হবে।’ (দৈনিক খবরের কাগজ)