কথা কম
- প্রকাশের সময় : ১২:৪৬:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪
- / ৬১ বার পঠিত
সাঈদ তারেক: ব্যক্তি মাত্রেই রাজনৈতিক মত পথ থাকতে পারে, কিন্তু কেউ যখন কোন সরকারি বা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন, ব্যক্তিমত প্রকাশ বা প্রচারে সতর্ক থাকতে হয়। নবীন উপদেষ্টা জাতির পিতা নিয়ে যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তা তার বয়স অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান অবস্থানের সাথে মানায় না। ভিডিওটা আমি দেখেছি। সরকার শেখ মুজিবকে জাতির পিতা মনে করে কি করে না এ বিষয়ে এর আগে সরকারের কারও কাছ থেকে কিছু শোনা যায় নাই। এ অবস্থায় একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা যখন সরাসরি কোন মত ব্যক্ত করেন তখন বিভ্রান্তির সৃস্টি হয়। সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
সরকার পরিবারভিত্তিক তথাকথিত জাতীয় দিবসগুলো বাতিল করেছে, একটা খুব ভাল কাজ হয়েছে। ১৫ আগস্ট জাতীয় দিবস থাকে শুধু যে কয় বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে। পঞ্চাশ বছর ধরে তাই চলছে। এটা সবাই মেনে নিয়েছে। ৭ই মার্চ কখনও জাতীয় দিবস ছিল না। মাত্র সেদিন আওয়ামী সরকার এটার প্রচলন করে। তবে ’৭১এর এই দিনটার সাথে যেহেতু মানুষের আবেগ অনুভুতির সম্পর্ক, এ নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য অনেককে আহত করে। বিশেষ করে যারা আমরা স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছি মুক্তিযুদ্ধ করেছি, ’৭১ দেখেছি ৭ই মার্চ রেসকোর্স মাঠে উপস্থিত থেকেছি, আমাদের কাছে এই দিনটার ভিন্ন তাৎপর্য। সেদিন স্বাধীনতার প্রত্যাশিত ঘোষনা আসে নাই, তবে দিক নির্দেশনা এসেছে। ৭ই মার্চ ইতিহাসের এক টার্নিং পয়েন্ট। এটা শুধু আওয়ামী লীগ বা শেখ মুজিবের না, স্বাধীনতার জন্য মানুষের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের এক চূড়ান্ত মূহুর্ত। কাজেই এ দিনটার অবমূল্যায়ন মেনে নেয়ার মত না, অন্তত: যারা স্বাধীনতা চেয়েছিল তারা তা মানতে পারে না। এটা জাতীয় দিবস হবে কিনা বা থাকবে কিনা তা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। যেহেতু বর্তমান সরকার কোন রাজনৈতিক সরকার না বা রাজনীতি বিষয়ে কোন মৌলিক বা নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত না, বিষয়টা এড়িয়ে গেলেও পারতো। এমন তো না যে তারা অনির্দিস্টকালের জন্য সরকারে থাকবে। সুনির্দিষ্ট কয়েকটা সংষ্কারের কথা বলেছে, করে দিয়ে গেলেই হবে। ‘জাতির পিতা’ কে হবে, অর্দ্ধ শতাব্দিতেও আমরা এ নিয়ে বিতর্কের নিরসন ঘটাতে পারি নাই। পরের বা পরবর্তীকালের কোন রাজনৈতিক সরকার রাজনীতিক এবং ইতিহাসবিদদেরকে এক টেবিলে বসিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত এ বিতর্ক চলতেই থাকবে। কাল যদি সব দল মিলে বলে, পরশু নির্বাচন দিয়ে এ সরকারকে চলে যেতে হবে। এই খন্ডকালীন সময়ের জন্য রাজনীতির মৌলিক বা নীতিগত বিষয়ে নাক গলিয়ে বিতর্কিত হওয়াটা ঠিক না। ভুলে গেলে চলবে না ১৫ বছর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন বা জুলাই আগস্টের অভ্যুত্থান শুধু কোন দল বা মহলবিশেষের একক চেষ্টার ফল না। এতে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলা মানুষ ছিল জয় বাংলার বিশ্বাষীরাও ছিল। ফ্যাসীবাদ এবং আধিপত্যবাদবিরোধী দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের সক্রিয় সমর্থন ও অংশগ্রহনের ফসল এই সরকার। এ সরকারের কারোরই এমন কিছু বলা বা করা উচিত না যাতে জাতীয় ঐক্যে চির ধরে।
তবে উপদেষ্টা মহোদয় একটা কথা ভাল বলেছেন। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা এক দিনে বা কোন একক দল বা ব্যক্তির অবদান নয়। সেই ’৪৬ থেকে অনেক নেতার ভুমিকা ছিল এতে। শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী প্রমুখ আমাদের জাতীয় নেতা। ’৪৬ এই অখন্ড বাংলার স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন মৌলানা আকরাম খাঁ, খাজা নাজিমুদ্দিন, আবুল হাশিম, আবুল মনসুর আহমদসহ আরও অনেকে। ফ্যাসীবাদী সরকার পনের বছর শুধু তাদের নেতাকে এককভাবে সকল কৃতিত্বের অধিকারি করতে চেয়েছে। অন্যদের নামটা পর্যন্ত কখনও উচ্চারণ করা হয়নি। বর্তমান সরকার যদি সকল জাতীয় নেতার স্বীকৃতি এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে যেতে পারে তাহলে একটা পজিটিভ কাজ হবে। -লেখকের ফেসবুক থেকে।