জাতিসংঘে ড. ইউনূসের ভাষণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ
- প্রকাশের সময় : ০২:৩৬:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ১১৪ বার পঠিত
বাংলাদেশ একটি বিশেষ সময় অতিক্রম করছে। ক্ষমতায় আছে একটি অনির্বাচিত, অরাজনৈতিক অন্তর্র্বতী সরকার। এই সরকার প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ শেষ করে একটি ‘যৌক্তিক’ সময়ের পর জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবে এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেবে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ভাষণে বলেছেন, দেশের মানুষের আস্থা ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সুনির্দিষ্ট কিছু খাতে সংস্কারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেছেন, সেসব সংস্কার যেন টেকসই হয়, তা দীর্ঘ মেয়াদে নিশ্চিত করতে এবং অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
শনিবার আজকের পত্রিকা’র খবর থেকে জানা যায়, গত শুক্রবার জাতিসংঘের সাধালন অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আমরা বিদ্যমান নির্বাচনব্যবস্থা, সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা-ব্যবস্থা সংস্কারে স্বাধীন কমিশন গঠন করেছি। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের সংস্কারের জন্যও পৃথক কমিশনসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
অন্তর্র্বতী সরকার কত দিন ক্ষমতায় থাকবে, কবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো কথা প্রধান উপদেষ্টা বলেননি। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও মতভিন্নতা আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যে দলটি ক্ষমতাপ্রত্যাশী এবং দ্রæত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হলে যে দলটির জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি, সেই বিএনপি চায় অন্তর্র্বতী সরকারের মেয়াদকাল দীর্ঘায়িত না হোক। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন নির্বাচন সংস্কারের জন্য একটা যৌক্তিক সময় অন্তর্র্বতী সরকার নিতে পারে। তবে তিনি এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, যৌক্তিক সময় মানে এই না যে, তারা অনেক বেশি সময় নিয়ে নেবে। যত দ্রæত নির্বাচন আয়োজন করা যাবে ততই দেশের মঙ্গল হবে।
অন্যদিকে শোনা যায়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু ছোট দল অন্তর্র্বতী সরকারকে সময় দিতে আগ্রহী। তারপরও দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান শুক্রবার বলেছেন, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সঙ্গে বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারকে বিদায় নিতে হবে। কেননা, বছরের পর বছর দেরি করলে আগাছা জন্ম নিতে পারে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে, তৃতীয় শক্তির উদ্ভব হতে পারে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পর দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায়ও স্বাভাবিকভাবেই এসেছে পরিবর্তন। ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেওয়ার মাধ্যমে দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তির মধ্যে যে স্বতঃস্ফূর্ত ঐক্য তৈরি হয়েছিল, বিভিন্ন কারণে দুই মাস যেতে না যেতেই সেই ঐক্যের মনোভাব আর নেই। তা ছাড়া আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ না দিয়ে কীভাবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হবে, তা অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয়। তৃণমূল পর্যন্ত শিকড় বিস্তৃত রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা কিংবা রাজনৈতিক তৎপরতার বাইরে রাখা কত দিন, কীভাবে সম্ভব হবে, দেখার বিষয় সেটাও। (সূত্র: আজকের পত্রিকা)