প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দুর্যোগ কাটেনি ৫২ বছরেও
- প্রকাশের সময় : ০৮:৩২:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৪
- / ৫৮ বার পঠিত
স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য গঠিত হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। তবে স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও নিজেদের দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশের ইতিহাসের অন্যতম পুরোনো এই অধিদপ্তর। সৃষ্টির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এক কর্মকর্তা ও এক অফিস সহকারী দিয়ে চলছে উপজেলার কার্যক্রম। আর জেলা চলছে এক ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এবং ছয় কর্মী নিয়ে। এতে চলমান বন্যা ছাড়াও কোনো দুর্যোগেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না সংস্থাটি। এই সংকট কাটাতে জনবল নিয়োগসহ আধুনিকায়নের দাবি করছেন অধিদপ্তরটির কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ১৯৭৩ সালে সৃষ্ট ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর ও ১৯৯২ সালে সৃষ্ট সালে সৃষ্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো (ডিএমবি) অবলুপ্ত হয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে রূপান্তরিত হয়। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২’ অনুমোদন লাভের পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর (ডিডিএম)’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই অধিদপ্তরকে একটি সক্রিয় প্রতিষ্ঠান, জ্ঞানপীঠ, গবেষণাকেন্দ্র এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পেশাজীবীদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণের স্বীকৃত কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলাই ছিল প্রধান লক্ষ্য। এ ছাড়া যে কোনো দুর্যোগ দক্ষতার সঙ্গে সাড়া দান এবং দুর্যোগের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে সার্বিকভাবে সহায়তা দেওয়াও এই অধিদপ্তরের কাজ। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কিছুই করা সম্ভব হয়নি, কারণ আইন অনুমোদন হলেও এখন পর্যন্ত সেই আইন বাস্তবায়ন হয়নি।
বর্তমানে দেশ স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ বন্যার কবলে। দুর্গতদের উদ্ধার ও ত্রাণ দিতে কাজ করছে ছাত্র-জনতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সবচেয়ে বেশি তৎপর থাকার কথা থাকলেও তাদের নেই সেই সক্ষমতা। অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলা পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী মিলে কর্মী মাত্র দুজন। আর জেলা চলছে এক ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এবং ছয় কর্মী নিয়ে। অধিদপ্তরে মোট পদ ২ হাজার ৭১০টি। ৫২ বছরে কর্মী বাড়ার বদলে বেশকিছু পদ খালি। এমনকি ত্রাণকার্য পরিচালনায় ৪৯৫ উপজেলার একটিতেও নেই নিজস্ব গাড়ি।
এমন অবস্থায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২ বাস্তবায়ন, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি না হলে সংকটের সমাধান হবে না বলছেন অধিদপ্তর কর্মকর্তারাও। তারা বলছেন, চলমান সংকটের জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ই দায়ী। কারণ দীর্ঘদিন এই অবস্থা চললেও বিষয়টি নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমন অবস্থায় সংকট সমাধানে মাঠপর্যায়ে জনবল বাড়ানো, কর্মকর্তাদের পদোন্নতিসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২-এর বাস্তবায়ন চান কর্মকর্তারা। অধিদপ্তরকে আরও সচল করতে বিভিন্ন দাবিও দিয়েছেন তারা। এর মধ্যে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা পদের আপগ্রেডেশন ও পদনাম পরিবর্তন, আইনের আলোকে প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো ও নিয়োগ বিধিমালা অনুমোদন, সচিবালয়ের মতো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মচারীদের পদনাম পরিবর্তন ও আপগ্রেডেশন, অধিদপ্তর ও অধিদপ্তরাধীন সব প্রকল্পে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর, সব শূন্যপদ পূরণ করাসহ জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় যানবাহন সরবরাহ। এসব দাবি পূরণ না হলে এই অবস্থার পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখেন না কর্মকর্তারা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপপ্রকল্প পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বরেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা জনবল সংকট। ১৯৭২ সালে দুজনকে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে উপজেলা কার্যক্রম শুরু হয়। এখন পর্যন্ত সেভাবেই আছে। এর পাশাপাশি আরেকটি বড় সমস্যা যানবাহন সংকট। উপজেলা পর্যায়ে কোনো যানবাহন দেওয়া হয় না। সংকটের কথা স্বীকার করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ও। এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা বলেন, আমরা সাম্প্রতিক সময়ে বিষয়গুলো পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। বর্তমান সময়ে দুর্যোগের ধরনও পরিবর্তন হয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই আমরা জনবল বাড়ানোর বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছি। উপজেলা, জেলা, মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর সব জায়গায়ই জনবল বাড়ানো হবে। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হলেও কাজ চলমান। সূত্র : কালবেলা