টাকার কাছে বিক্রি বিএনপি নেতাদের দেশপ্রেম!
- প্রকাশের সময় : ০৫:৩৩:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪
- / ১১৭ বার পঠিত
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের রক্তাক্ত মুখাবয়বের দৃশ্য মনে পড়ে? শেখ মুজিব-শেখ হাসিনা-টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে কুষ্টিয়া আদালতে করা মামলার জামিন নিতে গিয়েছিলেন ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই। কুষ্টিয়া আদালত চত্বরে তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। পাশে দাঁড়িয়ে থেকে ছাত্রলীগের বাহাদুরির (!) দৃশ্য উপভোগ করেন আওয়ামী লীগের একঝাঁক আইনজীবী ও অর্ধশত পুলিশ সদস্য। ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর রংপুর আদালত চত্বরে কারাবন্দি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের ওপর আক্রমণ করা হয়। আইনজীবী ও পুলিশের সামনে তার ওপর জুতা ও পচা ডিম নিক্ষেপ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। একজন বন্দির ওপর এভাবে আক্রমণে আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা ব্যারিস্টার মইনুলকে রক্ষায় এগিয়ে যাননি।
কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের পেশাদারিত্ব, ন্যায়-অন্যায় ও মানবিকতার চেয়ে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট অনেক দৃঢ়। মানবিকতা দেখিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনে ‘আইনি সহায়তা পাওয়া সবার সাংবিধানিক অধিকার’ অজুহাত দেখিয়ে আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা টাকা-পয়সা নিয়ে মাহমুদুর রহমান বা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের পক্ষে আদালতে দাঁড়াতে পারতেন। কিন্তু তারা সেটা করেননি। কারণ পেশায় আইনজীবী হলেও আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার প্রতি তাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ছিল প্রখর। তারা সত্যিকার অর্থেই আওয়ামী লীগার। নিম্ন আদালতে দেয়া বেগম খালেজা জিয়ার সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে উচ্চ আদালতে যখন ১০ বছর করা হয় এবং মামলায় তারেক রহমানকে খালাস দেয়ায় নিম্ন আদালতের বিচারককে যখন হেনস্তা করা হয় তখন আওয়ামী লীগের মস্তবড় আইনজীবীরা প্রতিবাদ করেননি। তারা পেশায় আইনজীবী হলেও আদর্শ-দর্শনে আওয়ামী লীগ।
শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের সময় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা পেশাজীবী হিসেবে আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা রাজনৈতিক কমিটমেন্টের কারণেই নেন না। টাকার চেয়েও তাদের কাছে দল বড় ছিল। অথচ বিএনপির আইনজীবীদের কেউ কেউ পেশাদারিত্বের অজুহাতে টাকার লোভে দেশে গণহত্যা করে ভারতে পালানো শেখ হাসিনার দোসরদের বিরুদ্ধে করা মামলা আইনি লড়াইয়ে নামার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। পুলিশের গুলিতে হাজারো ছাত্র-জনতার প্রাণের বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অর্জিত সাফল্যের পর মানুষ শেখ হাসিনা ও তার হায়েনাদের বিচার চাচ্ছে। ইতোমধ্যেই অনেককে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় আইনি সহায়তার নামে বিএনপির নেতা আইনজীবীদের কেউ কেউ হাসিনা দোসরদের সহায়তার চেষ্টা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক শুরু হয়েছে। নেটিজেনদের অনেকেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকেই বলছেন, হাসিনার দোসররা ১৫ বছরে কোটি কোটি টাকা কামাই করেছে। হাসিনার রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে এখন তারা কিছু অর্থ দিয়ে বিএনপির আইনজীবীদের ব্যবহার করার কৌশল নিয়েছেন। সুবিধাবাদী আইনজীবীরা যদি লোভ সামলাতে না পেরে হাসিনার দোসরদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন তাহলে তাদেরও প্রতিহত করা হবে।
হাসিনা ছিলেন ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক। তিনি খেয়ালখুশি মতো মানুষ খুনের ইন্ধন দিতেন। গুম-খুন তার কাছে ছিল ছেলেখেলার মতোই। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মহাখালী থেকে গুম হন ইলিয়াস আলী। ১৫ দিন পর বিএনপির এই নেতার স্ত্রী-সন্তানরা গণভবনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে; উদ্দেশ্য ইলিয়াসকে ফিরে পাওয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসছে সেই ভিডিও। দৃশ্যে দেখা যায়, সোফায় বসে আছেন ইলিয়াসের স্ত্রী ও সন্তানরা। অনতিদূরে আরেক সোফায় বসে শেখ হাসিনা ইলিয়াসের ৪/৫ বছর বয়সী কন্যার সঙ্গে খুঁনসুটি করছেন। হাসিনা কি খেলাচ্ছলে সেদিন ইলিয়াসের অবুঝ কন্যাকে বলেছিলেন, ‘আম্মু তোমার বাবাকে আমরা মেরে ফেলেছি’। তার আগেই ইলিয়াস আলীকে হত্যা করা হয়েছিল। হাসিনার নির্দেশেই পৈশাচিকভাবে ইলিয়াসের লাশ বস্তায় ইট-পাথর ভরে চট্টগ্রামের এক নদীতে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের পর ইলিয়াসকে ফিরিয়ে দেয়ার আকুতি জানাতে স্ত্রী-সন্তানরা গণভবনে গিয়েছিলেন। সেই বীভৎস-নিষ্ঠুর হাসিনা দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে মাঠের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীর ওপর জুলুম-নির্যাতন করেছেন। হত্যা-গুম, অপহরণ করে আয়না ঘরে রেখে বীভৎসভাবে নির্যাতন করে হাসিনা ও তার দোসররা দেশকে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালনার নামে হাসিনা দেশের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, দলের নেতা ও মুজিববাদ বিরোধী গণমাধ্যমের ওপর জুলুম-নির্যাতন করে জনমনে ভীতির সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছিলেন। একদিকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দোসরদের নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বানিয়েছেন এবং মহাপ্রকল্পের নামে বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে টাকা পাচারের সুযোগ করে দিয়েছেন; অন্যদিকে প্রতিপক্ষের কন্ঠরোধ করেছেন নানা প্রক্রিয়ায়। তিনি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসন-বিচারপতি-পুলিশসহ সব কিছুকেই দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছেন। হাসিনার স্তবক যেসব নেতা, সাবেক আমলা, সাবেক বিচারপতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতা পালাতে পারেননি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছেন; তাদের বেশির ভাগের বাসায় বস্তায় বস্তায়, কোটি কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। একেক জনের বাসা যেন ব্যাংকের টাকার ভল্ট। অনেকেই টাকা অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছেন। আওয়ামী লীগের সময় হাসিনার অনুকম্পায় যে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন এনবিআর তাদের অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে, অনেকের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করছে। অন্যদিকে ‘মুজিববাদ’ বিশ্বাস করেন না এমন রাজনৈতিক দল ও মিডিয়ার কণ্ঠ নানা আইনকানুন করে চেপে ধরা হয়। পতিত হাসিনা ও তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের তল্পিবাহক না হওয়ায় আমার দেশ, দৈনিক দিনকাল, দিগন্ত টিভি, চ্যানেল ওয়ান, ইসলামী টিভিসহ কয়েকটি গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে। ওই সব গণমাধ্যমে কর্মরত হাজার হাজার সাংবাদিক, কর্মকর্তা- কর্মচারী বছরের পর বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন। এদের পক্ষে আওয়ামী লীগের কোনো আইনজীবী আদালতে দাঁড়াননি। অথচ হাসিনা পতনের পর বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের কেউ কেউ পেশাদারিত্বের অজুহাত তুলে আওয়ামী লীগের লুটেরাদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে গেছেন বিগত সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ইস্কন অনুসারী মহিবুল হাসান চৌধুরী। ড. মুহম্মদ ইউনূসের সরকার ক্ষমতায় আসায় সে বোর্ড ভেঙে দেয়া হয়েছে। অথচ ইস্কনের মহিবুলের করা পুরনো কমিটির পক্ষে নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নামছেন বিএনপির এক নেতা ও সিনিয়র আইনজীবী। এটা কি বর্তমান প্রেক্ষপটে যায়! ২০০৭ সালের ৮ মার্চ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রথম এক কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে মামলা করেছিল আমিন আহমেদ ভূঁইয়া নামের এক ঠিকাদার। উদয় টাওয়ার ও বেস্ট হোল্ডিংয়ের মালিক সেই ঠিকাদার অর্থপাচার মামলায় বর্তমানে কারাগারে। প্রচুর বিত্তবৈভবের অধিকারী ওই ব্যক্তিকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে বিএনপির আইনজীবী নেতাদের মধ্যে নাকি প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। হাসিনার শাসনামলে অবৈধভাবে শত কোটি টাকার মালিক হওয়া ওই ঠিকাদার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে কারাগার থেকে কোটি টাকা খরচ করেই বের হতে চান বিএনপির আইনজীবীদের ব্যবহার করে। হাসিনা পালানোর পর এখন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মামলা হাতে নিলে জামিন নিশ্চিত মনে করে করছেন আওয়ামী লীগ অনুসারীরা।
পতিত হাসিনার শাসনামলে সময় টিভি, একাত্তর টেলিভিশনের ভূমিকা কি ছিল? সরকারের তল্পিবাহক হিসেবে গণমাধ্যমের নামে এই টিভিসহ আরো কিছু গণমাধ্যম বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছে। তারা সরকারের মুখপত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, বিএনপি, জামায়াতসহ প্রতিপক্ষ দলগুলোর নেতাদের সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে হাসিনাকে খুশি করেছে। ফলে দর্শকদের অনেকেই ওই দলবাজ মিডিয়াগুলো বর্জন করেছেন। অনেকেই ওই সব গণমাধ্যমের ওপর বিক্ষুব্ধ। কেউ কেউ ওই বিতর্কিত গণমাধ্যমকে বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন। অথচ ওই সব গণমাধ্যমকে রক্ষা করতে বিএনপির অনেক নেতাই চেষ্টা-তদবির চালাচ্ছেন। আবার ব্যবসায়ীদের মহাসম্মেলন করে যে ব্যবসায়ীরা শেখ হাসিনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী করার জন্য অঙ্গীকার করেন; এমনকি পৃথিবীতে তো বটেই মারা যাওয়ার পরও শেখ হাসিনার পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন এবং ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের সময় নৌকার প্রার্থীদের অর্থ দিয়ে সমর্থন করেছেন; হাসিনা পালানোর পর তারা বিপদে পড়েছেন। সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে শত শত কোটি টাকা আয়- রোজগার করায় পণ্যমূল্যের যাঁতাকলে পিষ্ট জনগণ এখন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ। অথচ বিএনপির নেতারাই তাদের ব্যবসা ধরে রাখতে নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করছেন বলে জানা গেছে। আর ওই ব্যবসায়ীরা বিগত ১৫ বছর শত শত কোটি টাকা বৈধ-অবৈধ পথে রোজগার করেছেন; এখন হাসিনার মতো বিদেশ পালাতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নেতাদের দুই-চার কোটি টাকা দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার কৌশল নিয়েছেন। বিএনপির কিছু সুবিধাবাদী নেতা দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা, জেল-জুলুমের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে নিজেদের আখের গোছানোর লক্ষ্যে ওই বিতর্কিত ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বাণিজ্যের দায়িত্ব নেয়ার চেষ্টা করছেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্র-জনতার রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুরনো জঞ্জাল সাফ করছে। প্রশাসনের সব সেক্টরে আওয়ামীকরণে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাকশালের মুখোশ খুলে ফেললেও এখনো আওয়ামী লীগের রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আওয়ামী দানবে পরিণত করায় পুলিশ-র্যাব-বিজিবি-আনসারে বহু সদস্য এখনো কাজে যোগ দেয়নি। এ অবস্থায় ভারতে থাকা শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্র করে সংখ্যালঘু নির্যাতন, জুডিশিয়াল ক্যু, ১৫ আগস্ট ঢাকা দখল এবং ২১ আগস্ট অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। তারপরও ভারত ও হাসিনার ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশকে পানিতে ভাসিয়ে দিয়ে হঠাৎ করে বাঁধ খুলে দিয়েছে। এ অবস্থায় পতিত হাসিনার দোসরদের আইন অধিকার পাওয়ার নামে বিএনপির আইনজীবীদের চেষ্টা ১৫ বছরের ভুক্তভোগীরা ভালোভাবে নিচ্ছে না। যারা হত্যা-খুন-রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করেছে, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের শত শত নেতাকর্মীকে খুন, গুম, জুলুম-নির্যাতনে সহায়তা করেছে তাদের হয়ে বিএনপির আইনজীবীদের আইনি লড়াই করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অবশ্য গ্রেফতারকৃত আওয়ামী লীগের লুটেরাদের রিমান্ডে নিতে নিম্ন আদালতে উঠানোর পর আইনজীবীরা অভিযুক্তদের পক্ষে দাঁড়াতে রাজি হননি। এমনকি গ্রেফতার হওয়া সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের আদালতে নিয়ে গেলে আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেন। সরকার পরিচালনায় আইনের মধ্যেই ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ (বিশেষ পরিস্থিতির নীতি) বলে একটি শব্দ রয়েছে। এই ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ দেশের সবকিছু স্বাভাবিক করতে নতুন সরকার বিগত সরকারের দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, গণতন্ত্র হত্যকারী, রাষ্ট্রের সম্পদ লুটপাটকারীদের গ্রেফতার করছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার উৎখাতের পর রাজনীতি ও প্রশাসনের নানা ক্ষেত্রে সংস্কার চলছে। স্বাধীন বাংলাদেশের অর্ধশতকের আবর্জনা যে রাতারাতি সাফ-ছুতরো করা সম্ভব নয়। এ পরিস্থিতিতে আইনি সহায়তার নামে হাসিনার দোসরদের বিএনপির নেতা আইনজীবীদের সহায়তা হবে রাজনৈতিক আত্মহত্যার নামান্তর। কারণ ভারত ও দিল্লিতে পলাতক হাসিনার ষড়যন্ত্র থেমে নেই। তাছাড়া বিএনপির নেতাকর্মী এবং ছাত্র-জনতা পতিত সরকারের তাঁবেদারদের পক্ষে বিএনপির নেতাদের আইনি সহায়তা ভালোভাবে নেবে না।
হাইকোর্টের আইনজীবী সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়া ও হাবিবুল ইসলাম ভূঁইয়ার কথা মনে আছে? প্রখ্যাত এই দুই আইনজীবীর একজন এরশাদের আইনজীবী এবং অপরজন আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। হাবিবুল ইসলাম ভূঁইয়ার হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল। বাচ্চু মিয়া নিগৃহীত হন। ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর আদালতে ক্ষমতাচ্যুত এরশাদের পক্ষে কেউ দাঁড়াতে রাজি হননি। অতঃপর মোটা টাকার লোভ সংবরণ করতে না পেরে এরশাদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে লড়াই করেন সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়া। এই বাচ্চু মিয়া হচ্ছেন বর্তমানে পুলিশের রিমান্ডে থাকা সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পিতা। টাকার লোভে এরশাদের পক্ষে আদালতে আইনি লড়াই করায় বাচ্চু মিয়া অন্যদের ঘৃণার পাত্র হয়েছিলেন। বাচ্চু মিয়া ২০০২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের ঘৃণার পাত্র হিসেবেই ছিলেন। টাকার লোভ সংবরণ করতে না পেরে পতিত হাসিনার দোসরদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে বিএনপির যেসব নেতা আইনজীবী নামার চেষ্টা করছেন তাদের সিরাজুল হক ও হাবিবুল ইসলাম ভূঁইয়ার ভাগ্য বরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে টাকাই সবকিছু নয়। সূত্র: ইনকিলাব।