অভিনন্দন নতুন সরকার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হোক
- প্রকাশের সময় : ০৩:০৫:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ অগাস্ট ২০২৪
- / ৭৯ বার পঠিত
ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের নতুন এক অধ্যায়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে শপথ নিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অভিনন্দন নতুন সরকারকে। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে এই সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সঙ্গে উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন আরো ১৬ জন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গত বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গভবনের দরবার হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান।
এখন এই সরকারকে যেমন দেশের রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের গুরুদায়িত্ব বহন করতে হবে, তেমনি তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশাও বিপুল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম দায়িত্ব হবে দেশে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতিতে সারাদেশে যে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন। এজন্য যা কিছু করা দরকার, তার সবই করতে হবে নতুন সরকারকে। আশার কথা, সেনাপ্রধান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করবেন বলে জানিয়েছেন। নতুন সরকারকে এরপর যে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে তা হলো, অর্থনৈতিক সংকট নিরসন।
দুই বছর ধরেই দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিদ্যমান। গত এক বছরে দেশে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতিও অনেক বেড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষ অত্যন্ত কষ্টে জীবনযাপন করছে। কেননা পণ্যের দাম বাড়লেও সেই অনুপাতে আয় বাড়ছে না। সরকারি বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, বিগত বছরগুলোয় ফসল উৎপাদন বেড়েছে। তার পরও পণ্যের দাম সব সময় ঊর্ধ্বমুখী থেকেছে। এর মূল কারণ বিগত সরকারের সময়ে বাজার সিন্ডিকেট, সড়কে চাঁদাবাজি, অবৈধ মজুদদারি, দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্য বিদ্যমান ছিল। বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় মাঠ পর্যায় থেকে বাজার পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই তাদের প্রভাব ছিল। এবার সড়কে চাঁদাবাজি, পরিবহন ব্যবস্থাপনা ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যারাই বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অবৈধ মজুদদারি, দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমাতে বাজারে অবাধ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা দরকার। বাজার ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকবে, তাদের শনাক্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেয়া যাবে না। সরকারিভাবে বিভিন্ন পণ্যের মজুদ বাড়াতে হবে। বাজারে পণ্য সরবরাহে সংকট হলেই সরকারি মজুদ থেকে পণ্য সরবরাহ করতে হবে। এর মাধ্যমে বাজারে চাহিদা ও জোগানে ভারসাম্য নিশ্চিত হবে। আর সরকারের গুদামে পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত থাকলে কৃত্রিম মজুদকারীরাও পণ্য মজুতে বিরত থাকতে বাধ্য হবে। এজন্য নিতে হবে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ।
এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য। এসব পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে দেশে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। আমরা এ সরকারের সাফল্য প্রত্যাশা করছি এবং আশা করছি, এ ব্যাপারে সবাই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। এই সরকার মাত্রই শপথ নিয়েছে। তবে কাজ শুরু করার পরই তাদের ক্রিয়াকাণ্ড নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হবে। আপাতত আমাদের প্রত্যাশা, এই সরকার যেন দেশকে গণতন্ত্রের পথে চালিত করে। অতীতের ভুলগুলো খুঁজে বের করে সেই পথ থেকে দেশকে সরিয়ে নিয়ে আসে। সূত্র: ভোরের কাগজ।