নিউইয়র্ক ০৫:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834
নয়াপল্টনে বিএনপি’র সমাবেশে খালেদা জিয়া

প্রতিশোধ নয়, আসুন শান্তি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলি

হককথা ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ১২:০৫:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৭৮ বার পঠিত

টানা চার মেয়াদ ধরে ক্ষমতা ধরে রাখা আওয়ামী লীগ সরকারের গণঅভ্যুত্থানে পতনের পর নয়াপল্টনে গতকাল সমাবেশ করেছে বিএনপি। সমাবেশে ভিডিও বার্তায় দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, প্রতিশোধ নয়, শান্তি চাই। আসুন আমরা ভালোবাসা, শান্তি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলি। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যের পর মাইকে ঘোষণা করা হয় এখন ভিডিও বার্তায় বক্তব্য রাখবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মী চোখে-মুখে ভেসে ওঠে আনন্দ ও উল্লাস। প্রিয় নেত্রীর নামে স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে নয়াপল্টন এলাকা। তাদের প্রিয় নেত্রীর বক্তব্য শুরু হলেই পুরো এলাকায় পিনপতন নীরবতা নামে। বেগম খালেদা জিয়ার দুই মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন বিএনপি’র নেতাকর্মীসহ উপস্থিত জনসাধারণ। দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের সামনে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য রাখলেন। জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শান্তি-প্রগতি আর সাম্যের ভিত্তিতে আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণে আসুন আমরা তরুণদের হাত শক্তিশালী করি।

বেলা ২টা ৩৮ মিনিটে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্যদিয়ে সমাবেশ শুরু হয়।

কোরআন তিলাওয়াতের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। খালেদা জিয়া বলেন, দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর আপনাদের সামনে কথা বলতে পারার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আমার কারাবন্দি অবস্থায়, আপনারা আমার কারামুক্তির জন্য সংগ্রাম ও রোগমুক্তির জন্য দোয়া করেছেন। সেজন্য আমি আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিবাদী অবৈধ সরকারের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছি। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই, আমাদের বীর সন্তানদের। যারা মরণপণ সংগ্রামের মধ্যদিয়ে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। শত শত শহীদদের জানাই শ্রদ্ধা। এই বিজয় আমাদের নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। দীর্ঘদিনের নজিরবিহীন দুর্নীতি, গণতন্ত্রের ধ্বংস স্তূপের মধ্য থেকে আমাদের নির্মাণ করতে হবে এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। ছাত্র-তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তরুণরা যে স্বপ্ন নিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে মেধা, যোগ্যতা ও জ্ঞানভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায় বিচার ও সাম্যের ভিত্তিতে নির্মাণ করতে হবে শোষণহীন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
এদিকে সমাবেশকে ঘিরে সকাল ১১টা থেকে নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীরা আসেন। বিভিন্ন জেলা থেকেও আসেন নেতাকর্মীরা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়াপল্টন এলাকায় নেতাকর্মীদের ঢল নামে। বিএনপি’র কার্যালয়ের সামনে নামে জনস্রোত।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, সাড়ে ১২ কোটি ভোটারের অধিকার কেড়ে নিয়েছিলো স্বৈরাচার। গত ১৫-১৬ বছর ধরে জনগণের উপরে স্বৈরশাসন চাপিয়ে দিয়েছিলো। স্বৈরাচার এবং গণহত্যাকারী হাসিনার পতনের মধ্যদিয়ে হাজারো শহীদের রক্ত রঞ্জিত বিপ্লবের প্রথম ধাপ সফল হয়েছে মাত্র। ছাত্র-জনতার এই রক্তঝরা বিপ্লবের চূড়ান্ত লক্ষ্যে একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। তাই বিপ্লবের লক্ষ্যে বাস্তবায়নে দ্রততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। স্বৈরাচার হাসিনা পতনের রক্ত রঞ্জিত বিপ্লবকে স্বার্থক ও সফল করে আসুন নাগরিক হিসেবে আমরা আরও দায়িত্বশীল আচরণ করি। বিভেদ, বিরোধ, হিংসা, প্রতিহিংসা নয়, আসুন সবাই মিলে রাষ্ট্র এবং সমাজে মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করি। প্রতিষ্ঠা করার শপথ গ্রহণ করি। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি দুর্নীতি মুক্তি, জবাবদিহিমূলক একটি নিরাপদ এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমরা গড়ে তোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।

প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার গৌরবকে কালিমামুক্ত করার ষড়যন্ত্র এরই ভেতরে আবারো শুরু হয়েছে। দেশকে গণতন্ত্র উত্তরণের চলমান প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে সারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান, শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করুন। প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। ধর্ম, বর্ণ পরিচয়ের কারণে কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকে সবার আগে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপিসহ দেশের গণতন্ত্রের পক্ষের দলগুলোকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, ষড়যন্ত্রকারীদের এই নৈরাজ্যের কাছে আমরা হার মানতে পারি না। আমি এই মুহূর্তে বিএনপি’র সারা দেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান রেখে বলতে চাই, আপনারা, যিনি যেখানে বসবাস করেন- সেখানে আপনার বন্ধু কিংবা পাড়া-প্রতিবেশী মুসলমান, বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিস্টান যাই হোক না কেন তার নিরাপত্তায় আপনি ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশের ভূখণ্ডে বসবাসকারী প্রত্যেকটি মানুষের একটি পরিচয়, সেটি হচ্ছে, আমরা বাংলাদেশি।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, একটি সভ্য এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পুলিশ অপরিহার্য। পুলিশ জনগণের শত্রু নয়। গণহত্যাকারী হাসিনা বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের শক্র হিসেবে দাঁড় করেছেন। তবে আমি বিশ্বাস করি এবং বিএনপি বিশ্বাস করে এবং দেশের গণতান্ত্রিক দলগুলো প্রত্যেকে বিশ্বাস করে পুলিশের ভেতরে একটি চক্র ছাড়া অধিকাংশ পুলিশ, কর্মকর্তা এবং সদস্য চাকরিবিধি এবং দেশের আইন-কানুন মেনেই দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছেন। হাসিনা পালানোর পরে বর্তমানে খুব সুকৌশলে একটি চক্র পুলিশের মনোবল ভেঙে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। পুলিশকে অকার্যকর করে দেয়া গেলে দেশকে অস্থিতিশীল করা সহজ। ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মনে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করা সহজ।

অস্থিতিশীলকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, পুলিশ কিংবা ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর আজকে থেকে, এই মুহূর্তে থেকে হামলা কিংবা নৈরাজ্য বন্ধ করুন। কেউ বিএনপি’র নাম ব্যবহার করে কোনো অপকর্ম করতে চাইলে তাকে ধরে আইনের হাতে তুলে দিন। কোনো পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের কাছে যথা নিয়মে অভিযোগ দায়ের করুন। দেশবাসীর প্রতি আমার আহ্বান, কেউ দয়া করে নিজের হাতে আইন তুলে নিবেন না। প্রতিহিংসা, প্রতিশোধে লিপ্ত হবেন না দয়া করে। দয়া করে বিচারের ভার নিজ হাতে তুলে নিবেন না। কেবল দৃষ্টান্ত অনুসরণ নয়, নিজেই দায়িত্বশীলতা এবং মানবাধিকারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।

তারেক রহমান বলেন, অতি সমালোচনা কিংবা নৈরাজ্যের বদলে নৈরাজ্যে কোনো সমাধান হতে পারে না, বরং বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। শাসন, প্রশাসনকে সময়োপযোগী করে গড়ে তোলা এখন সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ের দাবি। জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র, সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে নিয়োগ কিংবা পদন্নোতিতে মেধার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকতে হবে। দেশকে আমদানিনির্ভর কিংবা বৈদেশিক ঋণনির্ভর থেকে আমাদের বের করে আনতে হবে এবং উৎপাদন বাড়াতে হবে। দেশে কর্মসংস্থান তৈরি করে বেকার সমস্যার সমাধানে দ্রুত চেষ্টা করতে হবে। গার্মেন্টস, শ্রম, ওষুধসহ সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে নিয়ে রপ্তানির বাজারের আওতা আমাদের যেকোনো মূল্যে বাড়াতে হবে। প্রযুক্তিনির্ভর এবং কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে দেশে-বিদেশে শ্রমজীবী বাজারে টিকে থাকার মতো দক্ষ এবং মেধাবী প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আধুনিক এবং বাস্তবসম্মত করার লক্ষ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যের নীতির উপরে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। সবার জন্য সুবিচার নিশ্চিত করতে আইনের শাসন নিশ্চিত করা অবশ্যই প্রয়োজন এবং নিশ্চিত করা হবে।

তিনি বলেন, দেশে এবং বিদেশে অনেক বাংলাদেশি রয়েছে, যারা জ্ঞানে-বিজ্ঞানে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিজ্ঞদের এমন অনেকেই সংশ্লিষ্ট হতে চান। সুতরাং এসব গুণী মানুষদেরকে রাষ্ট্র পরিচালনায় ও নীতি প্রণয়নে অন্তর্ভুক্ত করতে জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ চালু করার প্রস্তাব বিএনপি এরই ভেতরে রেখেছে। রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় গুণগত পরিবর্তন আনতে না পারলে আমাদের আজকের এই বিপ্লবের কাঙ্ক্ষিত ফল মিলবে না।

তারেক রহমান বলেন, পুরো বাংলাদেশটাকেই বিগত ১৫ বছর ধরে বন্দি করে ফেলা হয়েছিল। আয়নাঘর মুক্ত আজ আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। বিরোধী মতের মানুষকে আয়নাঘরে আটকে রাখা হতো। আজ উন্মুক্ত হয়েছে গণতন্ত্রের দ্বার। আজ মুক্ত স্বাধীন প্রিয় বাংলাদেশ। প্রিয় বাংলাদেশের সাহসী ছাত্র-জনতাকে বীরোচিত অভিনন্দন।

তিনি বলেন, দেশ এবং জনগণকে স্বাধীন করতে গিয়ে চোখে, মুখে এবং বুকে গুলি আলিঙ্গন করা আবু সাঈদের মতো হাজারো ছাত্রছাত্রী এবং তরুণ-তরুণদেরকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। আহত হয়েছে অসংখ্য। এর ভেতরে ছাত্রছাত্রী রয়েছে। এর ভেতরে রয়েছে সাধারণ মানুষ, এর ভেতরে রয়েছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। গণতন্ত্রের বিজয়ের ইতিহাসে এই মানুষগুলো স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ছাত্র-জনতার এই বিপ্লবে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ সেদিন রাজপথে নেমে এসেছিল। গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি একজন মা যেমন তার সন্তানকে কোলে নিয়ে সেদিন রাজপথে শামিল হয়েছিলেন, একইভাবে শিক্ষক-সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিককর্মী, শ্রমিকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ রাজপথে নেমে এসেছিল। ’৫১, ’৭১ কিংবা ’৯০-এর মতো দেশের ছাত্রসমাজ বিজয়ের আরেকটি অমর ইতিহাস রচনা করেছেন। ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মধ্যদিয়ে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট বাংলাদেশ দেখেছে আরেকটি বিজয়। আমি বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী প্রতিটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দল-মত নির্বিশেষে অভিনন্দন জানাই বাংলাদেশের বীর জনতাকে।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনে আমরা সহযোগিতা করেছিলাম। এ কারণে আমাদের প্রায় ১১ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এখন যে বিজয় অর্জন হয়েছে, সেই বিজয়কে সংহত করাই কাজ। বিএনপি’র নেতাকর্মীদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা সবাই শান্ত থাকবেন। চক্রান্তকারীরা নতুন করে চক্রান্ত শুরু করতে পারে। চক্রান্তের মধ্যদিয়ে তারা এই বিজয়কে ছিনিয়ে নিতে পারে। সেই সুযোগ যেন আমরা তাদেরকে না দেই। যারা আজকে বিভিন্ন এলাকায়, শহরে বন্দরে ভাঙচুর ও লুটপাট করছে তারা কেউ আমাদের দলের লোক নয়। তারা এই ছাত্রদের কেউ না। তারা দুর্বৃত্ত ও দুষ্কৃতকারী এবং তাদের লোক, যারা এদেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চায়। সজাগ ও সাবধান থাকবেন, বার বার আমাদের বিজয়কে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা হয়েছে। সেই বিষয় যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে। আর অনতিবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করুন এবং তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। এতে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করবো।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হচ্ছে। এই সরকারের প্রধানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্ররা দিয়েছে। আমরা স্বাগত জানিয়েছি। আর শেখ হাসিনার দালালদের এই সরকারে রাখা যাবে না। আমাদের দাবি অন্য কোনো দেশের এবং শেখ হাসিনার দালালদের এই সরকারের গ্রহণ করা হবে না। আর এখন কিন্তু কোনো সরকার নেই। তাই শান্তি ও শৃঙ্খলা আমাদের গ্রহণ করতে হবে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, কিছু দুষ্কৃতকারী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে। এখন যারা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল করে তারা ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে এগুলো করছে। আমি তাদের বলবো, আপনারা সাবধান হয়ে যান। আর বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বলবো, চোখ ও কান খোলা রাখবেন। যেকোনো অপশক্তিকে প্রতিহত করবো।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের জনগণ মালিকানা ফিরে পেয়েছে। দেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হয়েছে। জনগণ মুক্ত হয়েছে। এই স্বাধীনতা যাদের জন্য পেয়েছি তাদের সালাম জানাচ্ছি, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আর এতো বড় হত্যাকাণ্ড এদেশে এর আগে ঘটে নাই। এই রক্তের বিনিময় দিতে হবে। সেই বিনিময় হচ্ছে দেশের মানুষের সমঅধিকার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পূর্ণভাবে ফিরিয়ে দিতে হবে। আর সজাগ থাকতে হবে ষড়যন্ত্রকারীরা যাতে এরমধ্যে ঢুকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার চিন্তাকে নস্যাৎ করতে না পারে।

বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সমাবেশে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সংগঠনের সিনিয়র নেতারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: মানবজমিন।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

নয়াপল্টনে বিএনপি’র সমাবেশে খালেদা জিয়া

প্রতিশোধ নয়, আসুন শান্তি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলি

প্রকাশের সময় : ১২:০৫:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০২৪

টানা চার মেয়াদ ধরে ক্ষমতা ধরে রাখা আওয়ামী লীগ সরকারের গণঅভ্যুত্থানে পতনের পর নয়াপল্টনে গতকাল সমাবেশ করেছে বিএনপি। সমাবেশে ভিডিও বার্তায় দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, প্রতিশোধ নয়, শান্তি চাই। আসুন আমরা ভালোবাসা, শান্তি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলি। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যের পর মাইকে ঘোষণা করা হয় এখন ভিডিও বার্তায় বক্তব্য রাখবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মী চোখে-মুখে ভেসে ওঠে আনন্দ ও উল্লাস। প্রিয় নেত্রীর নামে স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে নয়াপল্টন এলাকা। তাদের প্রিয় নেত্রীর বক্তব্য শুরু হলেই পুরো এলাকায় পিনপতন নীরবতা নামে। বেগম খালেদা জিয়ার দুই মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন বিএনপি’র নেতাকর্মীসহ উপস্থিত জনসাধারণ। দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের সামনে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য রাখলেন। জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শান্তি-প্রগতি আর সাম্যের ভিত্তিতে আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণে আসুন আমরা তরুণদের হাত শক্তিশালী করি।

বেলা ২টা ৩৮ মিনিটে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্যদিয়ে সমাবেশ শুরু হয়।

কোরআন তিলাওয়াতের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। খালেদা জিয়া বলেন, দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর আপনাদের সামনে কথা বলতে পারার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আমার কারাবন্দি অবস্থায়, আপনারা আমার কারামুক্তির জন্য সংগ্রাম ও রোগমুক্তির জন্য দোয়া করেছেন। সেজন্য আমি আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিবাদী অবৈধ সরকারের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছি। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই, আমাদের বীর সন্তানদের। যারা মরণপণ সংগ্রামের মধ্যদিয়ে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। শত শত শহীদদের জানাই শ্রদ্ধা। এই বিজয় আমাদের নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। দীর্ঘদিনের নজিরবিহীন দুর্নীতি, গণতন্ত্রের ধ্বংস স্তূপের মধ্য থেকে আমাদের নির্মাণ করতে হবে এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। ছাত্র-তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তরুণরা যে স্বপ্ন নিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে মেধা, যোগ্যতা ও জ্ঞানভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায় বিচার ও সাম্যের ভিত্তিতে নির্মাণ করতে হবে শোষণহীন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
এদিকে সমাবেশকে ঘিরে সকাল ১১টা থেকে নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীরা আসেন। বিভিন্ন জেলা থেকেও আসেন নেতাকর্মীরা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়াপল্টন এলাকায় নেতাকর্মীদের ঢল নামে। বিএনপি’র কার্যালয়ের সামনে নামে জনস্রোত।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, সাড়ে ১২ কোটি ভোটারের অধিকার কেড়ে নিয়েছিলো স্বৈরাচার। গত ১৫-১৬ বছর ধরে জনগণের উপরে স্বৈরশাসন চাপিয়ে দিয়েছিলো। স্বৈরাচার এবং গণহত্যাকারী হাসিনার পতনের মধ্যদিয়ে হাজারো শহীদের রক্ত রঞ্জিত বিপ্লবের প্রথম ধাপ সফল হয়েছে মাত্র। ছাত্র-জনতার এই রক্তঝরা বিপ্লবের চূড়ান্ত লক্ষ্যে একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। তাই বিপ্লবের লক্ষ্যে বাস্তবায়নে দ্রততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। স্বৈরাচার হাসিনা পতনের রক্ত রঞ্জিত বিপ্লবকে স্বার্থক ও সফল করে আসুন নাগরিক হিসেবে আমরা আরও দায়িত্বশীল আচরণ করি। বিভেদ, বিরোধ, হিংসা, প্রতিহিংসা নয়, আসুন সবাই মিলে রাষ্ট্র এবং সমাজে মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করি। প্রতিষ্ঠা করার শপথ গ্রহণ করি। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি দুর্নীতি মুক্তি, জবাবদিহিমূলক একটি নিরাপদ এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমরা গড়ে তোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।

প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার গৌরবকে কালিমামুক্ত করার ষড়যন্ত্র এরই ভেতরে আবারো শুরু হয়েছে। দেশকে গণতন্ত্র উত্তরণের চলমান প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে সারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান, শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করুন। প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। ধর্ম, বর্ণ পরিচয়ের কারণে কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকে সবার আগে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপিসহ দেশের গণতন্ত্রের পক্ষের দলগুলোকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, ষড়যন্ত্রকারীদের এই নৈরাজ্যের কাছে আমরা হার মানতে পারি না। আমি এই মুহূর্তে বিএনপি’র সারা দেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান রেখে বলতে চাই, আপনারা, যিনি যেখানে বসবাস করেন- সেখানে আপনার বন্ধু কিংবা পাড়া-প্রতিবেশী মুসলমান, বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিস্টান যাই হোক না কেন তার নিরাপত্তায় আপনি ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশের ভূখণ্ডে বসবাসকারী প্রত্যেকটি মানুষের একটি পরিচয়, সেটি হচ্ছে, আমরা বাংলাদেশি।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, একটি সভ্য এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পুলিশ অপরিহার্য। পুলিশ জনগণের শত্রু নয়। গণহত্যাকারী হাসিনা বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের শক্র হিসেবে দাঁড় করেছেন। তবে আমি বিশ্বাস করি এবং বিএনপি বিশ্বাস করে এবং দেশের গণতান্ত্রিক দলগুলো প্রত্যেকে বিশ্বাস করে পুলিশের ভেতরে একটি চক্র ছাড়া অধিকাংশ পুলিশ, কর্মকর্তা এবং সদস্য চাকরিবিধি এবং দেশের আইন-কানুন মেনেই দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছেন। হাসিনা পালানোর পরে বর্তমানে খুব সুকৌশলে একটি চক্র পুলিশের মনোবল ভেঙে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। পুলিশকে অকার্যকর করে দেয়া গেলে দেশকে অস্থিতিশীল করা সহজ। ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মনে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করা সহজ।

অস্থিতিশীলকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, পুলিশ কিংবা ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর আজকে থেকে, এই মুহূর্তে থেকে হামলা কিংবা নৈরাজ্য বন্ধ করুন। কেউ বিএনপি’র নাম ব্যবহার করে কোনো অপকর্ম করতে চাইলে তাকে ধরে আইনের হাতে তুলে দিন। কোনো পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের কাছে যথা নিয়মে অভিযোগ দায়ের করুন। দেশবাসীর প্রতি আমার আহ্বান, কেউ দয়া করে নিজের হাতে আইন তুলে নিবেন না। প্রতিহিংসা, প্রতিশোধে লিপ্ত হবেন না দয়া করে। দয়া করে বিচারের ভার নিজ হাতে তুলে নিবেন না। কেবল দৃষ্টান্ত অনুসরণ নয়, নিজেই দায়িত্বশীলতা এবং মানবাধিকারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।

তারেক রহমান বলেন, অতি সমালোচনা কিংবা নৈরাজ্যের বদলে নৈরাজ্যে কোনো সমাধান হতে পারে না, বরং বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। শাসন, প্রশাসনকে সময়োপযোগী করে গড়ে তোলা এখন সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ের দাবি। জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র, সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে নিয়োগ কিংবা পদন্নোতিতে মেধার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকতে হবে। দেশকে আমদানিনির্ভর কিংবা বৈদেশিক ঋণনির্ভর থেকে আমাদের বের করে আনতে হবে এবং উৎপাদন বাড়াতে হবে। দেশে কর্মসংস্থান তৈরি করে বেকার সমস্যার সমাধানে দ্রুত চেষ্টা করতে হবে। গার্মেন্টস, শ্রম, ওষুধসহ সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে নিয়ে রপ্তানির বাজারের আওতা আমাদের যেকোনো মূল্যে বাড়াতে হবে। প্রযুক্তিনির্ভর এবং কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে দেশে-বিদেশে শ্রমজীবী বাজারে টিকে থাকার মতো দক্ষ এবং মেধাবী প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আধুনিক এবং বাস্তবসম্মত করার লক্ষ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যের নীতির উপরে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। সবার জন্য সুবিচার নিশ্চিত করতে আইনের শাসন নিশ্চিত করা অবশ্যই প্রয়োজন এবং নিশ্চিত করা হবে।

তিনি বলেন, দেশে এবং বিদেশে অনেক বাংলাদেশি রয়েছে, যারা জ্ঞানে-বিজ্ঞানে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিজ্ঞদের এমন অনেকেই সংশ্লিষ্ট হতে চান। সুতরাং এসব গুণী মানুষদেরকে রাষ্ট্র পরিচালনায় ও নীতি প্রণয়নে অন্তর্ভুক্ত করতে জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ চালু করার প্রস্তাব বিএনপি এরই ভেতরে রেখেছে। রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় গুণগত পরিবর্তন আনতে না পারলে আমাদের আজকের এই বিপ্লবের কাঙ্ক্ষিত ফল মিলবে না।

তারেক রহমান বলেন, পুরো বাংলাদেশটাকেই বিগত ১৫ বছর ধরে বন্দি করে ফেলা হয়েছিল। আয়নাঘর মুক্ত আজ আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। বিরোধী মতের মানুষকে আয়নাঘরে আটকে রাখা হতো। আজ উন্মুক্ত হয়েছে গণতন্ত্রের দ্বার। আজ মুক্ত স্বাধীন প্রিয় বাংলাদেশ। প্রিয় বাংলাদেশের সাহসী ছাত্র-জনতাকে বীরোচিত অভিনন্দন।

তিনি বলেন, দেশ এবং জনগণকে স্বাধীন করতে গিয়ে চোখে, মুখে এবং বুকে গুলি আলিঙ্গন করা আবু সাঈদের মতো হাজারো ছাত্রছাত্রী এবং তরুণ-তরুণদেরকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। আহত হয়েছে অসংখ্য। এর ভেতরে ছাত্রছাত্রী রয়েছে। এর ভেতরে রয়েছে সাধারণ মানুষ, এর ভেতরে রয়েছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। গণতন্ত্রের বিজয়ের ইতিহাসে এই মানুষগুলো স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ছাত্র-জনতার এই বিপ্লবে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ সেদিন রাজপথে নেমে এসেছিল। গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি একজন মা যেমন তার সন্তানকে কোলে নিয়ে সেদিন রাজপথে শামিল হয়েছিলেন, একইভাবে শিক্ষক-সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিককর্মী, শ্রমিকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ রাজপথে নেমে এসেছিল। ’৫১, ’৭১ কিংবা ’৯০-এর মতো দেশের ছাত্রসমাজ বিজয়ের আরেকটি অমর ইতিহাস রচনা করেছেন। ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মধ্যদিয়ে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট বাংলাদেশ দেখেছে আরেকটি বিজয়। আমি বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী প্রতিটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দল-মত নির্বিশেষে অভিনন্দন জানাই বাংলাদেশের বীর জনতাকে।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনে আমরা সহযোগিতা করেছিলাম। এ কারণে আমাদের প্রায় ১১ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এখন যে বিজয় অর্জন হয়েছে, সেই বিজয়কে সংহত করাই কাজ। বিএনপি’র নেতাকর্মীদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা সবাই শান্ত থাকবেন। চক্রান্তকারীরা নতুন করে চক্রান্ত শুরু করতে পারে। চক্রান্তের মধ্যদিয়ে তারা এই বিজয়কে ছিনিয়ে নিতে পারে। সেই সুযোগ যেন আমরা তাদেরকে না দেই। যারা আজকে বিভিন্ন এলাকায়, শহরে বন্দরে ভাঙচুর ও লুটপাট করছে তারা কেউ আমাদের দলের লোক নয়। তারা এই ছাত্রদের কেউ না। তারা দুর্বৃত্ত ও দুষ্কৃতকারী এবং তাদের লোক, যারা এদেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চায়। সজাগ ও সাবধান থাকবেন, বার বার আমাদের বিজয়কে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা হয়েছে। সেই বিষয় যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে। আর অনতিবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করুন এবং তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। এতে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করবো।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হচ্ছে। এই সরকারের প্রধানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্ররা দিয়েছে। আমরা স্বাগত জানিয়েছি। আর শেখ হাসিনার দালালদের এই সরকারে রাখা যাবে না। আমাদের দাবি অন্য কোনো দেশের এবং শেখ হাসিনার দালালদের এই সরকারের গ্রহণ করা হবে না। আর এখন কিন্তু কোনো সরকার নেই। তাই শান্তি ও শৃঙ্খলা আমাদের গ্রহণ করতে হবে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, কিছু দুষ্কৃতকারী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে। এখন যারা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল করে তারা ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে এগুলো করছে। আমি তাদের বলবো, আপনারা সাবধান হয়ে যান। আর বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বলবো, চোখ ও কান খোলা রাখবেন। যেকোনো অপশক্তিকে প্রতিহত করবো।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের জনগণ মালিকানা ফিরে পেয়েছে। দেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হয়েছে। জনগণ মুক্ত হয়েছে। এই স্বাধীনতা যাদের জন্য পেয়েছি তাদের সালাম জানাচ্ছি, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আর এতো বড় হত্যাকাণ্ড এদেশে এর আগে ঘটে নাই। এই রক্তের বিনিময় দিতে হবে। সেই বিনিময় হচ্ছে দেশের মানুষের সমঅধিকার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পূর্ণভাবে ফিরিয়ে দিতে হবে। আর সজাগ থাকতে হবে ষড়যন্ত্রকারীরা যাতে এরমধ্যে ঢুকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার চিন্তাকে নস্যাৎ করতে না পারে।

বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সমাবেশে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সংগঠনের সিনিয়র নেতারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: মানবজমিন।