জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন
অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব : দেশকে বাঁচাতে একযোগে কাজ করার আহ্বান

- প্রকাশের সময় : ০৪:১১:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ অগাস্ট ২০২৪
- / ১১৮ বার পঠিত
জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেছেন, আসুন দেশকে বাঁচাতে একযোগে কাজ করি। পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১১টা ২২ মিনিটে বঙ্গবভন থেকে দেশের সকল গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ভাষণে তিনি বলেন, দেশে চলমান অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা ও লুটতরাজ বন্ধে উদ্যোগ নিতে সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিও আহবান জানাচ্ছি। জনগণের জানমাল রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকেও নির্দেশ দিচ্ছি।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁর ভাষণে আরও বলেন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করে অতিদ্রæত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে উদ্যোগ নেওয়া হবে। সংবিধান অনুযায়ী অনতিবিলম্বে সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে। এছাড়া ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আটক হওয়া ছাত্রদের মুক্তি দেওয়া হবে। বলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকেও মুক্তি দেয়া হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, যেসব হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে, এতে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং বিচার করা হবে। নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সকল কলকারখানা খুলে দেওয়ার ব্যাপারে প্রশাসন সহ সকলকে আহবান জানাই। অফিস-আদালতও চলবে। এছাড়া ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের সময় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন উপস্থিত ছিলেন।
জাতির উদ্দেশে রাষ্ট্রপতির ভাষণের পূর্ণবিবরণ
জাতির উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ভাষণের পূর্ণবিবরণ প্রকাশ করেছে সরকারী বার্তা সংস্থা ‘বাসস’। ভাষনটি নি¤œরূপ:
আপনারা জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ (৫ আগষ্ট) রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আজ বঙ্গভবনে তিন বাহিনীর প্রধান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়কদের সাথে আলোচনা হয়। শুরুতেই সেনাপ্রধান বিরাজমান সার্বিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে তাঁর আলোচনা সম্পর্কে আমাকে অবহিত করেন। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও এসময় তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
সভায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। এছাড়া জরুরী ভিত্তিতে একটি অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সকল দল ও অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে গঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকার যত দ্রæত সম্ভব সাধারণ নির্বাচন করবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় আটকসহ সকল বন্দীদের মুক্তি দেয়া হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিহতদের পরিবারদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও আহতদের সুচিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা দেয়া হবে।
সর্বসম্মতিক্রমে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রিয় দেশবাসী,
আমি দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এবং লুটতরাজ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড বন্ধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ প্রদান করছি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।
দেশের অর্থনীতি, প্রশাসন ও শিল্প কল-কারখানা চালু রাখার লক্ষ্যে সকলকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই। ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষকদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে অতি শীঘ্রই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হবে। এছাড়া যারা হত্যা ও সহিংসতার সাথে জড়িত, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী অনতিবিলম্বে বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করা হবে। দেশের সকল অফিস আদালত আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকেই স্বাভাবিকভাবে চলবে।
প্রিয় দেশবাসী,
আসুন আমরা দেশকে বাঁচাতে একযোগে কাজ করি। পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে ও প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে উঠে দেশকে এগিয়ে নিতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার জন্য আমি সবাইকে বিনয়ের সাথে আহ্বান জানাচ্ছি।
একটি সুন্দর ও সোনালী ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় আমরা এগিয়ে যাবো- ইনশাল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।