সমস্যা সমাধানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্বারকলিপি পেশ
প্রবাসী বাংলাদেশী ফোরামের ১২ দফা দাবী

- প্রকাশের সময় : ০২:৫০:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০২৪
- / ২৩৯ বার পঠিত
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাড়ছে রিজার্ভ। কিন্তু এসব রেমিটেন্স যোদ্ধারা নিজ মাতৃভূমিসহ বিভিন্ন দেশে নানা সমস্যায় জর্জরিত। প্রবাসীদের এসব সমস্যা সমাধানে ১২ দফা দাবী উত্থাপন করেছে প্রবাসী বাংলাদেশী ফোরাম। ফোরামের দাবি সম্বলিত একটি স্বারকলিপি নিউইয়র্ক সফরকালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে তুলে দেওয়া হয়। খবর ইউএনএ’র।
গত ২৭ জুন বৃহস্পতিবার রাতে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানস্থ মিলেনিয়াম হিলটন হোটেলে মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে ফোরামের নেতৃবৃন্দ তাদের দাবী সম্বলিত স্মারকরিপিটি হস্তান্তর করেন। এসময় প্রবাসী বাংলাদেশী ফোরামের আহবায়ক ও বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম এবং ডা. নারগিস রহমান ও শামীম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এর আগেও কয়েকবার এই দাবিগুলো সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে তুলে ধরেন ফখরুল আলম।
ফোরামের নেতৃবৃন্দের স্মরকিলিপিটি গ্রহণকালে মন্ত্রী কামাল বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার প্রবাসী বান্ধব সরকার। তিনি বিশ্বাস করেন সরকার প্রবাসীদের সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। এসময় তিনি ফোরামের দাবীগুলো শেখ হাসিনা সরকারের কাছে পৌছে দেয়ার আশ্বাস দেন বলে সংশ্লিস্টরা জানান।
জানা গেছে, মন্ত্রী কামাল ফোরামের নেতৃবৃন্দের সাথে প্রায় ৪৫ মিনিট আলোচনা করেন। এসময় তিনি প্রবাসীদের দাবী-দাওয়াগুলো এক একটি করে পড়েন এবং সমাধানের জন্য সরকারের দৃষ্টিতে নবেন বলে জানান। প্রবাসীদের দাবী-দাওয়ার বাইরে ফোরামের নেতৃবৃন্দ দেশে বিনোয়োগের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের জান-মালের নিরাপত্তা, বিভিন্ন ভূমিদুস্যদের হাত থেকে প্রবাসীদের অর্থ ও তাদের প্লট রক্ষারও দাবী জানান।
প্রবাসী বাংলাদেশী ফোরামের ১২টি দাবির মধ্যে রয়েছে:
১. নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বিমানের সরাসরি ফ্লাইট চালু।
২. নিউইয়র্কসহ সারা বিশ্বের বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও দূতাবাসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) চালু করা, যা ব্রিটেনে চালু রয়েছে।
৩. বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৪. দেশের ভূমিদূস্যদের হাত থেকে প্রবাসীদের রক্ষা করা। বিশেষ করে চুক্তি মোতাবেক ক্রয় করা জমি, প্লট, অ্যাপার্টমেন্ট সহজে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীর কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৫. ঢাকাস্থ শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ করা।
৬. দ্বৈত নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ করা।
৭. বাংলাদেশের অফিস-আদালতে লাল ফিতার দৌরাত্ব বন্ধ করা, এছাড়া প্রবাসীদের জন্য ঢাকায় চালু করা ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ কার্যকর করা।
৮. প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের অর্থে গড়ে ওঠা অর্থনীতির লক্ষ-কোটি টাকা বিদেশে পাচার বন্ধসহ পাচারকারীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শান্তির ব্যবস্থা করা।
৯. জন্মভূমি সফরকালে প্রবাসীদের জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
১০. বাংলাদেশে প্রবাসীদের ঘর-বাড়ি ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রক্ষার ব্যবস্থা করা।
১১. কনস্যুলেট সেবা বৃদ্ধি করে প্রবাসীদের পাসপোর্ট নবায়ন, জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, দেশের সম্পত্তি হস্তান্তরে পাওয়ার অব অ্যাটর্নী প্রদানের মতো কাজগুলো সহজ করা।
১২. যে কোনো প্রবাসীর মরদেহ বিনা খরচে দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করা।
ইতিপূর্বে উপরোক্ত দাবীগুলো উত্থাপন করে ফখরুল আলম বলেছিলেন, প্রিয় জন্মভূমি ত্যাগ আসলে একটা রক্তক্ষরণের মতো বিষয়।
প্রবাসীরা সেই তীব্র ব্যথাকে উপেক্ষা করে প্রবাস জীবন-যাপন করার পাশাপাশি নানাভাবে নিজ নিজ পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করছেন। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসীরা আজ দেশে-প্রবাসে নানা সমস্যায় জড়িত। তিনি বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ আবার বিদেশে পাচার হয়ে আসছে। অথচ তার কোন প্রতিকার বা বিচার নেই। তিনি আরও বলেন, ভূমিদস্যুরা প্রবাসীদের সঙ্গে চরম প্রতারণা করছেন। প্রবাসীদের অর্থ নিয়ে জায়গা-জমি, ভূমি, অ্যাপার্টমেন্ট, প্লট বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। আত্নীয়-স্বজন ও প্রবাসী ভাই-বোনের সম্পত্তি গ্রাস করে নিচ্ছে। নিজেদের দাবি-দাওয়া আদায়ে সময় এসেছে প্রবাসীদের সোচ্চার হওয়ার।