ভারতে আবারও মোদি!

- প্রকাশের সময় : ১১:৩২:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০২৪
- / ১১০ বার পঠিত
শেষ হলো ভারতে ভোটের মহাযজ্ঞ। গতকাল শনিবার লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম ও শেষ দফার ভোটগ্রহণ হয় দেশটির ৮টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৫৭ আসনে। এর মধ্য দিয়েই ভারতের ৫৪৩টি লোকসভা আসনে ভোট শেষ হলো। গতকাল সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। দেশের অন্যান্য রাজ্যে মোটামুটিভাবে শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও আগের ছয় দফার মতো গতকাল শেষ তথা সপ্তম দফায় হয়েছে সহিংসতা।
১৬ মার্চ লোকসভা ভোটের সময়সূচি প্রকাশ করেছিল ভারতের নির্বাচন কমিশন। ভোটগ্রহণ শুরু হয় গত ১৯ এপ্রিল। এরপর ধাপে ধাপে নানা নাটকীয় ঘটনাকে সাক্ষী রেখে শেষ হলো লোকসভার ৫৪৩টি আসনের ভোট। আগামী মঙ্গলবার ঘোষণা করা হবে ফলাফল। সেদিনই জানা যাবে ২৭২টি আসনে জয় পেয়ে কারা বসবে দিল্লির মসনদে। নিশ্চিত হওয়া যাবে এবারের নির্বাচনেও বিজয়ী হয়ে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করবে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) নাকি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ২৬ দলের ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইনডিয়া)।
অবশ্য বিশ্লেষকরা আগে থেকে বলে আসছিলেন, কোনো ধরনের নতুন চমক না দেখা গেলে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন নরেন্দ্র মোদি। গতকাল ভোট শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বুথফেরত জরিপেও (এক্সিট পোল) উঠে এসেছে সেই তথ্যই। মাঝে কিছু সংশয় দেখা দিলেও বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমের এক্সিট পোল বলছে এবারও ৩৫০টির বেশি আসনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাবে বিজেপি।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, অন্তত ছয়টি সংবাদমাধ্যমের এক্সিট পোলে বিস্তর ব্যবধানে এগিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে বিজেপির জোট তথা এনডিএকে। অপরদিকে ইনডিয়া জোট ১৪০ থেকে ১৫০টি আসনে জিততে পারে। জান কি বাত-এর জরিপে এনডিএর জন্য সর্বাধিক আসনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যমটির পূর্বাভাস, বিজেপি জোট পাবে ৩৬২-৩৯২টি আসন। অপরদিকে বিরোধী জোট বা অন্যরা পাবে ১৪১-১৬১টি আসন। ইন্ডিয়া নিউজ ও ডি-ডায়নামিকের বুথফেরত জরিপ বলছে, লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ জোট ৩৭১ ও ইনডিয়া জোট ১২৫ আসনে জয় পেতে পারে। অপরদিকে এনডিএর জন্য সর্বনি¤œ স্কোর আসে রিপাবলিক ভারত-পি মার্ক। তাদের জরিপে এনডিএ ৩৫৯ এবং ইনডিয়া ১৫৪ আসন পাবে। দৈনিক ভাস্করের জরিপ বলছে, এনডিএ জোট ২৮১ থেকে ৩৫০টি আসনে জয় পেতে পারে। ইনডিয়া জোট পেতে পারে ১৪৫ থেকে ২০১টি আসন। নিউ নেশন বলছে, বিজেপি জোট এবার ৩৪২ থেকে ৩৭৮টি আসনে জয় পেতে যাচ্ছে। আর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইনডিয়া জোট জিততে পারে ১৫৩ থেকে ১৬৯ আসন। আর রিপাবলিক ভারত-পি মার্ক বলছে তাদের জরিপে এনডিএ ৩৫৯ এবং ইনডিয়া ১৫৪ আসন পাবে। অবশ্য এই জরিপের ফলাফলই চূড়ান্ত নয়। চূড়ান্ত ফলে এই আভাস বদলে যেতে পারে।
এনডিটিভি বলছে, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বুথফেরত জরিপগুলোতে বিজেপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনার চিত্র ফুটে উঠেছিল। তবে চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, বিজেপি এককভাবে লোকসভার ২৮২টি আসনে জিতেছে। আর দলটির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সর্বমোট ৩৩৬টি আসন জিতে নেয়। অর্থাৎ সেবার বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার বিষয়ে পূর্বানুমান করতে ব্যর্থ হয় জরিপ সংস্থাগুলো। ওই নির্বাচনের কেন্দ্রফেরত জরিপগুলোতে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের ঝুলিতে রাখা হয়েছিল ৯৭ থেকে ১১৫টি আসন। তবে চূড়ান্ত ফলাফলে তার প্রতিফলন হয়নি। দলটি এককভাবে মাত্র ৪৪টি আসন পায়, যেখানে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট মাত্র ৬০টি আসন দখল করে।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের কেন্দ্রফেরত জরিপ অনুযায়ী বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের ঝুলিতে যাওয়ার কথা ছিল ৩০০-৩৬৫টি আসন। চূড়ান্ত ফলাফলে এ জোট ৩৫২টি আসন পায়, যেখানে বিজেপি এককভাবে পায় ৩০৩টি আসন। পাঁচ বছর আগের ওই নির্বাচনে সর্বনি¤œ ৭৭টি থেকে সর্বাধিক ১২৪টি আসন কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট পেতে পারে বলে আভাস মিলেছিল। শেষ পর্যন্ত তা ৯১ আসনে ঠেকে, যেখানে কংগ্রেস এককভাবে পেয়েছিল ৫২ আসন।
২০১৯ সালে জরিপের পূর্বাভাসের সঙ্গে চূড়ান্ত ফলাফলের মিল ছিল বেশি। তবে এবার চিত্র একটু ভিন্ন হতে পারে বলে জানাচ্ছে এনডিটিভি। গত ১৯ এপ্রিল প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণের দিন থেকে বিজেপির জন্য নতুন কিছু পরিস্থিতি তৈরি হয়। দলটির আদর্শিক সংগঠন হিসেবে পরিচিত রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের একটি অংশের মধ্যে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে অনাগ্রহের কথা উঠে আসতে থাকে। বিপরীতে মোদিবিরোধী হাওয়া জোরালো হতে থাকে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বলে আসছে, এবার তারা ‘৪০০ আসন’ পার করবেন। মোদি তার জনসভাগুলোতে এমন প্রত্যাশার কথা বলেছেন। এদিকে কংগ্রেসসহ ইনডিয়া জোটের অন্য শরিকরা মোদিকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে এবার আরও বেশি আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছেন। এককভাবে না হলেও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে দাবি করেছেন, ইনডিয়া জোটের শরিকরাই সরকার গঠন করবে, পতন হবে মোদি সরকারের।
কিন্তু জরিপ যা বলছে, তাতে এবারও সরকার গঠন করা হচ্ছে না কংগ্রেসের। অথচ ভারতের স্বাধীনতার পর দেশটির ৭৬ বছরের ইতিহাসের মধ্যে ৫৪ বছরই ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। কিন্তু শতবর্ষীয় দলটি গত দুই নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে যায়। আর এবার দেশটির রাজনীতিতে অবস্থান ধরে রাখার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে দলটি।
স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি সাম্প্রতিক বছরগুলোয় রাজনীতিতে সাংগঠনিক শক্তির খুব একটা পরিচয় দিতে পারেনি। সে তুলনায় বিজেপির কর্মীরা অত্যন্ত সংগঠিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ। টানা তৃতীয়বারের মতো পরাজয় কংগ্রেস ও দলটির নিয়ন্ত্রণকারী নেহরু-গান্ধী পরিবারের জন্য বড় আঘাত হয়ে দেখা দিতে পারে। এমনকি দলটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কার্যক্রমেও এর প্রভাব নেতিবাচক হয়ে দেখা দিতে পারে।
দিল্লিভিত্তিক থিংকট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের ফেলো রাহুল ভার্মার বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারের নির্বাচনটি কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে। বড় ধরনের পরাজয় ঘটলে দলটির রাজ্য, এমনকি জাতীয় পর্যায়েও ভাঙন দেখা দিতে পারে, যা দলটির জন্য অত্যন্ত বিপর্যয়কর পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।