নিউইয়র্ক ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834
সেরা লেখক পুরষ্কার পেলেন শীর্ষেন্দু মখোপাধ্যায়, সেরা প্রকাশক ‘সময়’ প্রকাশনী

বাংলা ভাষাকে বিশ্বের মর্যাদাশীল ভাষায় পরিণত করতে প্রত্যয়

হককথা ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৪৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪
  • / ২৩৪ বার পঠিত

ইউএনএ, নিউইয়র্ক : ‘যত বই তত প্রাণ’ শ্লোগান নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ৩৩তম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা-০২৪। চারদিনব্যাপী এই মেলা চলে শুক্রবার (২৪ মে) থেকে সোমবার (২৭ মে)। বাংলাদেশী অধ্যুষিত কুইন্সের জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টারে এই মেলার আয়োজন করা হয়। মুক্তধারা ফাউন্ডেশন এই বই মেলার আয়োজক। গেলো বছরও একই স্থানে ৩২তম মেলার বইমেলার আয়োজন করা হয়েছিলো। দেশ-বিদেশের ৩৫টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখকদের প্রায় ১০ হাজার নতুন বই নিয়ে এবারে মেলায় অংশ নেন। মেলার অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো সেমিনার, কবিতা পাঠ, বই পরিচিতি, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি। অনুষ্ঠানের শেষদিন, অর্থাৎ সোমবার ছিলো দিনব্যাপী শিশু-কিশোর-যুবা উৎসব, তারুণ্যের উল্লাস।

এবারের মেলায় সেরা লেখক হিসেবে ‘জিএফবি/মুক্তধারা সাহিত্য পুরষ্কার’ পেয়েছেন কলকাতার শীর্ষেন্দু মখোপাধ্যায়। আর সেরা প্রকাশক হিসেবে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা প্রকাশক পুরষ্কার’ পেয়েছে ঢাকার সময় প্রকাশনী। এবছর প্রবাসী লেখকদের জন্য ‘শহীদ কাদরী স্মৃতি পুরস্কার’ ঘোষণা করা হয়নি। মেলার তৃতীয় দিন রোববার মূল মঞ্চে এই পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়।

বইমেলার বিভিন্ন পর্বের আলোচনায় বক্তারা বলেন, বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতি এখন বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। সম্মিলিতভাবে বাংলা ভাষাকে বিশ্বের মর্যাদাশীল ভাষায় পরিণত করতে হবে। আমেরিকায় জন্মনিয়ে বড় হওয়া নতুন প্রজন্ম বইমেলা-কে আগামী দিনে এগিয়ে নিয়ে যাবে এমন প্রত্যাশাও করেন বক্তারা। খবর ইউএনএ’র।

উদ্বোধন : বর্ণাঢ্য আয়োজনে শুক্রবার সন্ধ্যায় ফিতা কেটে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা। এসময় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ওয়াশিংটন ডিসিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান ও ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা। এসময় নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নূরুল হুদা, সাংবাদিক রোকেয়া হায়দার, বাংলাতেশের স্বাধীনতা পুরষ্কার ও ভারতের পদ্মশ্রী পুরষ্কারপ্রাপ্ত প্রখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল নামজুল হুদা, অভিনেত্রী সারা যাকের, কথা সাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীন এমপি, ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন্নবী, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক-সাংবাদিক নাজমুন নেসা পিয়ারী, অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন, একুশে পদকপ্রাপ্ত ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, অভিনেতা আফজাল হোসেন, বাইমেলার সাবেক আহ্বায়ক গোলাম ফারুক ভুইয়া ও ফেরদৌস সাজেদীন, এবারের আহ্বায়ক হাসান ফেরদৌস ছাড়াও দেশ ও প্রবাসের কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন। এই পর্ব উপস্থাপনায় ছিলেন শামীম আল মামুন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বর্তমানে আমরা যে বাংলা ভাষাকে পাচ্ছি- তা উচ্চারিতভাবে, প্রামাণ্যভাবে হাজার বছর ধরে লিখিত আকারে বিবর্তিত হয়ে এসেছে। তিনি বলেন, আমাদের যে ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ বা অপরিমেয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য রয়েছে- তার প্রথম উপকরণ ভাষা। যে ভাষার নাম আমাদের জন্য বাংলা ভাষা- তা বিবর্তিত হয়েছে এবং তার মাধ্যমেই আমাদের জাতিসত্তা, ব্যক্তিসত্ত্বা ও ধ্বনিসত্তা বিবর্তিত হয়েছে।

প্রদীপ প্রজ্জলন: উন্মুক্ত মঞ্চে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর মিলনায়তনের ভিতরে মূল মঞ্চে একে একে ৩৩টি প্রদীপ প্রজ্জলন করেন অতিথিগণ। মেলার ৩৩তম আসর উপলক্ষ্যে ৩৩ জন অতিথি মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জলন করেন। এই পর্বে অতিথিগণ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এসময় ওয়াশিংটন ডিসিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌমিত্র শেখর দে, কথা সাহিত্যিক ও চ্যানেল আই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এমপি, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যলয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ড. মিল্টন বিশ্বাস, সময় প্রকাশনীর কর্ণধার ফরিদ আহমেদ, মেলা কমিটির আহ্বায়ক হাসান ফেরদৌস, মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন নুরুন্নবী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

ফরিদা ইয়াসমিন এমপি বলেন, নিউইয়র্কে মুক্তধারার ৩৩ বছর এ মেলা ধরে রাখা এবং প্রথম প্রজন্মের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে একইসূত্রে বেঁধে রাখার এই যে প্রয়াস, তা অবশ্যই সময়ের প্রয়োজনে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই যুগসূত্র আমার দেশ, আমার সংস্কৃতি, আমার বই, আমার সাহিত্য সবকিছুতে।

উদ্বোধনী কনসার্ট: এর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পী তাজুল ইমামের নেতৃত্বে উদ্বোধনী দিনে মূল অনুষ্ঠানের আগে উন্মুক্ত মঞ্চে কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। এতে নিউইয়র্কের বহ্নিশিখা সঙ্গীত নিকেতন, সঙ্গীত পরিষদ, আড্ডা ও উদীচী’র শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে।

মুক্তিযুদ্ধের চিত্র প্রদর্শনী: এবারের মেলায় বিশেষ আয়োজন ছিলো ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সৌজন্য ‘জেনোসাইড ’৭১’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী। মেলার প্রথমদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় এই পর্বের উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী। এই প্রদর্শনী উদ্বোধনকালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারা যাকের, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, অভিনেতা আফজাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শামিম আল আমিন। জেনোসাইড এখনো কেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি- সে বিষয়ে ছিলো সেমিনার পর্ব।

প্রথম দিন শুক্রবারের কর্মকান্ড: বইমেলার প্রথম দিনের অন্যান্য কর্মকান্ডের মধ্যে ছিলো: মূল মঞ্চে উদ্বোধনী সঙ্গীত, পরিবেশনায় ছিলো সঙ্গীত পরিষদ। কবিতা পাঠ ‘যতদূর বাংলা ভাষা ততদূর বাংলাদেশ’। গীতি আলেখ্য ‘আমরা নতুন যৌবনের দূত’। শিশু-কিশোর কন্ঠে নজরুলের কবিতা ‘ঝিঙেফুল’ ও সঙ্গীতানুষ্ঠান।

 

দ্বিতীয় দিন শনিবারের কর্মকান্ড: বইমেলার দ্বিতীয় দিনের কর্মকান্ডের মধ্যে ছিলো- স্বরচিত কবিতা পাঠ, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, পাঠক-লেখক-প্রকাশক ফোরাম। নতুন বই আলোচনা। ‘১৯৭১-এর জেনোসাইড এখনো কেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি’ শীর্ষক সেমিনার। কবিতা আবৃত্তি ‘আবার ভাবাসার সাধ জাগে’। কবি নজরুলের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত’। গানের অনুষ্ঠান ‘জলসা’।

তৃতীয় দিন রোববারের কর্মকান্ড: বইমেলার তৃতীয় দিনের কর্মকান্ডের মধ্যে ছিলো- স্বরচিত কবিতা পাঠ। ছড়ার আসর। নতুন বই নিয়ে আলোচনা। ‘রবীন্দ্রনাথ ও পূর্ব বাংলা’ শীর্ষক আলোচনা। ‘সাহিত্য ও পুরষ্কার’ শীর্ষক আলোচনা। ‘বাংলা নটকের এদিন-সেদিন’ শীর্ষক আলোচনা। ‘অভিবাসী সাহিত্য মূল্যহীন’ শীর্ষক বিতর্ক। ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কেও ৫০ বছর’ শীর্ষক আলাপচারিতা। ‘শিশু সাহিত্য ছেলেখেলা নয়’ শীর্ষক আলোচনা। ‘আমরা কমাটে জাতি’ শীর্ষক কবিতা আবৃত্তি। ‘মুক্তধারা বক্তৃতা ২০২৪- নজরুল ও বঙ্গবন্ধু। পুরষ্কার ঘোষণা। সঙ্গীতালেখ্য ‘কোথায় পাবো তারে’। নাটক ‘তিন কন্যার উপখ্যান’। আলাপচারিতা ‘মুখোমুখি’ এবং শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার একক সঙ্গীতানুষ্ঠান।

 

চতুর্থ দিন সোমবারের কর্মকান্ড: বইমেলার চতুর্থ ও শেষ দিনের কর্মকান্ডের মধ্যে ছিলো- আড্ডা। ‘লেখা থেকে পান্ডুলিপি, পান্ডুলিপি থেকে বই’ শীর্ষক কর্মশালা। স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি। ‘আজীবন মুক্তিযোদ্ধা’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা। তারুণ্যের উৎসব। যেমন খুশি আঁক, যেমন খুশি গাও। নবীন শিল্পীদেও সঙ্গীত ও নৃত্যানুষ্ঠান ‘ধর্ম বর্ণ জাতির উর্ধ্বে জাগোরে নবীন প্রাণ। নবীন কবিদের আসর। ‘নতুন প্রজন্মের লেখক-খাতা থেকে বই’ শীর্ষক আলোচনা। ‘বিকল্প তথ্যমাধ্যম কেন গুরুত্বপূর্ণ’ শীর্ষক আলোচনা। ‘রন্ধন যখন সংস্কৃতি’ শীর্ষক আলোচনা। ‘সাফল্যের পেছনে’ শীর্ষক আলোচনা। র‌্যাফল ড্র। ‘মুক্তিযুদ্ধ ও নতুন প্রজন্ম’। নবীন শিল্পীদের দ্বৈতকন্ঠে নজরুল সঙ্গীত ‘আপনার চেয়ে আপন যে জন’। ভিন্ন আঙ্গিকে নজরুল-বলরুম ও আধুনিক নৃত্য। ‘তোমাদেও নজরুল শীর্ষক আলোচনা। শিল্পী নিরুপমা রহমানের একক সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘সুরে ও বাণীর মালা দিয়ে’।

উল্লেখ্য, বিগত মেলার মতো এবারের ৩৩তম মেলাতেও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ‘জিএফবি/মুক্তধারা সাহিত্য পুরষ্কার’ দেওয়া হয়। এই পুরষ্কারের মূল্যমান ৩,০০০ ইউএস ডলার। ইতিপূর্বে যারা এই পুরষ্কার পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, কথা সাহিত্যিক দিলারা হাশেম, শামসুজ্জামান খান ও কবি আসাদ চৌধুরী। এছাড়াও মেলায় অংশগ্রহণকারী সেরা প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা প্রকাশক পুরষ্কার’ প্রদান করা হয়। এই পুরষ্কারের মূল্যমান ৫০০ ইউএস ডলার। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য মেলার পক্ষ থেকে দেয়া হয় জিএফবি-মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার। এছাড়া প্রবাসী লেখকদের জন্য দেয়া হয় ‘শহীদ কাদরী স্মৃতি পুরস্কার’।

 

 

 

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

সেরা লেখক পুরষ্কার পেলেন শীর্ষেন্দু মখোপাধ্যায়, সেরা প্রকাশক ‘সময়’ প্রকাশনী

বাংলা ভাষাকে বিশ্বের মর্যাদাশীল ভাষায় পরিণত করতে প্রত্যয়

প্রকাশের সময় : ০৬:৪৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪

ইউএনএ, নিউইয়র্ক : ‘যত বই তত প্রাণ’ শ্লোগান নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ৩৩তম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা-০২৪। চারদিনব্যাপী এই মেলা চলে শুক্রবার (২৪ মে) থেকে সোমবার (২৭ মে)। বাংলাদেশী অধ্যুষিত কুইন্সের জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টারে এই মেলার আয়োজন করা হয়। মুক্তধারা ফাউন্ডেশন এই বই মেলার আয়োজক। গেলো বছরও একই স্থানে ৩২তম মেলার বইমেলার আয়োজন করা হয়েছিলো। দেশ-বিদেশের ৩৫টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখকদের প্রায় ১০ হাজার নতুন বই নিয়ে এবারে মেলায় অংশ নেন। মেলার অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো সেমিনার, কবিতা পাঠ, বই পরিচিতি, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি। অনুষ্ঠানের শেষদিন, অর্থাৎ সোমবার ছিলো দিনব্যাপী শিশু-কিশোর-যুবা উৎসব, তারুণ্যের উল্লাস।

এবারের মেলায় সেরা লেখক হিসেবে ‘জিএফবি/মুক্তধারা সাহিত্য পুরষ্কার’ পেয়েছেন কলকাতার শীর্ষেন্দু মখোপাধ্যায়। আর সেরা প্রকাশক হিসেবে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা প্রকাশক পুরষ্কার’ পেয়েছে ঢাকার সময় প্রকাশনী। এবছর প্রবাসী লেখকদের জন্য ‘শহীদ কাদরী স্মৃতি পুরস্কার’ ঘোষণা করা হয়নি। মেলার তৃতীয় দিন রোববার মূল মঞ্চে এই পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়।

বইমেলার বিভিন্ন পর্বের আলোচনায় বক্তারা বলেন, বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতি এখন বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। সম্মিলিতভাবে বাংলা ভাষাকে বিশ্বের মর্যাদাশীল ভাষায় পরিণত করতে হবে। আমেরিকায় জন্মনিয়ে বড় হওয়া নতুন প্রজন্ম বইমেলা-কে আগামী দিনে এগিয়ে নিয়ে যাবে এমন প্রত্যাশাও করেন বক্তারা। খবর ইউএনএ’র।

উদ্বোধন : বর্ণাঢ্য আয়োজনে শুক্রবার সন্ধ্যায় ফিতা কেটে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা। এসময় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ওয়াশিংটন ডিসিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান ও ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা। এসময় নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নূরুল হুদা, সাংবাদিক রোকেয়া হায়দার, বাংলাতেশের স্বাধীনতা পুরষ্কার ও ভারতের পদ্মশ্রী পুরষ্কারপ্রাপ্ত প্রখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল নামজুল হুদা, অভিনেত্রী সারা যাকের, কথা সাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীন এমপি, ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন্নবী, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক-সাংবাদিক নাজমুন নেসা পিয়ারী, অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন, একুশে পদকপ্রাপ্ত ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, অভিনেতা আফজাল হোসেন, বাইমেলার সাবেক আহ্বায়ক গোলাম ফারুক ভুইয়া ও ফেরদৌস সাজেদীন, এবারের আহ্বায়ক হাসান ফেরদৌস ছাড়াও দেশ ও প্রবাসের কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন। এই পর্ব উপস্থাপনায় ছিলেন শামীম আল মামুন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বর্তমানে আমরা যে বাংলা ভাষাকে পাচ্ছি- তা উচ্চারিতভাবে, প্রামাণ্যভাবে হাজার বছর ধরে লিখিত আকারে বিবর্তিত হয়ে এসেছে। তিনি বলেন, আমাদের যে ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ বা অপরিমেয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য রয়েছে- তার প্রথম উপকরণ ভাষা। যে ভাষার নাম আমাদের জন্য বাংলা ভাষা- তা বিবর্তিত হয়েছে এবং তার মাধ্যমেই আমাদের জাতিসত্তা, ব্যক্তিসত্ত্বা ও ধ্বনিসত্তা বিবর্তিত হয়েছে।

প্রদীপ প্রজ্জলন: উন্মুক্ত মঞ্চে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর মিলনায়তনের ভিতরে মূল মঞ্চে একে একে ৩৩টি প্রদীপ প্রজ্জলন করেন অতিথিগণ। মেলার ৩৩তম আসর উপলক্ষ্যে ৩৩ জন অতিথি মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জলন করেন। এই পর্বে অতিথিগণ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এসময় ওয়াশিংটন ডিসিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌমিত্র শেখর দে, কথা সাহিত্যিক ও চ্যানেল আই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এমপি, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যলয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ড. মিল্টন বিশ্বাস, সময় প্রকাশনীর কর্ণধার ফরিদ আহমেদ, মেলা কমিটির আহ্বায়ক হাসান ফেরদৌস, মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন নুরুন্নবী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

ফরিদা ইয়াসমিন এমপি বলেন, নিউইয়র্কে মুক্তধারার ৩৩ বছর এ মেলা ধরে রাখা এবং প্রথম প্রজন্মের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে একইসূত্রে বেঁধে রাখার এই যে প্রয়াস, তা অবশ্যই সময়ের প্রয়োজনে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই যুগসূত্র আমার দেশ, আমার সংস্কৃতি, আমার বই, আমার সাহিত্য সবকিছুতে।

উদ্বোধনী কনসার্ট: এর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পী তাজুল ইমামের নেতৃত্বে উদ্বোধনী দিনে মূল অনুষ্ঠানের আগে উন্মুক্ত মঞ্চে কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। এতে নিউইয়র্কের বহ্নিশিখা সঙ্গীত নিকেতন, সঙ্গীত পরিষদ, আড্ডা ও উদীচী’র শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে।

মুক্তিযুদ্ধের চিত্র প্রদর্শনী: এবারের মেলায় বিশেষ আয়োজন ছিলো ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সৌজন্য ‘জেনোসাইড ’৭১’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী। মেলার প্রথমদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় এই পর্বের উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী। এই প্রদর্শনী উদ্বোধনকালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারা যাকের, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, অভিনেতা আফজাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শামিম আল আমিন। জেনোসাইড এখনো কেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি- সে বিষয়ে ছিলো সেমিনার পর্ব।

প্রথম দিন শুক্রবারের কর্মকান্ড: বইমেলার প্রথম দিনের অন্যান্য কর্মকান্ডের মধ্যে ছিলো: মূল মঞ্চে উদ্বোধনী সঙ্গীত, পরিবেশনায় ছিলো সঙ্গীত পরিষদ। কবিতা পাঠ ‘যতদূর বাংলা ভাষা ততদূর বাংলাদেশ’। গীতি আলেখ্য ‘আমরা নতুন যৌবনের দূত’। শিশু-কিশোর কন্ঠে নজরুলের কবিতা ‘ঝিঙেফুল’ ও সঙ্গীতানুষ্ঠান।

 

দ্বিতীয় দিন শনিবারের কর্মকান্ড: বইমেলার দ্বিতীয় দিনের কর্মকান্ডের মধ্যে ছিলো- স্বরচিত কবিতা পাঠ, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, পাঠক-লেখক-প্রকাশক ফোরাম। নতুন বই আলোচনা। ‘১৯৭১-এর জেনোসাইড এখনো কেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি’ শীর্ষক সেমিনার। কবিতা আবৃত্তি ‘আবার ভাবাসার সাধ জাগে’। কবি নজরুলের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত’। গানের অনুষ্ঠান ‘জলসা’।

তৃতীয় দিন রোববারের কর্মকান্ড: বইমেলার তৃতীয় দিনের কর্মকান্ডের মধ্যে ছিলো- স্বরচিত কবিতা পাঠ। ছড়ার আসর। নতুন বই নিয়ে আলোচনা। ‘রবীন্দ্রনাথ ও পূর্ব বাংলা’ শীর্ষক আলোচনা। ‘সাহিত্য ও পুরষ্কার’ শীর্ষক আলোচনা। ‘বাংলা নটকের এদিন-সেদিন’ শীর্ষক আলোচনা। ‘অভিবাসী সাহিত্য মূল্যহীন’ শীর্ষক বিতর্ক। ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কেও ৫০ বছর’ শীর্ষক আলাপচারিতা। ‘শিশু সাহিত্য ছেলেখেলা নয়’ শীর্ষক আলোচনা। ‘আমরা কমাটে জাতি’ শীর্ষক কবিতা আবৃত্তি। ‘মুক্তধারা বক্তৃতা ২০২৪- নজরুল ও বঙ্গবন্ধু। পুরষ্কার ঘোষণা। সঙ্গীতালেখ্য ‘কোথায় পাবো তারে’। নাটক ‘তিন কন্যার উপখ্যান’। আলাপচারিতা ‘মুখোমুখি’ এবং শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার একক সঙ্গীতানুষ্ঠান।

 

চতুর্থ দিন সোমবারের কর্মকান্ড: বইমেলার চতুর্থ ও শেষ দিনের কর্মকান্ডের মধ্যে ছিলো- আড্ডা। ‘লেখা থেকে পান্ডুলিপি, পান্ডুলিপি থেকে বই’ শীর্ষক কর্মশালা। স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি। ‘আজীবন মুক্তিযোদ্ধা’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা। তারুণ্যের উৎসব। যেমন খুশি আঁক, যেমন খুশি গাও। নবীন শিল্পীদেও সঙ্গীত ও নৃত্যানুষ্ঠান ‘ধর্ম বর্ণ জাতির উর্ধ্বে জাগোরে নবীন প্রাণ। নবীন কবিদের আসর। ‘নতুন প্রজন্মের লেখক-খাতা থেকে বই’ শীর্ষক আলোচনা। ‘বিকল্প তথ্যমাধ্যম কেন গুরুত্বপূর্ণ’ শীর্ষক আলোচনা। ‘রন্ধন যখন সংস্কৃতি’ শীর্ষক আলোচনা। ‘সাফল্যের পেছনে’ শীর্ষক আলোচনা। র‌্যাফল ড্র। ‘মুক্তিযুদ্ধ ও নতুন প্রজন্ম’। নবীন শিল্পীদের দ্বৈতকন্ঠে নজরুল সঙ্গীত ‘আপনার চেয়ে আপন যে জন’। ভিন্ন আঙ্গিকে নজরুল-বলরুম ও আধুনিক নৃত্য। ‘তোমাদেও নজরুল শীর্ষক আলোচনা। শিল্পী নিরুপমা রহমানের একক সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘সুরে ও বাণীর মালা দিয়ে’।

উল্লেখ্য, বিগত মেলার মতো এবারের ৩৩তম মেলাতেও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ‘জিএফবি/মুক্তধারা সাহিত্য পুরষ্কার’ দেওয়া হয়। এই পুরষ্কারের মূল্যমান ৩,০০০ ইউএস ডলার। ইতিপূর্বে যারা এই পুরষ্কার পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, কথা সাহিত্যিক দিলারা হাশেম, শামসুজ্জামান খান ও কবি আসাদ চৌধুরী। এছাড়াও মেলায় অংশগ্রহণকারী সেরা প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা প্রকাশক পুরষ্কার’ প্রদান করা হয়। এই পুরষ্কারের মূল্যমান ৫০০ ইউএস ডলার। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য মেলার পক্ষ থেকে দেয়া হয় জিএফবি-মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার। এছাড়া প্রবাসী লেখকদের জন্য দেয়া হয় ‘শহীদ কাদরী স্মৃতি পুরস্কার’।