নিউইয়র্ক ০৩:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাংলাদেশ আর রাশিয়া ছাড়া পৃথিবীর সকল দেশ যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:১৭:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৮৩৬ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রশংসা করছে অথচ জিএসপি সুবিধা দিচ্ছে না কেনা তা জানিনা। তিনি বলেন, পৃথিবীর সকল দেশ যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা পেলেও শুধুমাত্র দু’টি দেশ বাংলাদেশ ও রাশিয়া এই সুবিধা পাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পণ্য সহজেই রপ্তানী করতে দেশেই গভীর সমুদ্রবন্দর (ডিপ সী পোর্ট) করার চিন্তাভাবনা চলছে। এজন্য কক্সবাজারের মহেশখালী আর কুতুবদিয়ায় প্রস্তাব সরকার বিবেচনা করে দেখছে। তিনি বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, দেশে উন্নয়নের যে জোয়ার বইছে তার অংশীদের দেশবাসী সহ সকল প্রবাসী বাংলাদেশী।
abba-pic-1বাংলাদেশী বিজনেস অ্যালায়েন্স (এবিবিএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং প্রবাসীদের অংশগ্রহণ ও করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী মুহিত উপরোক্ত কথা বলেন। গত ২ অক্টোবর রোববার অপরাহ্নে সিটির উডসাইডস্থ গুলশান ট্যারেসে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারের কনভেনর সালেহ আহমেদের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডেমোক্র্যাটিক জাতীয় কমিটির ভাইস চেয়ার কংগ্রেসওমেন গ্রেস মেং। এছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন ও নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ নিযুক্ত কনসাল জেনারেল শামীম আহসান। সেমিনারের কী নোট স্পীকার ছিলেন বেসরকারী সংগঠন সীমান্তিক-এর চেয়ারম্যান ও রূপালী ব্যাংক লি: এর সাবেক চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট অর্থনীতিবীদ ড. আহমেদ আল কবীর। খবর ইউএনএ’র।
abba_dr-siddiqur-rahmanসেমিনারে অতিথিবৃন্দ ছাড়াও শুভেচ্ছা Ÿক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্ক’র ট্রাষ্টি সদস্য এটর্নী মঈন চৌধুরী, কো-কনভেনর আব্দুস শহীদ ও আইটি বিশেষজ্ঞ সাঈদ তারেক মাহমুদ। এরআগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেমিনার আয়োজক কমিটির মেম্বার সেক্রেটারী বিলাল চৌধুরী এবং সেমিনারের আয়োজনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন চীফ কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন এবিবিএ’র প্রধান উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান ও কো-কোর্ডিনেটর শাহ নেওয়াজ। এছাড়া অর্থমন্ত্রী মুহিতকে নিয়ে লেখা স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন এবিবিএ’র কো-চেয়ার রেজাউল করীম চৌধুরী।
অতিথি ও বক্তগণের সাথে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন এবিবিএ’র চেয়ারম্যান সৈয়দ রহমান মান্নান, উপদেষ্টা মোস্তফা কামাল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কমিউনিটির পরিচিতি মুখ রিয়াজ কামরানকে বিশেষ প্ল্যাক প্রদান করা হয়। অর্থমন্ত্রী মুহিতের কাছ থেকে তিনি তার প্ল্যাক গ্রহণ করেন। এসময় এবিবিএ’র কর্মকর্তারা তাদের পাশে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের মাঝে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিকে পুষ্পস্তবক দিয়ে অভিনন্দিত করা হয়। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় ছিলেন প্রবাসের বিশিষ্ট উপস্থাপন আশরাফুল হাসান বুলবুল। তাকে সহযোগিতা করেন সেমিনার কমিটির জয়েন্ট মেম্বার সেক্রেটারী এএফ মিসবাহউজ্জামান।
সেমিনারের মূল বক্তব্যে ড. আহমেদ আল কবীর বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের ভূমিকা ও অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, সরকারের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার জন্যই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, নানা সমস্যার কারণে বাংলাদেশ ৭২১টি রপ্তানীযোগ্য পণ্যের মধ্যে মাত্র ৭টি পণ্য রপ্তানী হচ্ছে। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে। তিনি বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ উন্নয়ন-অগ্রতির বাধা। এসব বাংলাদেশেরও সমস্যা।
abba_gress-mengঅনুষ্ঠানে কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশী কমিউনিটির অনেক ‘সাকেসেস স্টোরি’ রয়েছে। নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী কমিউনিটি স্ট্রং কমিউনিটি। প্রসঙ্গত তিনি ইউএস কংগ্রেসে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ বিল পাস, নিউইয়র্কের পাবলিক স্কুলে ঈদের ছুটি প্রভৃতি উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শুরু এবং ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
সেমিনারে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ। যা দেশের আর্থিক অবস্থার স্থিতিশীলতাই প্রমাণ করে। তিনি বলেন, চীন আর ভারতের পরই বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ। এটা মাইলফলক। এই অবস্থা ধরে রাখতে হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রতির প্রধান বাঁধা মৌলবাদ, সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদ। এনিয়ে অনেকেই চিন্তিত। কিন্তু দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো সরকার শক্ত হাতে দমন করেছে। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই। তিনি বলেন, মৌলবাদ, সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদের শংকা-সন্দেহ দূর করতে না পারলে দেশের উন্নয়নের উর্ধ্বগতির ধারা ধরে রাখা যাবে না। তিনি বলেন, আমরা ঋণগ্রস্ত দেশে হিসেবে থাকতে চাই না। এজন্য আগে থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির আর ৭ শতাংশের নীচে যাবে না। তিনি বলেন, সরকার ‘লং টার্ম আর মধ্যম মেয়াদী’ লক্ষ্য নিয়ে উন্নয়ন কর্মকান্ড এগিয়ে নিচ্ছে।
abba-pic-2বাংলাদেশীদের উদ্দেশ্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রবাসীদের জন্য যা কল্যাণকর সরকার তাই করবে। বাংলাদেশী-আমেরিকানরাও দেশে ট্যাক্স পে করতে পারেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রদত্ত ট্যাক্স প্রদানের ডুকুমেন্ট দেখালে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে তারা ট্যাক্সসেস সুবিধা পাবেন। এব্যাপারে কোন সমস্যা থাকলে তানিয়ে তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলারও আশ্বাস দেন।
অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, অভিভাবকদের ছেলে-মেয়েদের সুসম্পর্ক জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের যুব সমাজই বাংলাদেশের বড় ভাবনার বিষয়। তাদেরকে ড্রাগমুক্ত রাখতে না পারলে দেশের সমস্যার সমাধান হবে না, দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে না, তা ধরে রাখা যাবে না। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, দেশের পোলট্রি ফার্ম আর গবাদী পশু খামার প্রকল্প সফলার মুখ দেখেছে। এছাড়া পানি সম্পদেও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য সরকার নদ-নদী খননের উপর গুরুত্বা দিচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ সালে যেখানে এক কোটি ১০ লাখ টন খাদ্য উৎপাদিত হতো সেখানে জমি/পানি কমে যাওয়ার ফলে সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনার পাশাপাশি প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানের জোরে তিন কোটি ৮০ লাখ টন খাদ্য উৎপাদিত হচ্ছে।
abba-pic-4অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, সিঙ্গাপুর হয়ে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আসতে কেন ২/৩ মাস লেগে যায় তা আমি জানি না। তবে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সাথে কথা বলার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বন্দরে বড় বড় জাহাজ যেতে পারে না বলেই কলকাতা বা সিঙ্গাপুর হয়ে বাংলাদেশী পণ্য বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশীয়পণ্য দেশ থেকেই রপ্তানী করতে বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরীর চিন্তা-ভাবনা চলছে। এজন্য মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় সমুদ্র বন্দর করার প্রস্তাব সরকারের হাতে রয়েছে। মহেশকালী প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ৪/৫ বছর সময় রঅগকে। আর কুতুবদিয়ার প্রস্তাব গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রণালয়ে এসেছে। এই প্রকল্প চুড়ান্ত হলে তা বাস্তবায়নের জন্য ২/৩ বছর লাগবে।
ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আসতে ২/৩ মাস সময় লেগে যায়। অনেক সময় মালামাল খালাস করতেও সময় লেগে যায়। ফলে অনেকে সময় অনেক পণ্যের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। তিনি বাংলাদেশী পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানী করতে যাতে কলকাতাস্থ ‘ইন্টারন্যাশনাল পোর্ট’ ব্যবহার করার বিষয়টি ব্যবহার করা যায় তার জন্য তিনি অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। যাতে পণ্যগুলো সহজেই সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারে। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশী পণ্য যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী রপ্তানী করতে পণ্যগুলো যাতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয় সেজন্য দেশের বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
স্বাগত বক্তব্যে বিলাল চৌধুরী অতিথিবৃন্দ সহ উপস্থিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, সবার সহযোগিতার জন্যই এই সেমিনার সফল ও স্বার্থক করা সম্ভব হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

বাংলাদেশ আর রাশিয়া ছাড়া পৃথিবীর সকল দেশ যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে

প্রকাশের সময় : ১১:১৭:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ অক্টোবর ২০১৬

নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রশংসা করছে অথচ জিএসপি সুবিধা দিচ্ছে না কেনা তা জানিনা। তিনি বলেন, পৃথিবীর সকল দেশ যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা পেলেও শুধুমাত্র দু’টি দেশ বাংলাদেশ ও রাশিয়া এই সুবিধা পাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পণ্য সহজেই রপ্তানী করতে দেশেই গভীর সমুদ্রবন্দর (ডিপ সী পোর্ট) করার চিন্তাভাবনা চলছে। এজন্য কক্সবাজারের মহেশখালী আর কুতুবদিয়ায় প্রস্তাব সরকার বিবেচনা করে দেখছে। তিনি বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, দেশে উন্নয়নের যে জোয়ার বইছে তার অংশীদের দেশবাসী সহ সকল প্রবাসী বাংলাদেশী।
abba-pic-1বাংলাদেশী বিজনেস অ্যালায়েন্স (এবিবিএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং প্রবাসীদের অংশগ্রহণ ও করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী মুহিত উপরোক্ত কথা বলেন। গত ২ অক্টোবর রোববার অপরাহ্নে সিটির উডসাইডস্থ গুলশান ট্যারেসে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারের কনভেনর সালেহ আহমেদের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডেমোক্র্যাটিক জাতীয় কমিটির ভাইস চেয়ার কংগ্রেসওমেন গ্রেস মেং। এছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন ও নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ নিযুক্ত কনসাল জেনারেল শামীম আহসান। সেমিনারের কী নোট স্পীকার ছিলেন বেসরকারী সংগঠন সীমান্তিক-এর চেয়ারম্যান ও রূপালী ব্যাংক লি: এর সাবেক চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট অর্থনীতিবীদ ড. আহমেদ আল কবীর। খবর ইউএনএ’র।
abba_dr-siddiqur-rahmanসেমিনারে অতিথিবৃন্দ ছাড়াও শুভেচ্ছা Ÿক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্ক’র ট্রাষ্টি সদস্য এটর্নী মঈন চৌধুরী, কো-কনভেনর আব্দুস শহীদ ও আইটি বিশেষজ্ঞ সাঈদ তারেক মাহমুদ। এরআগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেমিনার আয়োজক কমিটির মেম্বার সেক্রেটারী বিলাল চৌধুরী এবং সেমিনারের আয়োজনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন চীফ কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন এবিবিএ’র প্রধান উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান ও কো-কোর্ডিনেটর শাহ নেওয়াজ। এছাড়া অর্থমন্ত্রী মুহিতকে নিয়ে লেখা স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন এবিবিএ’র কো-চেয়ার রেজাউল করীম চৌধুরী।
অতিথি ও বক্তগণের সাথে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন এবিবিএ’র চেয়ারম্যান সৈয়দ রহমান মান্নান, উপদেষ্টা মোস্তফা কামাল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কমিউনিটির পরিচিতি মুখ রিয়াজ কামরানকে বিশেষ প্ল্যাক প্রদান করা হয়। অর্থমন্ত্রী মুহিতের কাছ থেকে তিনি তার প্ল্যাক গ্রহণ করেন। এসময় এবিবিএ’র কর্মকর্তারা তাদের পাশে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের মাঝে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিকে পুষ্পস্তবক দিয়ে অভিনন্দিত করা হয়। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় ছিলেন প্রবাসের বিশিষ্ট উপস্থাপন আশরাফুল হাসান বুলবুল। তাকে সহযোগিতা করেন সেমিনার কমিটির জয়েন্ট মেম্বার সেক্রেটারী এএফ মিসবাহউজ্জামান।
সেমিনারের মূল বক্তব্যে ড. আহমেদ আল কবীর বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের ভূমিকা ও অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, সরকারের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার জন্যই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, নানা সমস্যার কারণে বাংলাদেশ ৭২১টি রপ্তানীযোগ্য পণ্যের মধ্যে মাত্র ৭টি পণ্য রপ্তানী হচ্ছে। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে। তিনি বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ উন্নয়ন-অগ্রতির বাধা। এসব বাংলাদেশেরও সমস্যা।
abba_gress-mengঅনুষ্ঠানে কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশী কমিউনিটির অনেক ‘সাকেসেস স্টোরি’ রয়েছে। নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী কমিউনিটি স্ট্রং কমিউনিটি। প্রসঙ্গত তিনি ইউএস কংগ্রেসে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ বিল পাস, নিউইয়র্কের পাবলিক স্কুলে ঈদের ছুটি প্রভৃতি উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শুরু এবং ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
সেমিনারে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ। যা দেশের আর্থিক অবস্থার স্থিতিশীলতাই প্রমাণ করে। তিনি বলেন, চীন আর ভারতের পরই বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ। এটা মাইলফলক। এই অবস্থা ধরে রাখতে হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রতির প্রধান বাঁধা মৌলবাদ, সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদ। এনিয়ে অনেকেই চিন্তিত। কিন্তু দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো সরকার শক্ত হাতে দমন করেছে। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই। তিনি বলেন, মৌলবাদ, সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদের শংকা-সন্দেহ দূর করতে না পারলে দেশের উন্নয়নের উর্ধ্বগতির ধারা ধরে রাখা যাবে না। তিনি বলেন, আমরা ঋণগ্রস্ত দেশে হিসেবে থাকতে চাই না। এজন্য আগে থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির আর ৭ শতাংশের নীচে যাবে না। তিনি বলেন, সরকার ‘লং টার্ম আর মধ্যম মেয়াদী’ লক্ষ্য নিয়ে উন্নয়ন কর্মকান্ড এগিয়ে নিচ্ছে।
abba-pic-2বাংলাদেশীদের উদ্দেশ্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রবাসীদের জন্য যা কল্যাণকর সরকার তাই করবে। বাংলাদেশী-আমেরিকানরাও দেশে ট্যাক্স পে করতে পারেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রদত্ত ট্যাক্স প্রদানের ডুকুমেন্ট দেখালে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে তারা ট্যাক্সসেস সুবিধা পাবেন। এব্যাপারে কোন সমস্যা থাকলে তানিয়ে তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলারও আশ্বাস দেন।
অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, অভিভাবকদের ছেলে-মেয়েদের সুসম্পর্ক জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের যুব সমাজই বাংলাদেশের বড় ভাবনার বিষয়। তাদেরকে ড্রাগমুক্ত রাখতে না পারলে দেশের সমস্যার সমাধান হবে না, দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে না, তা ধরে রাখা যাবে না। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, দেশের পোলট্রি ফার্ম আর গবাদী পশু খামার প্রকল্প সফলার মুখ দেখেছে। এছাড়া পানি সম্পদেও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য সরকার নদ-নদী খননের উপর গুরুত্বা দিচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ সালে যেখানে এক কোটি ১০ লাখ টন খাদ্য উৎপাদিত হতো সেখানে জমি/পানি কমে যাওয়ার ফলে সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনার পাশাপাশি প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানের জোরে তিন কোটি ৮০ লাখ টন খাদ্য উৎপাদিত হচ্ছে।
abba-pic-4অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, সিঙ্গাপুর হয়ে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আসতে কেন ২/৩ মাস লেগে যায় তা আমি জানি না। তবে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সাথে কথা বলার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বন্দরে বড় বড় জাহাজ যেতে পারে না বলেই কলকাতা বা সিঙ্গাপুর হয়ে বাংলাদেশী পণ্য বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশীয়পণ্য দেশ থেকেই রপ্তানী করতে বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরীর চিন্তা-ভাবনা চলছে। এজন্য মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় সমুদ্র বন্দর করার প্রস্তাব সরকারের হাতে রয়েছে। মহেশকালী প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ৪/৫ বছর সময় রঅগকে। আর কুতুবদিয়ার প্রস্তাব গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রণালয়ে এসেছে। এই প্রকল্প চুড়ান্ত হলে তা বাস্তবায়নের জন্য ২/৩ বছর লাগবে।
ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আসতে ২/৩ মাস সময় লেগে যায়। অনেক সময় মালামাল খালাস করতেও সময় লেগে যায়। ফলে অনেকে সময় অনেক পণ্যের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। তিনি বাংলাদেশী পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানী করতে যাতে কলকাতাস্থ ‘ইন্টারন্যাশনাল পোর্ট’ ব্যবহার করার বিষয়টি ব্যবহার করা যায় তার জন্য তিনি অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। যাতে পণ্যগুলো সহজেই সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারে। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশী পণ্য যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী রপ্তানী করতে পণ্যগুলো যাতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয় সেজন্য দেশের বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
স্বাগত বক্তব্যে বিলাল চৌধুরী অতিথিবৃন্দ সহ উপস্থিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, সবার সহযোগিতার জন্যই এই সেমিনার সফল ও স্বার্থক করা সম্ভব হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।