নিউইয়র্ক ০৩:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

তাসকিনের বদলে যাওয়ার গল্প

হককথা ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৬:২৭:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
  • / ৮০ বার পঠিত

ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের যৌথ আয়োজনে ২০১৯ সালে মাঠে গড়িয়েছিল ১২তম ওয়ানডে বিশ্বকাপ। তার আগে সে বছর শুরুতে বিপিএলে ২২ উইকেট নিয়ে আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন তরুণ পেসার তাসকিন আহমেদ। তবে বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ড সফরের আগে অ্যাঙ্কেলের চোটে কপাল পুড়ে এই পেসারের। টুর্নামেন্টটির আগে ফিট হয়ে মাঠে ফিরলেও সে সময় নির্বাচকদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি ঢাকাইয়া এক্সপ্রেস। তাতে বিশ্বকাপ স্কোয়াডেও জায়গা পাননি তিনি।

পরে মিরপুরে গণমাধ্যমের সামনে অশ্রুসিক্ত চোখে জানিয়েছিলেন, বোর্ড যা করেন তার ভালোর জন্যই করেন। সেই ঘটনা কেটে গেছে। পাঁচ বছরে বদলে গেছে অনেক কিছু। তবে চোট প্রবণতা কমেনি তাসকিনের। নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ফের চোটে পড়েন তাসকিন। কিন্তু এবার আর বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েননি তিনি। উলটো তাকে নেওয়ার জন্য দুই দিন পিছিয়ে দেওয়া হয় স্কোয়াড ঘোষণার তারিখ। আর বোর্ডের এ ঘটনা দেখে তাসকিনের মনে পড়েছে সেই পাঁচ বছর আগের কান্না ভেজা বিকেলের কথা।

যুক্তরাষ্ট্রে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের যৌথ আয়োজনে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মাঠে গড়াবে আগামী ২ জুন থেকে। ইতিমধ্যে আসরটিতে খেলতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন টাইগাররা। তবে দেশ ছাড়ার আগে বিসিবিকে সাক্ষাত্কার দিয়ে গিয়েছেন ক্রিকেটাররা; যা পর্ব আকারে প্রকাশ করছে ক্রিকেট বোর্ড। আর প্রথম পর্বেই দেখা গেছে তারকা পেসার তাসকিন আহমেদকে।

ভিডিওর শুরুতে তাসকিন ২০১৯ বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণার সেই স্মৃতি মনে করে বলেন, ‘আমি অনেক ভালো অনুভব করছি যে, আমি দলে আছি, সহ-অধিনায়কও হয়েছি। শুকরিয়া আল্লাহর কাছে। দল ঘোষণাটা যখন পিছিয়েছে, তখন একটা বিষয়ই মনে পড়েছে, সেটা হলো ২০১৯ বিশ্বকাপের কথা। সেই বিশ্বকাপের আগে আমি মন খারাপ করে মিরপুর স্টেডিয়াম থেকে চলে গিয়েছিলাম। আবার একটা বিশ্বকাপ আমার জন্যই দল দুই দিন পিছিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে। এটা সত্যিই একজন খেলোয়াড়ের জন্য গর্বের মুহূর্ত। চেষ্টা করব এই সম্মানটার যথাযথ মূল্যায়ন করার।’

তবে তাসকিনকে নিয়ে বোর্ড বা নির্বাচকদের ধারণা বদলে যাওয়াটা এমনে এমনি হয়নি। নির্বাচকদের তালিকায় আনফিট তাসকিন নিজের সঙ্গে জিদ করেছিলেন আর একবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর জন্য; তা যে করেই হোক। আর ফিরে আসার জন্য বেছে নিয়েছিলেন কঠোর অনুশীলনের পথটা। সুযোগ কাজে লাগিয়েছিলেন কোভিডের সময়টাকে।

এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ফিরে আসার জন্য অনেক কষ্ট করেছি আমি। ঐ সময় কোভিড ছিল, কঠোর অনুশীলন করেছি। শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে সবভাবেই ফিট হওয়ার চেষ্টা করেছি। আগের থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে, তবে এখনো অনেক উন্নতি করার জায়গায় রয়েছে। তো সত্য কথা বলতে, এটা সহজ ছিল না। সে সময় আমি অনেক ঝুঁকিও নিয়েছিলাম; কারণ করোনা ছিল, তার পরও আমি হার্ড ট্রেনিং করেছি। ঐ সময় অনেক মানুষ মারাও গিয়েছিল কিন্তু আমি বাংলাদেশ দলে একটা ম্যাচ খেলার জন্য মরিয়া হয়ে ছিলাম। সবাই বলছিল যে, আমি হারিয়ে গিয়েছি, আমি শেষ, তখন আমি নিজের সঙ্গে জিদ করে একটা ম্যাচ খেলতে চেয়েছিলাম। যে আমি আর এক বারের জন্য হলেও লাল-সবুজ জার্সি গায়ে জড়াব।’

একসময় টাইগারদের বিপক্ষে খেলতে হলে প্রতিপক্ষ পরিকল্পনা করত শুধু স্পিন বোলিং আক্রমণ ঠেকানোর জন্য। তবে এখন আর সেটা নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে দলের পেস ইউনিটও। আর এই ইউনিটকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাসকিন আহমেদ। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হওয়ার পর থেকে চোটের কারণে অনেক ম্যাচ মিস করেছেন ডানহাতি এই পেসার। মাঝে জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন প্রায় তিন বছরের মতো।

তবে কোভিডের পর থেকে প্রায় তিন বছর ধরেই তিনি দলের নিয়মিত মুখ। তাকে সামনে রেখেই দলের বোলিং আক্রমণ সাজায় কোচ ও অধিনায়ক। আর তাসকিনও এ বিষয়টা বেশ উপভোগ করেন। এখন তিনি দেশ ও দলকে দিতে চান নিজের সেরাটা। এ নিয়ে বলেন, ‘এখন ডেলিভার করার সময় হয়েছে। এখন আমি আগের চেয়ে বেশ অভিজ্ঞও হয়েছি, উন্নতি করেছি। এত বছর বাংলাদেশ দলে খেলে যদি আমি নিজের উন্নতি না করি, তাহলে আমি দেশের সঙ্গে অন্যায় করছি। তো আমার উন্নতি করাটা খুবই স্বাভাবিক বিষয় এবং এটা আমার করতেই হবে। এত বছর ক্রিকেট বোর্ড যে আমাকে খেলিয়েছে, আমার সব চাওয়া পূরণ করেছে, আমাকে সঙ্গে রেখেছে, সুযোগ দিয়েছে, তো এখন আমার সুযোগ যে আগামী কয়েক বছর ভালোমতো দেশকে ও দলকে তার প্রতিদান দেওয়ার।’ সূত্র: ইত্তেফাক।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

তাসকিনের বদলে যাওয়ার গল্প

প্রকাশের সময় : ০৬:২৭:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের যৌথ আয়োজনে ২০১৯ সালে মাঠে গড়িয়েছিল ১২তম ওয়ানডে বিশ্বকাপ। তার আগে সে বছর শুরুতে বিপিএলে ২২ উইকেট নিয়ে আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন তরুণ পেসার তাসকিন আহমেদ। তবে বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ড সফরের আগে অ্যাঙ্কেলের চোটে কপাল পুড়ে এই পেসারের। টুর্নামেন্টটির আগে ফিট হয়ে মাঠে ফিরলেও সে সময় নির্বাচকদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি ঢাকাইয়া এক্সপ্রেস। তাতে বিশ্বকাপ স্কোয়াডেও জায়গা পাননি তিনি।

পরে মিরপুরে গণমাধ্যমের সামনে অশ্রুসিক্ত চোখে জানিয়েছিলেন, বোর্ড যা করেন তার ভালোর জন্যই করেন। সেই ঘটনা কেটে গেছে। পাঁচ বছরে বদলে গেছে অনেক কিছু। তবে চোট প্রবণতা কমেনি তাসকিনের। নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ফের চোটে পড়েন তাসকিন। কিন্তু এবার আর বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েননি তিনি। উলটো তাকে নেওয়ার জন্য দুই দিন পিছিয়ে দেওয়া হয় স্কোয়াড ঘোষণার তারিখ। আর বোর্ডের এ ঘটনা দেখে তাসকিনের মনে পড়েছে সেই পাঁচ বছর আগের কান্না ভেজা বিকেলের কথা।

যুক্তরাষ্ট্রে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের যৌথ আয়োজনে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মাঠে গড়াবে আগামী ২ জুন থেকে। ইতিমধ্যে আসরটিতে খেলতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন টাইগাররা। তবে দেশ ছাড়ার আগে বিসিবিকে সাক্ষাত্কার দিয়ে গিয়েছেন ক্রিকেটাররা; যা পর্ব আকারে প্রকাশ করছে ক্রিকেট বোর্ড। আর প্রথম পর্বেই দেখা গেছে তারকা পেসার তাসকিন আহমেদকে।

ভিডিওর শুরুতে তাসকিন ২০১৯ বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণার সেই স্মৃতি মনে করে বলেন, ‘আমি অনেক ভালো অনুভব করছি যে, আমি দলে আছি, সহ-অধিনায়কও হয়েছি। শুকরিয়া আল্লাহর কাছে। দল ঘোষণাটা যখন পিছিয়েছে, তখন একটা বিষয়ই মনে পড়েছে, সেটা হলো ২০১৯ বিশ্বকাপের কথা। সেই বিশ্বকাপের আগে আমি মন খারাপ করে মিরপুর স্টেডিয়াম থেকে চলে গিয়েছিলাম। আবার একটা বিশ্বকাপ আমার জন্যই দল দুই দিন পিছিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে। এটা সত্যিই একজন খেলোয়াড়ের জন্য গর্বের মুহূর্ত। চেষ্টা করব এই সম্মানটার যথাযথ মূল্যায়ন করার।’

তবে তাসকিনকে নিয়ে বোর্ড বা নির্বাচকদের ধারণা বদলে যাওয়াটা এমনে এমনি হয়নি। নির্বাচকদের তালিকায় আনফিট তাসকিন নিজের সঙ্গে জিদ করেছিলেন আর একবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর জন্য; তা যে করেই হোক। আর ফিরে আসার জন্য বেছে নিয়েছিলেন কঠোর অনুশীলনের পথটা। সুযোগ কাজে লাগিয়েছিলেন কোভিডের সময়টাকে।

এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ফিরে আসার জন্য অনেক কষ্ট করেছি আমি। ঐ সময় কোভিড ছিল, কঠোর অনুশীলন করেছি। শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে সবভাবেই ফিট হওয়ার চেষ্টা করেছি। আগের থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে, তবে এখনো অনেক উন্নতি করার জায়গায় রয়েছে। তো সত্য কথা বলতে, এটা সহজ ছিল না। সে সময় আমি অনেক ঝুঁকিও নিয়েছিলাম; কারণ করোনা ছিল, তার পরও আমি হার্ড ট্রেনিং করেছি। ঐ সময় অনেক মানুষ মারাও গিয়েছিল কিন্তু আমি বাংলাদেশ দলে একটা ম্যাচ খেলার জন্য মরিয়া হয়ে ছিলাম। সবাই বলছিল যে, আমি হারিয়ে গিয়েছি, আমি শেষ, তখন আমি নিজের সঙ্গে জিদ করে একটা ম্যাচ খেলতে চেয়েছিলাম। যে আমি আর এক বারের জন্য হলেও লাল-সবুজ জার্সি গায়ে জড়াব।’

একসময় টাইগারদের বিপক্ষে খেলতে হলে প্রতিপক্ষ পরিকল্পনা করত শুধু স্পিন বোলিং আক্রমণ ঠেকানোর জন্য। তবে এখন আর সেটা নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে দলের পেস ইউনিটও। আর এই ইউনিটকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাসকিন আহমেদ। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হওয়ার পর থেকে চোটের কারণে অনেক ম্যাচ মিস করেছেন ডানহাতি এই পেসার। মাঝে জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন প্রায় তিন বছরের মতো।

তবে কোভিডের পর থেকে প্রায় তিন বছর ধরেই তিনি দলের নিয়মিত মুখ। তাকে সামনে রেখেই দলের বোলিং আক্রমণ সাজায় কোচ ও অধিনায়ক। আর তাসকিনও এ বিষয়টা বেশ উপভোগ করেন। এখন তিনি দেশ ও দলকে দিতে চান নিজের সেরাটা। এ নিয়ে বলেন, ‘এখন ডেলিভার করার সময় হয়েছে। এখন আমি আগের চেয়ে বেশ অভিজ্ঞও হয়েছি, উন্নতি করেছি। এত বছর বাংলাদেশ দলে খেলে যদি আমি নিজের উন্নতি না করি, তাহলে আমি দেশের সঙ্গে অন্যায় করছি। তো আমার উন্নতি করাটা খুবই স্বাভাবিক বিষয় এবং এটা আমার করতেই হবে। এত বছর ক্রিকেট বোর্ড যে আমাকে খেলিয়েছে, আমার সব চাওয়া পূরণ করেছে, আমাকে সঙ্গে রেখেছে, সুযোগ দিয়েছে, তো এখন আমার সুযোগ যে আগামী কয়েক বছর ভালোমতো দেশকে ও দলকে তার প্রতিদান দেওয়ার।’ সূত্র: ইত্তেফাক।