নিউইয়র্ক ০২:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834
পুলিশের সাহায্য চেয়ে মিলেছে প্রাণঘাতী গুলি

নিউইয়র্কে বাংলাদেশি খুনের ঘটনায় ন্যায়বিচার নিয়ে সংশয়ে পরিবার

হককথা ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৫১:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪
  • / ১৩৪ বার পঠিত

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ উইন রোজারিও নিহত হওয়ার ঘটনায় ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে উৎকণ্ঠায় আছে পরিবার। তাদের অভিযোগ, এখনো পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। গত ২৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ উইন রোজারিও নিহত হন। কুইন্সে নিজেদের বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে গত বুধবার নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটানে সিটি হলের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন উইন রোজারিওর বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও। সেখানে তিনি বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা সালভাতর অ্যালঙ্গি এবং ম্যাথিউ সিয়ানফ্রোকো আমার মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে। আমি এর ন্যায়বিচার চাই। শিগগিরই তাদের বরখাস্ত করে সঠিক বিচারের আওতায় আনতে হবে।’ তবে এখন পর্যন্ত ন্যায়বিচারের কোনো আশা দেখছে না পরিবার। উইন রোজারিও হত্যা মামলা তদন্ত করছে অফিস অব স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন (ওএসআই)। ঘটনার দিন উইন পরিবারের বাড়িতে অভিযানে অংশ নেওয়া দুই পুলিশের শরীরে থাকা ক্যামেরায় যে ভিডিও ধারণ হয়েছে, তা গত ৩ মে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়েছে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিসিয়া জেমস তা প্রকাশ করেন। অভিযানে অংশ নেয়া দুই পুলিশ সদস্যের পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়। ৩ মিনিট ৪ সেকেন্ড ও ৩ মিনিট ৫ সেকেন্ডের ওই দুই ভিডিওতে দেখা গেছে, মায়ের বুক থেকে কেড়ে নিয়ে, মা এবং ছোট ভাইয়ের অনুরোধ ও অনুনয় উপেক্ষা করে ১৯ বছরের উইন রোজারিওকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে দুই পুলিশ কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন উইনের মা নোটান ইভা কস্টা। তিনি বলেন, ‘তারা দুই মিনিটেরও কম সময়ে আমার বুক থেকে ছেলেকে কেড়ে নিয়ে আমার চোখের সামনে গুলি করে হত্যা করেছেন। আমি এর বিচার চাই। দুই পুলিশকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে। দ্রুত সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’

৮ মে সেই সংবাদ সম্মেলনে কান্নারত মাকে জড়িয়ে ধরেন উইন রোজারিওর ভাই উৎস রোজারিও। তিনি বলেন, ‘আমার ভাইকে হত্যা করার পর নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট আমি এবং আমার মায়ের সঙ্গে এমন আচরণ করেছে, যেন আমরা অপরাধী। আমার ভাইকে মেরে ফেলার পর তারা আমাদের থানায় নিয়ে যান। আমার পরনে হাফপ্যান্ট ছিল, কাপড় পরতে দেননি। ফোনটা নেয়ার পর্যন্ত সময় দেননি।’ উৎস আরও বলেন, ‘তারা আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করেছিলেন যেন আমার ভাইকে চোখের সামনে খুন হতে দেখে আমরাই ভুল করেছি। তারা আমার মাকে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আমাদের ঘরে ফিরে যেতে দেয়া হয়নি। এমনকি তারা আমার বাবা-মায়ের ওষুধও নিতে দেননি।’

সংবাদ সম্মেলনে উইন রোজারিওর বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও বলেন, ‘উইনকে হত্যার পর পুলিশ আমার স্ত্রী ও ছেলেকে থানায় নিয়ে গিয়ে আইনজীবী ছাড়াই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আমরা ন্যায়বিচার পাব কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, কীভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। তারপরও আমরা কোনো বিচার পাচ্ছি না। আমার স্ত্রী বা ছেলে অসুস্থ বোধ করলে পুলিশের সহযোগিতার জন্য ৯১১ নম্বরে কল দিতে ভয় পাই। পুলিশ এসে যদি আবার কোনো কিছু করে বসে!’ উইন পরিবারের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন নিউইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের ডোনা লিবারম্যান, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশি কাউন্সিল সদস্য শাহানা হানিফ, কাউন্সিলর ক্রিস্টাল হাডসন, স্যান্ডি নার্স, অ্যালেক্সা অ্যাভিলেস এবং পিয়েরিনা সানচেজ।

উইন রোজারিও নামে ১৯ বছর বয়সি ওই তরুণের বাড়ি গাজীপুরে। পরিবারের সঙ্গে থাকতেন নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকার ওজোনপার্কে ১০৩ স্ট্রিট ও ১০১ অ্যাভিনিউয়ে। গতমাসে তাদের দ্বিতীয় তলার অ্যাপার্টমেন্টে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের ভাষ্য, তিনি ‘মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন না’। তবে পুলিশি বর্ণনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বক্তব্য দিয়েছেন তার ছোট ভাই উৎস রোজারিও (১৭)। তিনি বলেন, ঘটনার সময় তাদের মা ছেলেকে বাধা দিচ্ছিলেন। তখন পুলিশের গুলি করার মতো কোনো পরিস্থিতি ছিল না।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই বাসা থেকে পুলিশের হটলাইন ৯১১ নম্বরে কল করে দ্রুত সহায়তা চান উইন। কয়েক মিনিটের মধ্যে টহল পুলিশ ওই বাসায় যায় পরিস্থিতি দেখার জন্য। পুলিশের চিফ অব পেট্রোল জন চেল বলেন, বাসায় গিয়ে পুলিশ সদস্যরা উইনকে শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। এ সময় তিনি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ড্রয়ার থেকে কাঁচি বের করে পুলিশের ওপর আক্রমণের চেষ্টা করেন। তখন দুই পুলিশ সদস্যই গুলি ছুড়ে তাকে বশে আনেন। এর আগে তার মা তাকে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছিলেন। ওই মুহূর্তে আত্মরক্ষার্থে পুলিশের গুলি ছোড়া ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না বলে দাবি করেন পুলিশ কর্মকর্তা চেল। তবে কতটি গুলি করা হয়, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। পরিবার অবশ্য বলেছে, ৬টি গুলি করা হয়েছে। আহত অবস্থায় উইনকে অ্যাম্বুলেন্সে জ্যামাইকা হাসপাতালে নেয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে উইনের মা ইভা কস্টা (৪৯) দাবি করেছেন, তার ছেলে পুলিশের দিকে কাঁচি হাতে ধাওয়া করেনি। পুলিশের বডি ক্যামেরা পরীক্ষা করলেই তা স্পষ্ট হবে। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, উইন ‘মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন না’ বলে তাদের জানিয়েছেন তার ছোট ভাই উৎস রোজারিও। উইনকে ঠেকাতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা আত্মরক্ষার প্রাথমিক অস্ত্র ‘টেজার’ প্রয়োগের চেষ্টা করলে তার মা তাদের ঠেকান। তবে পুলিশের এ বক্তব্য ‘সত্য নয়’ বলে দাবি করেছেন ইভা। তিনি বলেন, উইন পুলিশের কাছে ধরা দিতে চায়নি, মাকে জড়িয়ে ধরে পুলিশের হাত থেকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছিল।

ইভা বলেন, উইন নিউইয়র্কের জন অ্যাডামস হাই স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে। সে মার্কিন সেনাবাহিনীতে ভর্তির অপেক্ষায় ছিল। ইন্টারভিউতে টিকে গেছে। মানসিকভাবে সে সুস্থ না থাকলে ইন্টারভিউতে টিকে কীভাবে? এক সাক্ষাৎকারে উৎস রোজারিও বলেছে, গুলি ছোড়ার আগে পুরোটা সময় তার মা ভাইকে জাপটে ধরে রেখেছিলেন। এমনকি ভাইকে ধরা রাখা অবস্থায়ই গুলি ছোড়ে পুলিশ। এই গুলি ছোড়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না।

উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও (৫২) ও মা ইভা কস্টা (৪৯) দুজনই জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে কাজ করেন। সপরিবারে তারা যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ২০১৪ সালে। ঘটনার সময় ফ্রান্সিস অফিসে ছিলেন। জ্যাকসন হাইটসসংলগ্ন লুথারেন চার্চের প্যাস্টর জেমস রয় বলেন, মাঝেমধ্যেই মা-বাবার সঙ্গে উইন চার্চে আসত। আমি তাকে ছোটবেলা থেকেই চিনি। মানসিকভাবে সামান্য অসুস্থ ছিল। ৬ মাস আগেও সে জ্যামাইকা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তবে তাকে কখনো অস্থির হয়ে কোনো বাজে কাজে লিপ্ত হতে দেখিনি বা শুনিনি।

নিউ ইয়র্ক পুলিশের চিফ অব পেট্রোল জন চেল বলেন, আমাদের দুই পুলিশ কর্মকর্তা ওই বাসায় গিয়েছিল জরুরি সহায়তা করতে। তারা কখনোই কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগে আগ্রহী ছিলেন না। উইন যদি সাড়া দিতেন, তাহলে এমন পরিস্থিতির অবতারণা হতো না।

নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগ এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এরই মধ্যে দুই পুলিশ কর্মকর্তার অস্ত্র নিয়ে নেয়া হয়েছে। জন চেল জানান, পুরো ঘটনার দৃশ্য পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে থাকা ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। তবে তা তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।

এই ঘটনার দুদিন আগেই এক সন্দেহভাজনের হাতে এক পুলিশ অফিসারের মৃত্যু হয়েছিল। সেদিন কুইন্স বাসস্টপেজের সামনে পার্ক করা একটি গাড়ি থেকে এক ব্যক্তিকে সরানোর চেষ্টা করার সময় সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি অফিসার জোনাথন ডিলারকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। সূত্র : সিএনএন।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

পুলিশের সাহায্য চেয়ে মিলেছে প্রাণঘাতী গুলি

নিউইয়র্কে বাংলাদেশি খুনের ঘটনায় ন্যায়বিচার নিয়ে সংশয়ে পরিবার

প্রকাশের সময় : ০৬:৫১:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ উইন রোজারিও নিহত হওয়ার ঘটনায় ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে উৎকণ্ঠায় আছে পরিবার। তাদের অভিযোগ, এখনো পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। গত ২৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ উইন রোজারিও নিহত হন। কুইন্সে নিজেদের বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে গত বুধবার নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটানে সিটি হলের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন উইন রোজারিওর বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও। সেখানে তিনি বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা সালভাতর অ্যালঙ্গি এবং ম্যাথিউ সিয়ানফ্রোকো আমার মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে। আমি এর ন্যায়বিচার চাই। শিগগিরই তাদের বরখাস্ত করে সঠিক বিচারের আওতায় আনতে হবে।’ তবে এখন পর্যন্ত ন্যায়বিচারের কোনো আশা দেখছে না পরিবার। উইন রোজারিও হত্যা মামলা তদন্ত করছে অফিস অব স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন (ওএসআই)। ঘটনার দিন উইন পরিবারের বাড়িতে অভিযানে অংশ নেওয়া দুই পুলিশের শরীরে থাকা ক্যামেরায় যে ভিডিও ধারণ হয়েছে, তা গত ৩ মে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়েছে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিসিয়া জেমস তা প্রকাশ করেন। অভিযানে অংশ নেয়া দুই পুলিশ সদস্যের পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়। ৩ মিনিট ৪ সেকেন্ড ও ৩ মিনিট ৫ সেকেন্ডের ওই দুই ভিডিওতে দেখা গেছে, মায়ের বুক থেকে কেড়ে নিয়ে, মা এবং ছোট ভাইয়ের অনুরোধ ও অনুনয় উপেক্ষা করে ১৯ বছরের উইন রোজারিওকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে দুই পুলিশ কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন উইনের মা নোটান ইভা কস্টা। তিনি বলেন, ‘তারা দুই মিনিটেরও কম সময়ে আমার বুক থেকে ছেলেকে কেড়ে নিয়ে আমার চোখের সামনে গুলি করে হত্যা করেছেন। আমি এর বিচার চাই। দুই পুলিশকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে। দ্রুত সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’

৮ মে সেই সংবাদ সম্মেলনে কান্নারত মাকে জড়িয়ে ধরেন উইন রোজারিওর ভাই উৎস রোজারিও। তিনি বলেন, ‘আমার ভাইকে হত্যা করার পর নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট আমি এবং আমার মায়ের সঙ্গে এমন আচরণ করেছে, যেন আমরা অপরাধী। আমার ভাইকে মেরে ফেলার পর তারা আমাদের থানায় নিয়ে যান। আমার পরনে হাফপ্যান্ট ছিল, কাপড় পরতে দেননি। ফোনটা নেয়ার পর্যন্ত সময় দেননি।’ উৎস আরও বলেন, ‘তারা আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করেছিলেন যেন আমার ভাইকে চোখের সামনে খুন হতে দেখে আমরাই ভুল করেছি। তারা আমার মাকে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আমাদের ঘরে ফিরে যেতে দেয়া হয়নি। এমনকি তারা আমার বাবা-মায়ের ওষুধও নিতে দেননি।’

সংবাদ সম্মেলনে উইন রোজারিওর বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও বলেন, ‘উইনকে হত্যার পর পুলিশ আমার স্ত্রী ও ছেলেকে থানায় নিয়ে গিয়ে আইনজীবী ছাড়াই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আমরা ন্যায়বিচার পাব কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, কীভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। তারপরও আমরা কোনো বিচার পাচ্ছি না। আমার স্ত্রী বা ছেলে অসুস্থ বোধ করলে পুলিশের সহযোগিতার জন্য ৯১১ নম্বরে কল দিতে ভয় পাই। পুলিশ এসে যদি আবার কোনো কিছু করে বসে!’ উইন পরিবারের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন নিউইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের ডোনা লিবারম্যান, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশি কাউন্সিল সদস্য শাহানা হানিফ, কাউন্সিলর ক্রিস্টাল হাডসন, স্যান্ডি নার্স, অ্যালেক্সা অ্যাভিলেস এবং পিয়েরিনা সানচেজ।

উইন রোজারিও নামে ১৯ বছর বয়সি ওই তরুণের বাড়ি গাজীপুরে। পরিবারের সঙ্গে থাকতেন নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকার ওজোনপার্কে ১০৩ স্ট্রিট ও ১০১ অ্যাভিনিউয়ে। গতমাসে তাদের দ্বিতীয় তলার অ্যাপার্টমেন্টে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের ভাষ্য, তিনি ‘মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন না’। তবে পুলিশি বর্ণনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বক্তব্য দিয়েছেন তার ছোট ভাই উৎস রোজারিও (১৭)। তিনি বলেন, ঘটনার সময় তাদের মা ছেলেকে বাধা দিচ্ছিলেন। তখন পুলিশের গুলি করার মতো কোনো পরিস্থিতি ছিল না।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই বাসা থেকে পুলিশের হটলাইন ৯১১ নম্বরে কল করে দ্রুত সহায়তা চান উইন। কয়েক মিনিটের মধ্যে টহল পুলিশ ওই বাসায় যায় পরিস্থিতি দেখার জন্য। পুলিশের চিফ অব পেট্রোল জন চেল বলেন, বাসায় গিয়ে পুলিশ সদস্যরা উইনকে শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। এ সময় তিনি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ড্রয়ার থেকে কাঁচি বের করে পুলিশের ওপর আক্রমণের চেষ্টা করেন। তখন দুই পুলিশ সদস্যই গুলি ছুড়ে তাকে বশে আনেন। এর আগে তার মা তাকে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছিলেন। ওই মুহূর্তে আত্মরক্ষার্থে পুলিশের গুলি ছোড়া ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না বলে দাবি করেন পুলিশ কর্মকর্তা চেল। তবে কতটি গুলি করা হয়, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। পরিবার অবশ্য বলেছে, ৬টি গুলি করা হয়েছে। আহত অবস্থায় উইনকে অ্যাম্বুলেন্সে জ্যামাইকা হাসপাতালে নেয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে উইনের মা ইভা কস্টা (৪৯) দাবি করেছেন, তার ছেলে পুলিশের দিকে কাঁচি হাতে ধাওয়া করেনি। পুলিশের বডি ক্যামেরা পরীক্ষা করলেই তা স্পষ্ট হবে। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, উইন ‘মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন না’ বলে তাদের জানিয়েছেন তার ছোট ভাই উৎস রোজারিও। উইনকে ঠেকাতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা আত্মরক্ষার প্রাথমিক অস্ত্র ‘টেজার’ প্রয়োগের চেষ্টা করলে তার মা তাদের ঠেকান। তবে পুলিশের এ বক্তব্য ‘সত্য নয়’ বলে দাবি করেছেন ইভা। তিনি বলেন, উইন পুলিশের কাছে ধরা দিতে চায়নি, মাকে জড়িয়ে ধরে পুলিশের হাত থেকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছিল।

ইভা বলেন, উইন নিউইয়র্কের জন অ্যাডামস হাই স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে। সে মার্কিন সেনাবাহিনীতে ভর্তির অপেক্ষায় ছিল। ইন্টারভিউতে টিকে গেছে। মানসিকভাবে সে সুস্থ না থাকলে ইন্টারভিউতে টিকে কীভাবে? এক সাক্ষাৎকারে উৎস রোজারিও বলেছে, গুলি ছোড়ার আগে পুরোটা সময় তার মা ভাইকে জাপটে ধরে রেখেছিলেন। এমনকি ভাইকে ধরা রাখা অবস্থায়ই গুলি ছোড়ে পুলিশ। এই গুলি ছোড়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না।

উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও (৫২) ও মা ইভা কস্টা (৪৯) দুজনই জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে কাজ করেন। সপরিবারে তারা যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ২০১৪ সালে। ঘটনার সময় ফ্রান্সিস অফিসে ছিলেন। জ্যাকসন হাইটসসংলগ্ন লুথারেন চার্চের প্যাস্টর জেমস রয় বলেন, মাঝেমধ্যেই মা-বাবার সঙ্গে উইন চার্চে আসত। আমি তাকে ছোটবেলা থেকেই চিনি। মানসিকভাবে সামান্য অসুস্থ ছিল। ৬ মাস আগেও সে জ্যামাইকা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তবে তাকে কখনো অস্থির হয়ে কোনো বাজে কাজে লিপ্ত হতে দেখিনি বা শুনিনি।

নিউ ইয়র্ক পুলিশের চিফ অব পেট্রোল জন চেল বলেন, আমাদের দুই পুলিশ কর্মকর্তা ওই বাসায় গিয়েছিল জরুরি সহায়তা করতে। তারা কখনোই কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগে আগ্রহী ছিলেন না। উইন যদি সাড়া দিতেন, তাহলে এমন পরিস্থিতির অবতারণা হতো না।

নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগ এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এরই মধ্যে দুই পুলিশ কর্মকর্তার অস্ত্র নিয়ে নেয়া হয়েছে। জন চেল জানান, পুরো ঘটনার দৃশ্য পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে থাকা ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। তবে তা তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।

এই ঘটনার দুদিন আগেই এক সন্দেহভাজনের হাতে এক পুলিশ অফিসারের মৃত্যু হয়েছিল। সেদিন কুইন্স বাসস্টপেজের সামনে পার্ক করা একটি গাড়ি থেকে এক ব্যক্তিকে সরানোর চেষ্টা করার সময় সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি অফিসার জোনাথন ডিলারকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। সূত্র : সিএনএন।