বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না : যুক্তরাষ্ট্র আ. লীগের সম্বর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
- প্রকাশের সময় : ০১:১৩:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬
- / ৭৭৩ বার পঠিত
নিউইয়র্র্ক: প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নানা প্রতিবন্ধকতা সত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশে ফিরে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। বাঙালী বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। বাংলাদেশে নির্মিতব্য অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রগতিতে প্রবাসীদেরও বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি তিনি বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় উদ্যোগী হতে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বানও জানান।
জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান আর সরকার পরিচালনায় সফলতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী আয়োজিত নাগরিক সম্বর্ধনা সভায় ভাষনদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপরোক্ত কথা বলেন। ২১ সে্েটম্বর বুধবার ম্যানহাটানের অভিজাত হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতের বলরুমে এই সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে ঐদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে তাঁর মূল ভাষণ প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ থেকে ফিরে রাত সোয়া ৯টার দিকে যোগ দেন সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে।
ব্যতিক্রমী এই সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীই ভাষণ দেন। তাঁর ভাষণের আগে সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মণি এমপি এবং প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়।
উল্লেখ্য, এবারই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর সম্বর্ধনা মঞ্চে দলীয় নেতৃবৃন্দ মঞ্চে বসেননি। আর সভার একমান্ত্র বক্তা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সময়ের অভাব আর প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততার জন্য অন্য কোন বক্তা বক্তব্য রাখেননি।
সম্বর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণের শুরুতেই ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁর দৃঢ় নেতৃত্বের কথা উল্লেখ বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্যই আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। তিনি তাঁর ভাষণে ‘জাতির পিতা’র হত্যাকারীদের আশ্রয় দেওয়া এবং তাদের বাইরের দূতাবাসে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে অভিযুক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত অবৈধ টাকায় দেশের বিরুদ্ধে লবিং ও অপপ্রচার করছে। তিনি বলেন, এত টিভি-টক শো থাকতে যারা বলেন কথা বলার অধিকার নেই, তাদের কী বলব? যারা জ্বালাও-পোড়াও করেছেন, মানুষ হত্যা করেছেন, তাদের বিচার করা হবে’।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজনীতিতে ভুলের মাশুল দিতে হবে। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে অংশ না নিয়ে খালেদা জিয়া ‘ট্রেন মিস’ করেছেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তাকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তার ভুলের মাশুল তাকেই দিতে হবে। এখন তারা কেঁদে বেড়াচ্ছে তাদের নাকি স্পেস দেওয়া হচ্ছে না। আসলে ওই সময়ই খালেদা জিয়াকে জেলে দেওয়া উচিত ছিল। তাহলে এতগুলো মানুষ মারা যেতে না, দেশের সম্পদ নষ্ট হত না। পুড়িয়ে মানুষ হত্যাকান্ডের বিচার হবে, খালেদা জিয়াকে শাস্তি পেতে হবে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অনেকগুলো বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল অনুমোদন দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা দিয়েছেন ফালুকে। ফালুকে দেওয়া মানেই ওটার মালিক খালেদা। এখন অনেক টিভির টক শোর ‘টক টক কথা’ শুনে কান ঝালাপালা। তারপরেও বলে স্পেস দিচ্ছি না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাকে জীবন নাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, উৎখাতের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হুমকি দিয়ে লাভ নেই। আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। আমার চাওয়া হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করা। সেই কাজ আমরা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, স্কুল পুড়ানোর কারণ হচ্ছে জিয়া ছিলেন ইন্টারমিডিয়েট পাশ, বেগম জিয়া মেট্রিক দিয়ে দুই বিষয়ে পাশ করেছেন, অন্যদিকে তারেক ইন্টার পাশ করেছে কি না জানি না। সুতরাং তারা যেহেতু পাশ করেনি, তাই তারা চায় না দেশের মানুষ শিক্ষিত হোক।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’র জন্য পুত্র ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা তার (জয়) কারণেই হয়েছে। সে-ই আমার কম্পিউটার শিক্ষক। এবার সে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে, মা হিসাবে আমি গর্বিত।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলের অডিটোরিয়াম ছিলো দলীয় নেতা-কর্মী আর প্রবাসী বাঙালেিদর উপস্থিতিতে প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ। অপরদিকে নিরাপত্তার কারণে হোটেলে প্রবেশের সময় বিশৃঙ্খল পরিস্থির সৃষ্টি ও ব্যাপক হট্টগোল হয়। এছাড়াও বাহিরে ছিল কয়েক শত মানুষ অপেক্ষমান। তারা অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকতে না পেরে আয়োজকদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সম্বর্ধনা স্থলের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা-কর্মীরা ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এসময় তারা সরকার বিরোধী নানা শ্লোগান দেয়।